রাজা চার্লসের অভিষেকের চেয়ে ক্ষতিপূরণের আহ্বানে তার প্রতিক্রিয়ার প্রতি ক্যারিবীয়দের আগ্রহ বেশি

ক্যানভা প্রো’র মাধ্যমে ফিচারের ছবি।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭০ বছরের রাজত্বের পর ৬ মে, ২০২৩ তারিখে রাজা তৃতীয় চার্লসকে ব্রিটেনের নতুন রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা এই অনুষ্ঠানটিকে “প্রজন্মে একবারের অনুষ্ঠান” অভিহিত করলেও এটি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যের ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ও আন্তঃআটলান্টিক দাস বাণিজ্যের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের সাথে লড়াই করা ক্যারিবীয় অঞ্চলে আরেকটি সাধারণ দিন মাত্র।
বলার অপেক্ষা রাখে না রাজ্যাভিষেকে ক্যারিবীয় ও কমনওয়েলথের অন্যান্য সদস্যদের কোন প্রতিনিধিত্ব ছিল না – ২০২১ সালে একটি প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠা বার্বাডোস এবং অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বাহামা, সেন্ট কিটস ও নেভিস, গ্রেনাডা, গায়ানা এবং সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনসের ক্যারিবীয় নেতাদের একটি বড় দলের উপস্থিতিতে ডিউক ও ডাচেস অব কেমব্রিজের উদ্বেগপূর্ণ ২০২২ সালে আঞ্চলিক সফরের পরে জ্যামাইকা একই আওয়াজ তোলা সত্ত্বেও।
আঞ্চলিক সৈন্যরা অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত তিন নারী: ত্রিনিদাদে জন্ম নেওয়া শিশুদের টেলিভিশনের প্রাক্তন উপস্থাপিকা ব্যারনেস ফ্লোয়েলা বেঞ্জামিন উইন্ডরাশ স্মরণ কমিটির সভাপতিত্ব এবং নতুন রাজার রাজদণ্ড বহন করেন; ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে কাজ করা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী গায়ানায় জন্ম নেওয়া ব্যারনেস ভ্যালেরি আমোস অভিষেক অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্যান্টারবারির আর্চবিশপের সাথে স্বীকৃতি কর্মে যোগদান করেন; এবং মূলত জ্যামাইকা থেকে আসা ডোভারের বিশপ রেভারেন্ড প্রিবেন্ডারি রোজ হাডসন-উইলকিন পাটরাণীর দণ্ডটি উপস্থাপন করেন।
তবে ক্ষতিপূরণের আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অতীত প্রতিক্রিয়ার আলোকে বৈচিত্র্যের এই ধরনের প্রচেষ্টা অনেক ক্যারিবীয় নাগরিকের কাছে ছিল ফক্কিকার। দাস ব্যবসায় ভূমিকার জন্যে ব্রিটেন কখনো ক্ষমা চায়নি।
কয়েকজন মূল আঞ্চলিক সরকার প্রধান বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী কিথ রাউলি (ত্রিনিদাদ ও টোবাগো), অ্যান্ড্রু হলনেস (জ্যামাইকা) এবং মিয়া মটলি (বার্বাডোস) অভিষেকে অংশ নেয়নি। রাজার সাথে ভাল সম্পর্কের জন্যে পরিচিত হলেও প্রধানমন্ত্রী মটলি প্রেরিত অভিনন্দন বার্তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ানে এই টুইটার ব্যবহারকারীর ভাগাভাগি করা একটি মতামত ইঙ্গিত দেয়:
Barbados won’t be toasting Charles’s coronation – we’re still celebrating being 👉🇧🇧rid of the monarchy https://t.co/PKh60mBLdr@miaamormottley for the WIN , @AndrewHolnessJM must follow @KateElizabethE4 @BeeNubian @OfficialJoyous @ligabowebster @Hackney50David @BBlakeHannah
— Truthoverdishonesty (@Nigelj08223326) May 6, 2023
বার্বাডোস চার্লসের অভিষেক উদযাপন করবে না – আমরা এখনো 👉🇧🇧 এর রাজতন্ত্র মুক্ত হওয়া উদযাপন করছি
আইটিভিতে জ্যামাইকার সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সমাজের বিশেষজ্ঞ বারবারা ব্লেক-হানার একটি সাক্ষাৎকারের ক্লিপগুলিও টুইটারে চলে গেছে:
“We were really disappointed to learn that the idea of having a member of their family of the same racial mixture as ourselves wasn’t a nice thing…If they didn’t like to have 1 of us in their family…it was a great indication to us that we’re not part of that family” #Coronation pic.twitter.com/aRqYtTyKKI
— R.S. Locke / Royal Suitor (@royal_suitor) May 4, 2023
“আমরা জেনে সত্যিই হতাশ তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আমাদের মতো একই জাতিগত মিশ্রণ থাকাটা ভাল কিছু নয় … তাদের পরিবারে আমাদের একজনকেও রাখতে না চাওয়া … আমাদের জন্যে এটি একটি বিশাল ইঙ্গিত যে আমরা সেই পরিবারের অংশ নই” #অভিষেক
ক্লিপটিতে ব্লেক-হানা মার্কিন টক শো আয়োজক অপরাহ উইনফ্রের সাথে ২০২১ সালের একটি সাক্ষাৎকারে মেগান মার্কেল ও প্রিন্স হ্যারির প্রকাশের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে তারা তাদের তৎকালীন অনাগত পুত্র রাজপরিবারের সদস্য আর্চির সম্ভাব্য ত্বকের রঙে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ব্লেক-হানা উল্লেখ করেছেন, “এটি আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে এবং এখনো করে।”
এদিকে জ্যামাইকার আইন ও সাংবিধানিক বিষয়ক মন্ত্রী মারলেন মালাহু-ফোর্ট স্কাই নিউজকে বলেছেন জ্যামাইকার “জ্যামাইকাবাসীদের হাতে” থাকার “সময় এসেছে”:
A senior Jamaican government minister tells Sky News that The King's coronation has accelerated the country's plans to become a Republic.
Marlene Malahoo Forte says Jamaica could hold a vote on independence as early as 2024
Read more: https://t.co/dyOLX9Wqgx pic.twitter.com/zZ9wyE1UBy
— Sky News (@SkyNews) May 4, 2023
জ্যামাইকার সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ্য মন্ত্রী স্কাই নিউজকে বলেছেন রাজার অভিষেক দেশটির প্রজাতন্ত্র হওয়ার পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করেছে।
মারলিন মালাহু ফোর্ট বলেছেন ২০২৪ সালের মধ্যে জ্যামাইকা স্বাধীনতার উপর ভোটের আয়োজন করতে পারে
দেশটি আগামী বছর এবিষয়ে গণভোট গ্রহণের আশা করছে। বেলিজও ব্রিটিশ রাজতন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অভিষেক অনুষ্ঠানে অশ্বেতাঙ্গ মানুষ জড়িত থেকে অন্তর্ভুক্তি কেন্দ্রিক ভাষা ও প্রার্থনা ব্যবহারের সমন্বিত প্রচেষ্টা করলেও নতুন রাজা সরাসরি ক্ষতিপূরণমূলক ন্যায়বিচারের কথা বলতে, এমনকি দাসত্বে আবদ্ধ আফ্রিকীয় ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নৃশংসতায় তার দেশের ভূমিকা সম্পর্কে উচ্চতর জনসচেতনতা ও সংশোধনের জন্যে সক্রিয় কর্মীদের বিক্ষোভ সত্ত্বেও সমস্যাটি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে ব্যর্থ হন।
১৮৩৪ সালে বিলুপ্তি ঘোষিত হলে ব্রিটিশ সরকার প্রাক্তন দাস মালিকদের তাদের শ্রমশক্তির ক্ষতির জন্যে আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিলেও নতুন “মুক্ত” ক্রীতদাস মানুষেরা কিছুই পায়নি। এমনকি অনেককে কোনো বেতন ছাড়াই বছরের পর বছর “শিক্ষানবিস” কর্মসূচির অধীনে শ্রম চালিয়ে যেতে হয়েছিল।
নতুন রাজার অভিষেক অনেক ক্যারিবীয় নাগরিকের জন্যে ভিন্নভাবে কাজ করার একটি সুযোগ। মুক্ত_গণতন্ত্রে প্রকাশিত একটি অংশে জ্যামাইকার শিক্ষাবিদ ও লেখক ক্যারোলিন জয় কুপার লিখেছেন:
জ্যামাইকা ধীরে ধীরে একটি প্রজাতন্ত্র হওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ায় ব্রিটিশ রাজতন্ত্র বহু শতাব্দীর নৃশংসতার জন্যে দায়ী হয়ে উঠছে। গবেষণা করা হয়েছে এবং প্রমাণগুলি অনস্বীকার্য: ইংল্যান্ডের রাজা এবং রানীরা ধারাবাহিক ২৭০ বছর ধরে আফ্রিকীয়দের ক্রীতদাস বানিয়ে পাচারে জড়িত ছিল।
একটি গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে দাসত্বের সাথে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সম্পর্ক অনুসন্ধানে নতুন রাজার প্রথম দুর্বল পদক্ষেপ কুপারকে প্রভাবিত করতে পারেনি:
পুনর্বিবেচনার কি আছে? মামলা বন্ধ। রাজা মানব পাচারের মতো একটি মারাত্মক উদ্যোগে নিযুক্ত ছিল। এই ‘নিযুক্তি'কে বর্বরতার রাজকীয় ক্ষমতার চিরায়ত বহিঃপ্রকাশ ছাড়া অন্য কোন পরিভাষায় পুনর্বিবেচনা করা যায় না।
ক্ষতিপূরণের জন্যে ক্যারিকম ক্ষতিপূরণ কমিশনের একটি পরিষ্কার ১০-দফা পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে কুপার উপসংহার টানেন:
‘ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ও আন্তঃআটলান্টিক ক্রীতদাস বাণিজ্যের মধ্যে যোগসূত্র’ নিয়ে গবেষণার জন্যে রাজা চার্লসের ‘বাহ্যিক সমর্থন’ রাজতন্ত্রের আফ্রিকীয়দের পাচার নিয়ে বারবার ‘গভীর দুঃখ” প্রকাশের মতোই নিবীর্য প্রমাণিত হতে পারে। কথা বলা আসলে খুবই সস্তা ধরনের। অধিকতর গবেষণা নপুংসক বিলম্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজা চার্লসকে অবশ্যই দুঃখের কথামালাকে অবিলম্বে সত্যিকার অর্থে ক্ষতিপূরণের ভাষায় অনুবাদ করতে হবে।
রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেকের দুই দিন আগে ৪ মে তারিখে কমনওয়েলথের ১২টি দেশের প্রচারণা ও আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে রাজা চার্লসকে দাসত্বের জন্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে ও উপনিবেশের ভুল সংশোধনের জন্যে ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে:
JUST IN: representatives from 12 Commonwealth countries come together to call for King Charles to formally apologise for slavery and start the process for reparations. This comes ahead of the King's coronation on Saturday May 06. pic.twitter.com/ND30OVH2vV
— Camille Williams⁷ (@camillenewsgirl) May 3, 2023
সর্বশেষ: ৬ মে শনিবার রাজার অভিষেকের আগে ১২টি কমনওয়েলথ দেশের প্রতিনিধিরা রাজা চার্লসকে দাসত্বের জন্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার ও ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানাতে একত্রিত হয়।
পরবর্তী পদক্ষেপ এখন রাজার।