ছবি চুরি, ক্ষতিপূরণ অস্বীকার: রোহিঙ্গা আলোকচিত্র শিল্পীদের শোষণ

Image and texts by Shafiur Rahman. Used with permission

ছবি ও লেখা শফিউর রহমান। অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্যে পরিস্থিতি ক্রমশ: ভয়ানক হয়ে উঠেছে। সেখানে নির্বিচারে আটক, নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং হত্যার মতো আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশে অবস্থানরত ৬ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে তাদের বর্তমান লক্ষ্যবস্তু করছে। ফলে অনেক রোহিঙ্গা প্রতিবেশী দেশগুলিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, যেখানে তারা এখনো মানব পাচার ও নির্বাসনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে শরণার্থী শিবিরগুলিতে বসবাসকারী ১১ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করছে।

কয়েক দশক ধরে এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাধারণভাবে কোনো কণ্ঠস্বর না থাকলেও ক্যাম্পের বাইরের জগতে পৌঁছানোর আগে কখনো কখনো ফিল্টার করে সাংবাদিকরা তাদের কিছু কণ্ঠকে তুলে ধরেছে। তা সত্ত্বেও অনেক তরুণ রোহিঙ্গা শরণার্থী তাদের ফোন ক্যামেরা বা পেশাদার ক্যামেরা দিয়ে শরণার্থী শিবিরে তাদের জীবন নথিভুক্ত করে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে তাদের নিজেদের গল্প বলছে।

সংকট প্রশমন ও তাদের প্রত্যাবাসনের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বিভিন্ন মহলের শোষণ ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রোহিঙ্গা আলোকচিত্র শিল্পীদের কয়েকজন তাদের সম্মতি বা অর্থ প্রদান ছাড়াই আন্তর্জাতিক অলাভজনক ও গণমাধ্যম সংস্থার তাদের ছবি ব্যবহারের বেশ কয়েকটি ঘটনা দেখতে পেয়েছে। এটি জবাবদিহিমূলক সাংবাদিকতা ও পেশাদারিত্বের ধারণাকে ভিত্তিকে সাংবাদিকতার সততা ও নৈতিক আচরণের মৌলিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। উপরন্তু এই আলোকচিত্র শিল্পীদের অধিকার দাবি করার লড়াই প্রায়শই কানে তোলা হয় না।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা আলোকচিত্র শিল্পী মোঃ জামালের এই টুইটটির মতো তাদের কিছু একাকী কণ্ঠ সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে:

অনুমোদন ছাড়া আমাদের ছবি ব্যবহার বন্ধ করুন৷

আজ @মোহাম্মদজুনায়েদ এর সাথে মিলে একটি অনলাইন সংবাদ সাইটের সাথে একটি কপিরাইট সমস্যার সমাধান করেছি। তারা আমাদের অনুমতি ছাড়াই আমাদের ছবি ব্যবহার করেছে। এটা বেআইনি। #রোহিঙ্গা আলোকচিত্র শিল্পীদের কাজ শুধু সম্মতিসহ ব্যবহার করা যেতে পারে।

পরামর্শের জন্যে @রোহিঙ্গাফটোকে ধন্যবাদ

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ব্রিটিশ-বাংলাদেশী সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা শফিউর রহমান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজের চোখে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন তাদের সংগ্রামকে নথিভুক্ত করতে উৎসাহিত করতে ২০২০ সালে প্রথম রোহিঙ্গা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা (আরপিসি) চালু করেন। পরবর্তী বছরগুলিতে অন্যান্য প্রতিযোগিতায় শরণার্থীদের তোলা বিভিন্ন আলোকচিত্র ল্যাম্পেডুসা, ভেনিস, ভেরোনা, অক্সফোর্ডনিউক্যাসলের মতো বিশ্বের অসংখ্য শহরে প্রদর্শিত হয়। ব্রিটিশ যাদুঘরের অংশীদার ম্যানচেস্টার যাদুঘরের দক্ষিণ এশিয়া গ্যালারি বর্তমানে রোহিঙ্গা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তোলা নয়টি ছবি প্রদর্শন করছে

২০২২ সালের উল্লেখযোগ্য: ম্যানচেস্টারের (ব্রিটিশ যাদুঘরের অংশীদার) দক্ষিণ এশিয়া গ্যালারিতে প্রদর্শনের জন্যে ৫ #রোহিঙ্গা #শরণার্থীর ছবি নির্বাচিত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।

অভিনন্দন 👏 @মাইনুল৩৯৫২৫৮২৫ @সয়ালিমআরমানি @মোঃ_ইয়াসিন @হায়দাআলিকেটিপি এবং মোহাম্মদ হোসেন

রহমান কিছু আলোকচিত্র শিল্পীকে অনুমতি ছাড়া অন্যদের ব্যবহৃত ছবিগুলিতে তাদের কপিস্বত্ত্ব প্রয়োগে সাহায্য করেন। বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পরে বেশিরভাগ সংস্থা আলোকচিত্র শিল্পীদের অর্থ প্রদান করলেও কেউ কেউ তাদের হুমকিও দেয় এবং অর্থ প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। বিশ্বের অনেক ব্যক্তি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্যে অনুদান দিলেও তারা এই দুর্বল শরণার্থীদের শোষণকে বেছে নেয়।

গ্লোবাল ভয়েসেস রোহিঙ্গা আলোকচিত্র শিল্পীরা তাদের অধিকার প্রয়োগে যেসব বাধার সম্মুখীন হয় সে সম্পর্কে গভীরভাবে বোঝার জন্যে ইমেলের মাধ্যমে শফিউর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। একটি সম্পাদিত সংস্করণ নীচে দেওয়া হলো।

গ্লোবাল ভয়েসেস (জিভি): রোহিঙ্গা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার সাড়া সম্পর্কে আমাদের বলুন। এপর্যন্ত কতজন আলোকচিত্র শিল্পী তাদের ছবি জমা দিয়েছে?

শফিউর রহমান (এসআর): সামগ্রিকভাবে আমি মনে করি রোহিঙ্গা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা শক্তিশালী গল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের উপাদানগুলোকে তুলে ধরতে সফল হয়েছে। ওয়েবসাইটে আপনি যে ছবিগুলির সংগ্রহ দেখতে পাবেন তা চলমান ও চিন্তা-উদ্রেককারী এবং এটি এই গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা রাখে। একইভাবে প্রদর্শনীটি নিয়ে আমরা একই অভিজ্ঞতা ধারণ করি।

আলোকচিত্র শিল্পীরা হতাশা, আশা, সহনশীলতা ও সক্রিয়তাসহ তাদের সংকট সম্পর্কিত আবেগ ও অভিজ্ঞতার একটি বিস্তৃতি তুলে এনেছে। বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত কুতুপালং নিবন্ধিত শিবিরের শরণার্থীদের ব্যবহৃত সাদা-কালো শৈলী তাদের মানসিক প্রভাবকে বাড়িয়ে নিরবচ্ছিন্নতার একট অনুভূতি প্রদান করে। প্রতিটি প্রতিযোগিতা ৭০ থেকে ৮০ জন আলোকচিত্র শিল্পীকে আকর্ষণ করেছে। কয়েক বছরে তারা হাজার হাজার ছবি জমা দিয়েছে।

জিভি: আপনি কি এই আলোকচিত্র শিল্পীদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কপিস্বত্ত্ব আইন সম্পর্কে তাদের সচেতন করেন?

এসআর: রোহিঙ্গা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার আলোকচিত্র শিল্পীরা আলোকচিত্র কৌশলে প্রশিক্ষণের জন্যে দৃঢ় ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তারা কপিস্বত্ত্ব শিক্ষায় একই মানের আগ্রহ দেখায়নি। শরণার্থীদের তাদের জীবন ও অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করার ক্ষমতা বিকাশের জন্যে আলোকচিত্র দক্ষতা অবশ্যই অপরিহার্য। কপিস্বত্ত্ব আইন ও স্রষ্টা হিসেবে তাদের অধিকার রক্ষার কৌশল সম্পর্কে তাদের শিক্ষিত করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দুটো দিকই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষমতায়নের জন্যে প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর ও আইনিভাবে সুরক্ষিত উপায়ে তাদের গল্পগুলি বিশ্বের সাথে ভাগাভাগি করতে সহায়তা করে। আরপিসি বর্তমানে কপিস্বত্ত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে একটি কর্মশালা আয়োজনের কথা বিবেচনা করছে৷

জিভি: আমাদেরকে আপনার চোখে পড়া গণমাধ্যম সংস্থাগুলির সৃষ্ট কিছু লঙ্ঘন সম্পর্কে বলুন৷

এসআর: আমার মোকাবেলা করা প্রথম ঘটনাটি ছিল এএফপির সাথে। এতে রোহিঙ্গা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় জমা দেওয়া (এএফপির কৃতজ্ঞতায় পাওয়া) গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি ছবি জড়িত। সাথে সাথেই কিছু লুকো-ছাপা সন্দেহ করে আমি আলোকচিত্র শিল্পীদের তারা কোন এজেন্সিকে তাদের ছবি দিয়েছিল কিনা জিজ্ঞেস করায় তারা তা অস্বীকার করে।

বাংলাদেশে @এএফপির ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম,এএফপি সিস্টেম থেকে ছবি মুছে দিয়ে #রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তোলা ছবির অননুমোদিত ব্যবহার স্বীকার করেন। “বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি”কে দোষারোপ করেন।

এর আগে কতবার এমন হয়েছে? ইতোমধ্যে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীকে আবার শোষণ?

আর এভাবেই এএফপির সাথে একটি দীর্ঘ বিনিময় শুরু হয়। সংক্ষেপে, তাদের একজন প্রতিবেদক একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বা টুইটারে ফটোটি খুঁজে পেয়ে এটিকে তার নিজের বলে দাবি করে এএফপিকে দিলেও তারা ছবিটি একেবারেই যাচাই করেনি। ছবিটির এক্সিফ ডেটা ছিল না এবং এটি আসল রেজোলিউশনেরও ছিল না। মূলত প্যান্ট নামানো অবস্থায় তাদের ধরা হয়।

একটি বিখ্যাত ঘটনায় টুইটারে পাওয়া ছবি ব্যবহার করতে পারা নিয়ে ভুলভাবে যুক্তি দিলে এএফপিকে প্রচুর জরিমানা করা হয়। আমাদের ক্ষেত্রে আলোকচিত্র শিল্পী একটি খুবই সামান্য অর্থ চাইলে তখনি তার নিষ্পত্তি করা হয়। প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে এএফপি একটি কর্মশালা করার এবং তাদের সাথে রোহিঙ্গা আলোকচিত্র শিল্পীদের যুক্ত হতে সাহায্য করার প্রস্তাব দিলেও তা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। শুধু মহামারীর পরিস্থিতির কারণে বা আলোচনার একটি কৌশলের কারণে এমনটি হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

লঙ্ঘনের ঘটনায় পিপলস ডিসপ্যাচ অর্থ প্রদান এড়াতে অসংখ্য কৌশল প্রদর্শন করে। প্রথমে ইমেলগুলির উত্তর দেওয়া না হলেও তদন্ত শুরুর পরে উত্তর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পরে একটি অযৌক্তিক বার্তায় দাবি করে তারা সাধারণত অবদানকারীদের অর্থ প্রদান করে না। আলোকচিত্র শিল্পী পিপলস ডিসপ্যাচের কথা না শুনে বলেন তিনি কখনো অবদানকারী ছিলেন না। প্রকাশনাটি এমনকি আলোকচিত্র শিল্পীকে যাচাই করার অনুরোধ করলে তাদের একজন পরিচিতির সাথে দেখা করেন। আরো অপেক্ষার পরে অবশেষে অর্থ প্রদান করা হয়। একটা সিক্ষা পাওয়ার পর তারা শেষ পর্যন্ত অর্থ প্রদান করে। লঙ্ঘনের দ্বিতীয় দৃষ্টান্তটিতে তারা বিষয়টির দ্রুততর সমাধান করে।

জিভি: কোন আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থাগুলি কি লঙ্ঘন করছে?

এসআর: অক্সফাম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে “অক্সফামের রোহিঙ্গা শিল্প প্রচারাভিযান” চালাচ্ছে। এটি “রোহিঙ্গা শিল্পী ও কর্মীদের কবিতা, চিত্রকলা, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র, সৃজনশীল লেখা বা অন্য কোনো শৈল্পিক মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভাগাভাগি করে নেওয়ার জায়গা তৈরি করেছে” বলে ব্যাপকভাবে দাবি করে। এটি অবশ্যই একটি অসত্য, ছোট প্রকল্পগুলিকে বড় করে দেখানোর একটি চিরায়ত এনজিও কৌশল। শিল্প মঞ্চ প্রদানের দাবি করা অক্সফামকে অনুমতি বা ক্ষতিপূরণ এবং কোনো স্বীকৃতি ছাড়াই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ছবি ব্যবহার করতে আবিষ্কার করার পর আমার হতাশার কথা ভেবে দেখুন। সত্য যে অক্সফাম রোহিঙ্গা আলোকচিত্র শিল্পীদের কাজকে তাদের নিজেদের সুবিধার জন্যে ব্যবহার করেছে, এবং আমি আবারো বলছি এটা শরণার্থী আলোকচিত্রীদের সাথে পরামর্শ ছাড়া তাদের অধিকার ও স্বার্থ বিবেচনা না করে একটি শিল্প মঞ্চ প্রদানের ধারণার বিরোধী। বিশেষ করে শরণার্থীদের দারিদ্র্য ও অবিচার দূর করার লক্ষ্য সম্পন্ন বিশিষ্ট কোন সংস্থার পক্ষে নিজেদের লাভের জন্যে এভাবে শোষণ করা খুবই অগ্রহণযোগ্য।

সারসংক্ষেপ ২০২২:

অক্সফাম থেকে ক্ষমা প্রার্থনা ও লাইসেন্স ফি আদায়

আমাজন থেকে লেখিকা “ক” এর প্রকাশনা সরানো এবং “খ” লেখককে সরিয়ে শরণার্থীকে লাইসেন্স ফি পরিশোধ করতে বাধ্য করা

পিপলস ডিসপ্যাচকে ২ শরণার্থীর লাইসেন্স ফি পরিশোধ করানো

অ্যামনেস্টি যুক্তরাজ্যের স্থানীয় শাখার অননুমোদিত প্রদর্শনী বন্ধ করা।

আমার সাথে যোগাযোগের পর অক্সফাম তাদের কর্মের জন্যে দ্রুত ক্ষমা চাইলেও তাদের পরবর্তী পরিস্থিতি সামলানোটা সমানভাবে অযৌক্তিক ছিল। কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে তাদের সরেজমিন উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তারা নগদ অর্থ না থাকার দাবি করে তারা শরণার্থী আলোকচিত্র শিল্পীকে সরাসরি ক্ষতিপূরণ দিতে পারেনি। তাদের নিয়ম অনুসারে তহবিল স্থানান্তরের একমাত্র উপায় হলো ব্যাংক হিসাবে সরাসরি, যদিও তারা জানে শরণার্থীরা বাংলাদেশে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারে না। অন্যায়ের শিকার আলোকচিত্র শিল্পীদের তহবিল আদায়ে একজন বাংলাদেশি মধ্যস্থতা গ্রহণ করা হয়। এটি এনজিও জগতে বিদ্যমান বিভিন্ন জটিলতা ও ভারসাম্যহীনতাকে তুলে ধরে যেখানে সংস্থাগুলি যাদেরকে পরিষেবা প্রদান করছে বলে দাবি করে তাদের ব্যবহারিক বাস্তবতা বিবেচনা না করেই যথেচ্ছভাবে নিজেদের নিয়ম-নীতি প্রয়োগ করতে পারে।

জিভি: জনগণও কি অনলাইনে রোহিঙ্গাদের ছবি বিক্রি করছে?

এসআর: আমি আপনাকে আনাদোলু এজেন্সির উদাহরণ দিই। সিএনএন, টাইম, গার্ডিয়ান পত্রিকা, আল জাজিরা এবং অ্যামনেস্টির মতো উল্লেখযোগ্য মঞ্চগুলোর কাছে এই সংস্থা ছবি বিক্রি করেছে। এটি একটি খুব সাম্প্রতিক ঘটনা এবং আরফাত মং হ্লা মাইং থেকে চুরি করা ফটোগুলির সাথে সম্পর্কিত৷

চুরি করা ছবি থেকে এজেন্সি ও ফ্রিল্যান্সারদের লাভবান হওয়া ও আলোকচিত্র শিল্পীকে ক্ষতিপূরণ দিতে না চাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। এই পরিস্থিতিটি প্রায়শই এজেন্সি ও বিশেষ করে শরণার্থীদের মতো প্রান্তিক সম্প্রদায় থেকে আসা আলোকচিত্র শিল্পীদের মধ্যে বিদ্যমান শক্তির গতিবিদ্যাকে তুলে ধরে। এই উদাহরণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ছবি চুরি করে ব্যবহার করে আনাদোলু এজেন্সি ও ফ্রিল্যান্সার শাহজাহান আলোকচিত্র শিল্পীর সম্মতি বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ছবিগুলি থেকে লাভবান হয়৷ এটি শুধু শোষণ ও প্রান্তিকতার চক্রকে স্থায়ী করে না বরং একটি পেশা হিসেবে ফটোসাংবাদিকতার সততাকেও ক্ষুন্ন করে। এজেন্সি ও ফ্রিল্যান্সারদের বিশেষ করে দুর্বল সম্প্রদায়ের এবং শিল্পের আরো ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত চর্চা নিয়ে কর্মরত আলোকচিত্র শিল্পীদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি ও অধিকারকে সম্মান করা গুরুত্বপূর্ণ।

আরফাতের ছবি চুরি সংক্রান্ত পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয় যখন আমরা এই সত্যটি বিবেচনা করি যে ফ্রিল্যান্সার শাহজাহান শরণার্থী আলোকচিত্র শিল্পীকে ছবির মালিকানা দাবি না করার জন্যে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। এই ধরনের আচরণ শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয় অপরাধমূলকও বটে এবং এটি শিল্পটির মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত শক্তির গতিবিদ্যাকেই তুলে ধরে। শরণার্থীদের শোষণ ও তাদের কাজ চুরি করার জন্যে হুমকি ও ব্ল্যাকমেইল ব্যবহার করা বিশেষ করে ক্ষমতাবান যে কারো জন্যেই অগ্রহণযোগ্য।

Screenshot from Anadolu agency site (now deleted).

আনাদোলু এজেন্সি সাইট থেকে নেওয়া পর্দাছবি (এখন মুছে ফেলা হয়েছে)।

জিভি: এধরনের লঙ্ঘন থেকে রোহিঙ্গা আলোকচিত্র শিল্পীদের রক্ষা করার জন্যে আপনার পরামর্শ কী?

এসআর: শরণার্থীদের তাদের অভিজ্ঞতা ও বর্ণনার মালিকানা দাবি করার জন্যে তাদের ছবি ভাগাভাগি করা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। তাদের গল্প ভাগাভাগি করার মাধ্যমে শরণার্থীরাও পরিবর্তনের পক্ষে ওকালতি করতে ও তাদের কণ্ঠস্বর শোনাতে পারে। তবে কপিস্বত্ত্ব লঙ্ঘনকারী ও চোররা শরণার্থীদের গল্প ও ছবির মূল্য না দিয়ে এই ক্ষমতায়নকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। আমাদের শরণার্থীদের অধিকার পদদলনে বিশ্বাস করা ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির নাম বলতে এবং লজ্জা দিতে হবে। অবশ্যই তাদের প্রকাশ্যে আনতে এবং জবাবদিহি করাতে হবে।

ছবি চুরি করা মূল আলোকচিত্র শিল্পীদের মেধা সম্পত্তির অধিকার লঙ্ঘন ছাড়াও তাদের কাজের স্বীকৃতি ও বাংলাদেশে কাজ করার আনুষ্ঠানিক অনুমতি না থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করে।

রোহিঙ্গা সক্রিয় কর্মী আলী জোহর টুইট করেছেন:

ভুক্তভোগীদের প্রতিভা শোষণের এই সংস্কৃতি গুরুত্ব সহকারে মোকাবেলা করা দরকার।
শরণার্থী আলোকচিত্র শিল্পীদের ছবি চুরি হয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করা হলে ব্যক্তিটি প্রকৃত আলোকচিত্র শিল্পীদেরকে পুলিশি হয়রানির হুমকি দেয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .