এই গল্পের সাক্ষাৎকারগুলি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গবেষণা কাজের সময় ব্যক্তিগতভাবে ই-মেইলের মাধ্যমে ফোনে নেওয়া হয়েছিল।
কোভিড-১৯ এর মধ্যে সাধারণ আলোচনা সূত্রটি হলো রুশ-ইউক্রেনীয় যুদ্ধ, টালমাটাল জীবাশ্ম জ্বালানির বাজার, ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতের নিট শূন্য নির্গমন অর্জনের ঘোষণা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেশটির শক্তির.পরিচ্ছন্ন পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জি২০ এর সভাপতিত্ব।
উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি?
কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের সাথে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি নির্গমন বন্ধ করা জড়িত। এটি জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর অর্থনীতি থেকে পরিচ্ছন্ন শক্তি চালিত অর্থনীতিতে একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত স্থানান্তরের একটি প্রয়োজনীয়তা। “ভারতের নিট শূন্য অর্জন” শিরোনামের একটি প্রতিবেদন অনুসারে ভারতের ২০৭০ সালের লক্ষ্যপূরণে আনুমানিক ১০ লক্ষ ১০ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হবে।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু অভিযান নেটওয়ার্কের বৈশ্বিক রাজনৈতিক কৌশলের প্রধান হরজিৎ সিং বলেছেন, “উচ্চাভিলাষী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে থেকে অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন এবং নাগরিকদের জন্যে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের শক্তির প্রাপ্যতা বাড়ানো দেশটির জন্যে অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জ।”
রূপান্তর প্রক্রিয়া চলার সময় দরিদ্রদের বাদ না দিয়ে দেশের সবুজ ভবিষ্যত ও টেকসই উন্নয়নের একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সিং সতর্ক করেছেন।
ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে সাকুল্যে একশত কোটি টন নির্গমন কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে তার ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যা তার জিডিপিতে নির্গমনের তীব্রতা ৪৫ শতাংশ কমিয়ে দেবে।
ভারত সাতটি প্রাথমিক অগ্রাধিকারের অন্যতম হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তিকে চিহ্নিত করা সত্ত্বেও ২০২৩-২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষে নতুন ও নবায়নযোগ্য শক্তি মন্ত্রণালয়ের (এমএনআরই) জন্যে শুধু ১০,২২২ কোটি রুপি (১২৪ কোটি ডলার) বরাদ্দ করেছে যা ২০২২ সালের বাজেটের তুলনায় ৪৮% বেশি হলেও মোট ৪৫ লক্ষ কোটি রুপির (৫৪,৫০০ কোটি ডলার) বার্ষিক বাজেটের মাত্র ২.২ শতাংশ।
তা সত্ত্বেও এটি শক্তি সঞ্চয়, সবুজ হাইড্রোজেন, বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্যে লিথিয়াম ব্যাটারি কোষ উৎপাদনের জন্যে প্রয়োজনীয় মূলধনী পণ্য এবং যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক মওকুফ, ৪,০০০ মেগাওয়াট ঘন্টা (এমডাব্লিউ) ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি শক্তি সঞ্চয় প্রকল্পের জন্যে কার্যকারিতা বিচ্যুতি তহবিল (ভিজিএফ) এবং অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে লাদাখের হিমালয় অঞ্চল থেকে ১৩,০০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি পরিবহন ও সমন্বয়ের জন্যে একটি আন্তঃরাজ্য বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণের মাধ্যমে সবুজ উন্নয়নে অনেকগুলি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ চালু করেছে।
সবুজ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তি নিরাপত্তার ভারসাম্য
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতে চালু থাকা সবুজ শক্তির ক্ষমতা ১,৭৪,৫৩০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে যা তার মোট ৪ লক্ষ ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৪২%। বর্তমানে দেশটির নবায়নযোগ্য শক্তি মানচিত্রে ৬৩,৩০০ মেগাওয়াট সৌর শক্তির, ৪৬,৮৫০ মেগাওয়াট বড় বৃহৎ জলবিদ্যুতের, ৩১,৯৩০ মেগাওয়াট বায়ু শক্তির, ১০,৭৩০ মেগাওয়াট জৈবশক্তির, ৪,৯৪০ মেগাওয়াট ছোট জলবিদ্যুতের এবং ৬,৭৮০ মেগাওয়াট পারমাণবিক শক্তির অবদান। এই সংখ্যাগুলি চালু থাকা নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারতকে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রাখে।
এদিকে এক দশক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরেই ভারত বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বৃহত্তম নির্গমনকারী হিসেবে স্থান পায়। আন্তর্জাতিক জ্বালানী সংস্থা (আইইএ) অনুসারে প্রতি বছর ৩ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ দশকে দেশটির জ্বালানীর চাহিদা বিশ্বের সর্বোচ্চ হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যা হওয়ায় ক্রমবর্ধমান নগরায়ন ও শিল্পায়ন বিপুল শক্তির চাহিদাকে পরিচালিত করবে বলে প্রতিবেদনটিতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এটি অর্জনের জন্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুতের ক্ষমতা ২০২১ সালের চেয়ে ৩৫,০০০ মেগাওয়াট বেড়ে গিয়ে ২,৭৫,০০০ মেগাওয়াট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনটি অনুসারে ভারতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হলো নবায়নযোগ্য শক্তির সাহায্যে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো এবং বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের অর্ধেকেরও বেশি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কয়লার ব্যবহার কমানো।
বেঙ্গালুরুতে জি২০ এর সাম্প্রতিক জ্বালানী পরিবর্তন কর্মগোষ্ঠীর (ইটিডাব্লিউজি) সভায় একটি মূল বিষয় ছিল সবুজ প্রবৃদ্ধির সাথে শক্তি নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষার এই চ্যালেঞ্জটি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ এবং নতুন ও নবায়নযোগ্য শক্তি মন্ত্রী আর.কে. সিং উল্লেখ করেছেন পরিচ্ছন্ন জ্বালানীতে পরিবর্তনের চেয়ে জ্বালানীর নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
সিং বলেছেন রান্নার জ্বালানীর জন্যে বনের কাঠ ব্যবহারকারীদের মতো যাদের জ্বালানীতে প্রবেশাধিকার নেই তাদের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের চেয়ে পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আশা করা যায় না। ফলে বৈঠকে বেশিরভাগ দেশে আগামী ১৫ থেকে ২০ বছর জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির ব্যবহার অব্যাহত থাকার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলবে বলে একটি ঐকমত্য ছিল।
সৌর প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতি ও চ্যালেঞ্জ
সৌর আলোভোল্ট (পিভি) প্রযুক্তি ভারতে নবায়নযোগ্য শক্তি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং কয়লার উপর দেশটির নির্ভরতাও কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে বছরে প্রায় ৩০০টি পরিষ্কার ও রৌদ্রোজ্জ্বল দিন মিলে ভারত বছরে প্রায় ৫০ কোটি কোটি (মিলিয়ন বিলিয়ন) কিলোওয়াট-ঘন্টা সৌর শক্তি পায় যা দেশের এক বছর ব্যবহারের মোট জীবাশ্ম জ্বালানীর স্থিতিকে ছাড়িয়ে যায়।
আলোভোল্ট (পিভি) কোষ ব্যবহার করে সৌর শক্তিকে সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা যায়। কয়লা চালিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভারসাম্য বিধানের জন্যে এই বিদ্যুৎটি প্রচলিত গ্রিডের সাথে সংযুক্ত অথবা একটি ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করে রাস্তার আলো, জলের পাম্প, সৌরবাতির মতো বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, কোল্ড স্টোরেজ এবং অন্যান্য গার্হস্থ্য ও শিল্প যন্ত্রপাতিতে শক্তি যোগাতে একটি ইনভার্টার চালিয়ে গ্রিডের বাইরেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সরাসরি গ্রিডের জন্যে সৌর উদ্যান নামে ভারতের ভাদলা, পাভাগড়, কুরনুল এবং রেওয়ার মতো বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বৃহৎ সৌর প্রকল্প রয়েছে বলে কংগ্রেস সদস্য গৌরব পান্ধি একটি টুইটে তুলে ধরেছেন:
1) 2245 MW Bhadla in Rajasthan is world's largest Solar Park
2) 2050 MW Pavagada in Karnataka is world's 2nd largest Solar Park
3) 1000 MW Kurnool Ultra in Andhra is world's 7th largest Solar Park
4) 750 MW Rewa Ultra in MP is world's 12th largest Solar Park #असत्याग्रही_मोदी https://t.co/2BVKsNpSTK
— Gaurav Pandhi (@GauravPandhi) July 11, 2020
১) রাজস্থানের ২,২৪৫ মেগাওয়াট ভাদলা বিশ্বের বৃহত্তম সৌর উদ্যান
২) কর্ণাটকের ২,০৫০ মেগাওয়াট পাভাগড় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সৌর উদ্যান
৩) অন্ধ্রের ১,০০০ মেগাওয়াট কার্নুল আল্ট্রা বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম সৌর উদ্যান
৪) মধ্প্রদেশের ৭৫০ মেগাওয়াট রেওয়া আল্ট্রা বিশ্বের ১২শ বৃহত্তম সৌর উদ্যান #অসত্যগ্রাহী_মোদি
এমএনআরই প্রস্তাবিত ৪০,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬১টি উদ্যান অনুমোদন করেছে। ইতোমধ্যে ১০,০০০ মেগাওয়াট চালু হলেও বর্তমানে এদের বেশিরভাগেরই কাজ চলছে। মন্ত্রণালয় বলেছে সৌর উদ্যান উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ।
জাতীয় সৌর মিশন ছাদে সৌর স্থাপনের জন্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও সেপ্টেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত ভারতে মাত্র ১০,৪০০ মেগাওয়াট চালু হয়েছে।
“দেশ[টিকে] বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ছাদের সৌরবিদ্যুতের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে,” বলেছেন শিক্ষাবিদ ও (ভারত সরকা্রের) জ্বালানী বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি শান্তিপদ গন চৌধুরী। তিনি শুধু রাজস্থান, গুজরাট এবং কর্ণাটকের মতো কয়েকটি রাজ্যে অনুমোদিতছাদে সৌরবিদ্যুতের কার্যকারিতার জন্যে প্রয়োজনীয় নিট পরিমাপ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি ছাদের সৌরবিদ্যুৎ অনুমোদনের জন্যে একটি জাতীয় নীতি প্রয়োজন এবং বিতরণ কোম্পানিগুলির একটি অভিন্ন হার নেওয়া উচিত বলে পরামর্শ দেন। চৌধুরী আরো বলেন সহজ ব্যাংক ঋণ না থাকা ছাদে সৌরবিদ্যুতের অর্থায়নের আরেকটি বাধা।
উপরন্তু, জলাশয়ে আলোভোল্ট প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে ভাসমান সৌর স্থাপনার উদ্ভব হচ্ছে, যেমন মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়াতে বিশ্বের বৃহত্তম ৬০০ মেগাওয়াটের ভাসমান সৌর স্থাপনা চলছে। “স্থাপন করার জন্যে একটি উপযুক্ত জলাশয় খুঁজে পাওয়া ছাড়াও, জলাশয়ে ভাসমান প্যানেলগুলিকে সমর্থন করার জন্যে নোঙর ব্যবস্থার উচ্চ খরচও একটি চ্যালেঞ্জ,” বলেছেন চৌধুরী।
জ্বালানী নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ব বাড়াতে সৌর শক্তি সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলিকে বিকশিত করতে হবে। সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারি ঐতিহ্যগতভাবে শক্তি সংরক্ষণের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হলেও সীসা দূষণের কারণে এটি স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে। প্রয়োজনীয় উপাদান লিথিয়ামের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণভাবে ব্যবহৃত বিকল্প লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি বেশি ব্যয়বহুল।
বিকল্প সংবাদ সাইট অপেক্ষাকৃত_ভাল_ভারত কম দামের সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সম্পর্কে টুইট করে ক্রমবর্ধমান লিথিয়াম খনি বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করেছে:
(1/2) An alternative to the usual Lithium-ion batteries, these could reduce India’s dependence on imports, and can also be used in commercial applications including toys, solar and wind energy installations, inverters, and more.#wingifyearthhttps://t.co/OgvvanlQOu
— The Better India (@thebetterindia) February 2, 2023
(১/২) সাধারণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির একটি বিকল্প ভারতের আমদানি নির্ভরতা কমাতে পারে যা খেলনা, সৌর ও বায়ু শক্তি চালু, ইনভার্টার এবং আরো অনেক কিছুসহ বাণিজ্যিক অ্যাপ্লিকেশনগুলিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে৷
ভারত বর্তমানে প্রয়োজনীয় ধাতুর জন্যে আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির উপর নির্ভর করলেও জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকায় লিথিয়াম মজুদের আবিষ্কার ভবিষ্যতের জন্যে আশা সৃষ্টি করেছে।