বিদেশী অর্থদাতাদের নাম প্রকাশ করতে না পারার দায়ে ইনফোকম গণমাধ্যম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আইএমডিএ) লাইসেন্স স্থগিত করে দেওয়ার পর সিঙ্গাপুভিত্তিক সংবাদ পোর্টাল অনলাইন সিটিজেন (টিওসি) তার ওয়েবসাইট এবং সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
আইএমডিএ’র আদেশটিকে গণমাধ্যম স্বাধীনতার সমর্থকরা সিঙ্গাপুরে স্বাধীন গণমাধ্যম পরিচালনার নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির আরেকটি উদাহরণ হিসেবে নিন্দা করেছে।
অতীতে টিওসি সরকারি হুমকির মুখোমুখি হলেও এই প্রথমবারের মতো নিউজ পোর্টালটিকে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য করা হলো।
আইএমডিএ কেন রাজনৈতিক ওয়েবসাইটেরবিদেশী অর্থায়ন না পাওয়া নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ব্যাখ্যা করেছে:
বিদেশী সত্তা বা তহবিলের এমন সাইটগুলিকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করা থেকে বিরত এবং দেশীয় রাজনীতিকে বিদেশী প্রভাবমুক্ত রাখা নিশ্চিত করার জন্যেই এটা করা হয়েছে।
ইন্টারনেট এবং সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলি বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রভাবিত করা সহজ করে তোলার কারণে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।
আইএমডিএ টিওসি’র গ্রাহক মডেল বিদেশী স্বার্থ রক্ষার জন্যে কোম্পানির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার একটি পদ্ধতি হতে পারে বলে এটি নিয়ে সন্দিহান:
টিওসি’র গ্রাহক কাঠামোর একটি উপাদান গৃহীত “গ্রাহক অর্থায়ন” এর বিনিময়ে “গ্রাহকদের” নির্দিষ্ট নিবন্ধ লেখার সুযোগ দেয়। বিদেশী প্রভাবের একটা পথ হতে পারে বলে এটা একটা উদ্বেগের কারণ।
টিওসি তার সদ্য মুছে ফেলা অনুদান পাতায় গ্রাহকদের মতামত, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং বৈশিষ্ট্যমূলক গল্পের জন্যে অর্থ প্রদানের প্রস্তাব করেছে।
টিওসি সম্পাদক টেরি জু ওয়েবসাইটের গ্রাহক বৈশিষ্ট্য তাদের সম্পাদকীয় কাজে প্রভাব ফেলে না বলে স্পষ্ট করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাজস্ব উৎপাদনের এই আদর্শটিকে বিজ্ঞাপন বলা যাবে না:
এক্ষেত্রে আপনার পৃষ্ঠপোষক, গ্রাহকের মতো আরো অন্যান্য সহায়করা টিওসি যে ধরনের গল্প বলে থাকে সেরকম পরিপ্রেক্ষিতে একটি ভূমিকা পালন করতে পারার জন্যে সেই স্তরটিতে যায়।
টিওসির আইনি দলের সদস্য লিম টিন সংবাদ সংস্থাটির গ্রাহক মডেল নিয়ে খুঁতখুঁত করার জন্যে আইএমডি’র সমালোচনা করেছেন:
তাদের (টিওসির) গ্রাহক মডেলটি ন্যায্য হতে পারে না বলে তাদের সমস্ত গ্রাহককে দাতা হিসাবে গণ্য করা উচিত এরকম অভিযোগ করে আপনি টিওসির ব্যবসায়িক কাঠামোটির উপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছেন।
এই বিষয়ে আপনার অবস্থান অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ এবং সন্দেহজনক। আমাদের মক্কেল আপনাদেরকে গ্রাহক মডেল থেকে গ্রাহকরা কীভাবে উপকৃত হয় তার সম্পূর্ণ প্রমাণ দেওয়ার পরেও আপনারা বলছেন যে গ্রাহক মডেলটির সত্যতা প্রমাণের কোন দলিল নেই।
টেরি জু আরো বলেছেন আইএমডি’র পদক্ষেপ টিওসির মতো স্বাধীন গণমাধ্যম সংস্থা মোকাবিলায় সরকারের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রতিফলিত করে:
আইএমডিএ'র পদক্ষেপ সিঙ্গাপুরে মুক্ত সংবাদমাধ্যমকে হয়রানি ও ভয় দেখানোর উপায় ছাড়া আর কিছুই নয়। সিঙ্গাপুরের সংস্থাটি ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের আশ্রয় নেওয়ার ফলে তহবিলগুলি কোথা থেকে আসছে সে সম্পর্কে সরকারের অসচেতন হওয়া অসম্ভব।
অনুমোদন প্রদানকারী গোষ্ঠীটির উদ্দেশ্য শুধু সম্ভাব্য দাতা ও গ্রাহকদের মনে ভীতি সঞ্চার করে সিঙ্গাপুরের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সমর্থন বন্ধ করা।
টিওসি’র ওয়েবসাইট এবং সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার পর অনেক সিঙ্গাপুরবাসী এই ঘটনার শীতল প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সাংবাদিক কার্স্টেন হান মূলত সরকারপন্থী মূলধারার গণমাধ্যম ওয়েবসাইটগুলির কাভার না করা প্রতিবেদনগুলি প্রকাশে টিওসি’র ভূমিকা স্বীকার করেছেন:
TOC has provided space for issues that wouldn't have had space elsewhere. Its presence, its work, *has* shifted the needle. It's pushed the mainstream media to cover (or do a better job covering) issues like migrant workers’ rights, which is now quite commonly reported on.
— Kirsten Han 韩俐颖 (@kixes) September 16, 2021
অন্য কোথাও জায়গা পাবে না এমন সমস্যাগুলিকেই স্থান দিয়েছে টিওসি। এর উপস্থিতি, এর কাজ সুর বদল *করেছে*। এটি মূলধারার গণমাধ্যমগুলিকে বর্তমানে সাধারণভাবে প্রতিবেদন করা অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারের মতো বিষয়গুলি কাভার করা (বা আরো ভাল কিছু) করতে বাধ্য করেছে।
সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের ড্যানিয়েল বাস্টার্ড সমালোচনামূলক প্রতিবেদনের কারণে টিওসিকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন:
আমাদের আর বোকা বানানো চলবে না: সিঙ্গাপুরের বেশিরভাগ গণমাধ্যম গঠন করা সরকারপন্থী সংবাদপত্র এবং সংবাদ সাইটগুলির কোনটিই টিওসির মতো অবিরাম হয়রানির শিকার নয়, বরং আইওএমডিএ’র এই অনুরোধের আওতা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত। স্পষ্টভাবেই, সাইটটিকে তার সম্পাদকীয় স্বাধীনতার জন্যেই এই মূল্য চুকাতে হচ্ছে।
টেরি জু টিওসির অনুসারীদের ওয়েবসাইট বন্ধ করা একটি সাময়িক সমস্যা বলে আশ্বস্ত করেছেন।
প্রায় ১৫ বছর কর্মকাণ্ড চালানোর পরে অপ্রত্যাশিতভাবে যেভাবে টিওসিকে বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে তা বর্ণনা করার চেয়ে দুঃখজনক কোন কিছু নেই। কারণ আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে এটা কেবল টিওসি’র কার্যক্রমের একটি সাময়িক বিরতি এবং সিঙ্গাপুরবাসী, এর সমর্থক এবং বৃহত্তর জনসাধারণের সেবা করার জন্যে টিওসি নিজেকে কীভাবে আরো উন্নত করতে পারে তা প্রতিফলনের সময়।
ইতোমধ্যে আইনি প্রতিনিধির মাধ্যমে টিওসি আদালতকে আইএমডিএ’র জারি করা স্থগিতাদেশটির একটি বিচারিক পর্যালোচনা করতে বলেছে।