কোভিড-১৯ যুদ্ধের সময় নাইজেরীয়দের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রশ্ন

একজন নাইজেরীয় তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। ছবির কৃতজ্ঞতা: পেক্সেলের মাধ্যমে মুহাম্মদতাহ ইব্রাহিম মা’জি [ব্যবহারের জন্যে উন্মুক্ত]।

সম্পাদকের দ্রষ্টব্য: নীচের পোস্টটি সহ-রচনা করেছেন অতিথি লেখক টমিওয়া ইলোরি এবং আদেবোয়ে আদেগোকে। ইলোরি হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার কেন্দ্রের একজন গবেষক ও নীতি বিশ্লেষক এবং আদেগোকে হলেন ডিজিটাল অধিকার প্রচারক, নীতি বিশ্লেষক এবং নিখিল-আফ্রিকীয় ডিজিটাল অধিকার সংস্থা প্যারাডাইম উদ্যোগের কর্মসুচি ব্যবস্থাপক।

কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কভারেজটি দেখুন।

২০২০ সালের ৫ এপ্রিল তারিখে নাইজিরিয়ার রাজ্যপালদের একটি ফোরাম কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিভিন্ন পরিষেবা সরবরাহ করার জন্যে নাইজেরিয়ার একটি টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা এমটিএন নাইজেরিয়ার সাথে অংশীদারিত্ব করেছে। উদ্দেশ্য হলো গ্রাহকদের তথ্য ব্যবহার করে যোগাযোগ অনুসরণ, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত উপশমকারী পদক্ষেপ ও পরিষেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা সরবরাহ করা।

নাইজেরিয়ার ৩৬টি রাজ্যপালকে নিয়ে “সক্রিয় ও কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্তি চর্চা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সুশাসন এবং টেকসই উন্নয়নের প্রচারের” একটি উদ্দেশ্য নিয়ে ফোরামটি গঠিত।

এই পদক্ষেপটি তথ্য ভাগাভাগি, গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাহলে নাইজেরীয় নাগরিকরা প্রচলিত আইনগুলির সাথে সঙ্গতি বিধান করে ন্যূনতম ঝুঁকিতে কীভাবে অনুকূল ফলাফল পেতে পারে?

প্রতিকূলতা উদ্ভাবনের জন্ম দেয়

কোভিড-১৯ সমাজগুলিকে করণা ভাইরাস বিস্তার রোধে আইনীভাবে অনুমোদিত উদ্ভাবনামূলক সমাধান খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ জানায়। নাগরিকদের তথ্যে সরকারি প্রবেশাধিকার উপযোগীকরণ সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং নাগরিক সমাজ গোষ্ঠীগুলির জন্যে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে।

নাইজেরিয়ার প্রায় ২০ কোটিরও বেশি ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যার মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১৮ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি লোক তাদের দৈনন্দিন জীবনে সক্রিয় মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে। কোভিড-১৯ মোকাবেলা বিবেচনায় প্রতিরোধমূলক শিক্ষা এবং যোগাযোগ অনুসন্ধানের পদক্ষেপগুলির সম্ভাব্য দৌড় অনেক দূর।

তবে এই পদক্ষেপগুলি সরকারের গ্রাহকদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজগুলিতে প্রবেশ করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। ২০১১ সালে্র টেলিফোন গ্রাহক বিধিমালা গ্রাহকদের তথ্য নিবন্ধনের জন্যে একটি কাঠামো এবং এধরনের জাতীয় উদ্দেশ্যে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি করে। বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের অপব্যবহার, ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার এবং নিরাপত্তাহীনতার মতো বেশ কয়েকটি ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এই বিধিটি মোবাইল ফোন গ্রাহকদের বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের একমাত্র আইনি কাঠামো।

নাইজেরীয় টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নাইজেরীয় যোগাযোগ কমিশন (এনসিসি) এর উদ্দেশ্যগুলিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বিধিমালাসহ সহায়ক আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখে।

বিধি ২(খ)-তে বলা হয়েছে যে “কেন্দ্রীয় ডাটাবেজটি কমিশনের মধ্যেই স্থায়ীভাবে থাকবে এবং গ্রাহকদের তথ্যের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।”

এসব ডাটাবেজে “লাইসেন্সকৃত বা স্বতন্ত্র নিবন্ধনকারী এজেন্টদের নথিভুক্ত ও সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য”সহ গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে।

বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর বিস্তার মোকাবেলায় ব্যবহৃত তথ্যগুলি হলো ব্যক্তিগত তথ্য যা আসলে এই উদ্দেশ্যে ভাগাভাগি বা প্রস্তুত করা হয়নি।

প্রবিধানগুলি এনসিসির ভোক্তা অনুশীলন প্রবিধানের বিধি, ২০০৭ এর মাধ্যমে এই তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দেয় যাতে অবশ্যই ভোক্তাদের অন্যান্য অধিকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যায্য ও আইনী ব্যবহার এবং তথ্যের যথার্থতা থাকতে হবে।

সম্ভবত এই প্রবিধানগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক হলো লাইসেন্সধারীরা- বিশেষত পরিষেবা সরবরাহকারীরা – কীভাবে প্রবিধান ৩৫(২) অনুসারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে তার বিবরণ। এতে বলা হয়েছে যে তথ্য সংগ্রহের জন্যে এবং এর উদ্দেশ্যে সম্পর্কে গ্রাহকদের নোটিশ পেতে হবে; এই জাতীয় তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার এবং প্রকাশের ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাহকদের ইচ্ছে বিবেচনা করতে হবে; এবং এটি সুরক্ষার জন্যে এই জাতীয় তথ্য এবং সুরক্ষা ব্যবস্থায় অবশ্যই গ্রাহকের প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।

নাইজেরিয়ার ডেটা সুরক্ষার আইনী চিত্রটি সরকারি সংস্থাগুলি কীভাবে ডেটা সুরক্ষার নীতিগুলি নকল করে সেই বিবেচনায় বৃহত্তরভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও – উপরে আলোচিত প্রবিধান দুটিই কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গ্রাহকদের তথ্যে প্রবেশাধিকারের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

নীতিগুলির এই অনুলিপি মূলত নাইজেরিয়ায় একটি বহু-অংশীজনের উৎস থেকে প্রাপ্ত সমন্বিত ও প্রাথমিক ডেটা সুরক্ষা আইন না থাকার কারণেই ঘটেছে।

উপরে উল্লিখিত প্রবিধানগুলির নীতি্মালা ২০২০ সালের এপ্রিলে মোবাইল যোগাযোগের বৈশ্বিক ব্যবস্থার (জিএসএমএ) কোভিড-১৯ এর জন্যে মোবাইল গোপনীয়তার নীতিমালাতে জোরালোভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।

জবাবদিহিতা জন্যে তদারকি প্রতিষ্ঠা

এই প্রবিধানগুলি বাস্তবায়নের একটি ব্যবহারিক উপায় হলো একটি প্রয়োজনভিত্তিক তাৎক্ষণিক বহু-অংশীজন কমিটি প্রতিষ্ঠা করা। টেলিফোন গ্রাহক প্রবিধানের ৫ নং বিধিতে ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ডাটাবেজটি নাইজেরীয় নাগরিকদের জন্যে আস্থায় রাখা নাইজেরীয় সরকারের সম্পত্তি হওয়ায় এটি কোন ক্ষেত্রে উত্থাপিত অপব্যবহারের কোন সম্ভাব্য দাবি থেকে সরকারকে দায়মুক্তি দেয় না।

ব্যবহারিক সময়সীমার মধ্যে আইনের কথাগুলির দায়বদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতার তদারকি করা একটি কমিটি নাগরিকদের করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।

এখানে বিবেচনা করার মতো কিছু বিষয় দেওয়া হলো:

প্রতিনিধিত্ব: কমিটিতে অবশ্যই সরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত, গবেষণা ও উন্নয়ন, নীতিনির্ধারক ইত্যাদিসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নানা ধরনের অংশীজনদের সদস্য হিসেবে নিতে হবে। এটি নাগরিকদের তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় নীতিতে জবাবদিহিতাকে মূলধারায় নিয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি করে।

সঙ্গতিবিধান ও বাস্তবায়ন: এই কমিটির বেশিরভাগ দায়িত্ব হলো বিদ্যমান আইন মেনে চলার পাশাপাশি গ্রাহকদের তথ্যে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে অন্যান্য কিছুও বাস্তবায়ন করা। গ্রাহকের সম্মতিটি খবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ নাইজেরীয়কে এই জাতীয় সম্মতি জানাতে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়াও যাবে না। নেতিবাচক প্রভাবগুলি হ্রাস করার জন্যে গ্রাহকের সম্মতি সুরক্ষাকারী পছন্দ-অপছন্দের সুযোগসম্পন্ন ইউএসএসডি সঙ্কেতের মতো আরো ব্যাপক এবং প্রবেশযোগ্য করে নকশা প্রণয়ন করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ইউএসএসডি বা “অকাঠামোগত পরিপূরক পরিষেবা ডেটা” হলো প্রায় প্রতিটি মোবাইল ফোনে ব্যবহারযোগ্য সাড়া প্রদান করার মতো তালিকা-ভিত্তিক একটি প্রযুক্তি। এর সঙ্কেতগুলি ব্যবহারকারীদের ডায়াল করার মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ এবং পরামর্শ পরিষেবাদিতে প্রবেশের সম্ভাবনার সুযোগ করে দেয়।

এছাড়াও গ্রাহকদের কাছ থেকে সম্মতি জানাতে অক্ষমতার সম্ভাব্য ফলাফলের জন্যে প্রস্তুতি নিতে কমিটিকে অবশ্যই অনলাইনের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রগুলিতে গ্রাহকদের তথ্য ব্যবহারের উপর পর্যায়ক্রমিক নিরীক্ষণগুলির প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিকার: এই কমিটি ক্ষুদ্ধ গ্রাহকদের আপত্তি সমাধানের জন্যে বিভিন্ন পদ্ধতি তৈরি করতে পারে। সেখানে তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার এবং প্রকাশের ক্ষেত্রে অভিযোগ সমাধানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ: জবাবদিহিতার দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ স্বচ্ছতা এবং এই লক্ষ্যে কমিটিকে অবশ্যই জনগণকে তার সম্ভাবনা, ক্ষমতা এবং কার্যাদি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এটিকে অবশ্যই ডেটা ব্যবহার, সুরক্ষা পদক্ষেপ এবং প্রতিকার পাওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এই কমিটি এই জাতীয় ডেটা ব্যবহারের সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিতে পারে।

প্রাপ্ত সব ধরনের আইনি উপায়ে কোভিড-১৯ এর সাথে লড়াই করা জরুরি। তবে গোপনীয়তার অধিকারসহ মানবাধিকার সুরক্ষার অজুহাতে এসব উপায় ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

কোভিড-১৯ সম্পর্কিত পদক্ষেপের জন্যে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ ব্যবহার করতে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কম ঝুঁকিসম্পন্ন সেরা নকশা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

সরকারের ডেটা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের সাম্প্রতিক ডাকটিকে বিলম্বিত মনে হলেও বর্তমান কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জের আলোকে এটি এখনো একটি স্বাগত আহ্বান। এটি নাইজেরীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্যে বহু-অংশীজন পদ্ধতির ব্যবহার করে কোভিড -১৯ এবং ভবিষ্যতের জরুরী পরিস্থিতিতে আরো ঐক্যবদ্ধ একটি রণাঙ্গন প্রস্তুতের জন্যে এর নানা ধরনের আইনকে একসূত্রে গাঁথার একটি সুযোগ।

উপরে বর্ণিত উপায়গুলি আইনিভাবে অনুমোদনযোগ্য অন্যান্য পদক্ষেপগুলিকে নিষিদ্ধ না করলেও দেখায় যে মানবাধিকার সুরক্ষাগুলি জনসাধারণের জরুরি অবস্থায় কতটা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .