আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০-এ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন নগরের ভোটাররা ঢাকা দক্ষিণ এবং ঢাকা উত্তরের মেয়র কে হবেন, সেটা নির্ধারণ করবেন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। প্রচারণায় তারা ভোটার পরিবেশবান্ধব সবুজ নগরের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরীর একটি এবং প্রতিবছর শহরটির অনেক মানুষই পরিবেশ দূষণের ফলে সৃষ্ট রোগে ভুগে মারা যান। সীমিত সম্পদ দিয়ে এই মেগাসিটির ক্রমবর্ধমান বর্জ্য অপসারণ করা ঢাকার যেকোনো মেয়রের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ৭৭৮ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারে তারা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টার, ব্যানার ব্যবহার করছেন। আর এর ফলে পরিবেশবান্ধব সবুজ শহর গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
পলিথিনে মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এই প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো অপসারণ করতে সিটি কর্পোরেশনের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যৌথভাবে করা এক বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শহরগুলোতে যে প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, তার মাত্র ৩৬% আবার ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ৩৯% মাটিতে ফেলে দেয়া হয়। আর ২৫% পানি এবং মাটিকে দূষণ করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই পলিথিনে মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টারের পরিবেশের উপর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই পোস্টারগুলো শেষমেষ শহরের ড্রেনে গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করবে বলে তারা আশংকা করছেন।
মানবাধিকার কর্মী মাহমুদুল হাসান তার ফেইসবুকে লিখেছেন:
উন্নত বিশ্ব যখন পরিবেশ রক্ষায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে তখন আমাদের শহর পরিবেশের জন্য অতিব ক্ষতিকারক লক্ষ লক্ষ পলিথিনের পোস্টার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে।
এইসব পোস্টার যারা ঝুলিয়েছে তাদের ভোট দেয়া তো দুরের কথা তাদের প্রত্যেকের নামে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা উচিত। এদের কেউ ভোট দিবেন না, এরা শুধু আমাদের জন্য নয় সারা পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা বেশিরভাগই বসবাস করেন রাজধানী ঢাকাতে। তাদের চোখের সামনেই ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতিকারণ লেমিনেটেড পোস্টার। বিষয়টি নিয়ে তারা কিছু করছেন না, সেদিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল্লাহ মাহমুদ লিখেছেন:
হিসাব কষে দেখুন কতশত টন পলিথিন মোড়ানো পোস্টার ঢাকার আকাশ ঢেকে রেখেছে!
নির্বাচন শেষে এই টন টন পলিথিন হয় বস্তিতে বস্তিতে জ্বালানী হয়ে পুড়ে বায়ুদূষণ ঘটাবে, নয়তো আবর্জনা হিসেবে ড্রেনে ঢুকবে, মাটিতে মিশবে।
নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীরা নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেখানে ঢাকাকে সিঙ্গাপুরের মতো আধুনিক শহর করারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সাদ্দাম হোসেন নামের একজন টুইটার ব্যবহারকারী আবর্জনামুক্ত ঢাকা শহর চেয়ে টু্ইট করেছেন:
লাগবে না আমার সিঙ্গাপুর সিটি কিংবা লাস ভেগাস
যিনি নির্বাচনে জয়ী হবেন, তিনি যেন নির্বাচন শেষ হওয়ার ১ সপ্তাহের ভিতর ঢাকাকে পোস্টার মুক্ত করেন।
দেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে…আর আপনারা এখনও মোঘল আমলের প্রচারণাতেই পড়ে আছেন https://t.co/TpWBtjGTx6— Saddam Hossain (@saddambd93) January 22, 2020
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সময়ে প্রার্থীদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রকাশ করেছে। কিন্তু সেই নির্বাচনী আইনে লেমিনেটেড পোস্টারের ব্যবহার নিয়ে কিছু বলা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পলিথিনে মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহার বন্ধের আহ্বান করা সত্ত্বেও প্রার্থীরা সেটা মানছেন না।
গত ২২শে জানুয়ারী বাংলাদেশের হাইকোর্ট পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে লেমিনেটেড বা পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাশাপাশি লেমিনেটেড পোস্টার উৎপাদন ও ছাপানোর উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা এতো পরে এসেছে যে, ততোদিনে প্রার্থীরা বিপুল পরিমাণ পলিথিনে মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টার টানিয়ে ফেলেছে।
রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে প্লাস্টিক আচ্ছাদিত বা লেমিনেটেড পোস্টার উৎপাদন, ছাপানো ও প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্বাচনকে সামনে রেখে সাঁটানো বা প্রদর্শিত পোস্টার নির্বাচনের পরপর যথাযথভাবে অপসারণ ও ধ্বংসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।https://t.co/et9pDk1auY
— Niaz@Shopno30 (@shopno30by_niaz) January 22, 2020
বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার
বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগের প্রচলন হয় আশির দশকে। এর আগে মানুষ বাজারে খেলে বাঁশের তৈরি খালুই বা পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতেন। কিন্তু পলিথিন আসার পর বিক্রেতারা পণ্য কিনলেই পলিথিনের ব্যাগে সেটা ভরে দিতেন। এর জন্য কোনো টাকা দিতে হতো না। ফলে, এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পলিথিন বিপর্যয় রোধ করতে সরকার ২০০২ সালে আইন করে এর উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম দেশ পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। শুরুর দিকে পলিথিনের ব্যবহার কমানো গেলেও আইন প্রয়োগে শিথিলতার কারণে আবারো বেড়ে গেছে। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী-নালা, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে বাংলাদেশের হাইকোর্ট দেশের সব উপকূলীয় অঞ্চল ও হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্টে আগামী ১ বছরের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
1 টি মন্তব্য
Good Post. Onek valo laglo post ta deke. insallah unara sob poster niye nebe. arokom aro valo post chai
Khan Best Fashion House in Purbadhala.