নেটনাগরিক প্রতিবেদন: সমালোচকেরা ইন্দোনেশিয়ার প্রাদেশিক ইন্টারনেট বন্ধকে ‘বর্ণবাদী’ বলছে

পাপুয়া প্রদেশের রাজধানী জয়পুরে পাপুয়ার গভর্নরের কার্যালয়ের বাইরে একটি বিক্ষোভ। ছবিটি সুয়ারা পাপুয়ার আর্নল্ড বেলাউয়ের সৌজন্যে। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

অ্যাডভক্স নেট-নাগরিক প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অধিকারগুলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং উদীয়মান প্রবণতাগুলির একটি আন্তর্জাতিক আলোকপাত উপস্থাপন করে। এই প্রতিবেদনটিতে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ২২ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদ এবং ঘটনা প্রতিফলিত হয়েছে।

সামরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পরে ২১ আগস্ট তারিখ থেকে ইন্দোনেশীয় প্রদেশ পাপুয়া এবং পশ্চিম পাপুয়ায় মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

১৬ আগস্ট তারিখে সেনাসদস্যরা পাপুয়ার শিক্ষার্থী কর্তৃক ইন্দোনেশিয়ার পতাকা অবমাননার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুরাবায়া শহরে একটি ছাত্রাবাসে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাদের “বানর” বলে অভিহিত করে।

এটি সাধারণত ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অংশে বসবাসরত বেশিরভাগ সংখ্যাগুরু ইন্দোনেশীয় অস্ট্রোনেশীয় বংশোদ্ভূতদের থেকে অপেক্ষাকৃত কৃষ্ণবর্ণের এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নিউ গিনি দ্বীপ অঞ্চলের লোকদের বিরুদ্ধে একটি বর্ণবাদী গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

একটি যুব নাগরিক সংস্থার হোয়াটসঅ্যাপে ভাগাভাগি করা একটি ছবির প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী এই অভিযান চালিয়েছিল। ছবিটিতে ১৭ আগস্ট তারিখে দেশটির স্বাধীনতা উদযাপনের প্রাক্কালে নর্দমায় একটি ইন্দোনেশীয় পতাকা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল।

পরের দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আনুমানিক ৪২ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করলেও কিছুক্ষণ পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আটক এবং সৈন্যদের বর্ণবাদী গালি ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া হিসাবে রাজধানী জাকার্তাসহ উভয় প্রদেশেই বিক্ষোভ ও দাঙ্গা চলছিল।

২১ আগস্ট তারিখে যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছিল যে পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সরকার উভয় প্রদেশে মোবাইল ডেটা পরিষেবা বন্ধ করে দেবে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় ইন্দোনেশীয় আইনি সহায়তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইসনুর বলেছেন সরকারের তথ্য নিষিদ্ধ করার কাজটি “পাপুয়ার প্রেক্ষিতে বর্ণবাদী।” তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে বিক্ষোভের ফলে অন্যান্য প্রদেশে কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ হয়নি। বাস্তবে এই বছরের শুরুতে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কণ্ঠরোধ করা হয়েছে অন্যান্য স্থানে।

দক্ষিণএশীয় বাক-স্বাধীনতা নেটওয়ার্কও এই অবরোধের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে lএকটি আবেদনের নেতৃত্ব দেয়। প্রকাশের সময় আবেদনটি  ২০,০০০ টিরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিল।

এই বিক্ষোভগুলি ইন্দোনেশীয়দের ও অস্ট্রেলীয় সরকারের উপনিবেশবাদ এবং তাদের পাপুয়া ও পশ্চিম পাপুয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের আগ্রাসী অনুসরণের সমালোচনা করা ইউটিউবের একটি ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও অপসারণের জন্যে সরকারী কর্তৃপক্ষগুলোকে অনুরোধ জানানোর সুযোগ করে দিতে পারে। ২৭ আগস্ট তারিখে সরকারের নির্দেশে মেলবোর্ন-ভিত্তিক ব্যঙ্গাত্মক সংবাদ এবং ভাষ্যকার গোষ্ঠী দ্য জুসের তৈরী ভিডিওটি ইন্দোনেশীয় এলাকার মধ্যে ভূ-অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।

ইউটিউব হংকং বিক্ষোভের ওপর চীনপন্থী মেসেজ পাঠানোর জন্যে ২১০টি চ্যানেলকে অবরুদ্ধ করেছে

গুগল চীনা সরকারের সাথে যুক্ত সমন্বিত নেটওয়ার্কের অংশ বলে কথিত ২১০টি ইউটিউব চ্যানেলকে স্থগিত করেছে। সংস্থাটি অ্যাকাউন্টগুলির হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে “প্রভাববিস্তারকারী অভিযান” চালানোর কথা বলেছে।  হিসাবে  চলছে। একই ধরনের কারণে  টুইটার ৯৩৬টি অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা  এবং ফেসবুক বেশ কয়েকটি পৃষ্ঠা, গোষ্ঠী এবং অ্যাকাউন্ট সরিয়ে দেওয়ার কয়েক দিন পরেই এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছিল।

গুগলের হুমকি বিশ্লেষণ গোষ্ঠীর পরিচালক শেন হান্টলি একটি ব্লগ পোস্টে বলেছেন যে তার দল চ্যানেলগুলিকে অ্যাকাউন্টগুলির উৎস কোথায় সেটা না বলে বরং তা গোপন করার জন্যে “ভিপিএন এবং অন্যান্য পদ্ধতি” ব্যবহার করার বিষয় খুঁজে পেয়েছে।

ইন্টারনেট বন্ধের আবেদন জানানোর পর কাশ্মীরি চিকিৎসক আটক

কাশ্মীরের এক চিকিৎসক বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকারে কর্তৃপক্ষের কাছে এই অঞ্চলে চিকিৎসা সুবিধার জন্যে ইন্টারনেট সংযোগ পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার আবেদন জানানোর পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত এই রাজ্যটি আগস্টের শুরু থেকেই মোটামুটি যোগাযোগের অন্ধকারে রয়েছে।.

রোগীদের স্বাস্থ্য তথ্য এবং বিনামূল্যে ওষুধের জন্যে তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য সমস্তই ইন্টারনেট ভিত্তিক সিস্টেমে সঞ্চিত রয়েছে বলে ডাঃ ওমর সেলিম ব্যাখ্যা করে বলেন “স্বাস্থ্যসেবা[টি] সম্পূর্ণরূপেই একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবস্থা।” “ল্যান্ড ফোনের লাইন এবং ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া আমরা বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করতে পারছি না,” তিনি বলেন।

সাক্ষাৎকারটি দেওয়ার পরপরই সেলিমকে  আটক করা হয়েছিল এবং সম্ভবত এই অঞ্চলে যোগাযোগ অন্ধকারের কারণেই হয়তো তার বর্তমান অবস্থাও জানা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার অভিযোগে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে

২৬ আগস্ট তারিখে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় মার্কিন সীমান্ত কর্তৃপক্ষ এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে আটক করে দেশে ফিরিয়ে দেয়।  এবং তাকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের আগেই শিক্ষার্থী ভিসা পেলেও ইসমাইল আজজাওয়িকে বোস্টনে পৌঁছানোর সময় থামিয়ে দিয়ে একজন সীমান্ত কর্মী তার ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তল্লাশী এবং তার সামাজিক মিডিয়া প্রোফাইল স্ক্যান করেছিল। মহিলা কর্মীটি আজজাওয়িকে বলেছিল যে তিনি “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পোস্ট করে এমন লোকদের খুঁজে পেয়েছেন।” এতেই মনে হচ্ছে কর্তৃপক্ষ আজজাওয়ির ভিসা প্রত্যাহার করে তাকে লেবাননে যেখানে তার পরিবার থাকে সেখানে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের ন্যায্যতা খুঁজে পেয়েছে।

এই পদক্ষেপটিকে প্রত্যাখ্যান করে একটি বিবৃতিতে পেন আমেরিকার সামার লোপেজ লিখেছেন যে “কারো বন্ধুরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছিলো বলে তাদের দেশে প্রবেশ করতে না দেওয়ার মানে হলো বাক-স্বাধীনতার নীতির প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন।”

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকরা সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে এই আশায় আলোচনা করছেন যেন ১৭-বছর বয়সের এই তরুণটি ফিরে এসে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তার ক্লাস শুরু করতে পারে।

টোঙ্গা সরকার ফেসবুক নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছে

রাজপরিবারের প্রতি ‘অপবাদ’ বিবেচনা করা বিভিন্ন পোস্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসাবে ফেসবুকের ওপর একটি নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পলিনেশীয় অঞ্চলের টোঙ্গা সরকার।

প্রায় এক লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের টোঙ্গাতে আনুমানিক ৬২,০০০ ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। রাজতন্ত্রের সামাজিক মিডিয়া বিশেষতঃ ব্যবহারকারীদের প্রায়শ:ই ছদ্মনাম ব্যবহার করতে পারা ফেসবুকের প্রতি সমালোচনা রয়েছে।

রাজা এবং তার কন্যার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক একটি “যৌন প্রকৃতির অভিযোগ” প্রধানমন্ত্রীকে রাগান্বিত করেছে। তিনি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয় মঞ্চটি নিষিদ্ধ করার বিষয় বিবেচনা করার জন্যে একটি বহু-সংস্থার কার্যকরী দল গঠন করেছেন। মঞ্চটিতে প্রবেশাধিকার আটকাতে দেশের একমাত্র ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী টোঙ্গা কেবলের আদালতের অনুমোদন নাকি একটি সরল নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন হবে তা প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ করেননি।

মেক্সিকোর নারীবাদীরা বড় বড় প্রযুক্তিকে অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বলেছে

নারীবাদী সংস্থাগুলি সামাজিক গণমাধ্যমে নারীদের বাক-স্বাধীনতার অধিকার এবং নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্যে আরও বৃহত্তর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে টুইটার এবং ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি মঞ্চগুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আর্টিকেল ১৯, ডিজিটাল অধিকার, আর৩ডি এবং প্রগতিশীল যোগাযোগ সমিতিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী সংস্থাগুলিকে অনলাইনের অন্যান্য মৌলিক অধিকার সীমাবদ্ধ না করে “সামাজিক প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে নারীদের লক্ষ্য করে হয়রানি, ভয় দেখানো এবং হুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া শাণিত করার” এবং হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে একটি বিবৃতি জারি এবং স্বাক্ষর করেছে।

গোষ্ঠীগুলি মেক্সিকো জুড়ে একাধিক প্রকাশ্য বিক্ষোভের মাধ্যমে দেশের নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং মেক্সিকোতে নারীদের হত্যা বা “ফেমিসাইড” প্রবণতা বৃদ্ধি সম্পর্কে কথা বলার পরে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারী হিসেব অনুসারে মেক্সিকোতে প্রতিদিন ১০ জন নারী নিহত হন। বিক্ষোভকারীরা সরকারী কর্মকর্তাদের প্রতি নারীদের বিরুদ্ধে প্রায়শ:ই দায়মুক্তি দেওয়া অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে। এধরনের ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে অনলাইনে সমর্থনের ইতিবাচক বিভিন্ন বার্তার সাথে সাথে অনলাইন হয়রানির এক বিশাল তরঙ্গও দেখা যায় বলেই প্রযুক্তি মঞ্চগুলির প্রতি এই আবেদনটি করা হয়েছে।

New research

Breaking Through the Ambivalence: Journalistic Responses to Information Security Technologies (দ্ব্যর্থবোধকতার মাধ্যমে বাঁধা অতিক্রম: তথ্য সুরক্ষা প্রযুক্তিগুলির প্রতি সাংবাদিক প্রতিক্রিয়া) – জেনিফার হেনরিখসেন, ডিজিটাল সাংবাদিকতা

Evolving Phishing Attacks Targeting Journalists and Human Rights Defenders from the Middle-East and North Africa (মধ্য-প্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সুরক্ষাকারীদের লক্ষ্য করে বিকাশমান প্রতারণামূলক আক্রমণ) – অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

নেটনাগরিক প্রতিবেদনের গ্রাহক হোন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .