বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পরিচিত যানজটের শহর হিসেবে। তাই, যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সরকার ঢাকায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল (এমআরটি ৬) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আশা করা হচ্ছে, এতে ঢাকাবাসী নিত্যদিনের জ্যাম থেকে মুক্তি পাবেন। কিন্তু এই মেট্রোরেল প্রকল্প এখন নগরবাসীর যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণযজ্ঞের কারণে শহরের যানজট এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যাকে বলা যায় নট নড়নচড়ন অবস্থা। তবে এই অরিজিনাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সরকার আরো দু’টি নতুন মেট্রোরেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও সরকারের এই ঘোষণায় বেশিরভাগ নগরবাসীই খুশি হতে পারেননি। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
ঢাকায় মেট্রোরেলের দুর্ভোগ
২০১৬ সালে ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি ৬) স্থাপনের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ২০২১ সালে কাজ শেষ হবে।
মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের কারণে ঢাকায় যাতায়াতের ভোগান্তির শেষ নেই। কারণ, চওড়া সড়কের অর্ধেকই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে বাকিটুকু রাস্তা চলাচলের জন্য আছে, সেই রাস্তায় বাস চলে হাঁটার গতিতে। যাত্রী সাধারণদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যানজটে। তাছাড়া নির্মাণ কাজের কারণে ধুলার অত্যাচার বেড়েছে। বেড়েছে শব্দ দূষণও।
আবদুল আওয়াল নামের একজন পাঠক প্রথম আলো পত্রিকার মন্তব্যের ঘরে সেই ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে লিখেছেন:
এক মেট্রোরেলের কাজের জন্য জ্যামে বসে থাকতে থাকতে পশ্চাৎদেশ যে পরিমান ঘা হয়েছে তা শুকাতে শুকাতেই আরও কয়েক বছর লাগবে, তার উপর আরও দুইটা!!! এই জীবনে আর ঘা শুকানো হচ্ছে না বস!!!
প্রথম আলোর ওয়েবসাইটের মতো তাদের ফেইসবুক পেইজের সংবাদ লিংকের নিচেও অনেকে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সময়কার ভোগান্তির কথা তুলে ধরেছেন। রাইসা মল্লিক নামের একজন পাঠক লিখেছেন:
জ্যামে জীবন শেষ, বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, দয়া করে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শেষ করেন, আর নতুন কিছু উদ্ভোদন করেন না, মতিঝিল থেকে মিরপুরে যাওয়া আসা করতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা, আপনারাতো সিগনাল দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে চলেন, সাধারণ মানুষের কি পরিমান কষ্ট হয় বুঝেন না।
নতুন দু’টি মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হলে ঢাকার যানজট আরো বেড়ে যাবে। তাই, আইয়ুব রহমান নামের একজন পাঠক চলমান মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ আগে শেষ করার অনুরোধ করেছেন:
মাফ চাই। আর না।
যা শুরু করছেন তা আগে শেষ করেন!
We don't want the quantities,
we want quality
আবার ঢাকার রাস্তার জ্যাম কমাতে মেট্রোরেলের বিকল্প কী হতে পারে, সে বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন। আশফাকুল আরেফিন লিখেছেন:
[…] জ্যাম কমাতে হলে কয়েক স্তরের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে হবে: সড়ক, মেট্রোরেল এবং পানিপথ। ঢাকার শহরের ম্যাপ দেখলে বুঝতে পারবেন যে, ঢাকার লেক গুলোকে জায়গায় জায়গায় একটু সংযোগ করে দিতে পারলে ধানমন্ডি থেকে গুলশান পর্যন্ত পানিপথেও যাতায়াত করা যাবে, পথে পড়বে কলাবাগান, কাওরানবাজার, হাতিরপুল, তেজগাঁও, নয়াটোলা, মীরবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী ও নিকেতন। ফলে চাপ কমবে সড়ক ও মেট্রোরেলের উপর।
ঢাকার বাইরেও বাংলাদেশ আছে
অফিস,-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে দেশের সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে জেলা শহরগুলোতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। চাকরি কিংবা চিকিৎসা সবকিছুর জন্য ঢাকায় আসতে হয়। ঢাকার বাইরের শহরে সময় মতো চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় নিজের এক অপুরণীয় ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন আখতারুজ্জামান নামের একজন পাঠক:
সবকিছুই দরকারি, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। আমার চাচা স্ট্রোক করার পর দেখলাম কোন জেলা শহরে চিকিৎসা নাই বাধ্য হয়ে ঢাকায় নিয়ে এসে দেখি তার গোল্ডেন আওয়ার অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে । মেট্রোরেল দরকার তার চাইতে বেশি দরকার প্রত্যেক জেলা শহরে specialized হসপিটাল । ডাক্তার রা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতে চায় না কারণ সেখানে ভালো quarter নেই, এগুলো এখন করতে হবে । মানুষ স্ট্রোক করলে 6/7 ঘন্টা জার্নি করে ঢাকায় আসা লাগবে কেনো এটা নিয়ে ভাবার বা কাজ করার সময় এসেছে। শুধু ঢাকা ঢাকা করলে হবে না।
কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই ঢাকায় মানুষজন আসছেন। এতে ঢাকার উপর চাপ পড়ছে। যা যানজটের একটি অন্যতম কারণ। সেজন্য ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে শিল্পকারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থান তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন আজহার আলম:
এতো টাকা ব্যায় মেট্রোরেলে না করে ঢাকার বাইরের জেলা গুলোতে এই টাকা ব্যায় করে শিল্প কারখানা গড়ে তুললে মানুষ ঢাকামূখী কম হবে আর কর্মসংস্থানও বাড়বে।