স্মৃতিতে আলেপ্পো

লেনাস ইয়ং হালাবি ২০১৩ সালে এক দেওয়ালের ছবি তুলে ধরছে যেখানে লেখা রয়েছে ‘আমরা বেঁচে আছি এবং থাকব, যে স্বপ্ন দেখছি তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য; অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

তাদের জন্য যারা এখনো সেখানে বাস করে যে স্থান আমরা ছেড়ে এসেছি….

সেখানে আমরা এক সময় এক বিপ্লব ঘটিয়েছিলাম, কিন্তু দর্শনার্থী, এক অচেনা নাগরিক, আমার সামান্য ধর্মীয় কর্মকাণ্ড সহ, সকাল বেলায় সিড়িতে প্রতিবেশীর সাথ দেখা হলে তাদের সালাম দেওয়া, পাগলের মত সেই সকল সামগ্রী খুঁজে বেড়ানো সে সাধারণত সেখানে বিক্রি হয় না, ট্যাক্সি চালকদের সাথে দীর্ঘ এবং মনোযোগের সাথে করা আলাপচারিতা, যাতে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান বুঝতে এবং পরিস্থিতির চূড়ান্ত বাস্তবতায় তাদের দৃষ্টি ভঙ্গি ধরতে পারি।

এখনো আমাদের সেখানে এক বিপ্লব হাতছানি দেয়, বুস্তান আল কাসার-এ, আপনি দেখতে পাবেন- যতক্ষণ না অসভ্য কেউ তা মুছে ফেলে – শিশুতোষ ভাবে আঁকা এক সৈনিকের ছবি, যার উপরে হাতুড়ী হাতে মুখে দাড়ি ভর্তি এক নাগরিক-এর ছবি রয়েছে, আর সেখানে লেখা আছে, “এক বিপ্লব যা মস্তিষ্ক চূর্ণ করে দেয়”। আর এটি আমাদের দ্বিতীয় বিপ্লবের চিহ্ন, একজনের বিরুদ্ধে আরেকজন, যারা অস্ত্র কিংবা ধর্মের শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে জোর করে আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে। কিন্তু তোমরা সম্ভবত জানো না অজস্র বিপ্লবের কথা সেখানে ছিল, যে একেছেন আবু মারিয়াম, তোমরা সম্ভবত আমাদের কণ্ঠস্বর শোনোনি, যখন আমরা তোমাদের বললাম আবু মরিয়ম কে।

আমাদের এখানে এক বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। খারজ ই হাজেজ চেকপয়েন্টে, আমাদের কয়েকজন বন্ধু এমন ভাবে প্রহৃত হয়েছে!এই চেকপয়েন্ট সাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পক্ষে আন্দোলন করছিল।

আমাদের এখানে এক বিপ্লব সাধিত হয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রে আমরা মৃতদের বিদায় জানাই, একের পর এক মৃত মানুষদের, এবং সাথে অজস্র আলাপচারিতা, আলোচনা, বন্ধুত্ব, আহত হওয়ার ঘটনা।

আমরা এখন এক বিপ্লবের মাঝে বাস করছি, কবরে আমাদের বন্ধুরা শুয়ে আছে। আমার সবচেয়ে যে ঘনিষ্ঠ ছিল, তার নাম মুস্তাফা। আমরা সেখানে এক স্কুল খুলেছিলাম, যা তার নাম বহন করছিল। এটি এখনো সেখানে আছে। এই স্কুল এখনো চালিয়ে এক কারণ আমাদের প্রদান করেছে। আমরা বিশ্বাস করি আমারা আমাদের ঋণ শোধ করেছি। মুস্তাফার কবর এবং তাঁর স্কুল এখন আপনাদের। এখন যদি কোনদিন আপনি সেগুলোর পাশ দিয়ে যান, সেগুলোর প্রতি আপনি মর্যাদা পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন, এই মানুষটির জন্য ভালবাসার প্রবাহ হবে, তাকে প্রদান করা হবে এবং ভক্তি। আমরাও তার দর্শনের এক অংশ ছিলাম, আর আমরা ব্যর্থ হয়েছি।

আমাদের এক বিপ্লব রয়েছে। এক নির্বোধ বিদেশী যোদ্ধা দেওয়ালে লিখেছিল,”ফ্রিমাসনারি দিন শেষ” আমরা প্রায়শ তার ভুল ব্যাকরণে লেখার কারণে হাসতাম। এবং যখন লেইশামানিয়ার (বেলেমাছি বা স্যান্ডফ্লাই দ্বারা ছড়িয়ে পড়া বিশেষ রোগ) প্রাদুর্ভাব যখন ছড়িয়ে পড়ল, আমাদের কেউ কেউ রং ছিটিয়ে শুরু করা এক প্রচারণায় যোগ দেয়, আমাদের ছিল নিজস্ব গ্রাফিতি, যেটাতে লেখা ছিল “লেইশামানিয়া প্রাদুর্ভাব শেষ”। এটা ছিল সেই বিষয়, যা উল্লেখ করছে কি ভাবে আমরা পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছি, কী ভাবে আমরা আমাদের সমাধানের দিকে তাকিয়েছি। আর এ কারণে আমাদের স্কুল আর হাসপাতালগুলোকে পাওয়া যাবে মাটির নীচের ঘরগুলোতে। আমরা বোমা বর্ষণের বিরুদ্ধে খাপ খাইয়ে নিচ্ছি।

চক্ষু হাসপাতাল!!সেখানে আমরা বার বার ধর্মীয় আইনের বিরুদ্ধে বার বার প্রতিবাদ জানিয়েছি। সেখানে আইএসআইএস আমাদের ৩৫ জনকে হত্যা করে। সেখানে আমাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়- এখনো প্রতিজ্ঞা করিনি- তাদের জন্যও, যেখানে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, কারণ সেখানে আমাদের এক বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে।

এটাকে একটা হাসপাতালে পরিণত করা, ঠিক মাটির নীচের হাসপাতালের মত নয়, কিন্তু সকল মানুষের জন্য। এটি চেতনায় পরিপূর্ণ এক হাসপাতাল যা অসুস্থদের দেখাশোনা করে।

যদি তারা অনুমতি দেয় তাহলে আপনি ধ্বংসস্তুপের নীচে অজস্র মৃতদেহ খুঁজে পাবেন মৃতদেহগুলোকে যথাযথ ভাবে দাফন না করে সেগুলোকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। এর মানে এই নয় আমরা উপেক্ষা করছি, কিন্তু যুদ্ধ বিমানগুলো সকল দলকে লক্ষ্য বস্তু বানাচ্ছে, এবং গত মাসে কোন যানবাহন ঘর থেকে বের করা ছল অসম্ভব।

যদি অনুমতি প্রদান করা হয়, তাহলে তাদের যথাযথ ভাবে দাফন করবেন। আপনাকে তাদের নাম খোঁজার অনুমতি প্রদান করা হবে না, এটা প্রায় নিশ্চিত, তবে দয়া করে তাদের এক দুই তিন বা ধারাবাহিক ভাবে এই ভাবে নাম্বার প্রদান করবেন না। আপনার কল্পনা শক্তি ব্যবহার করুন এবং তাদের এক সাথে কবর দিন। সিরিয়ার পরিবার গুলো যথেষ্ট পরিমাণ সিরীয় পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আর কেউ নিঃসঙ্গ ভাবে দাফন হতে ইচ্ছুক নয়।

আমাদের এখানে এক বিপ্লব সংগঠিত হচ্ছে। এটাকে অভিশাপ দিন, অথবা এই নিয়ে শোক প্রকাশ করুন, পাথরে, কবরস্থানে, মাটিতে এবং আকাশে।

কবরস্থানের দেওয়ালে একবার আমরা লিখেছিলামঃ “ আমরা বেঁচে আছ্র, আমরা এগিয়ে যেতে থাকব, আর আমাদের স্বপ্ন পুরণ হবে” । আমাদের যা কিছু আছে তার সবকিছু নিয়ে যাও আর স্বপ্ন দেখতে থাক। শীঘ্রই আপনার সকল কিছু জব্দ করা হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .