রাইসা বিক্রমাতুঙ্গে এর এই পোস্টটি মূলত: পুরস্কার বিজয়ী শ্রীলংকার নাগরিক সাংবাদিকতার ওয়েবসাইট গ্রাউন্ডভিউজে প্রকাশিত হয়েছিল। গ্লোবাল ভয়েসেসের সঙ্গে একটি বিষয়বস্তু ভাগভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে তার একটি সম্পাদিত সংস্করণ নিচে প্রকাশিত হলো।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তামিল অধ্যুষিত শ্রীলংকার উত্তরাঞ্চলে – যেমন পাইলেকুদিয়েরাপ্পু (কেপাপুলাভুর কাছাকাছি), কিলিনোচ্চির মধ্য্কার পারাভিপাঞ্চান এবং পুথুক্কুদিয়িরাপ্পুতে – সামরিক ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা বেড়ে গেছে, বলেছেন মানবাধিকার কর্মী রুকি ফার্নান্দো। ধারাবাহিক বিক্ষোভ-প্রতিবাদের পর সাবেক সামরিক-দখলকৃত এই সব এলাকা সেখানকার একসময়ের অধিবাসীদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
৯ মার্চ ফার্নান্দো পাইলেকুদিয়েরাপ্পু সফর করার সময় সম্প্রতি শ্রীলংকার বিমান বাহিনীর (এসএলএএফ) তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তিনি আরো জানিয়েছেন।
AirForce questioned me yesterday in #Pilavukudirupu , #Kepapulavu. Revenge for having to end 8yr ocupation of village aft peoples protests? pic.twitter.com/AWDO6cjfTh
— Ruki Fernando (@rukitweets) March 10, 2017
#পাইলেভুকুদিরাপ্পু, #কেপাপুলাভু তে বিমানবাহিনী আমাকে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জনগণের প্রতিবাদের পর গ্রামটির ৮ বছরের দখল অবসানের প্রতিশোধ?
“আমি বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথাবলার সময় বেসামরিক পোশাকে দুইজন আমার কাছে আসে। তারা আমি কে এবং কেন আমি এখানে এসেছি আমাকে জিজ্ঞেস করে। প্রত্যুত্তরে আমি তাদেরকে তারা কে জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে জানায় যে তারা বিমান বাহিনীর লোক, পাশের গ্রাম থেকে এসেছেন,” ফার্নান্দো বলেন। তিনি আরো বলেন যে তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করে হেঁটে চলে যান। বিমান বাহিনীর কর্মীবৃন্দ জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আমার পিছু না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পাইলেকুদিয়েরাপ্পুর জনগণ শ্রীলংকার বিমান বাহিনীর আটকে রাখা (গ্লোবাল ভয়েসেস প্রতিবেদন দেখুন) তাদের জমি ফেরৎ দেয়ার দাবি জানিয়ে এই বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে। ১ মার্চ তারিখে জমির অধিকাংশই মুক্ত করে দেয়া হয়। তবে ২০০৯ সালে থেমে যাওয়া গৃহযুদ্ধে সংঘাতের মূল রঙ্গমঞ্চের অঞ্চলটিতে পাইলেকুদিয়েরাপ্পু অধিবাসীরা তাদের জীবন পুনর্গঠনে ভীতিকর ভবিষ্যতের মোকাবেলা করছে।
“তারা তাঁবুতে অথবা গাছের নিচে বসবাস করছে। তাদের গৃহনির্মাণ, পানি ও বিদ্যুতের প্রয়োজন। অধিবাসীদের অধিকাংশই নৈমিত্তিক কাজে জড়িত এবং তাদের সন্তানেরা স্কুলে যাচ্ছে যদিও কোন বাস পরিষেবা নেই,” ফিরে আসা পরিবারগুলোর দুর্দশা বর্ণনা করে ফার্নান্দো বলেন।
মুলাইতিভুতে রেড ক্রস প্রতিটি পরিবারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন হাড়ি-পাতিল, মাদুর, একটি বিছানার চাদর এবং একটি বাতি সরবরাহ করলেও সরকার থেকে “একেবারে কোন সমর্থন” নেই। “সরকারকে এগিয়ে এসে এসব পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। শুধু জমিটা ছেড়ে দেয়াই যথেষ্ট নয়,” ফার্নান্দো বলেছেন।
চাপের কারণে জমি মুক্ত করে দিতে হওয়ার কারণে সামরিক বাহিনী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়াও সেখানে ভয় দেখানোর অন্যান্য ঘটনাও ঘটেছে, ফার্নান্দো যেমন বলেছেন।
সামরিক ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মুখেও জমি ফেরতের জন্যে বাসিন্দাদের দিন-রাত ধরে প্রতিবাদের কারণে কেপাপুলাভু সংবাদে পরিণত হয়। কেপাপুলাভু এবং পাইলেকুদিয়েরাপ্পু মুক্তির সংগ্রামে একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হলেন চন্দ্র লীলা, যার বাড়ি এখনো সেনাবাহিনীর দখলদারিত্বে রয়েছে। সম্প্রতি চন্দ্র লীলাকে তার কৃষিজমিতে প্রবেশে বাঁধা দেয়া হয়েছে, জানিয়েছেন ফার্নান্দো।
“বিমান বাহিনী এখন বলছে তিনি কৃষি কাজের জন্যে যে জমি ব্যবহার করেন সেটা বন বিভাগের সম্পত্তি। তবে তার কাছে আইনগত দলিলাদি রয়েছে,” ফার্নান্দো বলেছেন। “এটা স্পষ্টতই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আংশিক সাফল্যের প্রতিশোধ।” বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় সরকার ৪০ একর জমি মুক্ত করেছে – অন্যান্য পরিবারগুলো এখনো জমির জন্যে অপেক্ষা করছে এবং তাদের বিক্ষোভ আবার শুরু করেছে এটা ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত।
Courageous women of #Keppapulavu led the struggle for lands; Kowsalya-an outspoken lady was greeted by her fellow protesters/villagers today pic.twitter.com/DvvfvArW55
— Garikaalan (@garikaalan) March 1, 2017
#কেপাপুলাভুর সাহসী নারীরা ভূমির জন্যে সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়; আজকে স্পষ্টভাষী নারী কৌশল্যাকে তার সঙ্গের প্রতিবাদকারী/ গ্রামবাসীরা অভ্যর্থনা জানিয়েছে।
এছাড়াও কোনো দর্শক এলে সামরিক বাহিনী প্রতিনিয়ত তাদের ছবি তুলে রাখে। “আমরা একটি গাড়ির থেকে নামতে নামতেই আমরা ক্যাম্পের ভিতরে থেকে লোকজন বেরিয়ে এসে আমাদের ছবি তুলতে দেখলাম। যারা তখনো প্রতিবাদ করছিলো তারাও এটা খেয়াল করেছে, “ফার্নান্দো বলেছেন।
Pilavu day 17: protestors under surveillance https://t.co/5JsGcmUOFY #Tamil #lka pic.twitter.com/Rq1OKUptWm
— Tamil Guardian (@TamilGuardian) February 16, 2017
পিলাভু দিবস ১৭: নজরদারিতে প্রতিবাদকারীরা
জাফনার একটি সংহতি সমাবেশ সামরিক বাহিনীর দখলকৃত জমির মুক্তি দাবি ছাড়াও কিছু কিছু অংশগ্রহণকারীকে সামরিক ভীতি প্রদর্শন লক্ষ করেছে। “ত্রিনকোমালি এবং মান্নার থেকে আসা এবং আরো অনেক মানু্ষের সঙ্গে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে আমি অংশ নিয়েছি। কিছু কিছু গোয়েন্দা কর্মী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আগের দিন জাফনায় একটি আইডিপি (অভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত জনগণ) ক্যাম্পে গিয়ে তাদের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান না দেয়ার জন্যে চাপ সৃষ্টি করতে তাদের ভয় দেখায়। তারা ক্যাম্পের একজন নেতাকে আলাদা করে তাকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্ররোচনার দায়ে অভিযুক্ত করে।”
CID present on roadside in front of protest #jaffna
— Tamil Guardian (@TamilGuardian) March 4, 2017
#জাফনাতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সামনে রাস্তার পাশে সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) উপস্থিত
পুথুকুদিয়েরাপ্পুতে ৩ মার্চ তারিখে শেষ হওয়া এক মাস প্রতিবাদের পর পরিবারগুলো তাদের জমিতে ফিরে দেখেছে তাদের বাড়ি-ঘরগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া। এসবের দরজা-জানালা এবং টয়লেট ও রান্নাঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে, আর সেখানে বিয়ারের বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এছাড়াও একটি ছোট দোকান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। “জনগণ তাদের জমি ফেরত পেতে শুর করার পর সেখানে সামরিক বাহিনীর ক্রোধের ছাপ ছিল। সামরিক বাহিনীর দখলকৃত জমির মুক্তি পুনর্মিলন প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এটা যা হওয়া উচিৎ একেবারে তার বিপরীত,” ফার্নান্দো বলেছেন।
কেপাপুলাভুতে একটি নতুন সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে যে পার্শ্ববর্তী জমি ‘সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা,’ তিনি আরো যোগ করেন। “প্রায় পাঁচ বা ছয় বছর ধরে ওখানে একটি সামরিক অবরোধ রয়েছে। কিন্তু এই সাইনবোর্ডটি নতুন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে আমি ঐ এলাকাটি পরিদর্শনের সময় আমি ঐটা দেখতে পাইনি।”
ভাভুনিয়া, কিলিনোচ্চি এবং মুলাইতিভুতে সামরিক বাহিনীর দখলকৃত জমি নিয়ে বিক্ষোভের সমান্তরালে অতি সম্প্রতি বলপূর্বক অন্তর্ধানে আক্রান্ত পরিবারগুলোও ধারাবাহিক প্রতিবাদ শুরু করেছে।
“ভাভুনিয়ার এবং কিলিনোচ্চির প্রতিবাদের ভেতরকার তাৎপর্যটা হলো তারা সিংহলিদের সমর্থন যোগাড় করার চেষ্টা করছে। প্রতিবাদকারীরা সিংহলি ভাষায় ব্যানার, চিঠি এবং লেখা প্রস্তুত করেছে,” দেশটির রাজনীতিতে প্রভাববিস্তারকারী জাতিগত গোষ্ঠীটির বিষয়ে ফার্নান্দো বলেছেন। মুলাইতিভুর প্রতিবাদটি মাত্র দুই দিন বয়সী এবং অনেক ছোট।
“তবে এটা (রাত-দিন) ২৪ ঘন্টা ধরে চলছে। পরিবারগুলো পালাবদল করে কাজ করে যাচ্ছে। কিছু কিছু পরিবারকে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে, অন্যরা তাদের সন্তানদের এসে প্রতিবাদ করার জন্যে ছেড়ে রেখে যাচ্ছে। তাই তারা তাদের চলমান কাজ এবং ২৪ ঘন্টাব্যাপী তাদের প্রতিবাদ টিকিয়ে রাখার জন্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে,” ফার্নান্দো জানিয়েছেন।
“மகன் வருவார், மகள பத்தி தெரியாது” என்று சிஐடி சொன்னவங்க” https://t.co/FMnh3OfMDK #lka #srilanka #BeBoldForChange #IWD2017 #DisappearedSL pic.twitter.com/adXV9dGWne
— Selvaraja Rajasegar (@SRajasegar) March 8, 2017
“আপনার ছেলে ফিরে আসবে। আমরা আপনার মেয়ে সম্পর্কে জানি না: সিআইডি”
সৌজন্যে বোন প্রকাশনী মাত্রাম
“I have been told @ all temples that my son is alive;I just wanted to see him before I die”Vadivel Puhsparaani in Kilinochchi #DisappearedSL pic.twitter.com/jJ9tNB7aQJ
— Garikaalan (@garikaalan) March 10, 2017
“@ সব মন্দির থেকে আমাকে বলা হয়েছে যে আমার ছেলে বেঁচে রয়েছে; আমি মরে যাওয়ার আগে শুধু তাকে দেখতে চাই” কিলিনোচ্চিতে ভাদিভেল পুষ্পরানী #নিখোঁজশ্রীলংকান
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে আইন মন্ত্রী, এটর্নি জেনারেলের বিভাগ, আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) ও বিচারমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিলেও ভাভুনিয়ারগুলো ছাড়া এসব পরিবারের ক্ষেত্রে খুবই সীমিত অগ্রগতি হয়েছে।
প্রতিশ্রুতিটি দেয়াতে পরিবারগুলোর উত্তর দাবি করা একটি চার দিনের অনশন ভেঙ্গেছিল। “সেই বৈঠকের পরে শুধু একটা জিনিসই ঘটেছে সেটা হলো সরকারের কিছু কিছু সদস্য পরিবারগুলোকে তাদের নিজস্ব মামলাগুলোর অগ্রাধিকার চাওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। প্রত্যুত্তরে পরিবারগুলো বলেছে তাদের মামলা ত্বরান্বিত করতে আসলে সরকার নিজেই এগিয়ে এসেছিল যেটা প্রত্যাখ্যান করে তারা সব পরিবারের জন্যে সত্য ও ন্যায়বিচার চেয়েছিল,” ফার্নান্দো বলেছেন।
৯ ফেব্রুয়ারির সভা থেকে চূড়ান্ত কোন পরিণতি বেরিয়ে আসে কিনা সেই জন্যে ভাভুনিয়ার পরিবারগুলো দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করেছিল এবং কোন পদক্ষেপের অভাবে সম্প্রতি আবার প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে।
এই পটভূমিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার জাইদ রাদ আল হুসাইন জবাবদিহিতা ও পুনর্মিলনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে শ্রীলংকার ‘ধীর অগ্রগতি’র কারণ জানতে চাইলে জাতিসংঘের ২০১৫ সালের ৩০/১ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে জাতিসংঘে নিযুক্ত শ্রীলংকার প্রতিনিধিদলের আরো সময় চেয়েছে। এছাড়াও জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদ সব সামরিক বাহিনীর দখলকৃত বেসামরিক জমি ফিরিয়ে দিতে এবং সেই সাথে বেসামরিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সামরিক সম্পৃক্ততার অবসান ঘটাতে বলেছে।
তবে সরেজমিন এটা স্পষ্ট যে ভীতিপ্রদর্শনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে এবং পাইলেকুদিয়েরাপ্পুর মতো রাষ্ট্রের কোন সমর্থন ছাড়াই প্রত্যাগত পরিবারগুলোকে তাদের জীবন পুনর্নির্মাণ করতে হচ্ছে।
রুকি ফার্নান্দো এবং মারিসা ডি সিলভার নিচের আলোকচিত্রের গল্পটি কেপাপুলাভুর বেসামরিক জনগণের প্রতিবাদ এবং সদ্য পুনর্বাসিতদের সংগ্রামের একটি প্রামাণ্য দলিল।