সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারী প্রতিষ্ঠান ডিজনির “সুন্দরী ও জন্তু” (কার্টুন) চলচ্চিত্রের বাস্তব পুনর্নির্মাণে অসন্তুষ্ট হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের খ্রিস্টান নেতারা ছবিটিতে একটি “সমকামী মুহূর্ত” থাকার কথা শুনে তাদের মতো বিশ্বাসীদের চলচ্চিত্রটির কথিত “এলজিবিটি (লেসবিয়ান, সমকাম, দ্বিকাম, বহুকাম) পন্থী বিষয়বস্তু” থেকে তাদের সন্তানদের “রক্ষা” করার পরামর্শ দিয়েছে। মালয়েশিয়ার চলচ্চিত্র সেন্সর প্রাথমিকভাবে চলচ্চিত্রটি প্রকাশ্যে দেখানোর অনুমোদন দিয়েছে, তবে অবশ্য একটি “ছোটখাট কর্তন”–এর পর।
সুন্দরী ও জন্তু আসলে একজন তরুণী এবং একটি দু্র্গের মধ্যে দানবরূপে বাস করার জন্যে অভিশপ্ত একজন মানুষের মধ্যেকার একটি প্রেমকাহিনী। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক গণমাধ্যমকে বলেছে যে পুনর্নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে একটি সমকামী চরিত্রের রূপায়ণ করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের জাতীয় গীর্জা পর্ষদ তাদের ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে নতুন চলচ্চিত্রটি ১৯৯১ সালের ডিজনি কার্টুন চলচ্চিত্রের “স্বাস্থকর” দিকটি “প্রত্যাখ্যান” করেছে এবং “সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়” বলে অভিনেতা জোশ গাদ অভিনীত সমকামী চরিত্রটির নিন্দা করেছে। পর্ষদ “সমকামী জীবনধারাকে স্বাভাবিক গণ্য” করানোর ওয়াল্ট ডিজনির অনুমিত অভিপ্রায় সম্পর্কে জনসতর্কীকরণ হিসেবে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করেছে:
এখানকার কিছু কিছু খ্রিস্টান নেতা নতুন ডিজনি চলচ্চিত্রে এলজিবিটি উপস্থাপনা সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা এটাকে চিন্তা ছোট ছোট শিশুদেরকে প্রভাবিত করা এবং তাদের অল্প বয়সেই তাদের কাছে সমকামী জীবনধারাকে সমাজের স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মানিয়ে তোলার একটি প্রয়াস হিসেবে দেখছেন।
সিঙ্গাপুরের রোমান ক্যাথলিক গীর্জাও সিনেমাটি দেখার ব্যাপারে পিতা-মাতাদের বিচক্ষণ হওয়ার আবেদন জানিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রকাশ করেছে:
এই ছবিটির উদ্দেশ্যমূলক ‘সমকামী মুহূর্ত’ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনের কারণে আমরা বিশ্বাস করি যে পিতা-মাতারা তাদের বিচক্ষণতা দেখাবেন এবং তাদের শিশুদের বুঝিয়ে বলবেন চিত্রিত জীবনধারাটি খ্রিষ্টের শিক্ষার সঙ্গে যায় কিনা। তারা অবশ্যই তাদের নিজেদের এবং সমাজের জন্যে এমন একটি জীবনধারার প্রভাব ও ফলাফল ব্যাখ্যা করবেন।
সিঙ্গাপুরে পুরুষদের মধ্যে সমকামী কর্মগুলোকে অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়।
মালয়েশিয়াতেও পায়ুকাম আইনবহির্ভূত এবং এমনকি সম্পাদিত সংস্করণটি সম্পর্কেও দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের কারণে দেশেটির সেন্সরকারী বোর্ড অনির্দিষ্টকালের জন্যে সুন্দরী ও জন্তু’র সব ধরনের প্রদর্শনী স্থগিত করেছে। ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি বলেছে তারা মালয়েশিয়ায় চলচ্চিত্রের অবস্থা সম্পর্কে আরো জানার জন্যে একটি “অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা” চালিয়ে যাচ্ছে।
হলিউডের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে সরকারের আপাত সতর্কতা মালয়েশিয়ার অনেক ডিজনি ভক্তদের হতাশ করেছে। তবে অন্যায্য সেন্সরের বিষয়ে তাদের উদ্বেগগুলোর প্রতিধ্বনি তুলেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রী।
মালয়েশীয়রা একদিকে চলচ্চিত্রটির উপর কার্যকর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটালেও, অন্যরা সেন্সরকারী বোর্ডের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চ্যালেঞ্জ করেছে রূপালী এবং ছোট পর্দায় সব ধরনের সহিংস বিনোদনকে স্বাগত জানানো হলেও কেন তারা সুন্দরী ও জন্তুকে সিনেমাহলগুলো থেকে আটকে রেখেছে:
No words for the situation occuring for Beauty and the Beast.
Just utterly disappointed that Malaysia could be THAT sensitive.
— Nadzrin Nadzer (@NadzrinIqbal) March 13, 2017
“সুন্দরী ও জন্তু’র জন্যে পরিস্থিতি তৈরি হওয়া নিয়ে কোন কথা নয়।
শুধু ভীষণভাবে হতাশ, মালয়েশিয়া কিভাবে এতোটা সংবেদনশীল হতে পারে।”
“beauty and the beast banned in malaysia because of the gay scene between the clock and the candle.”
i love my country— y v o n n e (@yvnnexy) March 13, 2017
“ঘড়ি এবং মোমবাতির মধ্যে সমকামী দৃশ্যের কারণে মালয়েশিয়াতে সুন্দরী ও জন্তু নিষিদ্ধ।”
আমি আমার দেশকে ভালোবাসি
Malaysia has so many things to improve on but we choose to look at the petty stupid stuff like banning Beauty and the Beast. How disgusting.
— Priyanka Laxmi (@priyankalaxmii) March 13, 2017
“উন্নয়ন করার জন্যে মালয়েশিয়ার অনেক কিছু রয়েছে, কিন্তু আমরা সুন্দরী ও জন্তু'র মতো ক্ষুদ্র নগন্য জিনিসটি নিষিদ্ধ করার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। কেমন বিরক্তিকর।”
Malaysia, the land of possibilities.
Beauty and the Beast banned while WWE airing on the tv. Apparently our country promote war, not love.
— FranFeyn (@ravingcowmaniac) March 13, 2017
“সম্ভাবনার দেশ হলো মালয়েশিয়া।
টিভিতে যখন ডাব্লিউডাব্লিউই (বিশ্ব কুস্তি বিনোদন) সম্প্রচার হচ্ছে, সুন্দরী ও জন্তু নিষিদ্ধ। দৃশ্যত: আমাদের দেশ যুদ্ধ প্রচার করে, ভালোবাসা নয়।”