গ্লোবাল ভয়েসেস এডভোকেসী’র নেটিজেন প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অধিকারের চ্যালেঞ্জ, বিজয় এবং ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আন্তর্জাতিক আলোকপাত করা হয়েছে।
মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুক সিইও (প্রধান নির্বাহী) মার্ক জুকারবার্গ “একটি বৈশ্বিক সম্প্রদায় হিসেবে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে আনার” ক্ষেত্রে সামাজিক নেটওয়ার্কের ভূমিকা সম্পর্কিত একটি সুদূরপ্রসারী দর্শন পরিকল্পনা করেছেন। এটা ২০১৫ সালের ফেসবুক বিজ্ঞাপনের প্রতিশ্রুতি “যত বেশি সংযুক্ত, তত বেশি ভাল” এর প্রতিধ্বনিত তুলেছে।
অবশ্যই জুকারবার্গের ইপ্সিত সর্বব্যাপী সংযোগময়তা অনলাইনের একটি পরিচ্ছন্ন ও ইতিবাচক ভাবমূর্তি এবং তাদের সমালোচকদের শান্ত করতে চাওয়া সরকারসহ বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালনকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে। নিচে ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে এধরনের কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো।
ফেসবুকে রাষ্ট্রপ্রধান অং সান সুকি‘র অবমাননার জন্যে মিয়ানমারের একজন ব্যক্তির ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। মিয়ানমারের একটিভিস্টরা – মানহানিকে অপরাধ জ্ঞান করা – টেলিযোগাযোগ আইনের ৬৬ডি ধারার সংশোধনীর আহবান জানিয়েছে। পিইএন (কবি, প্রাবন্ধিক ও ঔপন্যাসিক) মিয়ানমার অনুসারে অধ্যায় অধীনে অভিযুক্ত করা হয়েছে যেহেতু সুকির জাতীয় গণতন্ত্র লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ৬৬ডি ধারায় ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যাদের মধ্যে দলটির সমালোচনা করে ভাষ্য দেয়া অনেক মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিক রয়েছেন।
স্থানীয় ও স্বাধীন আল ফাজের আল জাদিদ টিভি স্টেশনের একজন রাজনৈতিক প্রতিবেদক ফিলিস্তিনী সাংবাদিক সামি আল-সাই ফেসবুক পোস্টে ‘উপদলীয় সংঘাতে উস্কানি’র অভিযোগে পশ্চিম তীরে ২ ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনী গোয়েন্দা পরিষেবার হাতে গ্রেপ্তার হন। জামিন দেখানো সত্ত্বেও তাকে ২০ দিন জেরিকো কারাগারে আটক রাখা হয় যেখানে তাকে না ঘুমিয়ে অনেক দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয় এবং প্রতিদিন চারবার একটি অজানা ঔষধ তার শরীরে ইনজেকশন করা হতো।
আল-সাই মনে করেন যে আসলে তাকে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণকারী জাতীয়তাবাদী ফাতাহ পার্টির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং গাজা ভূ-খণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী জঙ্গি আন্দোলন হামাসকে ইসরাইল ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনী রাজবন্দীদের সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আল-সাই’র সন্দেহ এই প্রতিবেদনগুলোই তাকে গ্রেপ্তারের অজুহাত ছিল।
তুর্কি পিয়ানোবাদক এবং ২০১৩ সালের গেজি পার্ক প্রতিবাদের সমর্থক ডেঙ্গিন চেয়হান সামাজিক গণমাধ্যমে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে অপমান করা কথিত পোস্টের অভিযোগে মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তার হন। চেয়হান ভাল লোকদের সঙ্গেই রয়েছেন – তুর্কী সারসংক্ষেপের দেয়া পরিসংখ্যান অনুসারে আগস্ট, ২০১৬ থেকে জানুয়ারি, ২০১৭ পর্যন্ত ১,৬৫৬ জন সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীকে “সামাজিক গণমাধ্যমে সন্ত্রাসী প্রচারণা এবং জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা অপমান করার সন্দেহে” গ্রেফতার করা হয়েছে। তুর্কী কর্তৃপক্ষের সামাজিক গণমাধ্যম নজরদারী এবং সাংবাদিক নিপীড়ন সম্পর্কে নিয়মিত হালনাগাদের জন্যে সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটির তুর্কী কঠোরব্যবস্থার ঘটনাপঞ্জী দেখুন।
ভারতে অনলাইনে হয়রানির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ধাক্কা
ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী অনলাইনে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ডানপন্থী শিক্ষার্থী গোষ্ঠী অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী (এবিভিপি) প্রদত্ত ধর্ষণ ও মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন একজন ছাত্রীর পিছনে মিছিল করেছে। “কাশ্মীর মুক্তি” আন্দোলনের সহায়ক কর্মীদের রূপায়ন করার জন্যে উদ্দীষ্ট একটি প্রতিবাদের সংস্কৃতি সম্মেলনে এবিভিপি বিক্ষোভকারীদের চালানো ভাংচুরের প্রতিবাদে ছাত্রী গুরমেহার কাউর #এবিভিপিবিরোধীশিক্ষার্থী শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বাক স্বাধীনতা সমর্থন এবং ঘৃণ্য বার্তা বিরোধিতার প্রতিবাদটি ভারত জুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
হংকংয়ের দৈনিক পত্রিকা সাইবার আক্রমণ ও তস্করবৃত্তির শিকার
বেইজিংপন্থী সংবাদপত্র দৈনিক সিং পাও-এর কর্মীরা স্থানীয় পুলিশের কাছে তাদের কাজ এবং বাড়ির ওপর শারীরীক এবং ডিজিটাল হামলার অভিযোগ করেছে। ১৮ এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি (২০১৭) সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে একাধিক সাইবার ছাড়াও স্থানীয় সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে কথিত তস্করেরা সিং পাও-এর একজন ঊর্ধ্বতন সম্পাদকের বাসভবনেও হামলা চালিয়ে তার সামনের দরজায় লাল রং মেখে দেয়। হামলাগুলো হংকংয়ের বেইজিংপন্থী নেতৃত্বের মাঝে বিভক্তির ইঙ্গিত করে।
ইউক্রেন ‘সার্বভৌমত্ব খর্ব’ করা ওয়েবসাইটগুলো সেন্সর করবে
ইউক্রেনের তথ্যনীতি মন্ত্রণালয় দেশটির নতুন তথ্যনিরাপত্তা মতবাদকে সমুন্নত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে “ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্ব খর্ব” করা ওয়েবসাইটগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং রুশপন্থী তথ্যের প্রচার নীতিটির লক্ষ্য বলে মনে হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির প্রশাসনের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “ছড়িয়ে পড়া শংকর যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ধ্বংসাত্মক তথ্যের প্রভাব মোকাবেলার উদ্দেশ্যে” নীতিটি চালু করা হয়েছে।
তিউনিশিয়ায় গোপণ সংবাদ জানাবেন? তার জন্যে একটি আইন রয়েছে।
তিউনিশিয়ার সংসদ ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে দুর্নীতিকে নিন্দা জ্ঞাপন করে গোপণ সংবাদদাতার অধিকার সুরক্ষার একটি খসড়া আইনের পক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়েছে। এছাড়াও আইনটিতে বেনামী গোপণ সংবাদদাতার পরিচয় প্রকাশ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিবর্গের জন্যে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
রুশ নিয়ন্ত্রকরা কেন টেলিগ্রামের দিকে চোখ দিয়েছে?
রুশ মিডিয়া নিয়ন্ত্রক রস্কোমনাজোর মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন টেলিগ্রামের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় চ্যানেলের লেখকদের সঙ্গে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে। তারা কি আলোচনা করেছে সেটা এখনো পরিষ্কার না হলেও রস্কোমনাজোরের একজন সমালোচক তার চ্যানেলে লিখেছেন যে কর্মকর্তারা নিষিদ্ধ করার নতুন নতুন বিষযবস্তু খুঁজে পেতে পরিষেবাটি সম্পর্কে আরো তথ্য জানার চেষ্টা করছে। জনশ্রুতি রয়েছে ২০১১ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের তৈরি একটি রাজনৈতিক আন্দোলন নিখিল রুশ গণফ্রন্টের মিডিয়া যোগাযোগের প্রধান সভাটি আয়োজন করেছেন।
যুক্তরাজ্যের সংসদ সমাধানবিদ্যাকে শূণ্য করছে
যুক্তরাজ্যের সংসদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটি সরকারি ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আলগোরিদিম (সমাধানবিদ্যা) প্রয়োগের বিষয়ে একটি নতুন তদন্ত শুরু করেছে। “কিভাবে একটি অ্যালগরিদম প্রণীত হয়, এর ত্রুটি বা সংশোধনের সম্ভাবনা, ব্যক্তির উপর এর প্রভাব পড়তে পারে – এবং তাদের সিদ্ধান্ত বুঝতে পারা বা চ্যালেঞ্জ করার সক্ষমতা – ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে,” কমিটি এর ঘোষণায় জানিয়েছে। এই বিষয়ে জমাগুলো ২১ এপ্রিল তারিখে কমিটিতে পাঠানো হতে পারে।
নতুন গবেষণা
- Turkey’s Internet Policy after the Coup Attempt: The Emergence of a Distributed Network of Online Suppression and Surveillance (অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর তুরস্কের ইন্টারনেট নীতিঃ অনলাইন অবদমন ও নজরদারীর বন্টিত নেটওয়ার্কের উত্থান) – ইন্টারনেট নীতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র
- Protecting Sources and Whistleblowers in a Digital Age (ডিজিটাল যুগে উৎস এবং গোপণ সংবাদদাতাদের সুরক্ষা) – তথ্য আইন ও পুলিশ কেন্দ্র, উন্নত আইনবিদ্যা প্রতিষ্ঠান
- América Latina en Movimiento: ¿Por qué enfocarnos en los derechos económicos, sociales y culturales? (আন্দোলনে লাতিন আমেরিকা: অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারে ফোকাস কেন?) – প্রগতিশীল যোগাযোগ সমিতি
- Internet rights at the Human Rights Council 34th session (মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৪ তম অধিবেশনে ইন্টারনেটের অধিকার) – প্রগতিশীল যোগাযোগ সমিতি
- Who’s Watching Little Brother? A Checklist for Accountability in the Industry Behind Government Hacking (ছোট ভাইকে কারা দেখছে? সরকারি হ্যাকিংযের পশ্চাতে শিল্পের জবাবদিহিতার একটি চেকলিস্ট) – নাগরিক গবেষণাগার
ইমেলের মাধ্যমে নেটিজেন প্রতিবেদন পাওয়ার জন্যে গ্রাহক হোন
এলেরি রবার্টস বিডল, লীলা নাচাওয়াতি এবং সারাহ মায়ার্স ওয়েস্ট এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।