তাগানোরগ-এর শিখা অনির্বান (গ্যাসের মাধ্যমে প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা) আজকে আর জ্বলছে না, আর স্থানীয় গ্যাস কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলছেন এর কারণ হচ্ছে তিনি নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারছেন না যে স্থানীয়রা এর আগুনে সসেজ পুড়িয়ে রান্না করবে না।
তাগানরোগ হচ্ছে রাশিয়ার এক বন্দর নগরী, যা তাগানরোগ উপসাগরের উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এটি রাজধানী মস্কো থেকে ১,১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। রাশিয়ার বিভিন্ন শহর জুড়ে রয়েছে প্রাক্তন সোভিয়েট ইউনিয়নের সময়ে নির্মিত বেশ কিছু গ্যাস প্রজ্বলিত শিখা অনির্বাণ, যা তৈরি করা হয়েছিল সেই সব বীরদের সম্মানে যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করেছিল।
এই সপ্তাহের শুরুতে, গাজপ্রম তোপের মুখে পড়ে যখন তাগানরোগ-এর স্থানীয় বাসিন্দারা শহরের বন্ধ হয়ে যাওয়া শিখা অনির্বাণের ছবি পোস্ট করতে শুরু করে, সাথে শিরোনাম হিসেবে লেখে, “গাজপ্রম কেবল বয়লারগুলো বন্ধ করছে না, সাথে তারা স্মৃতিসৌধের শিখাও বন্ধ করতে শুরু করেছে”।
ফেসবুকে এর জবাব প্রদান করতে গিয়ে, গাজপ্রমের স্থানীয় এক প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ডিরেক্টর ভ্লাদিমির রেভেনকো ব্যাখ্যা করছেন যে তাগানরোগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীরদের সম্মানে নির্মিত এরকম পাঁচটি সৌধ রয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে একটি হচ্ছে শিখা অনির্বান, যেখানে আগুনের শিখা প্রজ্বলিত হয়। কোম্পানির এবং স্থানীয় রাজ্য পরিষদ অনুরোধে শিখা অনির্বাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেমন এর এক উদাহরণ, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন এটা বন্ধ থাকে। তিনি লিখেছেন,“এর কারণ, আমরা চাই না এই ধরণের শিখায় লোকজন হটডগ পুড়িয়ে রান্না করুক, এখানে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, নেই কোন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা। দুর্ভাগ্যক্রমে এ সব ছাড়া, এটা জ্বালিয়ে রাখা সম্ভব না”।
রেভেনকো পরে তার এই মন্তব্য মুছে ফেলেন এবং সসেজ সম্বন্ধে করা উক্তি মুছে দিয়ে এটি পুনরায় পোস্ট করেন, কিন্তু মূল পোস্টটি এত দীর্ঘ সময় অনলাইনে ছিল, যার ফলে এটি জনগণের সমালোচনার মুখে পড়ে, যারা বলছে, একই সাথে শিখা অনির্বাণের প্রতীকী বিষয়টিকে উপলব্ধি করতে এবং তাগানরোগের নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে গাজপ্রম ব্যর্থ হয়েছে।
যখন এই ঘটনা গাজপ্রমের জন্য এক লজ্জার বিষয়, রাশিয়া এখন দেশ জুড়ে এ রকম অগ্নিশিখার সৌধের প্রতি রাশিয়া অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে। এ বছরের জুলাই মাসের শুরুতে এক ছবিতে সেন্ট পিটার্সবার্গের এ রকম এক অগ্নি শিখায় একজন ব্যক্তিতে একটা শিক কাবাব ঝলসে নিতে দেখা যায়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী এই ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করে, কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে কোন তদন্ত হয়নি।
মে মাসে, কেমেরভ শহরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দাকে শহরের এক শিখা সৌধের শিখায় সসেজ রান্না করতে দেখা যায়। এ বছরের শুরুতে তুলায় একদল কিশোরকে সৌধের শিখায় আলু পোড়াতে দেখা যায়। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে বলেগোরোদ-এর এক সৌধ শিখা মাতাল এক পর্যটককে মূত্রত্যাগের কারণে গ্রেফতার করা হয়েছিল, পরে যাকে তিন বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
সাম্প্রতিক বছর সমূহে এ ধরণের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে নাগরিকেরা রাশিয়ার বিভিন্ন নগরের এ রকম স্মৃতি শিখায় হয় রান্না করেছে, নয়তো মূত্র ত্যাগ করেছে।
কেবল তাগানরোগ নয়, যেখানে গাজপ্রম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে জোরালো ভাবে জ্বলতে থাকা শিখা বন্ধ করে দিয়েছে, পাশাপাশি অন্য যেখানে স্মৃতি সৌধের শিখায় বারবিকিউ কিংবা মূত্রত্যাগ করার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তারা গ্যাসের আঁচের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।