সারা ফিলিপাইন জুড়ে চিনি চাষের সময় তিয়েম্পো মুয়ের্তো অথবা “মৃত মৌসুম” এর আগমন ঘটেছে। এ সময় অনেক কৃষককে ক্ষুধা এবং বঞ্চনার সাথে লড়াই করতে হয়। কেননা বছরের এই সময়ে চিনি কলগুলো বন্ধ থাকায় তাঁদের হাতে কোন কাজ থাকে না। এই মৌসুম এক মিলিয়নের এক চতুর্থাংশের বেশি সংখ্যক কৃষকের জন্য আরও নিষ্ঠুর হতে পারে। “সাকাদা” নামে পরিচিত এই মৌসুমে শুধুমাত্র নেগরোস দ্বীপেই বিরাট সংখ্যক অর্থাৎ ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার চিনি শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হন।
অনেক জমি-সংস্কার আইনে কৃষকদের মাঝে জমি বন্টন করাকে বাধ্যতামূলক করে ধারা থাকা সত্ত্বেও নেগরোসে বেশিরভাগ হাসিয়েনদাস (চাষাবাদের জমি) অক্ষত থাকে। শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবার বা রাজবংশের হাতে জমিগুলো রয়ে গেছে।
আবাদ এবং ফসল ফলানোর সময় এই জমির কৃষকদের হাতে কাজ থাকে। কিন্তু কলকারখানা বন্ধ থাকা মৌসুমে তাঁদের কোন আয় রোজগার থাকে না। অনেককেই বিকল্প কাজ খুঁজে পেতে বেশ সংগ্রাম করতে হয়। কেননা এই দ্বীপে বিকল্প কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ নেই। কৃষক নেতা ড্যানিলো রামোস ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন এই মৌসুমটি কৃষকদের জন্য এতো আঘাতমূলক হয়ঃ
চিনি শ্রমিকরা প্রতি বছর তিয়েম্পো মুয়ের্তোর ধকল বহন করে। এসময় তাঁরা সৎ, বিকল্প একটি কর্মসংস্থান এবং জীবিকা অর্জনের অন্যান্য উপায় খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানে জীবিকা অর্জনের বিকল্প উপায় স্পষ্টত অপ্রতুল। কারণ আজকাল এবং আগেও নেগরোসে একটি জরাজীর্ণ এক ফসলী চাষাবাদ ব্যবস্থা এবং শত বছর পুড়নো সামন্ততান্ত্রিক নিপীড়নের আধিপত্য চলে এসেছে।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নেগরোস অক্সিডেন্টালে (দ্বীপটির পশ্চিম পাশে) ৩০.৫ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। একই চিত্রে নেগরোস ওরিয়েন্টালে (দ্বীপটির পূর্ব দিকে) ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে।
আগস্ট মাসের পর থেকে সারা নেগরোস জুড়ে কৃষকরা প্রাদেশিক রাজধানীতে বিক্ষোভের করেছেন। দূর্যোগ তহবিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ করা অন্যান্য ধরনের সহায়তা অবিলম্বে তাঁদেরকে দেয়ার দাবি জানিয়ে তাঁরা এই বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভে যোগদানকারী একজন কৃষক নানায় লানি পরিশেষে জানিয়েছেন, কতগুলো পরিবারকে তিয়েম্পো মুয়ের্তো মৌসুমে ঋণের বোঝায় জর্জরিত হতে হয়।
এখন তিয়েম্পো মুয়ের্তো মৌসুম চলছে এবং কাজের খুব অভাব। এমনকি আমরা কোন কাজ পেলেও বাড়িতে কোন টাকা পয়সা নিয়ে যেতে পারি না। এই টিগুলুটমে (অভুক্ত মৌসুমে) এমনকি আমরা অনেক ঋণের দায়ে জড়িয়ে যাই।
নেগরোসের এই দূর্যোগ এল নিনো আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য এটি হচ্ছে চরম পর্যায়ের খরা। দ্বিপটি এই বছরের শুরুতে এই খরার কবলে পড়েছে।
নেগরোসে কয়েকজন কৃষককে উচ্ছেদ করতে সরকার প্রচারণা চালানোর ফলে বেশ কিছু সংখ্যক কৃষকের সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। সেখানে এমনকি মুরসিয়া শহরে প্রতিরোধকারী কৃষক এবং পুলিশ ও সৈন্যদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ হয়েছে।
নীচের ভিডিওটিতে একজন কৃষকের একটি সাক্ষাৎকার বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি এতে তাঁর গ্রামে দারিদ্র্য এবং সামরিকীকরণের প্রভাব ব্যাখ্যা করেছেনঃ
প্রাদেশিক রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিবাদ কর্মসূচীতে নেগরোসের কৃষকেরা দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে ভূমি সংস্কার বাস্তবায়ন এবং তিয়েম্পো মুয়ের্তো দ্বারা প্রভাবিত কৃষকদের প্রতি সহায়তার হাত প্রসারিত করতে আহ্বান জানান।