সাংবাদিক গ্লেন গ্রিনওয়াল্ডের মতে, স্নোডেনের তথ্য ফাঁসের সবচেয়ে বড়ো ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে আজকে ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) এবং যুক্তরাজ্যের গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেডকোয়ার্টার্স (জিসিএইচকিউ) মিলে বিশ্বের সবচে’ বৃহত্তম সিম কার্ড উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এনক্রিপশন কোড চুরি করেছে। এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা নথিতে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সিম কার্ডের এনক্রিপশন কোড চুরির মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থা আসলে কী করতে চেয়েছে? সাংবাদিক জেরেমি স্ক্যাহিল (তিনিও ইন্টারসেপ্ট ম্যাগাজিনে গ্রিনওয়াল্ডের সাথে কাজ করেন) জানিয়েছেন:
The NSA & GCHQ covertly stole millions of encryption keys used to protect your mobile phone communications: http://t.co/dVjLuxl4k3
— jeremy scahill (@jeremyscahill) February 19, 2015
এনএসএ এবং জিসিএইচকিউ মিলিয়নের বেশি এনক্রিপশন কোড চুরি করেছে। এই কোডগুলো মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগগুলোকে সুরক্ষিত রাখতো।
এনক্রিপশন কোড হলো সেই কোড যা সরকারের মতো তৃতীয় পক্ষের কাছে মোবাইল যোগাযোগকে গোপন রাখে। আর এই কোডগুলো সিম কার্ডে থাকে। তবে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও এর যাবতীয় তথ্য থাকে।
ফোন কল, টেক্সট মেসেজ এবং ইমেইল তথ্য আদানপ্রদান হয়ে থাকে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল ফোনের মধ্যে। তাই শুধুমাত্র মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার তথ্য দেখতে পারে। সাধারণত সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার কোড তাদের হাতে তুলে দিতে পারে। তবে জিমাল্টোর নেটওয়ার্ক হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারি আইনসমূহ বাইপাস করে সিম কার্ডের এনক্রিপশন কোড হাতিয়ে নিয়েছে। চুরি করা এনক্রিপশন কোডের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থা দুটি কোটি কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ফোন কল, টেক্সট মেসেজ এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।*
অনেক টুইটার ব্যবহারকারীর ধারনা, আগে তথ্য ফাঁসের ঘটনায় যতোটা আলোড়ন পড়েছিল, এবার অতোটা হয়নি।
@অ্যানয়ওপস হ্যাকিংয়ের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন:
It must be asked again, now that we know GCHQ/NSA have basically pwned everything: Why do we still have crime? How is ISIS even a thing?
— Anonymous (@AnonyOps) February 20, 2015
তাদের আবার জিজ্ঞেস করতে হবে। এখন আমরা জানি, এনএসএ এবং জিসিএইচকিউ সবকিছুই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে: আমরা কেন অপরাধের জগতে বন্দি থাকবো? আইএসআইএস এখনো টিকে আছে কীভাবে?
প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনালের এরিক কিং মজা করে বলেছেন:
Who thinks it's a good idea to give Cameron a “golden key”, now we've learned spies have been able to steal millions of them in the past.
— Eric King (@e3i5) February 20, 2015
কে ভেবেছিল, এটা ক্যামেরনকে সোনার কাঠি এনে দেবে। এখন আমরা জানতে পারলাম গোয়েন্দারা আগে মিলিয়ন পরিমাণ তথ্য চুরি করতে সক্ষম ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ ঘটনায় কারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তা উঠে এসেছে। ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, জিমাল্টোর গ্রাহকেরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মার্কিন মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এটিঅ্যান্ডটি, টি-মোবাইল, ভেরিজোন এবং স্প্রিন্ট-সহ বিশ্বের ৪৫০টি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিমাল্টো ৮৫টি দেশে সিম কার্ড বিক্রি করে থাকে। তাছাড়া ৪০টির বেশি দেশে সিম কার্ড তৈরি করে। ফাঁস করা নথিতে ভোডাফোন (ইউরোপ), অরেঞ্জ (ফ্রান্স), ইই (ইউরোপ), রয়াল কেপিএন (নেদারল্যান্ড), চায়না ইউনিকম, এনটিটি (জাপান) এবং চুংয়া টেলিকম (তাইওয়ান)-সহ আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিমাল্টোর ওয়েবসাইট খুঁজে চায়না মোবাইল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন-এর অংশীদারিত্বের বিষয়টি জানা গেছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির উইকিপিডিয়া পেজে তুরস্ক এবং ইতালিতে গ্রাহক থাকার কথা বলা হয়েছে।
ক্রমাগত গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু পাঠক দেশ দুটির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ক্লদিও গুয়ারনিরি নামের একজন ইতালিয়ান ম্যালওয়্যার এক্সপার্ট টুইট করেন:
United Kingdom is a European Union member state. It's time the Commission sanctions the British for #GCHQ hacking of other member states.
— Claudio (@botherder) February 20, 2015
যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র। সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে হ্যাকিং কার্যক্রম চালানোর জন্য কমিশন ব্রিটিশদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় হয়েছে।
মাহের আরার একজন সিরিয়ান-কানাডিয়ান। যুক্তরাষ্ট্র একবার তাকে টেররিস্ট সন্দেহে সিরিয়ায় আটক করেছিল। আটকবস্থায় তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন:
Obama isn't at war w/ Islam but the target of the NSA malware in the US & UK were all Islamic activists & scholars: http://t.co/eSypJtGYKe
— Maher Arar (@ArarMaher) February 19, 2015
ওবামা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন না। তবে এনএসএ-র ম্যালওয়্যার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের ইসলামিক আন্দোলনকারী এবং পণ্ডিতদের টার্গেট করছে।
জিমাল্টো কোম্পানি নিয়ে এতো আলোচনা হলেও তারা এখন পর্যন্ত বিবৃতি দেয়নি।তবে তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের সৎ অভিব্যক্তির প্রকাশ পেয়েছে:
*এর কোনো মূল্য নেই। কারণ এনএসএ এবং জিএইচসিকিউ মোবাইল কল, টেক্সট মেসেজ এবং অন্যান্য তথ্যে প্রবেশাধিকার পাবে না। কারণ সেগুলো রেডফোন এবং চ্যাটসিকিউরের মতো অন্যদের মাধ্যমে এনক্রিপ্টেড করা আছে। মোবাইল নিরাপত্তার বিষয়ে আরো কিছু জানতে সার্ভিল্যান্স সেলফ-ডিফেন্স অথবা সিকিউরিটি ইন অ্যা বক্স দেখতে পারেন।