পেশোয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত এক স্কুলে তালেবানের চালানো ভয়ঙ্কর এক হামলায় ১৩০ জন ছাত্র নিহত হবার দুদিন পর, ইসলামাবাদ ভিত্তিক এক বিতর্কিত মৌলভি আব্দুল আজিজ এই হামলার নিন্দা জানাতে অস্বীকার করে, যার ফলে দেশ জুড়ে চরমপন্থার বিরুদ্ধে এক দুর্লভ বিক্ষোভের স্ফুরণ ঘটে।
একই সাথে আব্দুল আজিজ বলেন যে তালেবানের বিরুদ্ধে সেনা ব্যবহার “বুদ্ধিমত্তার সাথে গ্রহণ করা কোন বিকল্প” নয়। আব্দুল আজিজ, রাজধানীর অন্যতম বড় মসজিদ, লাল মসজিদের ইমাম। এই মসজিদ এবং সংলগ্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উগ্রবাদের চর্চার কারণে সুবিদিত এবং ২০০৭ সালে এখানে বড় আকারে ১০ দিনের এক সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়, যে ঘটনায় একশত জনের বেশী ব্যক্তি নিহত হয়, যাদের বেশীর ভাগ ছিল উগ্রবাদী ওই স্কুলের ছাত্র। সে সময় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিল আজিজের ভাই এবং সে উক্ত হামলা নিহত হয়। সে সময় আব্দুল আজিজ বোরখা পড়ে মসজিদ থেকে পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ধরা পড়ে। দুই বছর পর জামিনে সে কারাগার থেকে মুক্তি পায়। আর এরপর থেকে মসজিদটি আবার খোলা হয় এবং সে এর প্রধান ইমামে পরিণত হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিপুল পরিমাণ সুশীল সমাজ একটিভিস্ট, রাজনীতিবীদ এবং ছাত্ররা লাল মসজিদের সামনে উপস্থিত হয়ে আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে। তারা একটি বোর্ডে পেশোয়ারে নিহত ছাত্রদের নাম লিখতে শুরু করে এবং নিহতদের স্মরণে দ্রুত মোমবাতি জ্বালিয়ে শোক প্রকাশ করে।
#ReclaimYourMosques protest in front of #LalMasjid #Islamabad. Civil society for the first time have come forward… http://t.co/dtUfLbm7pV
— S. Oon Haider Zaidi (@OonHaider) December 18, 2014
লাল মসজিদের সামনে আপনার মসজিদের উপর আপনার দাবীকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন নামক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুশীল সমাজ এই প্রথম সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
এই বিক্ষোভের আয়োজক জিবরান নাসির, যিনি করাচির এক আইনজীবী এবং অধিকার আন্দোলন কর্মী। তিনি বলেন:
আমি এক সম্মিলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদে এসেছিলাম, আর এই সময় পেশোয়ারে এই বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটল, আর সবকিছু বদলে গেল। পরের দিন, লাল মসজিদ-এর ইমাম এক বিবৃতি প্রদান করল যা আমার হজম হলো না আর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে করাচিতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে, আমরা এর প্রতিবাদ করব। উগ্রবাদীদের হাত থেকে আমরা আমাদের মসজিদ, আমাদের সম্প্রদায়, আমাদের শহর, এমনকি আমাদের সমগ্র দেশটাকে পুনরায় আমাদের হাতে নিয়ে নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি। যে সমস্ত ইমাম মাঝে এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘৃণা ছড়ায় আমরা এখন থেকে আর কাউকে তাদের পাশে দাঁড়াতে দেব না। আমরা আর আব্দুল আজিজ-এর মত ব্যক্তির পাশে দাঁড়াবো না এবং নিজেরে দাঁড়িয়ে দেখব না যে তার মত ব্যক্তি আমাদের পবিত্র রাসুল (তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)-এর নাম উচ্চারণ করতে এবং আমাদের শান্তির ধর্মকে স্থায়ীভাবে সহিংস হতে দেব না। আমি ইসলামাবাদের নাগরিকদের ঘর থেকে বের হয়ে এসে নিজেদের শহরের উপর দাবী পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
লাল মসজিদের ব্যবস্থাপকরা প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। দাঙ্গা নিবারণের পোষাক ও যন্ত্রপাতি সমেত পুলিশ সেখানে হাজির হয় এবং প্রতিবাদকারীদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে।
এমকিউএম-এ, ফয়সাল সাবজওয়ারি টুইট করেছে::
See…purana, Naya ya gaya #Pakistan? FIR is lodged against Civil Society 4 protesting against Lal Masjid Cleric.
— Faisal Subzwari (@faisalsubzwari) December 18, 2014
দেখ…পুরনো, সাথে নতুন একজন এসে গেছে? লাল মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
তবে নাসির এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা বলছে যে আগামী সপ্তাহ থেকে তারা বিশেষ এক দিনে লাল মসজিদের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাত জেগে দোয়া করবে, আর এরপর সেটা হবে প্রতি মঙ্গলবার রাতে।
হঠাৎ করে বৃহস্পতিবারে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শুরু হওয়া প্রতিবাদ দ্রুত সাড়া দেশে ছড়িয়ে পড়ে, যা পড়ে তালেবানের ক্ষমা এবং সকল স্থানের উগ্রবাদের বিরুদ্ধে এক বৃহত্তম আন্দোলন হিসেবে গড়ে ওঠে। লাল মসজিদের ইমাম মওলানা আব্দুল আজিজের নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের এবং উগ্রবাদের দায়ে আব্দুল আজিজকে বিচারের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে চেঞ্জ.অর্গে করা এক দরখাস্ত ৪০০০ সমর্থক লাভ করেছে।
১৯ ডিসেম্বর তারিখে, আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে পুলিশ থানায় একটি এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) দায়ের করা হয় এবং ফেসবুকের এই ভিডিও সেই মুহূর্তটি ধারণ করেছে।
If in tomorrow's jummah sermon your Imam wont condemn Peshawar Attack then stand up and ask him to. #ReclaimYourMosques
— Quaid Ahmed (@Quaidism) December 18, 2014
যদি কালকের জুম্মার নামাজের খুতবায় আপনার ইমাম পেশোয়ার হামলার নিন্দা না জানায়, তাহলে এর অবস্থান গ্রহণ করুন এবং তাকে তা করতে বলুন।
What an awesome initiative by @MJibranNasir & @marvisirmed – Fight back against militant & hatemonger clerics to #ReclaimYourMosques!
— Luqman (@luqman255) December 18, 2014
@ এমজিবরান নাসির এবং @মারভিসিএরমেড-এর দারুণ এক উদ্যোগ- উগ্রবাদী এবং ঘৃণা ছড়ানো ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, আপানার মসজিদের উপর আপনার দাবী পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে!
It's litmus paper test of #Mullahs they're with us or Taliban?If they DONT condemn Talibanism in sermons,lets protest & #ReclaimYourMosques
— LiberalVoicePakistan (@LiberalKR) December 19, 2014
মোল্লাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা, তারা কি আমাদের নাকি তালেবানের পক্ষে? ধর্মীয় উপদেশ মূলক বক্তৃতায় যদি তারা তালেবানপন্থীদের নিন্দা না জানায়, তাহলে আসুন এর প্রতিবাদ করি এবং আপনার মসজিদের উপর আপনার দাবী পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন।
“আপনার মসজিদের উপর আপনার দাবী পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন – আমরা লাল মসজিদের বিষয়ে এফআইএর এর ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবী জানাচ্ছি” নামক ফেসবুকের পাতায় এক বিক্ষোভাকারী লিখেছে :
এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে, আবার চিন্তা করুন, আপনি কি এক নীরব দর্শক হয়ে থাকবেন নাকি আমাদের অংশ হবেন। যদি ১৪১ জন শিশু আপনাকে আপনার ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে না পারে তাহলে নিশ্চিত যে আপনি আব্দুল আজিজের মত এক কৈফিয়ত প্রদানকারী।
Huge Crowd At Karachi Press Club Demanding and Chanting #ArrestAbdulAziz pic.twitter.com/t9hhXcdeBO
— Syed Ayaz Ali (@ayazali77) December 21, 2014
করাচি প্রেসক্লাবের সামনে বিশাল এক জনতা তাদের দাবী জানাচ্ছে এবং স্লোগান দিচ্ছে।
Hyderabad has been completely shut down in the protest against Abdul Aziz who threatened Altaf Hussain. #ArrestAbdulAziz
— Namaloom Engineer (@Rectified_Guy) December 21, 2014
আব্দুল আজিজ, যিনি আলতাফ হোসেনকে হুমকি প্রদান করেছে তার বিরুদ্ধে আয়োজিত এক বিক্ষোভে হায়দ্রাবাদ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে।
Solicitor of ISIS in Pakistan, Closest Ally of Taliban, Devil's Advocate – Abdul Aziz of Lal Mosque #ArrestAbdulAziz pic.twitter.com/suFJTRRkjI
— Syed FaiXan Jawaid (@Syedfaixan) December 21, 2014
আইএসআইএস-এর পক্ষে ওকালতি করা, তালেবানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, শয়তানের উকিল- লাল মসজিদের আব্দুল আজিজ।
Lal Masjid & Burka Maulana are a national shame. Both must be brought to justice to restore sovereignty of the nation. #ArrestAbdulAziz
— Hasan Tasleem (@Ha5an_) December 21, 2014
লাল মসজিদ ও বোরখা মওলানা, জাতীয় এক লজ্জা। জাতির সার্বভৌমত্ব পুনরায় স্থাপনে এর ব্যবস্থাপনায় যারা আছে তাদের ও আজিজ উভয়কে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।
We Are Loud And Clear #ArrestAbdulAziz pic.twitter.com/cL07aNxET1
— Syed Ayaz Ali (@ayazali77) December 21, 2014
আমরা জোরালো এবং পরিষ্কার।
চাপের মুখে নত হওয়া মওলানা আব্দুল আজিজ রোববার, শিশু হত্যার কারণে নিন্দা না জানানোর ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ট্রিবিউন.কমের এক প্রবন্ধে এক পাঠক উত্তর করেছে:
দুঃখিত, অনেকে দেরিতে নামমাত্র এই ক্ষমা প্রার্থনা যথেষ্ট নয়। তার প্রতি লজ্জা কারণ ক্ষমা চাওয়ার জন্য আসলে অনেক ভাবতে হয়েছে এবং এই সকল চাপের কারণে সে ক্ষমা চেয়েছে। …তার মাঝে পরিপূর্ণ শিষ্টাচার এবং নৈতিকতার অভাব রয়েছে… নিষ্পাপ শিশুরা মারা যাচ্ছে এবং তাকে এই নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। তার লজ্জিত হওয়া উচিত এবং তার কথা শোনার জন্য আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। তাকে তার সকল সহযোগী সহ চিরস্থায়ী ভাবে কারাগারে লোহার গারদের পেছনে থাকা উচিত।