১২৫ দিন জেলবাসের পর মিশরের বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী মাহেনূর আল-মাশরি আজ মুক্তি পেয়েছেন।
মাদা মাশর তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আলেক্সান্দিয়ার আদালত মাহেনূরের ৬ মাসের কারাদণ্ড স্থগিত করেছে। গত মে মাসে আপিল আদালত আরো ৮ জন রাজনৈতিক কর্মীর সাথে মাহেনূরকে ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। তাদের অপরাধ ছিল, তারা বিতর্কিত প্রতিবাদ আইনের প্রতিবাদ করে রাস্তায় নেমেছিল। উল্লেখ্য, এই আইনে মিশরে সব ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মাহেনূরকে গ্রেফতার করা হয় গত ডিসেম্বর মাসে আদালতের বাইরে প্রতিবাদ করার সময়ে। সেদিন আদালতে দুই পুলিশের বিরুদ্ধে খালিদ সাঈদকে খুনের অভিযোগে বিচার চলছিল। সাঈদকে মিশরে বিপ্লবের মোহাম্মদ বুয়াজিজি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
গত জুলাই মাসে মাহেনূরের কারাদণ্ডের মেয়াদ কমিয়ে ৬ মাস করা হয়েছিল। তবে সবচে’ ভালো সংবাদটি এসেছে আজকে। মিসদেমেনরসের আদালত তার মামলা খারিজ করে দিয়েছে।
মিশরের আরেক রাজনৈতিক কর্মী এবং ব্লগার আলা আব আল-ফাত্তাহ'র সমর্থনে মাহেনূর আগস্টের ২৫ তারিখে অনশন শুরু করেছিলেন। আল-ফাত্তাহ আরো কিছু রাজনৈতিক কর্মীর সাথে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখে মুক্তি পেয়েছেন।
মাহেনূরের মুক্তির খবর নেটিজেনরা স্বাগত জানিয়েছেন।
বর্তমানে পৃথিবী জুড়েই সুসংবাদের বড়ো অভাব। মিশরের ব্লগার জেইনোবিয়া মাহেনূরের মুক্তিকে ”দিনের সেরা খবর” বলে অভিহিত করেছেন:
Mahinour El-Masry is released from detention pending trial. The good news of the day
— Zeinobia (@Zeinobia) September 21, 2014
মাহেনূরকে আটকাবস্থা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আজকে দিনে এটাই সবচে’ ভালো খবর।
ইয়াসমিন খলিফা একই ধরনের অনুভূতির কথা লিখৈছেন:
Amidst the crappy news of multiple explosions across Egypt there is a glimmer of happy news that Mahinour will be released.
— Yąsmine Khalifa (@jazkhalifa) September 21, 2014
মিশর জুড়ে এখন দু:সংবাদের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে মাহেনূরের মুক্তি ভালো খবরের একটা আভাস মাত্র।
সহ-রাজনৈতিক কর্মী মোনা সেইফ জানেন মাহেনূরকে কোন বিষয়টি হতাশ করেছে। তিনি টুইট করেছেন:
ماهينور هتخرج و هتبقى مقهورة اللي معاها في نفس القضية لسة محبوسين. خاصة اسلام اللي ماكانش مشارك في الوقفة ..الحرية لاسلام و عمر و لؤي و ناصر
— Mona Seif (@Monasosh) September 21, 2014
মাহেনূর মুক্তি পেলেও খুশি হবে না। কারণ একই মামলায় অন্যরা এখনো আটক আছে। বিশেষ করে ইসলাম, যে কি না প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশ-ই নেয়নি। ইসলাম, ওমর, লরি, নাসের- সবার মুক্তি চাই।
জেলে থাকা অবস্থাতেই মাহেনূর ২০১৪ সালের লুদভিক ট্রেরিয়েক্স ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস পুরস্কার পেয়েছেন। আশ্চর্যজনকভাবে ১৯৮৫ সালে প্রথম যখন এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়, সেবার জেলে থাকা অবস্থায় পুরস্কারটি পেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।
আইনবিদ গামাল ইদ বিশ্বাস করেন, সরকার তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে মাহেনূরকে মুক্তি দিয়েছে। তিনি টুইট করেছেন:
بعد الف مبروك لماهينور المصري رأيي الشخصي :مناورة سياسية لنظام مستبد ماهينور حتسلم جائزة دولية حقوقية الشهر الجي! وتحسين صورة قبل سفر الرئيس
— Gamal Eid (@gamaleid) September 21, 2014
মাহেনূরকে অভিনন্দন জানিয়ে যেটা বলতে চাই- আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক চাল হিসেবে অত্যাচারী সরকার মাহেনূরকে মুক্তি দিয়েছে। আগামী মাসে মাহেনূর একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতির দেশের বাইরে সফরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এই পুরস্কার দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবে।
মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
তবে মুক্তি পাবার মধ্যে দিয়ে মাহেনূরের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে না। রামল পুলিশ স্টেশনের মামলা এখনো ঝুলছে তার কাঁধে। এ মামলায় মাহেনূর-সহ আরো ১২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ স্টেশনে ভাংচুর এবং পুলিশকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।