বন্যা বিপর্যয়ের পর পুনঃনির্মাণে ব্যস্ত স্লোভেনিয়া, মেসেডোনিয়া এবং সার্বিয়ার স্বেচ্ছাসেবকরা

Volunteers reconstructing a country road in Slovenia during a youth work action in 1960. This image is public domain.

স্লোভেনিয়ায় ১৯৬০ সালে একটি তরুণ কর্ম পদক্ষেপের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবকরা একটি রাস্তা পুনঃনির্মাণ করছেন। ছবিটি পাবলিক ডোমেইন। 

এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার পর সাবেক যুগোস্লাভিয়ান দেশগুলোর অনেক বাসিন্দা মনে হচ্ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি গোছানোর কাজে সাহায্য করতে তাদের পুরনো অভ্যাসে ফিরে গেছেন। বসনিয়ার রেডিও সারাজেভো এবং সার্বিয়ান জাতীয় সংবাদ সংস্থা তানজুগের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেসেডোনিয়া, স্লোভেনিয়া এবং সার্বিয়ার বেশ কয়েকটি শহর থেকে আসা ৫০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক সার্বিয়ার ক্রালজেভো শহরে একত্রিত হয়েছেন। তারা এসেছেন রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য মৌলিক অবকাঠামোগুলো পুনরায় গড়ে তুলতে একটি “তরুণ কর্ম পদক্ষেপ” এ অংশ গ্রহণ করতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ছয়টি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ইউরোপিয় দেশের মধ্য থেকে একটি দেশ গঠিত হয়। নতুন গঠিত দেশটি বিশ্বের কাছে যুগোস্লাভিয়া সমাজতান্ত্রিক কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিতি পায়। একজন নামহীন লেখক একবার দেশটিকে “একমাত্র স্থান যেখানে লোহার পর্দা দোলে” বলে বিশেষায়িত করেছিলেন। যুগোস্লাভিয়া কট্টর সমাজতান্ত্রিক একটি দেশ ছিল। এটি পূর্ব ইউরোপের একমাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল। দেশটি কখনও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি। বরঞ্চ যখন যুগোস্লাভিয়ার পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় দিকের রাষ্ট্র গুলোর সাথে বেশির ভাগ সময় বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল তখন প্রায়ই দেশটিকে নিজেই নিজের ভরণপোষণের জন্য একা ছেড়ে দেয়া হত। বেশিরভাগ লোকই আজ জানেন না যে কয়েকটি রাষ্ট্র নিয়ে নতুন গঠিত যুগোস্লাভিয়া যখন বিশ্বযুদ্ধের সময় ভয়ানকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল, তখন দেশটি নিজেই নিজেকে পুনরায় নির্মাণ করেছিল।  

সাবেক যুগোস্লাভিয়াতে “তরুণ কর্ম পদক্ষেপ” একটি জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচী ছিল। যুগোস্লাভিয়ার তরুণ সমাজতান্ত্রিক লীগ এই কর্মসূচীর আয়োজন করত। কয়েকটি বড় বড় শ্রমিক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাস্তা, রেলসড়ক, নিকটবর্তী নতুন প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ব ও একতার মহাসড়ক তৈরি করা হয়েছিল। সারাদেশে মহাসড়কটি বিস্তৃত ১,১৮০ কিলোমিটার জুড়ে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে স্লোভেনিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত মেসেডোনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার পর এই ধরনের কর্ম পদক্ষেপগুলো শেষ হয়ে যায়।

ক্রালজেভো শহরের আজকের তরুণ কর্ম পদক্ষেপ একটি স্ব-আয়োজিত নাগরিক কর্মসূচী। সাবেক যুগোস্লাভিয়ার সময়ে যারা বিভিন্ন তরুণ কর্ম পদক্ষেপে অংশ নিয়েছিলেন তাদেরই কয়েকজন এই পদক্ষেপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা শহরটির ভিতরে এবং চারপাশে ১০ টি স্থানকে লক্ষ্য করে তাদের কাজ শুরু করেছেন। এই স্থানগুলো সরকারি বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় “অ-অন্তর্ভুক্ত” রয়ে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত যে ছয়টি শ্রেনী নির্ধারন করা হয়েছে তাঁর কোনটিতেই ঐ দশটি স্থানকে রাখা হয়নি। কারন কর্তৃপক্ষ মনে করে এই স্থানগুলো সরকারি সাহায্য পাওয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। মেসেডোনিয়ার অহরিদ থেকে আসা জোরান স্টেভভস্কি সবচেয়ে প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবকদের একজন। তিনি রেডিও সারাজেভো’তে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক যুগোস্লাভিয়াতে আয়োজিত একটি তরুণ কর্ম পদক্ষেপে তাঁর অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেছেনঃ

“Predsjednik sam udruženja koje okuplja bivše akcijaše, ali i one mlađe, koji žele da učestvovati u ovoj našoj priči. Bio sam 12 puta na radnim akcijama, a počeo sam upravo u ovim krajevima, na Moravi, 1979. godine i to je trajalo do 1990. godine u Beogradu. Radili smo na nasipima Zapadne Morave i Rasine. Vratio sam se tamo gdje sam i počeo”, kaže Stevovski.

“যে সংস্থাটি সাবেক [কর্ম] পদক্ষেপের স্বেচ্ছাসেবকদের একত্রিত করেছে সেটির সভাপতি আমি। তবে কম বয়সী যারা আমাদের এই গল্পে অংশ গ্রহণ করতে চেয়েছে আমরা তাদেরকেও সাথে নিয়েছি। আমি ১২ টি কর্ম পদক্ষেপে অংশ নিয়েছি। আমি কর্ম পদক্ষেপে কাজ করতে শুরু করেছি ১৯৭৯ সালে একেবারে এই মোরাভা [নদীর] পাড়ে অবস্থিত এই স্থানটি থেকেই। আর এই কর্ম পদক্ষেপটি ১৯৯০ সালে একেবারে বেলগ্রেড পর্যন্ত যেয়ে শেষ হয়েছে। মোরাভা এবং রাসিনা নদীর পশ্চিম ধারে বন্যা প্রতিরোধে নির্মাণ করা দীর্ঘ বাঁধে আমরা কাজ করেছি। স্টেভভস্কি বলেছেন, “আমি যেখান থেকে তরুণ কর্ম পদক্ষেপে কাজ করতে শুরু করেছিলেম, সেখানেই আবার ফিরে এসেছি”। 

নীচের ইউটিউব ভিডিওতে এই তরুণ কর্ম পদক্ষেপের একটি কাজ দেখানো হয়েছে। এখানে সকল বয়সী লোক স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন। তারাই ভ্রাতৃত্ব ও একতা মহাসড়কটি নির্মাণ করেছেন। এ কাজে যুগোস্লাভিয়া সমাজতান্ত্রিক কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্রের ছয়টি রাষ্ট্রকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ভিডিওটিতে তৎকালীন যুগোস্লাভ নেতা জোসিপ ব্রজ টিটোর ফুটেজ দেখা যাচ্ছে। পূর্ব নির্ধারিত সময় অর্থাৎ এক বছরের মাথায় মহাসড়কটির নির্মান কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করায় তিনি ভিডিওতে (কথোপকথনের ইংরেজী ভাষান্তর করে দেয়া হয়েছে) স্বেচ্ছাসেবকদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

ক্রালজেভো শহরের কর্ম পদক্ষেপে কর্ম ঘন্টা সকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় এবং রাত ১০ টায় শেষ হয়। এ সময়ের মাঝে তারা সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন, খাবার খান এবং এই কর্ম ঘন্টার মাঝেই কিছুটা বিনোদনের ব্যবস্থা করেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .