বলকানে অবৈধ বন্যপ্রাণী বিষক্রিয়ায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে, মামলা হচ্ছে মাত্র ১% ক্ষেত্রে

বুলগেরিয়ায় বিষ আক্রান্ত গ্রিফন শকুন। ছবি হৃস্টো পেশেভ/ এফডাব্লিউএফএফ, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

বলকান_নির্বিষকরণ জীবন প্রকল্পের লেখা এই নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ অনুমতি নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস পুনরায় প্রকাশ করেছে।

“অবাঞ্ছিত” প্রাণীদের লক্ষ্য করে পরিবেশে বিষাক্ত পদার্থের অবৈধ ব্যবহার জীববৈচিত্র্যকে হ্রাস করে এবং জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত বলকান_নির্বিষকরণ জীবন প্রকল্পের সাম্প্রতিক বলকান শকুনদের বিষপ্রয়োগ সমীক্ষা ২০২২ অনুসারে এটি বিনা শাস্তিতে লোকচক্ষুর আড়ালে অব্যাহত রয়েছে।

সমীক্ষার সময়কাল ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আলবেনিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, গ্রীস, উত্তর মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র এবং সার্বিয়া জুড়ে ১,০৪৬টি বিষক্রিয়া এবং অনুমিত বন্যপ্রাণী বিষক্রিয়ার ঘটনা রেকর্ড করা হয়। বিষক্রিয়ার ঘটনাগুলির পেছনের মূল উদ্দেশ্য তাদের পশুপালন চর্চা, কৃষি উৎপাদন এবং শিকারের অঞ্চলগুলিতে খেলার প্রাণীদের সম্ভাব্য ক্ষতিকর শিকারী স্তন্যপায়ী (প্রধানত নেকড়ে, শেয়াল, খেঁকশেয়াল এবং ভালুক) গুলির সাথে দ্বন্দ্ব বলেই মনে হয়।

একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলকান_নির্বিষকরণ জীবনের প্রকল্প সমন্বয়কারী ইউরোস প্যান্টোভিচ বলেন:

“এই চর্চাটি মানুষ-বন্যপ্রাণী দ্বন্দ্বের সমাধান নয়। অনির্বাচিতভাবে প্রাণী হত্যার এই পদ্ধতিটি বিপন্ন প্রজাতি এবং শিশুসহ অসতর্ক নাগরিকদেরও বিপদে ফেলে দেয়।

প্রায় প্রতি মুহূর্তের বিষক্রিয়ার ঘটনায় কার্বামেট, বিশেষ করে কার্বোফুরান  সনাক্ত করা হয়। কার্বোফুরান মানব স্বাস্থ্যের জন্যে বিপজ্জনক বিবেচিত একটি নিষিদ্ধ কীটনাশক এবং মার্কিন জাতীয় জৈবপ্রযুক্তি তথ্যকেন্দ্র অনুসারে মাত্র কয়েক মিলিগ্রাম মানুষের জন্যে মারাত্মক হতে পারে যদি “গিলে ফেলা, শ্বাস নেওয়া বা ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়। সংস্পর্শে এলে ত্বক বা চোখ পুড়ে যেতে পারে।”

উত্তর মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রে বিষাক্রান্ত মিশরীয় শকুন। মেটেডিয়া ভেলেভস্কি/ এমইএস -এর ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

অবৈধ বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়ায় উচ্ছিষ্ট-খেকো পাখিদের মধ্যে শকুনেরাই সাধারণত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার সংখ্যা প্রতি চারটি ঘটনার একটি। ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বলকান উপদ্বীপে ৪৭টি মিশরীয় শকুন, ১৭টি সিনারিয়াস শকুন এবং একটি দাড়িওয়ালা শকুনসহ  সর্বমোট ৪৬৫টি শকুন মারা গেছে।

এই অঞ্চলের গ্রিফন শকুন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত – ২৩৩টি পৃথক বিষক্রিয়া বা অনুমানযোগ্য বিষক্রিয়ার ঘটনায় ৪০০টি মারা গেছে। এর সবচেয়ে কাছাকাছি সংখ্যা সাধারণ বাজপাখি এবং লাল শিয়ালের, যথাক্রমে ১৯০টি পৃথক ঘটনায় ৩৯২টি এবং ১৪১টি পৃথক ঘটনায় ৩৮৯টি।

শকুন সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ইয়োভান আন্দেভস্কি বলেছেন:

“কখনো আনুমানিক ২০% এরও কম বিষক্রিয়ার ঘটনা আবিষ্কার এবং নথিভুক্ত করতে পারলে সারা বলকান জুড়ে সম্ভাব্যভাবে আনুমানিক ১১৫টি শকুন বার্ষিক বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।”

এই ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এই অঞ্চলের শকুন সংখ্যা কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ এবং আঞ্চলিক ও স্থানীয় নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতিকে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়া বলকান উপদ্বীপে শকুনদের জন্যে এককভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুমকি এবং বর্তমানে তাদের পুনরুদ্ধার সীমিতকরণের কারণ বলে বিবেচিত। শকুন সম্পর্কিত যেকোন সংরক্ষণ উদ্যোগের, বিশেষ করে পুনরুদ্ধার এবং পুনঃপ্রবর্তন উদ্যোগের পরিকল্পনা করার সময় এই নিয়ামকটি বিবেচনায় নিতে হয়।

বলকান অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা

কম সচেতনতা, প্রাসঙ্গিক সরকারি কর্তৃপক্ষের অপর্যাপ্ত আগ্রহ, অস্পষ্ট আইন ও এখতিয়ার এবং বিষক্রিয়ার ঘটনাগুলি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে সম্পদ ও ক্ষমতার অভাব বলকান অঞ্চলে এই সমস্যাটিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলার প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বলকান শকুন বিষপ্রয়োগ সমীক্ষা উল্লেখ করে যে:

বলকানসহ ইউরোপে এই চর্চাটি বেআইনি হলেও শিকারী এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সাথে দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্যে এটি একটি দ্রুত ও সস্তা পদ্ধতি হিসেবে স্থানীয় লোকজন এখনো ব্যবহার করছে। বিষের এই ধরনের নিবিড় ব্যবহারের প্রধান চালক হলো পশুপালক, শিকারী, কৃষক এবং স্তন্যপায়ী শিকারীদের সাথে প্রধানত নেকড়ে ছাড়াও শেয়াল, শিয়াল এবং বন্য/ ছাড়া কুকুরের দ্বন্দ্ব। … আইনের দুর্বল প্রয়োগ, নিষিদ্ধ কীটনাশকের কালোবাজারি এবং বাজারে বিষাক্ত পদার্থের আপেক্ষিক বিনামূল্যে সহজলভ্যতা এর ব্যাপক ব্যবহারকে সহজতর করেছে।

তাছাড়াও অবৈধ বিষপ্রয়োগ “মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিবাদ ও বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।”

সম্প্রতি কিছু কিছু বলকান দেশে বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়ার দায়মুক্তি জনসাধারণের বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সাল পর্যন্ত এটি আলবেনিয়াতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো না। শকুন সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের ইউটিউবে পোস্ট করা অতীত ও বর্তমানের দিকে নজর দেয়া নিচের স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্রটি আলবেনিয়াতে বন্যপ্রাণী বিষক্রিয়ার ইতিহাসের উপর আলোকপাত করে।

শকুনসহ অন্যান্য প্রাণীদের রক্ষা করার জন্যে লড়াইরত পরিবেশবাদীরা এই চর্চার তীব্রতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে জনসাধারণের চোখে এটিকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে।

তারা তাদের বার্তা জুড়ে দেওয়ার জন্যে তরুণ ও বয়স্ক উভয় ধরনের শ্রোতাদের কাছে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে শিক্ষামূলক অ্যানিমেশন তৈরি করার মতো বিভিন্ন পন্থা ব্যবহার করে থাকে:

অবৈধ বন্যপ্রাণী বিষক্রিয়া মোকাবেলা করার জন্যে একটি বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বহু অংশীজনের যৌথ প্রচেষ্টা দরকার।

বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়া প্রতিরোধ ও অনুমোদনের মূল উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও বাধাগুলির মধ্যে রয়েছে অস্পষ্ট আইন, অপর্যাপ্ত আইন প্রয়োগ, বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়ার জন্যে লঘু শাস্তি এবং পুলিশি পদক্ষেপের জন্যে অপর্যাপ্ত ও অস্পষ্ট প্রোটোকল এবং সীমিত পুলিশি ক্ষমতা।

বলকান_নির্বিষকরণ জীবন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলিকে জড়িত করতে এবং বন্যপ্রাণী অপরাধ একাডেমি ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ উদ্যোগের মাধ্যমে বিষক্রিয়ার ঘটনার তদন্ত ও ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্যে সক্ষমতা তৈরি করার আরো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি অন্যান্য দেশের সেরা চর্চার উদাহরণগুলির উপর ভিত্তি করে বন্যপ্রাণী বিষক্রিয়ার প্রতিবেদন করা, তদন্ত এবং পরিচালনার দায়িত্বগুলি বর্ণনা করার জন্যে আরো দক্ষ, পরিষ্কার মানসম্পন্ন কর্মকাণ্ডের প্রোটোকল বিকাশের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে।

গ্রিসে বিষাক্রান্ত সোনালী ঈগল। লাভ্রেতিস সিদিরোপুলোসের তোলা ছবি, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

উদাহরণস্বরূপ, এই সর্বশেষ সমীক্ষা অনুসারে ২০০০-২০২০ সময়কালের মধ্যে বলকান উপদ্বীপের জরিপকৃত সব দেশে মোট ১,০৪৬টি বিষক্রিয়া এবং অনুমানযোগ্য বন্যপ্রাণী বিষক্রিয়ার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি (৫৫ শতাংশ) গ্রিসে এবং এক চতুর্থাংষের বেশি (২৮ শতাংশ) সার্বিয়ায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। উভয় দেশেই, স্থানীয় সুশীল সমাজ সংস্থাগুলি বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণে যথেষ্ট চেষ্টা করেছে।

সমীক্ষা পরিচালনাকারীরা সতর্ক করেছে অন্যান্য দেশের তথ্যের অভাব প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের পরিবেশগত অপরাধ গ্রীসে অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি এমন ধারণা তৈরিতে অবদান রাখে। তবে তারা উল্লেখ করেছে অন্যান্য দেশে ঘটনা গ্রিসের তুলনায় বেশি হলেও স্থানীয় গবেষণার অভাব এটিকে কম করে দেখাচ্ছে।

“বন্যপ্রাণী বিষক্রিয়ার বাস্তবতা হলো এর পরিধির গবেষণা আরো বেশি করে করলে হয়তো আরো বেশি বিষক্রিয়ার ঘটনা সনাক্ত হবে। বিষক্রিয়ার ঘটনাগুলির স্থানিক বিতরণের ক্ষেত্রে এটি সত্য বলে সমস্ত ক্ষেত্রে আরো বেশি নিরীক্ষণের চেষ্টা করা হলে সাধারণত বেশি সংখ্যক বিষক্রিয়ার ঘটনাই দেখা যায়। অতএব এই সমীক্ষার বিষয়বস্তু বলকান অঞ্চলে এবং প্রতিটি দেশে পৃথকভাবে বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়ার বর্তমান অবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি প্রতিফলিত এবং অনেক সংখ্যক সম্ভাব্য বিষক্রিয়ার ঘটনার সংখ্যা রেকর্ড না হওয়ার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।”

উপরন্তু, প্রকল্পটি বন্যপ্রাণীর বিষক্রিয়ার ঘটনাগুলির তদন্ত ও আদালতের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার জন্যে এখতিয়ারসম্পন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও খাতগুলির মধ্যে যোগাযোগ এবং তথ্য বিনিময় বৃদ্ধির পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .