পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এবং দরিদ্র প্রদেশ বেলুচিস্তানে সতন্ত্রবাদীরা স্বাধীনতার জন্য এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করছে। প্রদেশটিতে স্বতন্ত্রবাদীদের এই আবেগ নতুন নয় – বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শেষে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর অনেক বেলুচ উপজাতি প্রধান দেশটিকে তাঁদের নিজেদের বলে গ্রহণ করে নেয়নি। এবং বহু বছর ধরে অনেক বিদ্রোহী পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। কিন্তু কয়েক দশক পুরনো এই দ্বন্দ্ব গত নয় বছরে আবারো পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।
বেলুচ সতন্ত্রবাদীরা বেলুচিস্তানের অনেকখানি জায়গা দখল করে রেখেছে এবং পাকিস্তানী বাহিনী তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আক্রমণ চালিয়ে থাকে। এখানে মৃত্যুর অঙ্কটি বেশ বড় – সাম্প্রতিক কয়েক দফা সহিংসতায় ২ হাজারেরও বেশি নাগরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৭০০ জন ও প্রায় ৫০০ জন যোদ্ধা মারা গেছে।
হত্যা ছাড়াও কোনরকম ব্যাখ্যা ছাড়াই কয়েক হাজার বেলুচ নিখোঁজ রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস ফর বেলুচ মিসিং পার্সনস (আইভিবিএমপি) সংস্থাটির মতে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮ হাজার বেলুচ লোককে জোর করে অপহরণ করা হয়। এখনও তাঁদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
আইভিবিএমপি – এর ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির বেলুচ, যিনি মামা কাদির নামেও পরিচিত। তিনি লোক নিখোঁজ হওয়ার এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়ে তাঁর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালে তাঁর ছেলেকে জোর করে অপহরণ করার দু’বছর পর তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাদেশিক রাজধানী শহরের কোয়েটা প্রেস ক্লাবের বাইরে মামা কাদির নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য একটি শিবির প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারেরা কয়েক হাজার প্রতিবাদ কর্মকাণ্ড মঞ্চস্থ করেছে। নিখোঁজ বেলুচ লোকেদের জন্য তাঁর নিরলস সংগ্রাম গত ১৩ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে ১,৩০০ দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
শিবিরে মামা কাদির বলেছেন যে, পাকিস্তানী বাহিনী কয়েকবার তাঁকে হুমকি দিয়েছে এবং এমনকি তাঁর শিবিরেও আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ১,৩০০ তম দিবসে পৌঁছানোর পর তিনি মুখ খুলেছেনঃ
আইভিবিএমপি প্রতিবাদের ১,৩০০ তম দিন পূর্ণ করেছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা কোয়েটা, করাচী এবং ইসলামাবাদে প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমাকে এবং জাকির মাজিদ বেলুচের বোন ও তাঁর পরিবার সহ আইভিবিএমপি– এর অন্যান্য সদস্যদেরকেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এখন হুমকির সাথে সাথে তাঁরা আমাকে বিরাট অঙ্কের ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছে, যেন আমি নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়টি নিয়ে আর আন্দোলন না চালাই।
এ ধরনের হুমকি এবং প্রস্তাব আমাকে দুর্বল করে দিতে পারবে না। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে, এতে করে বেলুচ লোকেদের মাঝে সম্পর্কের ফাটল ধরছে – নতুবা আমার পথে বিশ্বের কোন শক্তিই বাঁধা দিতে পারবে না। বেলুচ শহীদদের এবং নিখোঁজ সক্রিয় কর্মীদের বোন, মা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের দোয়াই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা মামা কাদিরকে সমর্থন জানাচ্ছেন।
জামাল নাসির বেলুচ (@জেএনবেলুচ) টুইট করেছেনঃ
#MamaQadeer is an activist of Voice For Baloch Missing Person, struggling to recover victims of enforced disappearances. #Balochistan
— BALOCH, Jamal Nasir (@JNBaloch) October 12, 2013
#মামাকাদির একজন সক্রিয় কর্মী, যিনি বালুচের নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তিনি বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকার লোকদের পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।#বেলুচিস্তান
মুরিদ বিজেনজো (@মুরিদবিজেনজো) প্রচেষ্টাটির বর্ণনা দিয়েছেনঃ
Most of us have lost friends/family members/associates in this war, #VBMP & #MamaQadeer‘s protest touches deepest nerves of Establishment
— Mureed Bizenjo (@MureedBizenjo) August 16, 2013
আমাদের মধ্যে অধিকাংশই এই যুদ্ধে বন্ধু/ পরিবারের সদস্য/ সহযোগীদের হারিয়েছে। #ভিবিএমপি এবং #মামাকাদির এর প্রতিবাদ সংস্থাপনের গভীরতম স্নায়ুকে স্পর্শ করেছে।
বেলুচ অধিকার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী মীর মোহাম্মাদ আলী তালপুর, বোলান টামসে দেয়া একটি মন্তব্যের মাধ্যমে নালিশ করেছেন, সমাজ এবং মূলধারার প্রচার মাধ্যমেগুলো বেলুচ লোকেদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে থাকেঃ
বেলুচিস্তানে কি ঘটছে, তা নিয়ে বৃহত্তর আকারে সমাজ এবং হয় প্রচারমাধ্যমগুলোও চোখ খুলে দেখতে অথবা তাঁরা এই নৃশংসতার বিচার করার চেষ্টা করতে অস্বীকৃতি জানায়। সবগুলো রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানই এই অপরাধে সাহায্য করে এবং মদদ যোগায়। তাঁরা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন জোর করে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে এবং তাঁদের ব্যাথাকে প্রকাশ করাটাকে আরো দুঃসহ করে তোলে।
জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, সাবেক সিনেটর এবং জাতীয় সংসদ সদস্য, সানা বেলুচ (@সিনেটর_বেলুচ), মামা কাদির বেলুচকে নোবেল পুরস্কার প্রদানের দাব জানিয়েছেনঃ
Why elderly #Baloch Human Rights activist #MamaQadeer‘s 1333 day Protest didn't Qualify for #Award ? #WestrenHypocracy#HumanRights Betrayed
— Sana BALOCH (@Senator_Baloch) October 13, 2013
কেন বৃদ্ধ #বেলুচ মানবাধিকার কর্মী #মামাকাদির এর ১৩৩৩ দিনের বিক্ষোভ #পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য না? #পশ্চিমাহিপোক্রেসি #মানবাধিকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
ফায়েজ বেলুচ (@ফায়েজ_বেলুচ) ও একই দাবি জানিয়েছেনঃ
1300 days of consecutive struggle 4 recovery of EnforcedDisappeared Baloch, but unbroken spirit. MamaQadeer truly deserves #NobelPeacePrize
— Faiz Baluch (@Faiz_Baluch) October 13, 2013
বেলুচ নিখোঁজদের পুনরুদ্ধারের জন্য ১৩০০ দিনের চলমান সংগ্রাম চালিয়েছেন কিন্তু তাঁর সাহস অথবা মননে চির ধরেনি। মামা কাদির সত্যিই #নোবেলশান্তিপুরস্কারের দাবীদার।