পুড়ে গেছে মিশরের কপ্টিক গির্জাগুলো

আজ [১৪ আগস্ট] সমগ্র মিশর জুড়ে কপ্টিক গির্জাগুলো এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আক্রমণ করা হয়েছে। বর্ণনাতে যেমনটি বলা হয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যরা এবং তাঁদের সমর্থকেরা এ আক্রমণ চালিয়েছে। মুরসির স্বপক্ষে অবস্থান কর্মসূচীর সহিংস উচ্ছেদের পরপরই রাজধানী কায়রোতে সাম্প্রদায়িক আক্রমণটি চালানো হয়। এতে অনেক মিশরীয় মারা যায় এবং আহত হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মতামত দিয়েছে, মুসলিম ব্রাদারহুড সাম্প্রদায়িকতার আগুনে ধোঁয়া উঠাচ্ছে। খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় লাগানো হচ্ছে। যার ফলাফলই হচ্ছে আজকের নজিরবিহীন বৃহৎ পরিসরের এই আক্রমণ।

দু’টি অবস্থান কর্মসূচীই ছিল উচ্ছেদকৃত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসির সমর্থকদের। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্য, যার পদত্যাগ এবং আগাম নির্বাচন চেয়ে গণ প্রতিবাদের পরপরই গত ৩ জুলাই তড়িঘড়ি করে তাঁর এক বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে, মুরসি এবং মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকরা রাব্বা আল আদাইয়াতে অস্থায়ী শিবির তৈরী করে অবস্থান করছে। পাশাপাশি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আল নাহদা স্কয়ারে “বৈধতা” ফেরত চাইছে বা মিশরে বৈধভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে পূর্বপদে পুনরায় বহাল করতে চাইছে।

ব্যক্তিগত অধিকারের জন্য মিশরীয় উদ্যোগের গবেষক ইশাক ইব্রাহিম টুইট [আরবি] করেছেনঃ

আজকের আক্রমনের জন্য নয়টি রাজ্য সরকারের শুল্ক হচ্ছেঃ ২০ টি গির্জা, একটি মঠ, দু’টি সেবা প্রতিষ্ঠান, তিনটি বিদ্যালয়, তিনটি ধর্মীয় সংগঠন এবং একটি এতিমখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সাতটি গির্জায় আক্রমণ করে লুন্ঠন করা হয়েছে।

অন্য একটি টুইটে তিনি ব্যাখ্যা করেছেনঃ

মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তাঁদের সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হয় কোর্টগুলো, গির্জাগুলো, নগর কাউন্সিল এবং পুলিশ ষ্টেশন। কারন প্রধানত রাষ্ট্রটির উপর তাঁদের অবিশ্বাস।

দ্য বিগ ফারাও টুইট করেছেনঃ

এখন পর্যন্ত ১৬ টি গির্জা পুড়ে গিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গির্জার ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে। এটা অত্যন্ত নজিরবিহীন। কয়েকশ বছর আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

তিনি আরো লিখেছেনঃ

বেশিরভাগ আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া গির্জাগুলো উচ্চতর মিশরে অবস্থিত। সেখানে বেশিরভাগ খ্রিস্টানদের বাস এবং সেখানে মুসলিম ব্রাদারহুডের এখনও যথেষ্ট সমর্থন আছে।

এবং আরো লিখেছেনঃ

আমি মনে করি খ্রিস্টানদের উপর এমন বৃহৎ এবং ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত আক্রমণ মধ্য যুগের আগ পর্যন্ত আর ঘটেনি।

সোহাগে অবস্থিত একটি গির্জার একটি ছবি ফুয়াদ এমডি শেয়ার করেছেন, যেটি আজ পোড়ানো হয়েছেঃ

#মিশর- এর #সোহাগ – এ অবস্থিত সুন্দর ঐতিহাসিক গির্জার একটি ছবি, যেটি আজ মুরসি স্বপক্ষে সমর্থকেরা পুড়িয়ে দিয়েছে pic.twitter.com/HVdRPGhRb3    

সক্রিয় কর্মী ডালিয়া জিয়াদা গির্জাগুলোর ওপর এই আক্রমণটিকে মুরসি স্বপক্ষ সমর্থকদের পরিত্যক্ত বস্তুর সাথে যুক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেনঃ

উচ্চতর মিশরের রিপোর্টঃ ইসলামপন্থীরা #মুসলিমব্রাদারহুড #মিশর এর ধর্মঘট পরিত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় গির্জাগুলোর উপর প্রচন্ড আক্রমণ শুরু করেছে।

ফিরাস আল আত্রাকচি ব্যাখ্যা করেছেনঃ

#মিশর – এ কপ্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আক্রমণ সমঝোতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যে একটি ইসলামপন্থী সরকার কখনও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে না। অথবা সহ্যশীল।

এবং লেইল_জাহরা মরতাদা নোট করেছেনঃ

আপনি #মুসলিমব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে থাকতে পারেন এবং তাও সামরিক বাহিনী এবং #এমওই – এর বেপরোয়া হত্যাকান্ডের প্রকাশ্যভাবে নিন্দা করতে পারেন এবং #মিশর – এর #কপ্তিক – এর প্রতি সাম্প্রদায়িক অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন।

গির্জাগুলোর পাশাপাশি কপ্টিক ব্যবসায়িক মুনাফার ওপরও আজ আক্রমণ করা হয়েছে। শেহতাজাদে বলেছেনঃ

#লুক্সর – এ এটা শুনতে এমন মনে হয় যেন মুরসি সমর্থকেরা কপ্টিক দোকান, হোটেল এবং লোকেদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করছে। আমাদের পাশের কপ্টিক মালিকানাধীন হোরাস হোটেলটি পুড়ে গেছে।

এবং মারিয়ান কিরোলোস যেমনটি ব্যাখ্যা করেছেন হোমস শহরটিও ধ্বংস হয়ে গেছেঃ

ডেলগাতে আমার খবরের উৎস বলেছে যে পুলিশের অনুপস্থিতিতে ১০ টি কপ্টিক বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।

এ সব মৃত্যু ও ধ্বংসের কারণে মিশরের ইতিহাসে আজ কালো দিন। ইয়োসরা ফারঘালি কৃত অপরাধের জন্য তীব্র অনুশোচনায় এই আবেগগুলো একত্রিত করেছেনঃ

২৫ জানুয়ারির একটি অংশ হওয়ায় আমি অত্যন্ত দুঃখিত… এই মুহূর্তে আমরা যে অবস্থায় বসবাস করছি সে পরিস্থিতিকে আরো বেশি খারাপ অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য যা দায়ী। একজন মিশরীয় হওয়ার কারণে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।

সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ওয়াতানি, ফেসবুকে এ পর্যন্ত মিশরে আক্রান্ত গির্জাগুলোর একটি তালিকা শেয়ার করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .