উগান্ডা: নীরবতার সংস্কৃতি ভেঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকারে সোচ্চার

উগান্ডাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে হওয়ার কথা। তবে জাতীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের ধারাবাহিক ঘাটতি রয়েছে।

সম্প্রতি উন্নয়নের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান উদ্ঘাটনের ব্রত নিয়ে কাজ করা উন্নয়নের জন্যে ফলাফল নামের একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থার তৈরী একটি ভিডিও অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে। উগাণ্ডাবাসীকে নীরবতা ভেঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য অধিকারের নিয়ন্ত্রণ নিতে উৎসাহিত করার জন্যে এটা করা হয়েছে।

ভিডিওটি উপস্থাপন করে অস্কার আবেলো লিখেছেন:

উগান্ডা গত কয়েক বছর ধরে ঔষধের গণবিতরণ ব্যবস্থার “হার্ডওয়্যার (অবকাঠামো)” – কেন্দ্রীয় গুদাম এবং জনবলসহ বিভিন্ন বিতরণ কেন্দ্র – গড়ে তোলার মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়েছে, তবে “সফ্টওয়্যার”টিই তেমন ঠিক নেই। অনেক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চালানের মধ্যবর্তী সময়ে ২-৩ মাসের মধ্যে ওষুধ শেষ হয়ে যায়, অথচ কেন্দ্রীয় গুদামগুলোতে সরবরাহ উপচে পড়ে।

উগান্ডাতে বেশিরভাগ প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করা দরিদ্রদের কাছে ঔষধ সরবরাহ সমস্যার কোন সংবাদ পৌঁছে না। কিছু একটা করতে পারে এমন সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে সেই খবর পৌঁছে দেয়ার মতো খুব কম সংখ্যক চ্যানেল রয়েছে।

ভিডিওটিতে উগান্ডাতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তাকারী স্বাস্থ্য ভোক্তা সংগঠন হেপস উগাণ্ডার ওষুধপত্র উপদেষ্টা ডেনিস কিবরিয়া বলেছেন:

আমি এমন একটি দেশ দেখতে চাই যেখানে মানুষকে তারা প্রাপ্য সেবা পেতে ব্যর্থ হয়ে প্রাণ হারাতে না হয়।

২০০৬ সালে স্বাস্থ্য খাতের তহবিল আত্মসাতের জড়িত অভিযোগে তিনজন মন্ত্রীকে তাদের পদ হারাতে হয়। তাদের মামলাগুলো আদালতে এখনো ঝুলছে।

জাতীয় রেফারেল হাসপাতালের মুলাগু হাসপাতালের মেঝেতে রোগীদের অবস্থান।

জাতীয় রেফারেল হাসপাতালের মুলাগু হাসপাতালের মেঝেতে রোগীদের অবস্থান। ছবিটির সৌজন্যে উইলিয়ামকিতুউকা.ব্লগস্পট.কম

ভিডিওটিতে হেপস উগান্ডা’র প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক রোজেট মুতাম্বি বলেছেন যে উগান্ডাতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা। তবে বর্তমানে ঘটনাটি তা নয়। তিনি বলেছেন যে স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো তাদের ক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ করছে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও বাড়তি কাজ করছে।

এছাড়াও উগান্ডার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা বা লোড শেডিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যা কিছু কিছু ঔষধকে ঠাণ্ডা রাখার প্রয়োজন পড়া সার্বক্ষণিক জেনারেটর বিহীন এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে প্রভাবিত করছে।

ঔষধ সংরক্ষণ এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় মেডিকেল স্টোরের মহা ব্যবস্থাপক মোজেস কামাবারে’র মতে, তারা প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর সব জেলাতে একবার করে বিলি করেন। তবে মাঠ পর্যায়ের একজন স্বাস্থ্যকর্মী বলছেন যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো আসলে প্রতি তিন মাসে একবার ঔষধ পেয়ে থাকে।

উগান্ডার মেডিকেল স্টোরগুলো সবসময়ই পূর্ণ থাকে কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে কোন ঔষধ থাকে না। কিছু কিছু মানুষ ১০ কিলোমিটারের বেশি হেঁটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে যায় শুধু জানার জন্যে যে সেখানে ঔষধ নেই। বহু মানুষের জন্যে এই অভিজ্ঞতাটি হৃদয়বিদারক এবং এটা তাদেরকে আবার কেন্দ্রগুলোতে ফিরে আসতে এবং চিকিৎসা সেবা চাইতে নিরুৎসাহিত করে।

উগান্ডাতে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ঘটাতে আরো অনেক কিছু করা প্রয়োজন: দ্রুততর, অধিক ঘনঘন পরিষেবা প্রদান, অর্থায়ন বৃদ্ধি, আরো বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকর্মীদের উচ্চতর বেতন এবং কেন্দ্রগুলোর জন্যে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ।

এছাড়াও একটি চ্যালেঞ্জ হলো ডাক্তারদের ঘাটতি, আবার তাদের কেউ কেউ প্রাইভেট ক্লিনিকের জন্যে ঔষধ চুরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে এখনো বড় প্রশ্নটি হলো, এই ভিডিওটি কী শেষ পর্যন্ত উগাণ্ডাবাসীর নীরবতা ভাঙ্গতে উৎসাহিত করবে?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .