পাকিস্তানঃ হাজারা সম্প্রদায়ের নাগরিকরা খুনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে

পাকিস্তানের সমস্যা মঞ্জরিত প্রদেশ বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা শনিবার এবং রবিবারে অচল হয়ে ছিল। বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নয়, এইবার এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল সংখ্যালঘু শিয়া হাজারা সম্প্রদায়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বেলুচিস্তানে, হাজারা সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৯ দিনে ৩০ জন হাজেরা নাগরিককে খুন করা হয়েছে । নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন লশকর-এ-জাঙ্গভি সাম্প্রতিক এই সব হামলার দায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। গত বছর লশকর-এ-জাঙ্গভি ২০১২ সালের মধ্যে পাকিস্তান থেকে হাজারাদের চলে যাবার হুমকি প্রদান করে প্রচারপত্র বিলি করেছিল

পাকিস্তানের দক্ষিণের শহর কোয়েটাতে হাজারা সম্প্রদায়ের অন্তত বারোজন নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ছবি আরএফএফ-এর, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (৪/১০/২০১২)।

হাজারা নাগরিকদের ব্লগ লিখেছে:

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা এবং উপেক্ষার মাঝে এটি এক পদ্ধতিগত গণহত্যা। পাকিস্তানে প্রায় ৬০০, ০০০ জন হাজারা সম্প্রদায়ের নাগরিক বাস করে। ১৮৮০ সালে আফগান শাসক আমীর আবদুর রাহমান খানের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য তারা পাকিস্তানে চলে আসে।

কেন কর্তৃপক্ষ এই সব জঙ্গী সংগঠন-এর বিরুদ্ধে কোন অভিযান চালাচ্ছে না, যারা প্রকাশ্যে হাজারা সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাচ্ছে? গুপ্পু.কমে সাংবাদিক এবং ব্লগার আমীর সাইদ, এই ভাবে এই প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেছে:

বেলুচিস্তানে রক্ত ঝরছে। যখন হাজারা সম্প্রদায়ের উপর কোন ধরনের শাস্তি ব্যাতিরকে গণহত্যা চলছে, তখন ক্ষমতার গলিতে চলা এক ষড়যন্ত্র, কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক স্তরে এক রহস্যজনক নিরবতার সৃষ্টি করছে। সম্ভবত একটি সম্প্রদায়ের হয়ে কথা বলার জন্য এটা বড় কোন রাজনৈতিক বিষয় নয় এবং উগ্রবাদীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করার তেমন ইচ্ছে নেই, এবং বর্তমানে প্রদেশে ঘৃণা ছড়ানো বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা দ্বৈত, তবে সৌভাগ্যজনক ভাবে তারা বেসামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হয়।

বালুচ সাংবাদিক এবং ব্লগার মালিক সিরাজ আকবরও, লশকর-এ জঙ্গভির বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রম গ্রহণ না করার কারণে কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করছে।

যতক্ষণ না পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী, লশকর-এ জঙ্গভির মত সুন্নী মৌলবাদী দলসমুহের প্রতি তাদের গোপন সমর্থন পূর্ণমাত্রায় প্রত্যাহার না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হাজারা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচার বন্ধ হবে না। পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ এবং এই সমস্ত সন্ত্রাসী দলসমূহের মধ্যে যোগাযোগের সুনিদিষ্ট প্রমাণ রয়েছে । এ ছাড়া সংসদ,বিচার বিভাগ এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগ জাতীয় নীতি নির্ধারনী বিতর্কে এখনো হাজারাদের দুর্দশার বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করেনি।

রাফিয়া জাকারিয়া তার কলামে বিষয়টিকে হাজারদের জন্য এক অন্ধকার বসন্ত হিসেবে অভিহিত করেছে। যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেবল বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সম্বন্ধে জানে, সেই পরিস্থিতিতে হাজারা সম্প্রদায় তাওয়া এবং জ্বলন্ত চুল্লির মাঝে আটকা পড়ে গেছে।

বালুচিস্তানের শিয়া হাজারাদের জন্য, যারা স্বাধীনতা নয় বরঞ্চ পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে তারা তাদের অধিকার চায়, যেখানে স্থানীয়দের সহানুভূতির অভাব, বৈশ্বিক পর্যায়ের সাধারণ মনোযোগের অভাব এমন এক, পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে এমন এক পটভূমি তৈরী করেছে, যেখানে আশা, ন্যায়বিচার না পাবার মতই অপসৃয়মান।

শনিবারে পাকিস্তানের টুইটারে #শিয়াজেনোসাইড #হাজারা এবং #কোয়েটা নামক হ্যাশট্যাগ আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়। তবে এখানে মূল আলোচনার বিষয় ছিল যে এই ঘটনাকে “শিয়া হত্যা” নাকি “হাজারা হত্যা” নামে অভিহিত করা হবে।

@হাজারা প্যাট্রিয়ট (আলি হাজারা): বেদনার্ত – কারণ নাগরিকরা খুনের ঘটনা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত যে, এটাকে “শিয়া” নাকি “হাজারা” হত্যা হিসেবে অভিহিত করা হবে।

@বাকোয়াজ (বেশরম): এটাকে শিয়া বা সুন্নি গণহত্যা নয়, এটা মানুষের গণহত্যা। #ইন্টারফেইথ ইউনিটি #

@চিলতান (সালমা জাফর): তাদের প্রতি ঘৃণা, যারা কোয়েটায় #শিয়া হত্যাকাণ্ডকে জাতিগত চেহারা প্রদান করেছে, আর এর কারণে ১০০ জন নিরপরাধ বালুচ নাগরিক গ্রেফতার/ এর শিকার হয়েছে।

অনেকে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে এবং এর জন্য তারা ডানপন্থী সুন্নী ধর্মীয় দলগুলোকে অভিযুক্ত করেছে:

@ আলিসালমানআলভী ( আলি সালমান আলভী): শিয়া মুসলমানদের উপর চলতে থাকা নিষ্ঠুরতা বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে থামানো হচ্ছে না। মসজিদে, শিয়া, আহমাদিয়া এবং অন্য সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হচ্ছে।

অন্যতম হাজারা একটিভিস্ট জনাব সালিম জাভেদ টুইট করেছে:

@এম সালিম জাভেদ হাজারা বিক্ষোভকারী: আমরা তালিবান বিরোধী এবং তাই থাকতে চাই, এমনকি যদি এর জন্য আমাদের কেউ জীবিত না থাকে। #কোয়েটা#পাকিস্তান।

হাজারাদের বিক্ষোভ। ছবি লেখকের

সপ্তাহান্তে দেশজুড়ে হাজারা সম্প্রদায় বিক্ষোভ করেছে, কিন্তু দেশের মূলধারার টিভি চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনগুলো এই বিষয়ে তেমন বিস্তারিত সংবাদ প্রদান করেনি। সমাজের অন্য সম্প্রদায়েরও এতে তেমন একটা অংশ গ্রহণ ছিল না।

@বীণাসারোয়ার (বীণা সারোয়ার): শান্তিপূর্ণ এক বিক্ষোভকে উপেক্ষা করার বিষয়টি একই সাথে একটি বার্তা প্রদান করে, সেটি হচ্ছে যদি আপনি শিরোনামের হতে চান, তাহলে আপনাকে উগ্র হতে হবে এবং চিৎকার করতে হবে। #শিয়াজেনোসাইড# পাকিস্তান #মিডিয়া

@ রাজারুমি (রাজা রুমি):‏ ২) গিলগিট, চিলাশ,করাচি এবং কোয়েটাতে শিয়া নাগরিক হত্যার প্রতিবাদে শিয়াদের করা বিক্ষোভ সম্বন্ধে মূলধারার প্রচার মাধ্যম বিন্দুমাত্র সংবাদ প্রদান করেনি!

বালোচ টুইপেল, নিরব থাকার জন্য পাঞ্জাব সরকারের সমালোচনা করেছে।

@বালোচমারি (বালোচ): পাঞ্জাবের প্রচার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা চালাকির সাথে টুইটারে বার্তা পাঠাচ্ছে, তারা এই সব সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাচ্ছে, কিন্তু তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে নারাজ।

@ জেডারোশিয়ান ( জেডারোশিয়া): #বেলুচিস্তানে এখন যুদ্ধ চলছে, #পাকিস্তান তার ফ্যাশান সপ্তাহের কারণে এখন একেবারে অন্ধ হয়ে আছে #হাজারা #বালুচ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .