ব্রাজিল: গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর রক্তক্ষরণ ছাড়া কি কৃষি অর্থনীতির উন্নয়ন হতে পারে?

এই পোস্ট আমাদের বিশেষ কাভারেজ ফরেস্ট ফোকাস: আমাজন এর অংশবিশেষ

নিলসিলেন মিগুয়েল ডি লিমা আমাজন এলাকার একজন ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী এবং স্থানীয় নেতা। ভূমিদস্যু এবং বন দখলকারীরা তাকে পরপর কয়েকবার হত্যার হুমকি দেয়ায় সরকারি বাহিনী তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ব্রাজিলের অনুসন্ধানী সংবাদ সংস্থা অ্যা পাবলিকা [পর্তুগিজ ভাষায়] আমাজোনিয়ার ল্যাব্রিয়া শহরে গিয়ে তার একটা সাক্ষাৎকার নেয়:

As ameaças começaram em 2009, quando ela assumiu a presidência da associação Deus Proverá, criada pelos pequenos produtores do assentamento para defender o grupo contra as invasões de terra e roubo de árvores. No ano seguinte, depois de fazer denúncias e abaixo-assinados contra os criminosos, Nilcilene foi espancada e teve sua casa queimada em um incêndio anunciado. Em maio de 2011, foi obrigada a fugir enrolada em um lençol para despistar o pistoleiro que estava de campana no seu portão. A equipe da Força Nacional foi deslocada em outubro para garantir que a líder pudesse voltar para casa e continuar denunciando os problemas da região.

২০০৯ সালে ‘দেউস প্রোভেরা [গড উইল প্রোভাইড] সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে তিনি হুমকি পেয়ে আসছেন। ভুমি দখল এবং গাছ চুরি রোধ করতে ছোট ছোট উৎপাদনকারীরা মিলে এই সংগঠন গড়ে তুলেছিল। এর পরের বছরই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায় দুর্বৃত্তরা নিলসিলেনকে পিটিয়ে আহত করে, তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ২০১১ সালের মে মাসে বন্দুকধারীরা তার বাড়ির সম্মুখে অবস্থান নিলে তিনি কম্বল মুড়ি দিয়ে পালিয়ে বাঁচেন। অক্টোবর মাসে নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চয়তা দেয়, এই অঞ্চলের সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন।

এই ভিডিও-তে [পর্তুগিজ ভাষায়] নিলসিলেনের কিছু ঘোষণা ছিল:

 আমরা এই অবস্থায় কেন আছি? কিছু লোক এর বিরুদ্ধে লড়তে চাইছে, কিছু একটা করতে চাইছে। […] কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। […] বেশিরভাগ সংঘর্ষ হচ্ছে ভূমিদস্যু এবং গাছ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে।  […] নিরাপত্তা বাহিনী যদি চলে যায়, তারও আগে আমি এবং আমার সহযোগী চলে যাবো। আমরা যদি থেকে যাই, তাহলে হত্যা করার আগে তারা আমাদের উপর নির্যাতন চালাবে। […] আজকের দিন পর্যন্ত আমরা হত্যা হুমকি পাচ্ছি।

বন রক্ষার জন্য গুলি করে হত্যা

জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ২৪ ঘণ্টা প্রতি ৬ জনের একজনকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। নিলসিলেন হলেন ১৭২ জনের একজন যাকে ব্রাজিলের সীমান্তবর্তী এলাকার সন্ত্রাসীরা হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। সিপিটি [পর্তুগিজ ভাষায়] নামের একটি সংগঠন যারা গ্রামীণ অঞ্চলে ভুমি ও পানির অধিকার নিয়ে কাজ করে, তাদের ভাষ্যমতে, ২০১০ সালের তুলনায় হত্যার হুমকি পাওয়ার হার ১০৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালে হত্যার হুমকি পাওয়া লোকের সংখ্যা ছিল ৮৩ জন।

গত বছর গ্লোবাল ভয়েস সিপিটির একটা তথ্য প্রকাশ করে। যেখানে দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে গ্রামীণ এলাকায় সংঘর্ষে ১৬১৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এই নিহত হওয়া মানুষদের মধ্যে চিকো ম্যান্ডেজ, ডরোথি স্ট্যাং এর মতো বিশ্বপরিচিত ব্যক্তিত্ব ছাড়াও রয়েছে এলডোরাদো ডোস কারাডাস গণহত্যায় নিহত নারী কৃষকরা।

সর্বসাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ব্রাজিলে ভূমি এবং পানি নিয়ে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালে যেটা ছিল ৩৮.৫৫৫%, ২০১১ সালে সেটা বেড়ে ৪৫.৫৯৫ শতাংশ হয়েছে। এই সম্প্রদায়ের শ্রমিক অথবা স্থানীয় নেতাদের থেকে ২০১০ সালে ৩২ জন এবং ২০১১ সালে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। সিপিটির প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।

আদেলিনো রামোস।

আদেলিনো রামোস। ছবি নেয়া হয়েছে আলটিনো মাচাদোসের ব্লগ থেকে (অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে)

সিপিটির কাজের সাথে সাথে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের রক্ষা করতে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী হস্তক্ষেপ করেছে। সিপিটি হলো ব্রাজিলের আইন মন্ত্রণালয়ের একটি অঙ্গ সংগঠন যারা স্পেশাল সেক্রেটারিয়েট ফর হিউমান রাইটস নিয়ে কাজ করে। মারিয়া দো এস্পিরিটো সান্তো এবং তার স্বামী জোসে ক্লডিও রিবেইরো দি সিলভা নিহত হওয়ার পর হত্যার হুমকি পেয়েছেন এমন লোকদের তালিকা তৈরী করে সিপিটি। কেন না, তাদের হত্যাকাণ্ড দেশের জন্য লজ্জা বয়ে আনে।

এই দম্পতির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর রনদোনিয়া রাজ্যের আডিলেনো রামোস এবং মাতো গ্রসো দো সুলের কেন্দ্রীয়-পূর্ব রাজোর আদিবাসী প্রধান নিসন গোমেজের হত্যাকাণ্ড পত্রিকার শিরোনাম হয়। সিপিটি দাবি করে:

Pelo menos 8 das mortes estão diretamente relacionadas com a defesa do meio ambiente. Outras… 2 mortes são de quilombolas e [outras] 2 de indígenas…….A intervenção federal depois dos primeiros assassinatos não foi minimamente suficiente para inibir a ação dos grileiros, proprietários de terra e outros.

যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন তাদের কমপক্ষে ৮ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অন্যরা … দুজন ব্রাজিলের দাস সম্প্রদায়ের এবং দুজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের… প্রথম হত্যাকাণ্ডের পর ভুমি দখলকারী, ভূস্বামী এবং অন্যদের বিরুদ্ধে সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেটা যথাযথ ছিল না।

এই সংঘর্ষের বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিয়ে একঘণ্টার একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে ওয়েবসাইট ভাইস [ইংরেজি সাবটাইটেল]। এই তথ্যচিত্রে মারিয়া দো এস্পিরিটো সান্তোর একটি সাক্ষাৎকারও [ভুমি দখলকারীদের হাতে নিহত হওয়ার আগে] রয়েছে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ভুমি দখল ও গাছ কাটার প্রতিবাদ করায় তিনি এবং তার স্বামী নিয়মিতভাবেই হয়রানির শিকার হতেন:

সেখানে লোকজন ছিল, তারা বলেছে, এটা প্রশংসার নয়। এর জন্য আমাকে মূল্য দিতে হবে। আমাকে এবং আমার স্বামীকে অবশ্যই মূল্য দিতে হবে। আমি জানতাম সেখানে বিপদ আছে। এটা নিয়ে আমার কোনোই সন্দেহ ছিল না। আমি চেষ্টা করতাম যদি আমি বলতাম আমি ভীতু নই।

অন্য দুই শিকার [পর্তুগিজ ভাষায়] সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। এরা দুজন হলেন: জোয়ান চুপেল প্রিমো এবং জুনিয়র জোসে গুয়েররা। প্রথম জনকে গত বছরের অক্টোবরে গুলি করে হত্যা করা হয়। অন্যজন সম্প্রতি তার কমিউনিটি ছেড়ে চলে যান।

প্রবৃদ্ধির উদ্দেশ্য এবং রিও +২০

নতুন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সক্ষমতার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রাজিলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে। ‘সফট পাওয়ার’ নামেই ব্রাজিল পরিচিতি হয়ে উঠছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড বিক্রি করতে, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে অন্য রাষ্ট্রের মতোই জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে দেশটিকে চাপে থাকতে হয়।

আমাজন রেইন ফরেস্ট বিরানভূমিতে (ডিফরেস্টেশন) পরিণত হওয়া দিন দিন বাড়ছেই।

আমাজন রেইন ফরেস্ট বিরানভূমিতে (ডিফরেস্টেশন) পরিণত হওয়া দিন দিন বাড়ছেই। ফটো তুলেছেন রনি লুইস লেইটি। কপিরাইট ডেমোটিক্স (জুলাই ২০০৭)

কিন্তু ‘টেকসই’ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সবার প্রশংসা পেলেও কেউ কেউ প্রেসিডেন্ট ডিলমা রাউসেফের উন্নয়নের ভুল যাত্রাকে [পর্তুগিজ] সমালোচনা করছেন।

ব্রাজিলের নিজেদের মধ্যে রপ্তানি-ভিত্তিক উৎপাদন “যা অর্থনীতির মূল প্রক্রিয়া উৎপাদন এবং কৃষি ও অকৃষি পণ্য (খনি) উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটা তহবিল গঠন এবং টেকসই উন্নয়ন, ব্রাজিলের মানুষের মধ্যকার একতা এবং মানুষের চাহিদা পূরণে অক্ষম।”

সবচেয়ে বিতর্কিত উদ্যোগ হলো বর্তমানে বন কোড পরিবর্তনের জন্য আনীত বিল। গত সপ্তাহে ব্রাজিলিয়ান সোসাইটি ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স (এসবিপিসি, পর্তুগিজে) পাঠকদের উদ্দেশ্য একটি খোলা চিঠি বিতরণ করেছে:

A reforma do Código Florestal Brasileiro, tal como vem sendo processada no Congresso, sob a influência de grupos de pressão setoriais, representa a desregulação do setor do agronegócio com sérios riscos para o meio ambiente e para a própria produção agrícola. A proteção de áreas naturais está sendo consideravelmente diminuída e perde-se assim a oportunidade de produzir alimentos com mais eficiência e com sustentabilidade ambiental, o que deveria ser o grande diferencial da agricultura brasileira

কিছু কিছু সেক্টরের লবিদের প্রভাবে ব্রাজিলের বন কোডের পুনর্গঠন করতে কংগ্রেসে প্রস্তুতি চলছে। এর মানে হচ্ছে কৃষি ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে আসা। এটা হলে পরিবেশ এবং কৃষি উৎপাদন নিজেই ঝুঁকির মুখে পড়বে। প্রাকৃতিক এলাকা কমে যাবে। তাছাড়া টেকসই এবং কার্যকরভাবে খাদ্য উৎপাদনের সুযোগ নষ্ট হবে। ব্রাজিলের কৃষির এটাই একটা বড় সম্পদ হতে পারে।

ব্রাজিলের কংগ্রেস আশা করছে, এ সপ্তাহে এর উপর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। যদিও দেরি হলেও এটা স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। রিও +২০ নামের জাতিসংঘের সম্মেলন শুরুর আগেই প্রেসিডেন্ট ডিলমা নতুন আইন অনুমোদন দিতে চান।

আগামী জুনে রিও +২০ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সারাবিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা ব্রাজিলে এসে সবাই মিলে কীভাবে পরিবেশ রক্ষা করেও টেকসই উন্নয়ন করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করবেন। সাংবাদিক এলিয়ান ব্রুম আমাজন এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইপিএএম)-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন:

ব্রাজিল রিও +২০ এর আয়োজক। এই অঞ্চলে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট (বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চল) অবস্থিত। এই বনের ওপর প্রভাব বিস্তার নিয়ে সংগঠিত অপরাধ হচ্ছে। এই বন রক্ষা করতে গিয়ে ব্রাজিলের কিছু মানুষের রক্ত ঝরছে। বন রক্ষা করতে গিয়ে তারা কোনো সরকারি সহযোগিতা পান না। তারা এজন্য মৃতুবরণও করেন। এই বনের আইপিই এবং অন্যান্য মূল্যবান কাঠ চুরি হচ্ছে। আর এই চুরি হওয়া কাঠগুলো ব্রাজিল থেকে পাচার হয়ে ইউরোপে যাচ্ছে। পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনের আয়োজকের জন্য এটা যদি ব্রিবত হওয়ার কারণ না হয়, তাহলে আমি যা আশা করেছিলাম বিশ্ব তার চেয়ে বেশিই নৈরাশ্যকর।

সাংবাদিক আমালিয়া স্যাফল্ট আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন:

Por mais que países pobres e emergentes dependam do crescimento para corrigir seus passivos sociais, a questão do desenvolvimento implica muito mais em qualidade dos serviços disponíveis à população e à criação de oportunidades, em equilíbrio com o meio ambiente, do que em aumento da taxa do PIB. Até porque o PIB é uma régua extremamente ruim, pois registra como crescimento da economia de guerras a acidentes de trânsito.

গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জিডিপির হার বৃদ্ধির চেয়ে প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে সংশোধিত সামাজিক দায়বদ্ধতা, উন্নয়ন ইস্যুতে জনগণের প্রতি আরো বেশি মানসম্মত সেবা এবং পরিবেশের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সুযোগ তৈরি করার উপর। বিশেষ করে জিডিপিকে বিবেচনা করা হয় দারিদ্র্য পরিমাপের সর্বোচ্চ উপায় হিসেবে, যেখানে যুদ্ধ থেকে শুরু করে রাস্তার দুর্ঘটনা-সহ সবকিছুকেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আনা হয়।

এই পোস্ট আমাদের বিশেষ কাভারেজ ফরেস্ট ফোকাস: আমাজন এর অংশবিশেষ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .