উত্তর মরোক্কোর লারাচে নামক এলাকার এক ১৬ বছরের বালিকা আমিনাকে, তার ধর্ষককে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়, উক্ত বালিকা গত শনিবারে (১০ মার্চ, ২০১২) ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে নিজের জীবনের ইতি টানে। আল মাসা’আ (আরবী ভাষায়) নামক পত্রিকার সংবাদ অনুসারে, আমিনাকে তার চেয়ে দশ বছরের বড় এক পুরুষ এমন এক সময় ধর্ষণ করে, যখন সে সদ্য ১৫ বছর বয়সে পা দিয়েছে। এবং বলা হচ্ছে “পারিবারিক সম্মান” বজায় রাখার জন্য, উক্ত ধর্ষকের সাথে আমিনার বিয়ের আয়োজন করা হয়, আর আমিনা এই বিয়ে করতে বাধ্য হয়। একজন বিচারক উক্ত বিবাহের অনুমোদন প্রদান করেন।
একই সংবাদপত্র অনুসারে আমিনা যখন ইঁদুর মারা বিষ খায়, তখন সে তার স্বামীর (ধর্ষক) বাড়ীতে ছিল। মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে আমিনা তার পরিবারকে জানায় যে, পথে উক্ত ব্যক্তি তাকে প্রহার করতে থাকা থেকে বিরত থাকেনি।
মরোক্কোর নেটনাগরিকদের মাঝে আমিনার কাহিনী গভীরভাবে স্পর্শ করে গেছে এবং এই ঘটনায় তারা ক্ষুব্ধ, নেটনাগরিকরা এই কিশোরীর প্রতি শোক প্রকাশের জন্য #আরআইপিআমিনা নামক হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহার করছে। এখানে এই ঘটনার উপর আসা কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল:
@marihaep: @Un_Marocain Ne prenons pas nos rêves pour D réalités, personne ne sera jugé, personne ne payera pour son viol, encore – pr sa vie #RIPAmina
@Un_Marocain: En tant que marocain, je me sens plus coupable que triste pour ce qui est arrivé à cette petite fille. #RIPAmina #Maroc
@নাদালুইস:আমি এমন এক পৃথিবীতে বাস করতে চাই না, যেখানে এক কিশোরীকে, ধর্ষণকারী ব্যক্তিকে বিয়ে করা অথবা নিজের জীবন নিয়ে নেওয়ার মত বিষয় বেছে নিতে হয়।# মরোক্কো #আরআইপিআমিনা
@মাহামিয়োসেখানে আর কতজন আমিনা রয়েছে? যাদের, নিজদের ধর্ষকদের বিয়ে করতে বাধ্য হতে হয়? # মরোক্কো #আরআইপিআমিনা
@mahi_elbarrad: عندما ينظر العالم العربى للمراة على انها مخلوق مثل الرجل له كافة الحقوق وكامل الاحترام هنا فقط تنجح ثورته #RIPAMINA
@citizenkayen: La famille, la société et la justice ont donné au violeur un véritable RIP: Rape In Peace 🙁 #RIPAmina
@Tindars: Et puis comme d'habitude nos Tweets ne changeront absolument rien dans cette histoire. #RipAmina
‘আমিনা আমার বোয়াজিজি’
আমিনার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে গিয়ে মরোক্কোর ব্লগার মেহদি বি ইদ্রিসি একটি পোস্ট লিখেছেন যার শিরোনাম আমিনা আমার বোয়াজিজি। তিনি এখানে মোহাম্মদ বোয়াজিজির কথা উল্লেখ করেছেন। বোয়াজিজি ছিলেন তিউনিশিয়ার সিদি বোউজিদ নামের শহরের রাস্তার এক দোকানদার, যে পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনা এক ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দেয়, যা শেষে তিউনিশিয়া বিপ্লবে পরিণত হয় এবং এর ফলে বেন আলীর শাসনের অবসান ঘটে।
মরিয়া হয়ে বোয়াজিজির আত্মহননের ঘটনা তিউনিশিয়ায় এক পরিবর্তন সাধন করেছে, কিন্তু আমিনার আত্মহত্যা কি মরোক্কো, এবং আরব অঞ্চলের সংস্কৃতিতে যে পুরুষ আধিপত্য, তার অবসান ঘটাবে?
মেহেদি লিখেছে:
বোয়াজিজি হয়ত এক রাজনৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে; কিন্তু আমিনা লম্বা সময় ধরে আমার ভেতের ঘুমিয়ে থাকা এক মানবিক চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছে। আমাদের এই মাটিতে আরো মত হাজার হাজার মেয়ে তার মত পরিস্থিতিতে পড়ে রয়েছে, যাদের বেশীরভাগকে জোর করে এবং হুমকি দিয়ে নিরব করে রাখা হয়। উগান্ডার গভীর বনে জোসেফ কোনিকে খুঁজে পাওয়ার ঘটনার কেন্দ্রে যখন আপনার অবস্থান করেন, তখন আপনাদের নিজেদের মাটি থেকে নিজেদের সন্তান চুরি হয়ে যায়। আমি আমার হতাশার বাণী নিয়ে সারাদিন এখানে বসে থাকব এবং এবং কাঁদতে থাকব, হয়ত আমার এবং অথবা বন্ধু কন্যার মৃত্যুর জন্য। যদি আমরা মরোক্কোর এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য কঠোর সংগ্রাম শুরু না করি, তাহলে আমরা ফাঁদে পড়ে বেশী দুর এগিয়ে যেতে পারব না।
এই ঘটনায় ইংরেজি, ফরাসী এবং আরবী ভাষী নেটনাগরিকদের আরো প্রতিক্রিয়া জানার জন্য গ্লোবাল ভয়েসেস-এর লেখক হিশাম আল মিরাত-এর তৈরী করা স্টোরিফাইটি ( এই নামের সাইট যেখানে নেট ভিত্তিক উপাদানের মাধ্যমে ঘটনা নিয়ে আলোচনা/বর্ণনা প্রদান করা হয়) দেখুন।