হাঙ্গেরী: বিদায়, মালেভ!

মালেভ, হাঙ্গেরীর রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহণ সংস্থা যা ১৯৪৬ সাল থেকে যাত্রী আনা নেওয়ার কাজ করে আসছে, তা ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২-এ দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক সংবাদ অনুসারে ( হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়), এমনকি বন্ধ করে দেবার এক ঘন্টা আগে বা তার সামান্য কিছু আগে এই বিমান সংস্থার কর্মচারীদের এই বিষয়ে সংবাদ প্রদান করা। কয়েকজন যাত্রী যখন বুদাপেস্টের লিসৎস ফেরেঙ্ক বিমান বন্দরে চেক ইন- বা প্রবেশের চেষ্টা করার সময় এই বিষয়টি জানতে পারে।

হাঙ্গেরীর নাগরিকরা এই সংবাদে হতবাক হয়ে পড়ে, কারণ যদিও তারা এমনকি দেশটির জাতীয় বিমান সংস্থার বাজে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল, তারপরেও, বিগত সপ্তাহগুলোতে মালেভ –এর উদ্ধার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছিল। অনেকে এই কোম্পানীর অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য–এর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। এমনকি জানুয়ারিতে, ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ভাবে সংস্থাটিকে অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করার বিষয়টিও দৃশ্যত অবৈধ বলে ইউরোপিয়ান কমিশন রায় দেয়। ঘটনাক্রমে এই কোম্পানীর ব্যাবসায়ীক অংশীদাররা, কোম্পানীর উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং শুক্রবারে যখন ডাবলিন এবং তেল আভিভ বিমান বন্দর মালেভ-এর বিমানকে উড্ডয়নের অনুমতি প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়, তখন পরিস্থিতির চুড়ান্ত অবনতি ঘটে।


মালেভ-এর এক বিজ্ঞাপন,যার সঙ্গীতকার গাবর প্রেসর

আ রেপুলেস সাজাকামি ব্লগ ( বিমান উড্ডয়ন পেশার সাথে সংযুক্তদের ব্লগ) [হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়] –এর সূত্রানুসারে, মালেভ নামক বিমান সংস্থার সর্বশেষ যে বিমানটি শুক্রবারে ইউটিসি সময় ৮.৪৬-এ (স্থানীয় সময় ৯.৪৬ মিনিটে) হেলসিঙ্কি থেকে বুদাপেস্টে এসে পৌঁছে। উক্ত বিমানের চালক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের যা বলেছিলেন, তা হাঙ্গেরীর অনেক সাউন্ড এবং ভিডিও শেয়ারিং সাইটে হাঙ্গেরীর কয়েকজন নেট নাগরিক শেয়ার করেছে।

পাইলট: মালেভ-এর সংস্থার সর্বশেষ বিমানের ক্রু হিসাবে আমরা আপনাদের সুন্দর আচরণ এবং দশক ধরে সহযোগতিয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আবার দেখা হবে।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারঃ আমরাও আপনাদের ধন্যবাদ জানাই এবং আশা করি যে আপনাদের সুন্দর এক বিশ্রাম ঘটবে। আমি আশা করি আমাদের আবার দেখা হবে।
পাইলট: আশা করি আবার দেখা হবে, এক ভিন্ন নামে।

এয়ারপোর্টল.হু [হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়]-এর সূত্রানুসার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার-এ, সন্ধ্যাবেলায় মালেভ-এর বিমানসমূহ তাদের বিশ্রাম নেবার জায়গা আয়ারল্যান্ড-এর আইএলএফসি নামক বিমানবন্দরে চলে যায়।( ম্যালকম নেলসনের ছবিতে এখানে আয়ারল্যান্ডের শানন বিমান বন্দরে মালেভ-এর বিমানগুলোকে দেখুন)।

কাসাবা ডিমিটার হচ্ছেন একজন বৈমানিক, যারা ওই সমস্ত বিমানগুলোকে সেখানে নিয়ে গেছে তাদের মধ্যে অন্যতম, তিনি ফেসবুকে তার কাহিনী তুলে ধরছেন [হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়]:

[…] প্রায় মাঝরাতে আমরা ইআইএনএন [ আয়ারল্যান্ডের শানন বিমানবন্দরের-এর কোড], একের পর এক বিমান নামতে থাকে এবং সুন্দরভাবে এগিয়ে যায়, রোলিং রোড-এর, রাখার জায়গায়-এ, আমরা সেগুলোকে থামাই, সব কিছু উন্মোচন করি এবং বিমানগুলোর বাতি নিভিয়ে দেই, আমাদের বিমানগুলো অন্ধকারে মিশে যায়, এটা ছিল এক অদ্ভুত বাজে অনুভূতি, বিমানগুলোকে সেখানে রেখে আমাদের চলে আসতে হল। আমরা আশা করছিলাম যে আমাদের বলা হবে বিমানসহ ঘরে ফিরে আস, এটা কেবল একটা স্বপ্ন অথবা একটা বাজে রসিকতা। কিন্তু এ রকম কিছুই ঘটলা না। বিমানগুলো সেখানেই রয়ে গেল। তাদের সবগুলো। 🙁 […]

জাতীয় পরিবহনের এই বেদনাদায়ক পরিণতির বিষয়ে জনগণ তাদের চিন্তা ব্যক্ত করেছে। ফেকসজামি ব্লগে [হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়] সিসাবা-এর স্মৃতি সবচেয়ে সেরা এক নিদর্শন, যা আমাদের জানাচ্ছে যে মধ্য ইউরোপের এই ছোট্ট দেশের নাগরিকদের কাছে মালেভ-এর অর্থ কি ছিল:

আমি অনেকবার তাদের সাথে অনেকবার উড্ডয়ন করেছি। একই সাথে আমার অনেক ভালো এবং খারাপ অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি তা বলতে চাই না, কারণ এর মাঝে বিশেষ কিছু নেই। কেন আমরা মালেভ-এর হয়ে আকাশে উড্ডয়ন পছন্দ করতাম, কারণ সব সময় অন্য বিমান সংস্থার বিপরীতে মালেভে কাজ করার সময় মনে হত এটা আমাদের নিজস্ব। যখন স্বদেশ থেকে লম্বা সময়ের জন্য দুরে থাকতাম, তখন তারাই হতে ঘরে ফেরার প্রথম চিহ্ন। সাদা পেইন্টিং-এ হাঙ্গেরীর যে জাতীয় তিন রঙ, তার উল্লেখ, প্রবেশ মুখে সম্ভাষণ এবং হাঙ্গেরীর সংবাদপত্র। আমি সাধারণত ২-৩ সপ্তাহ দেশের বাইরে থাকি এবং শহরে বা আরামদায়ক কোন হোটেলে নয় তার বদলে মরুভুমি এবং অন্য অসাধারণ জায়গায়। যার ফলে ঘরে ফেরার বিষয়টি সবসময় ছিল দারুণ আনন্দের এবং তার প্রথম বার্তা বয়ে আনত মালেভ নামক বিমান সংস্থার ক্রু-রা। লম্বা এক প্রচণ্ড অবসাদপূর্ণ যাত্রার পর যখন বিমান ফেরেঙ্ক বিমানবন্দরে অবতরণ করত, এমনকি তখন আমার চোখও অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠত। ইন্টারনেটে ছবি এবং এই বিষয়ে সংবাদ পাঠ করে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। আশা করি যে এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি, লাল সাদা এবং সবুজ রঙের বিমানগুলোকে যদি আবার দেখতে পাই, ভালো লাগবে।

সিসাবা।

ভেলেমেনইভেজর ব্লগ-এর [হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়] মতে, জাতীয় বিমানসংস্থা, হাঙ্গেরীর অর্থনৈতিক বিচিত্রতার ফলে যে ঘূর্নীঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে তার শিকার:

[…] […]এই বাস্তবতায় বলা যায় মালেভ এক উপযুক্ত ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়েছে। এটি প্রায় এক দশক অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় এবং অব্যবস্থাপনায় টিকে থাকার কথা, কিন্তু এই দুটি বিষয় একে অন্যকে প্রভাবিত করেছে। এটা আর টিকে থাকতে পারল না এবং তা অঞ্চলিক পর্যায়ে বুদাপেস্ট এবং হাঙ্গেরীর নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের স্বপ্ন এবং কল্পনায় কফিনে আরেকটি পেরেক ঠোকার মত আঘাত।

অরিগো নামক সংবাদ সাইট সংবাদ প্রদান করেছে [হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়] যে যতক্ষণ না হাঙ্গেরীর জন্য নতুন এক উড্ডয়ন সংস্থা পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ “মালেভ হাঙ্গেরিয়ান এয়ারলাইনস ভার্চুয়াল”–এর পাইলটরা মালেভের কল সাইন (রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ করার বিশেষ ব্যবস্থা) নিয়ে “উড়তে” থাকবে।

মালেভ এয়ারলাইনসের থাম্বনেইল এবং ফিচার ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী হুগোভক-এর (সিসি বাই-এনসি-এসসি ২.০)

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .