কাতার: ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজক হবার যোগ্যতা লাভে, হাসিঠাট্টা, উল্লাস

বৃহস্পতিবার ফিফার ঘোষণার পর কাতারের প্রতিনিধি দলের প্রতিক্রিয়া (বিবিসির স্ক্রিন শট বা সাইটের ছবি থেকে এই ছবি ধারণ করা হয়েছে)।

২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ কাতারে অনুষ্ঠিত হবে, ফিফার এই ঘোষনার পর আনন্দ, অবিশ্বাস, হাসিঠাট্টা এবং উল্লাসে ইন্টারনেট ভরে গেছে।

তেল সমৃদ্ধ কাতার, মরুভূমিতে পূর্ণ, এক ছোট্ট দেশ। আয়োজক হবার প্রতিযোগিতায় তারা যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করেছে। এই ঘটনায় এদেশে বাস করা বিদেশী নাগরিক এবং প্রায় এদেশের নাগরিক হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মেজাজ ছিল দারুণ উৎফুল্ল।
টুইটারে কাতার ৭৮ বলছে:

যখন ঘোষণা করা হল যে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ কাতারে অনুষ্ঠিত হবে, তখন আমার চোখ পানিতে ভরে গেল, এটাই বলে দেয় একজন কাতারি হিসেবে আমি কতটা গর্বিত।

ওসামাআলআসিরি বলছেন:

আনন্দে ডুবে যাবার জন্য আমি খানিকটা সময় নেব: ২০২২ সালের বিশ্বকাপ#কাতারে ২০২২

@রাচেলএনামরিস বলছে:

তারা সকলেই (মূলত যারা দুবাইতে বাস করে) আমাকে বলছে যে অনেক বছর আগে আমি #দোহায় বাস করতে আসার মত বোকামি করেছি.. আমাকে বলতে বাধ্য কর না “আমি তোমাকে এ রকমটা বলেছিলাম”

এবং জনপ্রিয় সামাজিক প্রচার মাধ্যম ফোরাম কাতার লিভিং-এ অভিনন্দন উপচে পড়েছে।

মন্তব্যকারী জ্যাক৯৯৯৯ বলছে:

বাৎসরিক ছুটি কাটাতে আমি এখন ভারতে অবস্থান করছি। কিন্তু এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি মূহূর্তে দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারিনি।একসাথে কাজ করা সকলেই অভিনন্দন। এখানে আমি আমার বন্ধুদের জন্য একটি পার্টির আয়োজন করতে যাচ্ছি।

মেমফিস৭ এর সাথে যোগ করেছে:

সারা বিশ্বের নজর এখন কাতারের উপর থাকবে…এখন সময় এসেছে সবাইকে দেখানোর যে ফুটবলের মত এক খেলার জন্য আমরা, কাতারের নাগরিকরা কতটা পেশাদার এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ। আসুন মধ্যপ্রাচ্য, আরব জাতি এবং বিশ্বের একে অন্যকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য এটাকে একভাবে সেতু বন্ধন হিসেবে ব্যবহার করি।
অভিনন্দন… এই ঐতিহাসিক ঘোষণার সময় এখানে থাকতে পেরে গর্বিত।

সমর্থকরা ফিফার ঘোষনা উদযাপন করছে (ছবি কাইলি ম্যাকডোনাল্ডের)

যদিও এখানে বাস করা বেশিরভাগ বিদেশির ২০২২ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত কাতারে বাস করার পরিকল্পনা নেই, তবে অনেকেই এই ভালো সংবাদে আনন্দিত।

কাতার লিভিং-এ আইস মেইডেন বলছে:

১২ বছরে,আমাদের অনেকেই হয়ত এখানে থাকব না, কিন্তু বর্তমান মূহূর্তে সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নেই।

কাতারী অ্যাডভেঞ্চারে এদেশে বাস করা এক বিদেশী নাগরিক ব্লগার সিবইল নক্স নামক ভদ্রমহিলা তার অনুপ্রেরণার বিষয়টি ব্যাখ্যা করছেন:

আমি জানি না কেন আমি এই বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে ২০২২ সালে আমি এখানে বাস করব না। হয়ত এটা আমার আয়োজকদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় দুর্বল দেশটির প্রতি সমবেদনা যা আমাকে আমার অন্য আরেকটি নিজ শহরের জন্য উল্লাস প্রকাশ করতে উৎসাহিত করছে, অথবা আমি জানি যে সম্ভবত কাতার যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে তা রক্ষা করতে পারবে..আমি, সকলের জন্য, আবিশ্বাস্য কিছুর অপেক্ষা করছি।

কিন্তু ফিফার এই ঘোষণাকে সকলেই ভালো বলে অভিহিত করেনি।
হ্যাক দি বোন-এ এক কাতারে বাস করা প্রাক্তন এক বিদেশী কাতারকে অভিনন্দন জানিয়েছ এবং এরপর কিছু কঠিন কথা বলেছে।

এই মুহূর্তে..কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন করার মত যোগ্যতা নেই। এখানে বিশ্বকাপ আয়োজন করার মত অবকাঠামো নেই…তবে ফিফার জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে দোহা খুব দ্রুত নিজেকে উন্নত করছে। এর জন্য হাজার হাজার শ্রীলঙ্কা এবং নেপালের শ্রমিককে ধন্যবাদ যারা একেবারে শুন্য থেকে দেশটিকে গড়ে তুলছে…। আমি বিস্মিত না হয়ে পারি না, যখন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম শহরে প্রবেশ করবে তখন তারা এই সব বর্তমান সময়ের দাস দের কোথায় লুকিয়ে রাখবে।

এমনকি বিশ্বকাপের আয়োজক হবার ক্ষেত্রে কাতারিদের মিশ্র অনুভূতি রয়েছে। মিমিজ ব্লগে মিমি এই সব যুক্তির খুঁটিনাটি তুলে ধরেছে।

যখন আমি জিজ্ঞেস করি কেন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপকে সমর্থন করেন? লোকজন বলে এটা কাতারকে চিরদিনের জন্য বদলে দেবে। এটা কাতারকে বিশ্বের মহান সব দেশগুলোর মানচিত্রের পাশে তুলে আনবে। এটা স্বচ্ছতার প্রতি কাতারের যে গতানুগতিক পুরোনো মানসিকতা তাকে বদলে দেবে, যে স্বচ্ছতা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।
অন্যদিকে যারা এর বিরোধীতা করছে তারা যুক্ত প্রদান করছে যে বিদেশীদের জন্য ২২ বিলিয়ন অর্থ খরচ করা হবে, যেখানে এটা হয় স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করা যেত এবং কাতারের দরিদ্র নাগরিকদের অবস্থার উন্নতির জন্য ব্যয় করা যেত। ২০২২ সালে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের বদলে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা যেত। এটা কাতারের নাগরিকদের জন্য কোন সুবিধা প্রদান করবে না, তার বদলে তা আরো বেশী তাদের পরিচয়কে ক্ষতিগ্রস্থ করার দিকে নিয়ে যাবে।

আয়োজক হবার প্রতিযোগিতায় কাতার যে যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করেছে, টুইটারস্ফেয়ারে অনেকে তা বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা এই লড়াইকে ডেভিড বনাম গোলিয়াথের লড়াই হিসেবে চিত্রিত করেছে।

@লিয়েনড্রোইড বলছে:

এটা আমাকে হাসিয়েছে, এমন একটা রাষ্ট্র, যে কিনা এমনকি যার অবস্থান চিহ্নিত করতে পারে না…উত্তম,যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। হয়ত এটা লোকজনকে একটা মানচিত্র দেখার জন্য উৎসাহিত করবে।

এবং @এলিজাবেথডাব্লিউ৭২৩ বলছে:

আজ সবার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে: কেন যুক্তরাষ্ট্রের মত একটা রাষ্ট্র, তেল সমৃদ্ধ এক উপসাগরীয় দেশের কাছে হেরে গেল? এইচটিটিপি://ওডাব্লিউ.এলওয়াই/৩জে৪ইই

টুইটারের বিষয়ে যদি কথা বলা যায়, তাহলে কাতারের টুইটারকারীরা অবশেষে তাদের জাতীর আশা পুরুন করতে পারল যখন. তারা এই বিষয়টি টু্‌ইটারে এক ধারায় পরিণত হয়. কিন্তু এটা ছিল একটা অম্লমধু অভিজ্ঞতা, #কাতার এর বদলে #কাতের #কাত্তার নামক শব্দ তালিকা তৈরি হয়।@ টক্সিক বলছেন:

আজ কাতার #বিশ্বকাপ২০২২ এর আয়োজক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হল। যুক্তরাষ্ট্রে “কোয়াতার” টুইটারে বিষয় হিসেবে একটি ধারায় পরিণত হয়েছে। দৃশ্যত আমাদের বানান করার দক্ষতা আমাদের ফুটবল খেলার দক্ষতার মতই সুন্দর।

দোহায়, আম্মার মোহাম্মদ ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে কাতারের অর্জনের তালিকা তৈরি করেছে:

غرب آسيا٢٠٠٥ …آسياد٢٠٠٦…كأس آسيا ٢٠١١.. كأس العالم ٢٠٢٢
تدل على تخطيط استراتيجي عميق ومدروس من قطر
ওয়েস্ট এশিয়ান গেমস- ২০০৫, এশিয়ান গেমস ২০০৬, এশিয়ান কাপ ২০১১ এবং ফুটবল বিশ্বকাপ-২০২২, এর সবগুলো কাতারের কৌশলগত পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যত্র নেট নাগরিকরা আনন্দ করছে।

বাহরাইনের ইয়ুকুব সালাইসে টুইট করেছে:

আমি আমার ১২ বছরের সন্তান নিয়ে কাতারে গিয়ে বিশ্বকাপ দেখার অপেক্ষায় রয়েছি এবং তাকে বলি, বড় বড় স্বপ্ন দেখ এবং কঠোর পরিশ্রম কর, তাহলে এটাই তুমি পাব।

সৌদি আরব থেকে হালা আল জুরায়েদ কাতারের বিজয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন:

ياقطر ألف مبروووووووووووووووك ،، الله عليكم قول وفعل ،، مره انبسطت ،، الحمد لله
কাতারকে অভিনন্দন! তুমি যা করবে বলেছিলে, তুমি তা করেছ। আমি অত্যন্ত খুশী। স্রষ্টাকে ধন্যবাদ!

অন্য এক টুইটে সে লিখেছে:

مره عجبوني قطر ومره عجبني إن قطر فازت ومره عجبني الإصرار والعمل شي مره حلو
আমি কাতারের কাজে মুগ্ধ এবং তার জয়ে আনন্দিত। আমি তাদের লেগে থাকা এবং প্রচেষ্টাকে শ্রদ্ধা করি। এটি এমন কিছু যা সত্যিই সুন্দর।

এবং সৌদি আরবের খোবার থেকে @আবদুলআজিজ বলছে:

২০২২ সালে আমার বয়স হবে ৪৭ বছর, হে হে হে, তখন হয়ত আমি খিটখিটে মেজাজের মানুষ হয়ে যাব এবং হয় তখন ফুটবল খেলাকে আর পছন্দ করব না 🙂# কাতার

এই আয়োজনের যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কাতারের শাসক পরিবারের প্রচেষ্টার ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মিশাল আল গারগউয়ি মন্তব্য করেছে:

একটি বিষয় পরিষ্কার: আল থানিরা উপসাগরীয় অঞ্চলের মেডিসি (ইতালির শাসক, যারা শিল্পের পোষক ছিল) এবং রকফেলার (যুক্তরাষ্ট্রের দানশীল এক ধনী পরিবার)

এখনো সংযুক্ত আরব আমিরাতে, সেখানকার ইয়াসের হারেব পরামর্শ প্রদান করছে:

আজকের দিনটিকে #কাতারের নতুন জাতীয় দিন হিসেবে ঘোষণা করা উচিত 🙂

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .