২৫ জুলাই, মালির অভ্যন্তরে অবস্থিত আল কায়েদা ইসলামিক মাঘরেব-এর (একিউআইএম) দপ্তরে হামলা চালায় ফরাসী- মৌরিতানিয়ার সেনাদল। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ফরাসী ত্রাণ কর্মী মিশেল জার্মানেউকে উদ্ধার করা। অপহরণকারীরা তাকে হত্যা করে। এই হামলা এক কূটনৈতিক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, কারণ ফ্রান্স আবার তাদের এক পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেছে, যে পরিকল্পনায় অধীনে তারা সন্ত্রাসবাদ এবং বিশেষ করে একিউআইএম-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যে এ এলাকায় সৈন্য বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। সাহেল অঞ্চলের ব্লগাররা এই ধারার ঘটনায় শঙ্কিত যে ঘটনা উল্লেখ করছে: এ অঞ্চলের তরুণদের মধ্য চরমপন্থা গ্রহণের হার বাড়ছে এবং যে সমস্ত জাতি এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের মধ্য এক জটিল কূটনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে।
তরুণদের চরমপন্থা গ্রহণ, আবদেলকাদের অউলদ আহমেদনাহ এর এই পথ বেছে নেবার মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হয়। সে মৌরিতানিয়ার একিউআইএম যোদ্ধা, যে এই হামলার সময় নিহত হয়। মৌরিতানিয়ার একটিভিস্ট এবং ব্লগার নাসের ওয়েড্যাডি ব্যাখ্যা করেন, কেন একজন গভীর মনোযোগ প্রদান করে দেখবে, কি ভাবে অউলদ আহমেদনাহ একিউআইএম এর সাথে যুক্ত হল:
গোত্রের অন্য অনেক তরুণের মত অউলদ আহমেদনাহ-এর এক সম্পদশালী ব্যবসায়ীর জীবন বেছে নেবার সুযোগ ছিল। কিন্তু সে বেছে নিল অন্য পথ। অউলদ আহমেদ এবং তার ভাই ছিল দেশের ধনী শ্রেণীর অংশ। তারা দারিদ্রের কারণে রক্তক্ষয়ী জেহাদের পথে পা বাড়ায়নি, তার বদলে তারা আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জেহাদে যোগ দিয়েছিল। মৌরিতানিয়ার হোঁচট খেতে থাকা শিক্ষাব্যবস্থা তাদের এমন এক ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা থেকে দুরে সরিয়ে দিতে থাকে, যে ইসলাম তাদের সমাজের মৌলিক অংশ এবং তারা মৌরিতানিয়া ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের নাগরিক। হ্যাঁ, চিন্তার সাথে সমাজিক বাস্তবতাকে চোখের সামনে হোঁচট খেতে দেখে তারা যে দুরত্ব আবিষ্কার করেছিল তা তারা দুর করতে পারেনি। তাদের বিশ্বাসের জায়গায় উপনীত হবার ক্ষেত্রে পরবর্তী সবচেয়ে সহজ বিষয়টি ছিল, যদি সমাজ পথভ্রষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা।
ওয়েড্যাডি এর সাথে যুক্ত করেন::
আমি অনুভব করি যতদিন মৌরিতানিয়ার জাতীয় জীবনের বর্ণনা অষ্পষ্ট এক ইসলামের উপর গুরুত্ব প্রদান করবে, যে ইসলাম আমাদের জাতীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে অবস্থান করছে, ততদিন আমরা আরো ওউলদ আহমেদনাহ সৃষ্টি করব। এটা একজনের ক্ষেত্রে যা করবে তা হচ্ছে ইসলামের আবরণে একজনের জন্য একটা বার্তা প্রদান করে তাদের নিয়োগ প্রদান করবে (যেমনটা মুসলিম ব্রাদারহুড এখন করছে), যারা ভাসমান এক প্রজন্ম এবং নিজেদের বহন করার এক উপায়ের অনুসন্ধান করছে।
দি মুরস এ্যাট নেক্সট ডোরে ব্লগার কাল এই বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করেছে যে একিউআইএম এর আদর্শ, মৌরিতানিয়ার প্রভাবশালী তরুণদের পুনরায় উদ্দীপ্ত করছে এবং তিনি এর সাথে যোগ করেন:
গোত্র হীন হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি বেশ গুরুত্ব রাখে (বিশেষ করে যখন শহরে বাস করা লোকের সংখ্যা বাড়ছে, আন্তর্জাতিক আরবী সংবাদপত্র, এবং আকাশ সংস্কৃতির মত প্রচার মাধ্যম এবং ইন্টারনেটে প্রবেশ, নাগরিকদের গোত্র অথবা পরিবারের প্রতি বিশ্বস্ততা আরো কমিয়ে দিচ্ছে, যার ফলে নাগরিকদের মধ্যে বিমূর্ত এক আন্তর্জাতিকীকরণের বিস্তার ঘটছে জাতীয়তাবাদী, আরব, ইসলামপন্থী অথবা অন্যদের দ্বারা) মৌরিতানিয়া এই বিষয়টি ৭০ এর দশক থেকে চলে আসছে। এর মানে এই নয় “আধুনিক” তরুণরা গোত্র থেকে বিচ্ছিন্ন। এর খুব সাধারণ মানে এই যে, তারা এক নতুন রাজনৈতিক চেতনার স্তরে প্রবেশ করে, যা তাদের আরো বিপর্যয়ের বিস্তৃতি ঘটায় (যেমন, একিউআইএম, দলে নিয়োগের জন্য পরিবার/গোত্র ইত্যাদির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ককে ব্যবহার করছে, তবে, এক্ষেত্রে তারা কেবল সীমাবদ্ধ অঞ্চলে কার্মকাণ্ড পরিচালনা করবে, অন্যথায় তারা উপজাতি বাসিন্দাদের আন্তর্জাতিকতাবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টা করবে।
এছাড়াও কাল এই পোস্টে বিষয়টি তুলে ধরেছে যে, আলজেরীয় কর্তৃপক্ষ অনুভব করছে, এই হামলা চালানোর আগে আরো তথ্যের জন্য তাদের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল:
আলজেরিয়ার সমর্থন ছাড়াই এবং দেশটিকে পূর্ব থেকে জানানো ছাড়াই এই হামলা চালানো হয় এবং এ বছরের শুরুতে স্থানীয় সন্ত্রাস প্রতিরোধ সম্মেলনের পর তামানারাসেত সেনাদল সাজানো হয় । যেভাবে তারা এই বিষয়টি দেখছে, এই হামলা স্থানীয় নিরাপত্তা কাঠামোকে উপেক্ষা করছে বিশেষ, করে একিউআইএমকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে। যখন মৌরিতানিয়া মূল কাজটি করেছে তখন ফরাসীরা তাদের পরিবহন (লজিস্টিক) এবং প্রযুক্তিগত সমর্থন প্রদান করেছে। আলজেরিয়ার একটি সূত্র এই ব্লগারকে বলছে, এই হামলায় ফ্রান্সের যুক্ত থাকা কেবল এই ধারণা প্রদান করে যে, ফ্রান্স আফ্রিকান শিবিরে হামলা চালিয়েছে এবং মুসলিমদের হত্যা করছে। এই ভাবে তারা আরো শত্রু সৃষ্টি করবে। যদি তারা খুব বেশি পরিমাণ জনতার সাথে এই ধরণের বিষয়ে যুক্ত হয়, তারা আফ্রিকার প্রচেষ্টাকে বিপদে ফেলে দেবে, কারণ এটা আমাদের বোকা বানিয়ে ফেলবে, যেমনটা প্রকৃতপক্ষে ফরাসীরা সত্যিকারে সেই সমস্ত সন্ত্রাসীদের সাথে লড়াই করছে, যখন সেই ‘সন্ত্রাসীরা আসলে আমরা’।[..] অন্য সব আলজেরীয় সূত্র বলছে আলজেরিয়ার অংশগ্রহণ হয়ত এই বিষয়ে একিউআইএম বিরোধী কার্যক্রমকে ফ্রান্সের মত অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে ( মতবাদের কারণে/ আলজেরীয় মানসিকতা এবং মালির প্রতি আলজেরীয় মনোভাব ) অন্যরা বিশ্বাস করে যে এই বিষয়ে আলজেরিয়া যুক্ত থাকা হয়ত অর্থহীন রক্তপাতের সূচনা করবে, বিশেষ করে স্থানীয় জনতার জন্য। মালি এবং মৌরিতানিয়ার সূত্র সংবাদ প্রকাশ করেছ যে, আলজেরিয়ার সীমান্ত এলাকায় আলজেরিয়ার হেলিকপ্টার মালির আরব চোরাকারবারীদের উপর গুলিবর্ষণ করেছে।
টুইটারে কাল পোস্ট করেছে যে ফ্রান্স –মৌরিতানিয়ার হামলার ঠিক একই সপ্তাহের মধ্যে আলজেরিয়ার সেখানে তার দ্বিতীয় হামলা চালায় এবং “ঘটনাক্রমে আলজেরিয়া নিজের অংশগ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে, তারা ফরাসী হামলাকে তাদের আক্রমণের বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে”:
জেয়ুনে আফ্রিক সংবাদ প্রদান করে, একিউআইএমের অভিযোগে, ফরাসী কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি অস্বীকার করে যে অভিযান চালানোর আগে তারা একিউআইএম এক চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল। [ফরাসী ভাষায়]:
L’Élysée le martèle depuis le début : les ravisseurs de Michel Germaneau, l’otage français dont l’exécution a été annoncée le 25 juillet dernier, ont toujours refusé de négocier. Lundi 2 août encore, Paris n’a pas dévié de cette version.
জেয়ুনে আফ্রিকা এছাড়াও জানান যে, আলজেরিয়ার কর্তৃপক্ষকে হয়ত জার্মানেউকে মুক্ত করার জন্য যে হামলা পরিচালনা করা হয় সে সম্বন্ধে অবহিত করা হয়েছিল [ফরাসী ভাষায়]:
D’habitude prompt à dénoncer « ce type d’ingérence », Alger s’est cette fois abstenu. Il faut dire que le Quai d’Orsay lui a coupé l’herbe sous le pied en annonçant que les autorités algériennes avaient été informées au préalable.