জর্জিয়া যখন রাশিয়ার সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল দক্ষিণ ওসেটিয়া নিয়ে ২০০৮ সালের যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকী পালন করছে তখন অনলাইন প্রতিক্রিয়াগুলো ছিল মিশ্রিত এবং ভূরাজনৈতিক ভাবে সেগুলো ছিল মেরুকৃত। ইভোলুতসিয়া ব্লগ যেমন এই সংঘাতকে জর্জিয়ার দৃষ্টিকোণে দেখছে।
[…] অনেক বিশেষজ্ঞই, যদিও তারা এই অঞ্চল কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে দ্বিমত করেন, এখন স্বীকার করছেন যে এই যুদ্ধ শুধুই ২০০৮ সালের ঘটনাবলীর ফলশ্রুতিতে হয়নি, বরং এর মূল আরও অনেক পূর্বে। সত্যি, ককেশাসে রাশিয়ার জড়ানোর ব্যাপারটি বেশ কয়েক শতাব্দী ধরেই চলছে এবং অনেক শিক্ষাবিদই হয়ত ২০০৮ সালের আগষ্ট মাসের যুদ্ধকে ১৮ শতক এবং ১৯ শতক এর রাশিয়ার জারদের আগ্রাসনের সাথে সম্পর্ক আছে বলবে।[…]
[…]
এক দিকে আপনি আমেরিকার সিনেটর জন ম্যাকেইনের কথা দেখেন, যিনি সম্প্রতি একটি ওয়াশিংটন পোস্টের উপসম্পাদকীয়তে লিখেছেন যে ২০০৮ সালের যুদ্ধের পর অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু কোনটিই ভালোর জন্যে হয় নি।
[…]
অন্যদিকে জর্জিয়ার রাজনীতি-বিজ্ঞানী ঘিয়া নদিয়া রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি ওয়েবসাইটের একটি কলাম এ লিখেছেন যে এই অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদী ভূরাজনৈতিক বলয়ে এই যুদ্ধ কোন প্রভাব ফেলে নি। [..] “এই যুদ্ধ জর্জিয়াতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নি যা একটি গুরুতর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে।”
তাহলে কে ঠিক বলছে?
[…]
[…] যদি আমরা যুদ্ধের মানবিক ও বৈষয়িক ক্ষতির বিষয়টি উপেক্ষা করি, তবে সবচেয়ে খারাপ যা হয়েছে যা হচ্ছে জর্জিয়া কিছু অঞ্চল হারিয়েছে – যার মধ্যে অনেক অংশই এটি পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করত না যুদ্ধের আগে – এবং এর গর্বের কিছুটা ছেদ পরেছে। আর এই যুদ্ধ এই অঞ্চল নিয়ে রাশিয়ার কুমতলবকে উন্মোচন করে দিয়েছে – জর্জিয়া ক্রেমলিনের পুতুল রাষ্ট্র বা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হওয়া থেকে বেঁচে গেছে।
ওদিকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সামনে ৫০জন জর্জিয়ান সমবেত হয়েছিলেন রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে প্রতিবাদ করতে। ভয়েসেস ফ্রম রাশিয়া জানাচ্ছে যে মস্কোতে একটি মোমের আলোর মিছিল এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সবাই দক্ষিণ ওসেটিয়ার এই যুদ্ধের ঘটনাগুলো মনে করতে পারে। ৭ই আগষ্ট সন্ধ্যায় জর্জিয়ার টেলিভিশনে রাষ্ট্রপতি মিখাইল শাকাসভিলি প্রতীজ্ঞা করেন যে তিনি যুদ্ধে যাবেন না এবং দক্ষিণ ওসেটিয়া শান্তিতে ঘুমাতে যেতে পারে। সবাই বাড়ি ফিরে যায় এবং এক ঘন্টার মধ্যেই তাসখিনভ্যালী রকেট লঞ্চারের তোপের মুখে পরে। লোকজন মনে করতে পারে কিভাবে শহরটি পুড়তে থাকে এবং শিশুরা মাটির নীচের কক্ষে লুকায়। ওদিকে ট্যাংকগুলো সামনে থেকে সাধারণ জনগণকে গুলি করে। এইসব দিনগুলি মানুষ চিরদিন স্মরণ রাখবে। […]
যদিও এই দুটি মন্তব্য পুরো চিত্রটি দেয় এবং অনেকেই বিশ্বাস করে যে রাশিয়া জর্জিয়াকে উস্কিয়েছে, কিন্তু ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের একটি রিপোর্ট রাষ্ট্রপতি মিখাইল শাকাসভিলিকে প্রথম গুলি ছোড়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। থ্রী কিংস ব্লগ বলছে যে এই যুদ্ধ জর্জিয়ার অভ্যন্তরীণ সমস্যার গতিপথ পরিবর্তন করতে ব্যবহার করা হয়েছিল।
সত্যিই এই ব্লগ বলছে যে শাকাসভিলি সামরিক হারকে তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিজয়ে পরিণত করেছেন এবং জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসিতে এই বার্ষিকী উদযাপন করছেন আতশবাজি পুড়িয়ে।
জর্জিয়ার রাষ্ট্রপতি মিখাইল সাকাসভিলি তার রাষ্ট্রপতি মেয়াদকালের সবচেয়ে বোকার মত ভুলকে চাপা দিতে পেরেছেন।[…]
[…]
এটি সত্যিই দু:খজনক যে এইসব অদ্ভুত উপায়ে জর্জিয়া নিজেকে প্রতারণা করে চলে […] আর এর দায়ভার পরে রাশিয়ার পতনের পর থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই অঞ্চল নিয়ে তাদের একরোখা রাজনীতির উপর।
রাশিয়া কি এখানে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিল? মনে হয় অবশ্যই না। তারা কি ২০০৮ সালে শাকাসভিলি সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল? মনে হয় এটাই ঠিক। জর্জিয়ার সেনাবাহিনী কি তাদের থামাতে পেরেছিল? মোটেই না। কয়েকদিন যুদ্ধের পরেই [..] পুতিন ঠিকমতই বুঝেছিলেন যে তিনি হয়ত পশ্চিমাদের পছন্দের এই ছোট ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত দেশটিকে অস্থিতিশীল করার ব্যাপারটিতে হয়ত পার পেয়ে যেতে পারেন, তবে পুরোপরি দখল ও সরকার পরিবর্তনের ফলাফল খুব গুরুতর হতে পারে।
[…]
জর্জিয়ার বিরোধী দলকে রাশিয়া ঘেঁষা বলে থামিয়ে দেয়া হয়েছে এবং শাকাসভিলি কথায় কথায় রাশিয়ার আগ্রাসনের ব্যাপারটি বলেন। […]গত দুই বছরে ফিরে তাকালে বোঝা যায় যে আগষ্ট যুদ্ধে জর্জিয়াই বিজয়ী হিসেবে বের হয়ে এসেছে। তবে বিজয়ী ছিলনা জর্জিয়ার নাগরিকেরা, বা দেশের ভবিষ্যৎ। মিখাইল সাকাসভিলি জিতেছে আর জর্জিয়া হরে গেছে।
গ্লোবাল ভয়েসেস ২০০৮ সালের আগষ্ট মাসের যুদ্ধের সময়ে নাগরিক মিডিয়াকে অনুসরণ করেছে এবং এর ককেশাস সংঘাত কণ্ঠ বিশেষ কাভারেজ এ লিপিবদ্ধ করেছে।