মঙ্গোলিয়ার যাযাবর বাসিন্দারা জীবন যাপনের জন্য দেশটির বিস্তৃত ভূমির উপর নির্ভর করে থাকে। অতীতে পশু চড়ানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ চারণভূমি ছিল, এবং এর আশপাশ থেকে তারা খাবার ও পানি সংগ্রহ করত। তবে এখন সব কিছু বদলে যাচ্ছে, কারণ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জীবন যাপনের উপর এক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।
ইউরোএশিয়ানেটে সম্প্রতি জশুয়া কুচেরা এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন:
বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি, মঙ্গোলিয়ার যাযাবর পশুপালকদের উপর এক তীব্র প্রভাব ফেলেছে। মঙ্গোলিয়ার মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই যাযাবর। তাদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। ১৯৪০ সালের পর থেকে দেশটির উষ্ণতা ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপদাহ এখন অনেক লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে। বৃষ্টিপাতের সময় ও চরিত্র এখন ভিন্ন রকম হয়ে গেছে। যখন দেশটির একদিকে বৃষ্টিপাত কমে গেছে, তখন ঠিক তার কাছেই আরেক দিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এইসব তথ্য পাওয়া গেছে পরিবেশের উপর দেশটির প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের করা এক মূল্যায়নের মাধ্যমে। দেশটির দক্ষিণে অবস্থিত গোবি মরুভূমি ক্রমশ উত্তরের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।
গোবি মরুভূমির ক্রমাগত বাড়তে থাকার ফলে পশু চরনোর জন্য ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে, যা পশু খাদ্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দেশটির বর্তমান জনতা পর্যাপ্ত সুপেয় পানির সমস্যায় ভুগছে। বিষয়টি বর্ণনা করছে ব্লগার মানডাহা। সে এই সম্প্রদায় সুপেয় পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে রকম সমস্যায় পড়ে গেছে সে বিষয়টি বর্ণনা করছে:
বিশ্বের উষ্ণতা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে মঙ্গোলিয়ার উঁচু পাহাড় চূড়ার বরফ ও হিমবাহ গলতে শুরু করছে এবং ক্রমশ তা পাতলা হচ্ছে। ২০৩৯ সালের মধ্যে বরফের স্তর ১৩১ সেন্টিমিটার পাতলা হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীদের মতানুসারে ২০২০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে সুপেয় পানির অভাব দেখা দেবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে দশ কোটি আশি লক্ষ লোক পান করার পানি পাবার ক্ষেত্রে এক সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। ১৯৯৬ সাল থেকে মঙ্গোলিয়ার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগতভাবে নিচে চলে যাচ্ছে। মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমির অনেক হ্রদ যেমন তাৎসিন তাসাগান, আদিজীন তাসাগান, উলান, ওরোগ প্রভৃতি হ্রদ এবং অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্লগার এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানী আরিয়ানজেরেল এই সমস্ত পরিবর্তনের ব্যাপারে কিছু তথ্য যোগ করেছেন:
বর্তমানে “পানি একটি সম্পদ” প্রবাদটি পরিষ্কার এক অর্থ তৈরি করে। সবচেয়ে কাছের সমুদ্র থেকে আমাদের দেশ অনেক দুরে অবস্থিত। যে সমস্ত দেশে প্রচুর পানি আছে, তাদের তুলনায় আমাদের দেশের উপরি ভাগে এবং অভ্যন্তরে পানির মজুত অল্প। আমাদের দেশের লোকজন পানির ধারার উপর জীবনধারণ করে থাকে। যেমন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেবল শীতকালে পানি ব্যবহার করা যায়, কারণ প্রবাহিত জলধারা সেখানে খুবই স্বল্প, পানি পাবার ক্ষেত্রে সে সমস্ত এলাকায় কেবল শীতকালে পড়া বরফই সম্বল। প্রবীণেরা বলেন, মুখে যতটুকু পানি ধরা যায় তাই দিয়ে তারা মুখ ও হাত ধুতেন। একই কাজে আমরা তার চেয়ে অনেক বেশি পানি ব্যবহার করি।
দেশটিতে এই সমস্ত বিষয়ের অনেক কিছুই অজানা, যা সারা বিশ্বে কমবেশি ছড়িয়ে আছে। তবে নাম নোমাড গ্রীণ বা সবুজ যাযাবর নামের স্থানীয় এক পরিকল্পনা মাধ্যমে এক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে যাযাবরদের সিটিজেন মিডিয়া, যেমন ব্লগ, ছবি এবং ভিডিওর ব্যবহার শেখানো যায় এবং দেশটিতে পরিবেশগত যে সমস্ত সমস্যা দেখা যাচ্ছে তার কিছু ব্লগে জানানো যায়। ২০০৯ সালে এই প্রকল্প চালু হয়েছে। বেশ কিছু অংশীদার ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এখন পর্যন্ত রাজধানী উলানবাটার এলাকায় ও অন্য সব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে মঙ্গোলিয়াদের ইতিবাচকভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, কি ভাবে এই সমস্ত উপাদান বা টুলসগুলো ব্যবহার করে দেশটির পরিবেশ গত সমস্যাকে তুলে ধরা যায়, সে সম্বন্ধে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এই বিষয়টি আংশিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। উপরের দুজন ব্লগারের কথা এই প্রবন্ধে উদ্ধৃত করা হয়েছে, তারা এই কর্মশালারই ফসল। মানডাহ ও আরিয়ানজেরেল নোমাড গ্রীন প্রকল্পের অংশ, যারা ভবিষ্যৎ মঙ্গোলিয়ার পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতার কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়াবে।