এই সপ্তাহে শান্তি রক্ষী দলের ব্লগাররা তাদের এক স্বেচ্ছাসেবক কর্মী ২৩ বছর বয়স্ক সো ইয়োন কিমের মৃত্যুতে শোকে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। সে দক্ষিণ মরোক্কোর টামেগ্রোট নামের এক গ্রামের যুবা কেন্দ্রে কাজ করত। যদিও মরোক্কোর পিস কর্পস এখনো সো ইয়োন কিমের মৃত্যুর কারণ জানায় নি, তবে তারা নিশ্চিত করেছে যে এটা এক বিচিত্র রোগ। এই রোগ, তার মরোক্কোর কাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যে সমস্ত ব্লগার তাকে জানত এবং যারা তাকে তেমন ভাবে জানত না, তারা তার স্মৃতিতে কিছু লেখা পোস্ট করেছে। তার উচ্চাশা, সৌন্দর্য, কাজের প্রতি অবিশ্বাস্য উৎসাহ, এবং মরোক্কোতে সে যে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করত, সে সব নিয়ে বেশ কিছু পোস্ট এখানে রয়েছে।
অসলিন ইন মরোক্কো বর্ণনা করেছে সো ইয়োন গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত কাজ করত তার কথা। ব্লগার বলছেন:
সো-ইয়োন এখানকার সকল কর্মশালাকে একসাথে করেছিল এই চেষ্টায়, যাতে তার এদেশী ভাইরা এই সমস্ত কর্মশালার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। এ কারণে বিভিন্ন পর্যটক, মরোক্কোর কারিগরী বা লোকশিল্পী ও ভ্রমণকারীদের নিয়ে সে কর্মশালা পরিচালনা করতেন। তরুণ স্বেচ্ছাসেবক কর্মী হিসেবে এটা তার কাজ ছিল না, কিন্তু যে সম্প্রদায়ের মাঝে সে বাস করত তাদের সাহায্য করার জন্য সে এই কাজ হাতে নিয়েছিল। সে ছিল উজ্জ্বল, নিজেকে পরিচালিত করার মত উৎসাহী, দয়ালু এবং বিনয়ী।
সো ইয়োনের এক ছবি আমাদের দেখিয়ে ব্লগার হিলারী লিখেছে:
এই বেদনার কথা লিখতে গিয়ে দু:খে আমার হৃদয় ফেটে যাচ্ছে যে, আমাদের সহকর্মী পিস কর্পস স্বেচ্ছাসেবক, স্টাজ-মাটে (আমার যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষক দলের একজন) এবং বন্ধু সো-ইয়োন হঠাৎ করে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। অসুস্থ অবস্থায় গতকাল রাতে সে মারাকেশের এক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আমি তার পরিবার ও বন্ধুদের বেদনার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং আমরা এক মহীয়সী নারী, শান্তি রক্ষী স্বেচ্ছাসেবিকা এবং সর্বোপরি রসিকতায় পরিপূর্ণ নারীকে হারালাম। আমি সব সময় মনে রাখব যে সে জীবন, পড়ালেখা এবং বন্ধুদের খুব ভালবাসত। যদিও আমি তার খুব কাছের মানুষ ছিলাম না, কিন্তু এক মাস আগে যখন আমি তার মৃৎ পাত্র তৈরির কর্মশালায় যোগ দিই, সে সময় তাকে আমার ভালোভাবে জানার সুযোগ হয়েছিল। সে সময় বুঝতে পারলাম, কেন তাকে লোকে এতটা ভালবাসে। উপরের ছবিটি তার সাথে তোলা আমার শেষ ছবি ( ছবিতে সর্ব ডানের ব্যক্তিটি হল সো -ইয়োন)।
ব্লগার শিওয়া -বি -শিওয়া এই পোস্টে সো ইয়োনের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে:
সো ইয়োনের আত্মা ছিল প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা, সে ছিল শক্তি, অগ্নিময় এবং নারীবাদী এক নারী। সে অনেক সময় বেশ উত্তেজনায় নিমজ্জিত থাকত, কিন্তু অন্যের অনুভূতির সাথে একাত্ম হবার তার প্রচণ্ড ক্ষমতা ছিল এবং তার বাহু এতটাই প্রসারিত ছিল যে, যখন সে কাউকে আলিঙ্গন করত সেটি তার আকারের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যেত। সে তার নীতিতে অটল ছিল এবং যখন সে কথা বলত, সে ন্যায় অন্যায় বোধ নিয়ে কথা বলত। সে পরিবর্তনের শোভাযাত্রায় পথ চলত এবং সে উদাহরণ সৃষ্টি করে, সবার আগে চলত। তার চুল ছিল অসাধারণ। সে তার কাজ এবং গ্রামকে ভালবাসত। সে সামনে এগিয়ে যাবার ব্রত নিয়ে পথ চলত। সে এক বিশালতার মাঝে বাস করত। সে ছিল; না! সে এখনো সবার মাঝে এক উৎসাহ হয়ে বিরাজ করছে।
মেল ইন মরোক্কো তার বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে, সে লিখেছে:
আমি শব্দ ব্যবহারে খুব দক্ষ নই, বিশেষ করে যখন তা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি অনুভব করছি, আমি তার কাছে ঋণী। আমি পৃথিবীকে জানাতে চাই যে সে আমার কাছে কতটা আপন ছিল। সে ছিল সুন্দরী, স্পষ্টভাষী, এবং স্বীয় মতামত ব্যক্ত করা এক ব্যক্তি। কাজেই তার সাথে মেশার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, কয়েকটি শব্দে তা সবাইকে জানানোর চেষ্টা করছি।
“আমি প্রতি দিনে একটু একটু করে শক্তি অর্জনে বিশ্বাস করি। খুব সহজে যা অর্জিত হয়, যাকে অনেক সময় অবিশ্বাস্য এক কথোপকথন বলে মনে হয়, যে সত্য আমি উচ্চারণ করি এবং তার মধ্যে বাস করি, যা কিনা লোকদের উপর প্রভাব বিস্তার করে, যা আমি আমার চারিপাশের সত্য থেকে শিক্ষা লাভ করি”।
জয় ইন মরোক্কো সে দেশের পিস কর্পস এর প্রধান এ্যারান এস উইলিয়ামসের চিঠির সারাংশ তার ব্লগে তুলে দিয়েছেন। এই চিঠিতে মরোক্কোতে সো ইয়োন যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তার কথা তিনি তুলে ধরছেন:
সেপ্টেম্বর ২০০৮ এ, তিনি লিখেছেন: “যুব উন্নয়ন কর্মশালা কার্যকর করা শুরু হয়েছে। যখন তরুণরা-এর মাধ্যমে শিক্ষিত হবে ও তাদের ক্ষমতা অর্জিত হবে এবং তারা তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠবে, তখন তারা নিজেদের পরিচয় জানার ক্ষেত্রে যে সমস্ত সীমাবদ্ধতা, সেটি আবিষ্কার করবে এবং সেটি নিজেদের মধ্য ভাগাভাগি করে নেবে”।
এই চারিত্রিক শক্তি এবং ধৈর্য নিয়ে সো ইয়োন মরোক্কোয় পা রেখেছিল। আমি বেদনাদায়ক এই ঘটনার কথা সবাইকে জানাচ্ছি, এই কারণে যে আপনারা, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মীদের প্রতি সর্বোচ্চ সমর্থন, সুবিধা ও সুযোগ প্রদান করে তার কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
সম্প্রতি সো ইয়োন লিখেছিল, “ আমি প্রতিদিন একটু করে শক্তি অর্জনে বিশ্বাস করি। আমি প্রতি দিনে একটু একটু করে শক্তি অর্জনে বিশ্বাস করি। খুব সহজে যা অর্জিত হয়, যাকে অনেক সময় অবিশ্বাস্য এক কথোপকথন বলে মনে হয়, যে সত্য আমি উচ্চারণ করি এবং তার মধ্যে বাস করি, যা কিনা লোকদের প্রভাব বিস্তার করে, যা আমি আমার চারিপাশের সত্য থেকে শিক্ষা লাভ করি”।
মরোক্কোর ব্লগ জগৎ থেকে সো ইয়োন কিমের পরিবার ও তার বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা রইল।