নেপাল: মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা নামক চ্যালেঞ্জ

গত সপ্তাহে নেপালের মাতৃত্ব কালীন স্বাস্থ্য সেবা চ্যালেঞ্জ প্রচার মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করে, যখন বিশ্বের দুজন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব নেপাল ভ্রমণ করে। ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিটিশ পপ গ্রুপ স্পাইস গার্লস এর অন্যতম সদস্য জেরি হ্যালিওয়েল নেপালে এসেছিলেন দেশটির বিপর্যস্ত মাতৃত্ব কালীন স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতির প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য।

তিনি কেবল নেপালের রাজধানীর মধ্যে তার ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করেন নি, এর সাথে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, এই বিষয়টি সম্বন্ধে জানতে চেয়েছেন এবং তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন মা এবং সদ্যজাত শিশুর যেন আরো যত্ন নেওয়া হয়।

পেরেজ হিলটন হলিউডের বিখ্যাত তারকা ব্লগার। তিনি হ্যালিওয়েলের এই যাত্রার জন্য তার প্রশংসা করেছেন। তিনি তার পোস্টে দেখান নেপালী পরিসংখ্যানে প্রসূতি মৃত্যুর বিপজ্জনক হার।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে নেপালে বছরে প্রতি ৩১ জন প্রসূতির মধ্যে একজন মারা যায়। স্বাস্থ্য সেবার মানের ঘাটতির কারণে এই ঘটনা ঘটে। তারা দুর্গম এলাকায় বাস করে এবং তাদের জরায়ুর অবস্থা জটিল হয়ে যায়, যাকে স্থান চ্যুতি বলে, নেপালে প্রতি দশ জন মায়ের একজনের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটে।

জেরি হ্যালিওয়েলকে নেপালের জনগণ এবং সরকারও উষ্ণ সংবর্ধনা জানিয়েছে। কিন্তু নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপালের সাথে তার সাক্ষাৎকার ট্যাবলয়েড সংবাদপত্রের সমালোচনার শিকার হয়েছে। ভারতীয় টেলিভিশন স্টার টিভি জনাব নেপাল ও হ্যালিওয়েলের মধ্যে যে প্রথাগত চুম্বন বিনিময় হয়, তাকে “বিতর্কিত” বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে

এই “বিতর্কিত” বিষয়ে অন্যদের ভিন্ন মত রয়েছে: স্টার নিউজের ইউটিউব চ্যানেলের মন্তব্য বিভাগে সুলভ৮৩ মন্তব্য করেছে:

তিলকে তাল করার চেষ্টা করবেন না… ভারতীয় প্রচার মাধ্যমে কি প্রচার করার মতো আর কোন সংবাদ নেই???

বিলেতের রাজবধূ ডাচেস অফ ইয়র্ক সারাহ ফার্গুসন দুই দিনের এক সফরে নেপালে এসেছিলেন কিন্তু তার এই ভ্রমণ হ্যালিওয়েলের মতো এতটা আলোচনার সৃষ্টি করেনি। তিনি হোয়াইট রিবন এলায়েন্সের এক প্রচারণা কর্মী হিসেবে মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচারণার জন্য এ দেশে আসেন।

সারাহ সানইয়াহুম্বি নেপালে বৃটিশ উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডির প্রধান। তিনি সংস্থাটির নিজস্ব ব্লগে ডাচেসের নেপাল ভ্রমণ সম্বন্ধে বলেন, নেপালের মাতৃস্বাস্থ্য সেবা এখনো নির্দিষ্ট মানে পৌঁছতে পারে নি, কিন্তু পরিস্থিতির ধাপে ধাপে উন্নতি ঘটছে।

“…দেশটির বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই বিষয়ে বেশ ভালো কিছু উন্নতি ঘটছে এবং শিশু জন্মের সময় মায়েদের মৃত্যুর হার প্রায় অর্ধেক কমে এসেছে। কিন্তু এখনো প্রতি চার ঘন্টায় একজন নেপালী মহিলা গর্ভ জনিত ও/ শিশু প্রসব জনিত জটিলতায় মারা যায়, এবং প্রতি ১০০ জনে ছয়জন শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিন আর দেখার সৌভাগ্য লাভ করে না….”।

মাতৃ মৃত্যুর উচ্চহার নেপালের মেয়েদের জন্য এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে হয়-তাদের জরায়ুর অবস্থান সরে যাওয়া থেকে। এই অবস্থায় গর্ভাশয় যোনির কাছে এসে পড়ে। পশ্চিম নেপালের প্রায় ৬০০,০০০ জন মহিলা এই যন্ত্রণা দায়ক ঘটনায় ভুগে থাকে। এই ঘটনা তখনই ঘটে থাকে যখন সন্তান জন্মানোর পর মেয়েরা কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে থাকে।

এই বিষয়ে সুদারন কারকির একটি ভিডিও রয়েছে যা ইউটিউব ব্যবহারকারী স্নোহেডকোইউকে ইউটিউবে উঠিয়ে দিয়েছে:( এই ভিডিওটি দেখার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো)।

জেরি হ্যালিওয়েল ও ডাচেস অফ ইয়র্কের ভ্রমণের পর নেপালী মাতৃ স্বাস্থ্য বিষয়টি নেপালী প্রচার মাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে, কিন্তু এই সমস্ত নামকরা তারকাদের নেপাল ভ্রমণে নেপালের মায়েদের জন্য এক স্বস্তি বয়ে আনবে যারা সংস্কার ও সচেতনতার অভাবের কারণে অনেক ভুগে থাকে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .