পাকিস্তান: ন্যায়বিচার সাধিত হলো?

পাকিস্তানের বিচারালয় সম্প্রতি এক বিশাল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ৩১ শে জুলাই শুক্রবার আদালত এক রায়ে ঘোষণা করে যে, পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মুশাররফের ২০০৭ সালের ৩রা নভেম্বর নেওয়া সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ জরুরী অবস্থা ঘোষণা এবং পুরো সুপ্রীম কোর্টের সকল বিচারপতিদের প্রথমে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া ও পরে গৃহবন্দি করা, অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ছিল। এই আদেশের ফলশ্রুতিতে পিসিওর (প্রাদেশিক শাসনতান্ত্রিক আদেশ) অধীনে যে ১১০ জন বিচারক শপথ নিয়েছিল তাদের হয় পুর্বের পেশায় নতুবা চাকুরিচ্যুত হয়ে ফিরে যেতে হবে, কারণ এই রায়ে তাদের নিয়োগও একপ্রকারে বাতিল হয়ে গেছে। এই বিষয়টি স্পষ্ট করছে যে সাম্প্রতিক আইনজীবিদের আন্দোলন যা জনগণের মতকে একত্রিত করেছিল, অবশেষে তার লক্ষ্যে পৌঁছাছে। রায়ের পর সারা দেশে আদালতের বাইরে আইনজীবিদের মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে অনেককে আনন্দে নাচতেও দেখা গেছে।

তবে অনেকে এখনো অনিশ্চিত যে চুড়ান্ত রায় এবং এনআরও বা রাজনৈতিক দলগুলোর বিপক্ষে যে মামলা তার মিটমাট করা হবে কিনা এবং একই সাথে সে সময় যে প্রতিশ্রুতি অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা কতটা বৈধ ছিল তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে মনে হচ্ছে যে নাগরিক সমাজ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে

টিথ মায়েস্ত্রোর ডা: আওয়াব উপসংহার টানেন যে এখন মুশাররফের পালায়ন করা উচিত:

সকলেই বলছে – এটা জানা কথা যে আমাদের ১২০ দিনের এক বিনোদন উপহার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের এই সত্যকে অবশ্যই মানতে হবে যে আমাদের সুপ্রীম কোর্ট আমাদের গর্বিত করেছে। যে বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছিল তাকে আবার ফিরিয়ে এনেছে- ২০০০ থেকে মুশাররফের বিশৃঙ্খল দিনের সময় থেকে আক্ষরিক অর্থে তাকে এক বিব্রতকর অবস্থায় ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, তাকে এখন অবশ্যই লন্ডনের এজওয়ার রোডের ফ্লাটে লুকিয়ে যেতে হবে। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো জায়গা যেখানে সে থাকতে পারে।

চুপ-চেঞ্জিং আপ পাকিস্তান!-এর কালসুম কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন:

এই রায়ের ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ এই প্রশ্ন তৈরী করেছে- এখন কি? যদি পিসিও বিচারকদের নিয়োগ অবৈধ হয়ে থাকে, তা হলে কি এখনো তারা বিচার কার্য করবে? এটা কি বৈপরীত্য তৈরী করে না, যে বিচারকদের চাকুরিচ্যুত করার রায়কে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য, আরো বেশী পরিমাণ বিচারকদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হলো?

রোজনামচা- বাখ এর সেসনাগ মতামত দেন যে এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত:

এই আদেশের ফলে পাকিস্তান মুশাররফকে এক হাত দেখে নিলো। যে চাপ তৈরী হয়েছিল তা বের করে দিল এবং সারা বিশ্বের যে সমস্ত পাকিস্তানী পর্যবেক্ষক দু বছর ধরে যা জানতে চাচ্ছিল তা সরকারি ভাবে নিশ্চিত করলো। কিন্তু তিনি এই প্রধান বিচারপতির সামনে কোন চেষ্টা করবেন না -যেখানে কোনভাবে তার নিজের আপস করার নজীর রয়েছে, ১৯৯৯ সালে মুশির (মুশাররফের) শপথ নেওয়া – এবং ক্ষমা করার মতো জ্ঞান, একজন ব্যাক্তি, যার নামে অজস্র দুর্ণীতির অভিযোগ, যা নিয়ে আর কেউ প্রশ্ন করে না।

উমর টুর তার ব্লগে এই ঐতিহাসিক বিচারের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন

পাকিস্তানের জনগণ বলছে, সুপ্রীম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত হয়তো বদলে যেত পারে দেশটির সংবিধান ও বিচারালয়ের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে।

সামনের মাস অনেক ঘটনাবহুল হবে কারণ এই রায়ের অনেকগুলো বিষয় বাছাই করা হবে। অবশ্যই এটি অনেক রাজনৈতিক বির্তকের জন্ম দেবে, তার সাথে যথারীতি আইনী যুদ্ধের, কিন্তু এই আদেশের প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের ক্ষমতা বলয়ে কিছু সময়ের জন্য প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে। পাকিস্তানের ইতিহাসে এই ধরনের আদেশের কোন নজীর নেই এবং আমি আশা করি ভবিষ্যত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি একটি সঞ্চালক ছাড়া আর কিছুই নয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .