ফিলিপিনো জেলে রনি ডাবাল বলেছেন তাকে ডলফিন আর তিমি বাঁচিয়েছে যখন গত সপ্তাহে তার নৌকা ফিলিপাইনসের পালাওয়ান অঞ্চলে উল্টিয়ে যায়।
রিডেম্পটো আন্ডা এই গল্প লিখেছেন ফিলিপাইন্স এর দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক এঙ্কোয়ারার জন্য। ডলফিন আর তিমি কেমন করে জেলের জীবন বাঁচিয়েছে? নীচে সেই গল্প:
“ভোরে তিনি টুনা মাছ ধরার জন্য যখন পুয়ের্টো প্রিন্সেসা উপসাগরের উদ্বেল পানিতে যখন ছিলেন, এক ঝোড়ো বাতাসে তার নৌকা উল্টিয়ে গেল।
অনেকক্ষণ ধরে ভাসতে থাকলেও বিকেল আসতে ডাবালের আশা নিভে যাচ্ছিল আর একটা গা শিরশির করা অন্ধকার তাকে ঘিরে ধরছিল। হঠাৎ কোথাও থেকে ৩০টা ডলফিনের দল আর প্রায় ১০ মিটার লম্বা ২টা তিমি এসে তাকে দুই দিক থেকে ঘিরে ধরলো। তিনি যখন চুপ করে তার প্লাস্টিক বোর্ডের উপর শুয়ে ছিলেন, রনি জানিয়েছে কেমন করে ডলফিনরা তার ছোট লাইফবোট একটু একটু করে ঠেলা দিচ্ছিল তাদের বুকের ডানা দিয়ে তীরের দিকে।
ডাবাল বলেছেন যে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান যখন ডলফিনরা ধীরে ধীরে তাকে তীরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, আর জেগে ওঠেন বারাঙ্গে (গ্রাম) লুজভিমিন্দার সৈকতে যেখানে পরিশেষে তাকে স্থানীয় লোকেরা উদ্ধার করে।”
এই জেলে একজন ডলফিন স্পটারও (ডলফিন খুঁজে বেড়ান) ।
ব্লগার আং কাপে নি লাটেক্স জেলের এই গল্পে অভিভুত হয়েছেন। তিনি এই গল্পের সাথে দেশে পরিবেশ- পর্যটনের উন্নয়নকে সম্পৃক্ত করেছেন:
“যারা ডলফিন স্পট করেন (খুঁজে বেড়ান)- একটা সাধারণ কাজ পুয়ের্টো প্রিন্সেসার জেলেদের জন্য, তারা ভোরে যান ডলফিনের বড় দল দেখার জন্য। তারা তারপর এদের অবস্থান সেইসব মাঝিদের জানান যারা পর্যটক আনছে ডলফিন দেখার জন্য (এসএমএস টেক্সট ম্যাসেজ ব্যবহার করে!)।
পরিষ্কারভাবে, ফিলিপিনের পরিবেশ-পর্যটন চিত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বেশ কয়েকটা শিক্ষা তুলে ধরে যাকে পুরোপুরি প্রশংসা করা উচিত। এই শিক্ষার পুরোভাগে আছে যে স্থানীয়রা জোরালোভাবে তাদের যা জীবিকা আছে তাকে সংরক্ষন করবে- পরিবেশকে তাদের জীবিকা বানাবে আর নীজেরা এর ক্ষতি করা থেকে একে রক্ষা করবে। সব কিছু এর সাথে হবে- আইন মেনে চলা, পদাধিকারে নিজে শাসন করা, আর ময়লা ফেলা সম্পর্কে মানসিকতার সম্পূর্ণ পরিবর্তন।”
কিন্তু ডিজেবি জেলের গল্পের ব্যাপারে সন্দেহ দেখিয়েছেন। তিনি তার কারন ব্যাখ্যা করেছেন:
“দু:খিত, কিন্তু এটা আমার কাছে বড়দের জন্য রুপকথা মনে হয়েছে। বা একটা রুপক আহ্বান একটা দয়াময়, নরম মানুষের প্রচারের জন্য। এটা যদি কোন অশিক্ষিত জেলের হতো, মেয়র এড হাগেডনের একজন ‘ডলফিন রক্ষক’ না হয়ে, তাহলে এই গল্প প্রায় অলৌকিক হতো। এখন যেমন আছে, আমি প্রায় লজ্জিত স্বীকার করতে যে আমি সন্দেহ করছি এই পুরো গল্পের সত্যতা নিয়ে! আমি জানি না কেন, কিন্তু আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া এটাই ছিল পিডিআই (ইঙ্কুয়ারার) এর গল্প আজকে পড়ে। এখন অনেক তত্ত্ব পাওয়া যাচ্ছে…হুমমম…
প্রাথমিক অনুসন্ধান করেছি। আমি আগে এরকম হওয়া একটাও ঘটনা পাচ্ছি না রিপোর্ট করা। কিন্তু এটা শুধু আমার নিজের খোঁজার ফল।
আমি এটাও জানতাম না যে কঠিন খোসা বিশিষ্ট প্রানী খোলা সমুদ্রে সাঁতার কাটতে পারে আর ভেজা জেলেকে খেতে পারে। হয়তো সৈকতে, কিন্তু সে যখন একটুকরো স্টাইরোপারে ভাসছিল? এটা নিশ্চয় উভচর বুগটো বিশেষ মাংশাসী কাঁকড়া বা কিছু ছিল।
তিরিশটি স্পিনার ডলফিন আর দুইটা পাইলট তিমি একটা মানুষের জীবন বাঁচায়। এটা শুধু শিরোনামেই মানায়।”
পালাওয়ান ফিলিপাইন্সের পশ্চিমে অবস্থিত। এটা লুজোন অঞ্চলের অংশ। এটা জনপ্রিয় পর্যটন স্থান; আর আরো গুরুত্বপূর্ন হলো এটা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা:
দ্বীপ রাজ্য পালাওয়ানকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক অভায়রণ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, আর যথার্থ কারনে। এটা রেইনফরেস্ট, অবিশ্বাস্য ডাইভের জায়গা, বিশাল পাহাড়, প্রাচীন গুহা আর সুন্দর সৈকতে ঘেরা। এটার চারিদিকে প্রবাল দিয়ে ঘেরা যেখানে আছে প্রচুর বৈচিত্রপূর্ণ আর রঙ্গিন সামুদ্রিক জীবন। এ দ্বীপ গর্ব করে চমকপ্রদ গাছ আর জীব বৈচিত্রের জন্য, যেমন মাউস ডিয়ার আর স্কেলি পিপঁড়াখাদক যা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায়না।
পালাওয়ানের পানি পৃথিবীর সব থেকে ভালোর মধ্যে একটা, শুধু ডাইভিং এর জন্যই না মাছ ধরার জন্যও। ডাইভারের স্বর্গ, এর আছে মাইলের পর মাইল তলার নীচের কোরাল আর রংধনুর মত রীফের দেয়াল যা সৈকতকে ঘিরে রাখে আর ভরা আছে সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীবনে।’