শোনা যাচ্ছে যে মিশরের প্রেসিডেন্টের ছেলে আর এনডিপির পলিসি কমিটির সাধারণ সেক্রিটারী জামাল মুবারাক কায়রোর শহরতলীকে ‘ক্ষুদে দুবাই’ এ পরিণত করবেন। স্যান্ডমাঙ্কি লিখেছে:
সংবাদ সংস্থা এপির একটি আর্টিকেলে আছে যে কেমন করে ধর্মীয় অনুশাসনের কবলে পরে আর পুরোনো বাড়ী সংরক্ষন না করায় কায়রোর শহরতলীর বারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি হুমকির তৃতীয় একটা উৎস জানি: জামাল মুবারাক। আমাদের বিষ্ময় বালকের কায়রোর শহরতলী নিয়ে একটা প্রকল্প আছে, যাকে তিনি বলেন ‘ক্ষুদে দুবাই’, আমি কিন্তু ঠাট্টা করছিনা। আমাদের বালক ‘আল-ইসলামিয়া নির্মাণ আর উন্নয়ন’ নামে নকল একটা কোম্পানির আড়ালে গোপনে ডানে বামের সমস্ত বাড়ী কিনছেন। এগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে নতুন উঁচু তলার বাড়ী আর টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে তার। আপনিতো জানেন গতানুগতিক বুলি – শহরতলীকে আধুনিকতার ছোঁয়া দেয়া হবে।
দ্যা স্যান্ডমাঙ্কির এটি নিয়ে দুটো সমস্যা আছে:
১) শহরতলী কায়রোর ঐতিহ্যবাহী বাড়ীগুলো গঠনশৈলী সৌন্দর্যের দিক থেকে অদ্বিতীয়, কিন্তু যা ওখানে অবস্থিত অসংখ্য কাপড় আর জুতার দোকানের ভয়ঙ্কর নিওন সাইন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত আর এই বাস্তবতা যে এদের সংস্কার করা প্রযোজন।
২) আমাদের বালক মালিক হতে চান বিশেষ একটা বাড়ীর যেখানে ঐতিহাসিক ক্যাফে রিচ আছে, যার কারনে এটা প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ। এই ঐতিহাসিক ক্যাফে ১০০ বছরের পুরানো এবং কায়রোর ইতিহাস আর বিভিন্ন সাহিত্যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। এই স্থানে তারা ১৯১৯ সালের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুথানের লিফলেট ছাপাতো, বিপ্লবী কর্মীদেরকে লুকিয়ে রাখতো আর সেখানে লুকানো সুড়ঙ্গ থাকতো পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য। এই বিষয়টি (জনপ্রিয় লেখক) নাগিব মাহফুজের কায়রো ট্রিলজিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা আছে; এখান থেকেই তার জনপ্রিয় সাহিত্য আল্কারনাক এর জন্ম। আর এই জায়গায় কায়রোর শিক্ষিত সমাজ, শিল্পী আর অভিনেতারা যুগ যুগ ধরে একত্র হয়েছেন।
এইসব ঐতিহ্য রয়েছে এই কাফের আর জিমি এটা ভেঙ্গে ফেলতে চাচ্ছেন, যাতে তিনি সেখানে তার দুবাইয়ের মত উঁচু বিল্ডিং বানাতে পারে।
এই পর্যন্ত মালিকরা এর বিরুদ্ধে লড়ছে, আর জিমির নাম এই পর্যন্ত কাগজে আসেনি কারন কারন বাড়ীর মালিক এখন পর্যন্ত এর বিক্রি নথীভুক্ত করেনি। আইনি লড়াই এখনো চলছে।
স্যান্ডমাঙ্কি জানেন এটা:
কিছু লোকের মধ্যে বিতর্ক হবে, এই বলে যে শহরতলীর উন্নয়ন আর উন্নতি করা অবশ্যম্ভাবী। ‘অগ্রগতির অবশ্যম্ভাবী মিছিল’ এর পেছনে লুকিয়ে তাদের কাজের যৌক্তিকতা দেখানো হচ্ছে। আমি মনে করি যে তারা যদি শহরতলীর কিছু অংশের উন্নয়ন চায়, আমি তাদেরকে কিছু এলাকা দেখাতে পারি যেটা কুৎসিত আর যার ঐতিহাসিক কোন মূল্য নেই। আর তারা হয়তো মনে রাখতে পারে যে তাদের যুদ্ধ পুরানো বা ঐতিহাসিক বাড়ীর সাথে না, বরং সামঞ্জস্যের অভাব আর বিভৎসতা যা আমাদের রাস্তায় ভরে আছে তার সাথে (দেখুন মোহান্দিসিন, দেখুব নাসর সিটি)।
পরিশেষে এই ব্লগার বলেছেন:
আমাদেরটা ইতিহাস সমৃদ্ধ একটা দেশ, আর আমাদের সমস্যা হলো যে যদিও আমরা দ্রুত একে নিয়ে নীতিহীন সব কাজ করি, একে আমরা একেবারেই সম্মান করিনা। আমাদের শব্দকোষ থেকে সংরক্ষণ নামক শব্দটা একেবারেই গায়েব, আর এটা দেখা যায় কি খারাপভাবে আমরা ফারাওদের সম্পদ দেখাশোনা করি মিশরীয় জাদুঘর হিসাবে নাম করা ভেঙ্গে পড়া গুদামে। তাই দয়া করে হয় শহরতলীর সংরক্ষণ করেন না হয় এটাকে একা ছেড়ে দেন। কিন্তু কায়রোর সব থেকে সুন্দর একটা অংশ ধ্বংস করার সাহস দেখাবেন না। যার মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আপনি দেখাতে চান যে আপনার দেশ কতোটা দুবাই এর মতো।
আমরা কি এতো পিছনে পড়ে গেছি, আর দুবাইকে এতো হিংসা করছি, যে আমরা যা হয় কিছু করবো তাদের মতো নিজেদেরকে দাবী করার জন্য? ভালো, প্রথমে তাদের ব্যবসার ধরণ প্রয়োগ করুন, বা তাদের আয়করের হার, বা নারীদেরকে যৌন নিপীড়ণ থেকে বাঁচানোর জন্য তাদের নীতি, আর তারপরে উচ্চ তলার বাড়ী নির্মাণ করেন। বা তার থেকেও ভালো, দুবাই মরুভূমিতে নির্মিত হয়েছে আর মিশরের ৯০% মরুভূমি, তাহলে ওখানেই কেন নির্মাণ করা হোক না? আর জিমি ওখানে কেন যাননা যাতে আপনি আপনার মূল্যবান দুবাইএর মতো উচ্চতলার পাশে থাকতে পারেন? বিশাস করেন, আমরা কেউ কিছু মনে করবো না। তার থেকেও ভালো, দুবাইতে চলে যান, আর আপনার মন যতো চায় তত উচু বিল্ডিং দেখতে পাবেন।