বিভিন্ন অংশীজন সতর্ক করেছে সরকার ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে পাপুয়া নিউ গিনির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (ডিআইসিটি) প্রকাশিত খসড়া জাতীয় গণমাধ্যম উন্নয়ন নীতি অনুমোদন করলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হতে পারে।
ডিআইসিটি অংশীজনদের ১২ দিনের মধ্যে তাদের মতামত ভাগাভাগি করতে বললেও পাপুয়া নিউ গিনির দুর্নীতিবিরোধী সম্প্রদায়গত জোট (সিসিএসি) পরামর্শ প্রক্রিয়ার জন্যে স্বল্প সময়ের সমালোচনা করার পরে আরো এক সপ্তাহের জন্যে সময় বাড়ানো হয়।
খসড়া নীতিটি “উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গণমাধ্যমের ব্যবহারের জন্যে” কাঠামো তৈরি করে। রাষ্ট্র জোর দিয়ে বলেছে যে “এতে গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং জনগণের মধ্যে গণমাধ্যম সাক্ষরতার প্রচারের বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
খসড়াটির একটি বিতর্কিত প্রস্তাব হলো পিএনজি গণমাধ্যম পর্ষদকে “আইনি ক্ষমতাযুক্ত কার্যকর ও প্রয়োগযোগ্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো হিসেবে” একটি সংস্থায় রূপান্তরিত করা। খসড়া নীতি অনুযায়ী নতুন পিএনজি গণমাধ্যম পর্ষদ “সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেবে এবং গণমাধ্যম খাতে নৈতিক মানের উন্নয়ন ঘটাবে।”
বর্তমানে পর্ষদ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের কল্যাণ প্রচারকারী একটি অলাভজনক গোষ্ঠী। খসড়াটি স্বীকার করে যে “এর প্রাথমিক ভূমিকা ছিল নৈতিক সাংবাদিকতার প্রচার এবং সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা৷ সাংবাদিক স্কট ওয়াইড জোর দিয়ে বলেছেন যে “তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এটির ভূমিকা গণমাধ্যম পেশাদারদের একটি প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা এবং গণমাধ্যমর স্বাধীনতার একটি কণ্ঠস্বরে রূপান্তরিত হয়েছে।” একটি বিস্তৃত ক্ষমতাসহ পর্ষদটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার অর্থ খসড়া নীতিতে সংজ্ঞায়িত বলতে সরকার গণমাধ্যম ক্ষেত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জনের আশা করছে বুঝায় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন:
সরকারের এমসিপিএনজি [গণমাধ্যম পর্ষদ] সহ গণমাধ্যম বিষয়াদির উপর বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার অভিপ্রায় এই অঞ্চলে অশনি সংকেত দিচ্ছে। আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পরিষদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে এটা করতে হবে। নীতিমালাটিতে পর্ষদকে সাংবাদিকদের অনুমোদনের কর্তৃত্বসহ একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
নতুন গণমাধ্যম পর্ষদের জন্যে প্রস্তাবিত নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মধ্যে সাংবাদিকদের অনুমোদন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনুমোদন হলো সরকারি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা সবচেয়ে বড় লাল পতাকা।
খসড়া নীতিটিতে গণমাধ্যম পর্ষদকে অন্যান্য ক্ষমতার মধ্যে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলির অনুমোদন ও স্বীকৃতি প্রদান, অভিযোগ ও নিষেধাজ্ঞা পরিচালনা করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে:
অনুমোদন ও স্বীকৃতি: অনুমোদন নবায়ন ও লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অনুমোদন প্রত্যাহারের বিধানসহ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের অনুমোদন বা স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা।
অভিযোগ ও নিষেধাজ্ঞা: নৈতিক মান লঙ্ঘনের জন্যে তদন্তের পদ্ধতি ও নিষেধাজ্ঞাসহ গণমাধ্যমর বিরুদ্ধে অভিযোগ সমাধানের প্রক্রিয়া।
গণমাধ্যম পর্ষদ পিএনজি সভাপতি এবং সিসিএসি-এর যৌথ সভাপতি নেভিল চোই দেশের সাংবাদিকতাকে উন্নত করার আরেকটি উপায় কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন:
দুর্বল সাংবাদিকতা উদ্বেগের কারণ হলে সমাধান হলো তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতার স্কুলগুলিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে সাংবাদিকতার গুণগতমানে বৈচিত্র্য ও বহুত্ববাদ বৃদ্ধি করা।
আমাদের গণমাধ্যম নৈতিকতার প্রশিক্ষণ ও হয়রানি থেকে আইনি সুরক্ষার সুবিধাসহ সংবাদকক্ষ দরকার।
লেখক ফ্রেজার লিউ প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় প্রবিধান প্রত্যাখ্যান করে কর্তৃপক্ষকে দেশের আইন লঙ্ঘনকারী গণমাধ্যম প্রতিবেদন মোকাবেলায় ব্যবহার করার মতো বিদ্যমান আইনি বিকল্পগুলি পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আমার দৃষ্টিতে চতুর্থ ক্ষেত্র থেকে সরকারের সম্পূর্ণ দূরে থাকা উচিত। এটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি অশুভ পদক্ষেপ।
বাকস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘিত হয় বলে সরকারের কোনোভাবেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। তার নিজস্ব বার্তা প্রকাশের জন্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংস্থা চালাতে পারলেও এটি কখনোই সমগ্র শিল্পের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করতে পারে না।
গণমাধ্যম সংস্থা ও কর্মীদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে একা ছেড়ে দিতে হবে, যেকোন ধরনের মান্যতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকৃতপক্ষে মানহানির মতো কোন আইনি সমস্যা উত্থাপন করলে তার সমাধানের পথ আদালত। সাধারণ আইনে এধরনের মামলার নজিরের কোনো ঘাটতি নেই।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পিএনজি’র সভাপতি পিটার এইটসি আরো বলেন যে বাক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন না করে সামাজিক গণমাধ্যমের অপপ্রচারের সমাধান করা উচিত।
গণমাধ্যম নীতির ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করতে সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চের অপব্যবহারের মতো একটি নতুন সমস্যার কথা বলা হলেও গণমাধ্যমর স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন না করে এই সমস্যাটি সমাধানের অনেক আইন ইতোমধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।
খসড়া নীতিটির সংবাদ এই অঞ্চলের গণমাধ্যম গোষ্ঠীগুলিকেও শঙ্কিত করেছে। নিউজিল্যান্ডভিত্তিক এশিয়া প্রশান্ত-মহাসাগরীয় গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক ইনকর্পোরেটেড বলেছে যে “গণমাধ্যমকে অবশ্যই রাজনীতিবিদদের স্বার্থে নয়, জনস্বার্থেই ক্ষমতার কাছে সত্য কথা বলার জন্যে স্বাধীন হতে হবে।” এটি আরো বলেছে:
আমাদের দৃষ্টিতে আত্ম-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম পর্ষদের বৈশ্বিক নিয়মকে তোয়াক্কা না করে একটি সংকেতায়িত পিএনজি গণমাধ্যম পর্ষদের জন্যে আইন প্রণয়ন করতে চাওয়া মন্ত্রণালয়টি ভুল পথে পরিচালিত এবং এই উন্নয়নটি পাপুয়া নিউ গিনিতে গণমাধ্যমর স্বাধীনতাকে বিপজ্জনকভাবে ক্ষুন্ন করার সম্ভাবনা রাখে।
অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম ইউনিয়নও তাদের উদ্বেগ টুইট করেছে:
#MEAAmedia backs Media Council of Papua New Guinea’s (MCPNG) concerns and call for meaningful consultation over government’s proposed National Media Development Policy.#mediafreedom#mediadiversity#righttoknow@TI_PNG pic.twitter.com/GiAnH9hyYi
— MEAA (@withMEAA) February 17, 2023
#এমইএএমিডিয়া পাপুয়া নিউ গিনির গণমাধ্যম পর্ষদ (এমসিপিএনজি) এর উদ্বেগকে সমর্থন করে সরকারের প্রস্তাবিত জাতীয় গণমাধ্যম উন্নয়ন নীতির বিষয়ে অর্থপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। #গণমাধ্যমেরস্বাধীনতা #গণমাধ্যমবৈচিত্র্য #জানারঅধিকার @টিআইI_পিএনজি
আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন সরকারকে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে সীমাবদ্ধ করার মতো প্রবিধান প্রত্যাহার করতে বলেছে। “গণমাধ্যম সরকারের পর্যবেক্ষক হওয়ার পরিবর্তে, সরকারই গণমাধ্যমর পর্যবেক্ষক হওয়ার চেষ্টা করছে” বলে মন্তব্য করেছেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন ও যোগাযোগের একজন প্রভাষক সুসান মেরেল।
সরকার বুঝাতে চাইছে যে এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
স্কট ওয়াইড দেশের গণমাধ্যমর অবস্থা সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন:
অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পিএনজি গণমাধ্যম অটল থাকলেও জাতীয় গুরুত্বের বিষয়গুলি কভার করা সাংবাদিকদের সরাসরি সরকারি চক্রগুলি থেকে আসা চাপের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।
এর আগে গ্লোবাল ভয়েসেস পাপুয়া নিউ গিনির সরকারি টিভি সংবাদের একজন সাংবাদিককে সাময়িক বরখাস্ত করা, সাংবাদিকদের সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করার নতুন নিয়ম এবং বিদেশী সংবাদদাতাদের জন্যে কঠোর নিয়মকানুন সম্পর্কে প্রতিবেদন করেছে।