জাপানের স্থানীয় রেলপথগুলি সমস্যায় পড়েছে। শুধু ২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে জাপান জুড়ে ১,১৫৮ কিলোমিটার বিস্তৃত পঁয়তাল্লিশটি রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য স্থানীয় রেলপথগুলি সারা দেশে চলাচলের সময়, কর্মী এবং টিকিটের বিশেষ ছাড় কমিয়ে দিয়েছে। এই প্রবণতাটি জাপানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু বাসিন্দাকে স্থবির করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
জাপান রেলপথ গোষ্ঠী (জেআর) এর আঞ্চলিকভাবে কর্মরত ইউনিটগুলির সাথে সংযুক্ত রেল পরিচালনাকারীরা বলেছে যে লাইন বন্ধ হওয়া গ্রামীণ জনসংখ্যা ও জন্মহার হ্রাস এবং গাড়িতে পরিবহণ বৃদ্ধির একটি স্বাভাবিক ফলাফল। কিছু পর্যবেক্ষক যুক্তি দেন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রামীণ জনসংখ্যা এবং বর্ধিত গাড়ির ব্যবহার নয় বরং স্থানীয় রেলপথ বন্ধ হওয়ার কারণেই এসব ফলাফল ঘটেছে।
স্থানীয় রেল পরিষেবা বন্ধ করার ক্ষেত্রে রেলপথ পরিচালনাকারীদের দেওয়া একটি যুক্তি হলো এই রেলপথগুলি টোকিও বা ওসাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে অঞ্চলে তাদের সমকক্ষগুলির মতো লাভজনক নয়৷
জাপান রেলপথ গোষ্ঠীর (জেআর) ইতিহাস এই যুক্তির ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাপানের জাতীয় রেলপথ সত্তাকে বেসরকারিকরণ করে জেআর নামের অধীনে সাতটি পৃথক সত্তায় বিভক্ত করা হয়।
সেই সময় থেকে জেআর এর বিক্রয় এবং মুনাফা বৃদ্ধি পেলে ২০০০ এবং ২০১০-এর দশকে তা অব্যহত রাখে। তবে এই সামগ্রিক লাভ থাকা সত্ত্বেও ২০১০ সাল থেকে জেআর অধিভুক্ত কোম্পানিগুলি স্থানীয় পরিচালনা ঘাটতি পূরণের জন্যে স্থানীয় সরকারগুলির কাছে করদাতাদের অর্থ চাইতে শুরু করে। কিছু কিছু পরিচালনাকারী এই দাবি পূরণ না হলে স্থানীয় রেলপথ লাইন বন্ধ করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে।
কিছু কিছু প্রিফেকচার সেটা মেনে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তাদামি লাইনের ইতোপূর্বে বন্ধ করা অংশগুলি পুনরায় চালু করার জন্যে জেআর-পূর্ব সম্প্রতি ফুকুশিমা প্রিফেকচারের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই ব্যবস্থার অধীনে ফুকুশিমা প্রিফেকচার জেআর-পূর্বের কর্মকাণ্ড ভাড়া নেওয়ার জন্যে রেলের অবকাঠামো এবং জমি কিনবে।
কিন্তু অন্যান্য আঞ্চলিক সরকার এই মডেল বাস্তবায়নে এতোটা সক্ষম নয়। জাতীয় আইনে বলা হয়েছে যে একটি স্থানীয় রেলপথ বন্ধ করার আগে জেআর-কে অবশ্যই পৌরসভার “বোঝাবুঝি” (রিকাই) অর্জন করতে হবে।
এর ফলে স্থানীয় সরকারগুলির ক্ষুদ্র বাজেট জেআর -এর ক্ষতি পূরণের জন্যে যথেষ্ট না হলেও তারা তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর একটি হারাতেও চায় না বলে তারা জেআর -এর সাথে আলোচনা করাটাও এড়িয়ে গেছে।
যার ফলে জেআর স্থানীয় রেলপথগুলির দায় এড়াতে পরিষেবা একেবারে ন্যূনতমে নামিয়ে আনাসহ ভিন্নতর পদ্ধতি অবলম্বন করছে। কোন কোন জায়গায় জেআর এমনকি শিক্ষার্থীদের কমিউটার পাস পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
এখন চলমান কোভিড-১৯ মহামারী জেআর-কে আরো কাটছাঁট করে আরো বেশি সরকারি ক্ষতিপূরণ দাবি করার সুযোগ করে দিয়েছে। ট্রেনের যাত্রীর সংখ্যা হঠাৎ এবং দ্রুত হ্রাস পাওয়ার কারণে জেআর-কেন্দ্রীয়, জেআর-পশ্চিম এবং জেআর-পুর্ব সকলেই ২০২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে রেকর্ড পরিমাণ ক্ষতি দেখিয়েছে।
এই পরিবেশে জেআর-পশ্চিম একটি নতুন ধরনের সাড়া দেখিয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি তার পরিচালন এলাকায় “কম কর্মক্ষম” এবং “অলাভজনক” স্থানীয় রেলপথের ডেটা প্রকাশ করা শুরু করেছে। কোন রেলপথে বা এর অংশগুলিতে গড়ে প্রতিদিন প্রতি কিলোমিটারে ২ হাজার জনের কম যাত্রী হলে তা নিরীক্ষণের আওতায় ফেলা হয়। ভিন্ন ভিন্ন ১৭টি রেলপথের মোট ৩০টি বিভাগ এবং জেআর-পশ্চিম পরিচালিত মোট রেলপথের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের হিসাব এর মধ্যে পড়েছে।
কোভিড-১৯-এর কারণে জেআর-পশ্চিমের লোকসান ১১৬.৫ বিলিয়ন ইয়েন বা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু কোম্পানিটি ইতোমধ্যে এর আগে থেকেই ছোট ছোট স্থানীয় রেলপথ বন্ধ করে খরচ কমিয়ে দিয়েছে। জেআর-পশ্চিম তাদের ৩৫ বছরের কর্মকাণ্ডে রেলপথের ১৬টি বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে। অতি সম্প্রতি ২০১৮ সালে তারা হিরোশিমা এবং টোটোরি প্রিফেকচারের মধ্যে চলমান ১০৮-কিমি বিস্তৃত সাঙ্কো রেলপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
এখনকার প্রশ্নবিদ্ধ রেলপথগুলি নিয়ে মাইনিচি শিম্বুন হাসগাওয়াকে উদ্ধৃত করে বলেছে:
このままの形で維持するのは難しい。維持が適切か議論する必要がある。
এই রেলপথগুলি চালিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের এগুলির প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে।”
সানকেই শিম্বুনে হাসগাওয়াকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “আমি আশা করি আমাদের শুধু স্থানীয় সরকারকে বলতে হবে না যে আমরা তাদের [রেলপথগুলি] বন্ধ করতে যাচ্ছি।”
নির্দিষ্ট এলাকার ইন্টারনেট নাগরিকদের মধ্যে জাপানের স্থানীয় রেলপথ সংকট নিয়ে প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একজন স্থানীয় বাসিন্দা কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন যাত্রী পরিমাপ করার চর্চাটিকে প্রশ্ন করেছেন:
そもそもコロナ禍で、数字を図る方が間違い
国内でも移動ためらってる・外国人観光客も入れない状態なのに
芸備線 生活利用促進の取り組み「成果なし」JR西日本が所見 イベント集客は成功も | 乗りものニュース https://t.co/DnWz8PmaTn
— こうちゃん@東海地区タクドラ4月帰省目標 (@hakodate1000758) February 20, 2022]
প্রথমত কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন এই জাতীয় সংখ্যা (যাত্রীসংখ্যা) পরিমাপ করার চেষ্টা করাটা একটা ভুল। (এসময়) জনগণ ভ্রমণে অ্নিচ্ছুক আর এখানে কোন বিদেশী পর্যটকও নেই। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে এধরনের পরিমাপ করাটা অনুচিত।
এদিকে হাসেগাওয়া বলেছেন সবচেয়ে খারাপ যেটা হবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলি আরো বেশি করে বাস বা ট্যাক্সি পরিবহনের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। জেআর-পশ্চিমের সভাপতি আরো বলেন, কিছু শর্ত পূরণ হলে তার কোম্পানি রেলপথগুলি চালু রাখতে আরো বেশি আগ্রহী হবে।
হাসেগাওয়া স্থানীয় সরকারগুলিকে রেলপথ ক্রয় করার এবং এর পরিচালনার জন্যে জেআর-কে নিয়োগের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং পরিচালনা (জোগে বুনরি হোসিকি) আলাদা করার একটি বিকল্প প্রস্তাব করেন। আরো আর্থিক সহায়তা এবং ভর্তুকি পাওয়ার মাধ্যমে হাসেগাওয়া টেবিলে আরেকটি কার্ড রাখেন।
এই বিকল্পগুলির কোনটিই ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল এবং পৌরসভাগুলির জন্যে খুব একটা আকর্ষণীয় হতে পারে না। হয় তারা জেআর-পশ্চিমের ঘাটতিগুলিকে পূরণ করবে, নয়তো সম্ভাব্য আরো বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাবসহ তাদের অবকাঠামোর একটি মূল অংশ হারানোর সম্মূখীন হবে।
জাপানে এবং এর বাইরে কোভিড-১৯ হলো জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের চেয়েও বেশি কিছু। জাপানের স্থানীয় রেল পরিষেবাগুলির সংকটটি মুনাফা বৃদ্ধি সত্ত্বেও একটি বৃহৎ কর্পোরেশনের মহামারীর সুবিধা নিয়ে জনসাধারণের পরিষেবাগুলি হ্রাস করার একটি উদাহরণ মাত্র।