মায়ানমারের ওয়া অঞ্চলের এক টুকরো চীনা বসতি ফাংশাং এর জীবন

পাখির চোখে ফাংশাংকে দেখা। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

এই প্রবন্ধটি ইরাওয়াদ্দির লেখক মায়ো মিন শোয়ে এর। ইরাওয়াদ্দি মায়ানমারের এক স্বাধীন সংবাদ ওয়েবসাইট এবং কন্টেন্ট শেয়ারিং চুক্তির মাধ্যমে এটি গ্লোবাল ভয়েসেস এই লেখাটি পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে।

চীন মায়ানমার সীমান্তে পাহাড় ঘেরা শান প্রদেশের এক ছোট্ট শহর ফাংশাং। এটি মায়ানমারের সংবিধান স্বীকৃত নিজস্ব প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত যা দেশটির ওয়া প্রদেশের রাজধানী। এই প্রদেশ মায়ানমারের সবচেয়ে বৃহৎ ও উন্নত অস্ত্র সজ্জিত আদিবাসী বিদ্রোহী এক দলের আবাসভূমি, যারা ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউওয়াসা) নামে পরিচিত। মায়ানমার পিস মনিটর এর তথ্য আনুযায়ী এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দলে আছে ৩০,০০০ সামরিক সদস্য ও ১০,০০০ সশস্ত্র সেনা।

এ বছরের এপ্রিল মাসে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফাংশাং-এ তাদের প্রতিষ্ঠার ৩০ তম বার্ষিকী উদযাপন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে এই বাহিনীর সেনারা দল বেঁধে শহরের রাস্তায় প্যারেড করে। ১৯৮৯ সালে গঠিত হওয়া ইউওয়াসা দেশটির তৎকালীন সামরিক শাসক দল স্টেট ল এন্ড অর্ডার কাউন্সিল যে বছর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে- সে বছরই তারা মায়ানমারের কম্যুনিস্ট পার্টি থেকে আলাদা হয়ে যায়। একই সাথে দলটি ইউনাইটেড ওয়া পার্টি ও ওয়া স্টেট পিপলস গর্ভমেন্ট স্থাপন করে যেন এই অঞ্চলকে একটি প্রদেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপ প্রদান করা যায়।

যদিও মায়ানমারে ফাংশাং এর অবস্থান, তারপরেও কেউ যদি এই শহর একবার চক্কর দেয় তাহলে তার মনে হবে যে সে আসলে চীনে রয়েছে। ফাংশাং এর রাস্তায় শোনা যাবে চীনা ভাষায় আলাপচারিতা। দোকানের সাইনবোর্ডে চীনা অক্ষরে লেখা আর সাথে বার্মিজ ও ওয়া ভাষায় লেখা এর অর্থ। কেনাবেচার জন্য এখানে পছন্দের মুদ্রার নাম হচ্ছে ইউয়ান। কেউ যদি মোবাইলের নেটওয়ার্ক ভাল পেতে চায় তাহলে তাকে চীনা মোবাইল কোম্পানীর সীম কার্ড কিনতে হবে। এখানে সড়কে দিক নির্দেশনামূলক চিহ্ন বার্মিজ ও চীনা উভয় ভাষায় লেখা। এখনকার দোকান ভরে আছে চীন থেকে আমদানী করা পণ্যে।

তবে ফাংশাং এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এর উন্নয়ন। চারপাশ পাহাড় দিয়ে ঘেরা তবুও এর মসৃণ সড়কে ছুটে চলে সাভ নামের গাড়ি। এখানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে, আর চারপাশ জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মত গড়িয়ে উঠছে আকাশ ছোয়া ভবন। এখানে রাস্তায় মাঝে মাঝে পুলিশের গাড়িকে টহল দিতে দেখা যায়। ওয়া নেতারা তাদের তিক্ত অতীতকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে এই দাবীর মাধ্যমে যে তারা মাদক নির্মুলে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এখন এলাকায় আফিমের বদলে অন্য কোন শস্য যেমন রাবার, চা, ইত্যাদি চাষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই অঞ্চল ভ্রমণের জন্য বিদেশী সকল পর্যটককে একই সাথে মায়ানমার ও ওয়া উভয় কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়।

নীচে ফাংশাং এর কয়েকটি দৃশ্য তুলে ধরা হল:

মাইও মাও এর এক চা বাগান। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

ফাংশাং এর কেন্দ্রস্থলের এক সুপারমার্কেট। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

চীনের মুদ্রা ইউয়ান দিয়ে কেনাবেচা করা ফাংশাং বাসীর পছন্দ। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

ফাংশাং এর কেন্দ্রস্থলের এক সড়কের দৃশ্য। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

ইউওয়াসার এক সেনার টহল। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

ওয়া অঞ্চলের সীমান্ত দ্বার। এই ছবিটি চীনের ইউনান অঞ্চল হতে তোলা দেখা। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

চীনের ইউনান প্রদেশের এক সীমান্ত দ্বার। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

ফাংশাং এর আকাশছোঁয়া ভবনসমুহ। ছবি ও শিরোনাম মায়ো মিন শোয়ে/ইরাওয়াদ্দি এর।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .