চীনে ১৯৮৯ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উত্থান ও পতনের ৩০টি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, যে আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ৪ জুন,১৯৮৯ এর তিয়েনআনমেন স্কয়ারের কুখ্যাত গণহত্যার মধ্যে দিয়ে।
সেদিন ছাত্রদের দ্বারা প্রদর্শিত বিক্ষোভ চীনা সামরিক বাহিনী নির্মম ভাবে দমন করে, মূলত গণতান্ত্রিক সংস্কার এর দাবীতে ছাত্ররা এই আন্দোলনের সূত্রপাত করছিল। চীনা রেডক্রস এর হিসেব আনুযায়ী এই ঘটনায় ২৭০০ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়, কিন্তু অন্য সমস্ত সুত্র জানায় যে নিহতের সংখ্যা ছিল আরো অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক গোপন নথি যা ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় তাতে প্রতিবেদন প্রদান করা হয়েছিল যে চীন সরকারের নিজস্ব হিসেব অনুয়ারী এই ঘটনায় সেসময় ১০,৪৫৪ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিল।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রকাশ্যে কোনদিন এই গণহত্যার বিষয়টি স্বীকার করেনি অথবা নিরপেক্ষ কোন তদন্ত কমিটি গঠন করে এই কর্মকাণ্ডে নিজেদের দায়ভার গ্রহণ করেনি। চীনের ইতিহাসের পাঠ্যে কোথাও ৮৯ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কোন উল্লেখ নেই এবং চীনের ছাত্রছাত্রীরা এই গণহত্যার কথা কখনো জানতে পারে না।
এক দশকের বেশী সময় ধরে গ্লোবাল ভয়েসেস এই ঘটনার বিষয়ে সংবাদ প্রদান করে আসছে। ঘটনার ৩০ বছর পর গ্লোবাল ভয়েসেস ৪ জুন তারিখে সংগঠিত গণহত্যার স্মরণে এর স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে নিজের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট, যদিও বেইজিং এই ঐতিহাসিক সত্যকে বার বার অস্বীকার করে আসছে।
৪ জুন এ সংক্রান্ত যে কোন প্রকাশ্য অথবা অবগুণ্ঠিত সংবাদ মুছে ফেলতে বেইজিং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যার ফলে অনলাইনে এই নিয়ে ইঁদুর বিড়াল খেলা চলতে থাকে। এ বছরের এপ্রিল মাসে বিদেশী এক বিজ্ঞাপনে দেখা যায় ট্যাংক মানবের ছবি যা চীনের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মুছে ফেলার আগে সেখানে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয়। গ্লোবাল ভয়েসেস এর আরেকটি লেখায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে কী ভাবে চীনের নেট নাগরিকেরা সেন্সরশীপ বা নিষেধাজ্ঞা এড়ায় এবং সরাসরি এই ঘটনার কথা উল্লেখ না করে সৃষ্টিশীল উপায়ে একে তুলে ধরে, তবে যদি তারা এক্ষেত্রে ধরা পড়ে তখন প্রায় সাথে সাথে তাদের শাস্তি প্রদান করা হয় ও তা খুবই ভয়াবহ হয়। আর এই সকল কিছু ঘটে এমন এক পরিবেশ যেখানে চীনের গ্রেট ফায়ার ওয়াল নামের সেন্সরশীপ ব্যবস্থা কার্যকর, এর নজর এড়িয়ে কোন তথ্য পাওয়া খুবই বিপজ্জনক এবং প্রায় অসম্ভব।
চীনের বাইরে থেকেও সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে কোন নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করাও ব্যক্তিগত ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে, যেমনটা আপনি এই কাহিনী পড়ে জানতে পারবেন। আর যদি দলের মতের সাথে মিল নেই এমন কোন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা হয়, এমনকি সেটা যদি মার্ক্সের মতাদর্শের সাথে যুক্ত হয় এর ফল হবে হয়রানি এবং গ্রেফতার, যেমনটা আমরা এখানে বর্ণনা করেছি। এই কুখ্যাত নিষেধাজ্ঞা বেইজিং সারা বিশ্বে রফতানি করেছে যার মধ্যে হংকংও অর্ন্তভুক্ত রয়েছে।
এই ঘটনা কথা তুলে ধরার বিষয়ে এখনো বিশ্বজুড়ে নাগরিক ও নেট নাগরিকদের ক্রমাগত উৎসাহ প্রদান করে যাওয়া গ্লোবাল ভয়েসেস এর দায়িত্ব। আবেগঘন সাক্ষাৎকারে এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা গ্লোবাল ভয়েসেস এ এই ঘটনার কাহিনী বর্ণনা ধরেছে, এদিকে হংকং এর সাহসী সাংবাদিকেরা ৪ জুন ১৯৮৯ এ তাদের সাথে যা ঘটেছিল সে বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কাহিনী তুলে ধরেছে। একই সাথে হংকং এই আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক গণতন্ত্র দেবীর মূর্তি উন্মুক্ত স্থানে স্থাপন করে! তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের কেন্দ্রস্থলে এক শক্তিশালী ইনস্টলেশন শিল্প স্থাপন করা হয় যাতে ১৯৮৯ সালের এই ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। রেডিট ব্যবহারকারী সহ গ্লোবাল নেট নাগরিকেরাও হাস্যরস, শিল্প এবং অনলাইন মীম (হাস্যরসাত্মক বিদ্রূপাত্মক ছবি) দিয়ে চীনের এই গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে জীবন্ত করে রেখেছে।
আমরা যেহেতু এই পাতায় তাজা সংবাদ প্রদান করতে থাকবো, সে কারণে আপনি নীচের প্রবন্ধসমুহের মাধ্যমে এই বিষয়ে আরো সংবাদ পাঠ করতে পারবেন:
তিয়েনআনমেন গণহত্যার ৩০ বছর পরঃ গণতন্ত্র দেবীর সমস্যাযুক্ত ইতিহাস
তিয়েনআনমেন গণহত্যার স্মরণে বাতাস দিয়ে ফুলানো ট্যাঙ্ক মানব ভাস্কর্য তাইওয়ানে আবির্ভুত হয়েছে
তিয়েনআনমেন গণহত্যার ৪০ বছর পর; বেঁচে যাওয়া ঝায়ু ফেংশুয়র এক সাক্ষাৎকার
চীনের সেন্সরশিপের ইতিহাসঃ তিয়েনআনমেন স্কয়ার এর গণহত্যার ৩০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করছে
চীনে যে সমস্ত ব্যক্তি ভিপিএন ব্যাবহার করছে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ধরছে, অনলাইনে সেন্সরশিপ চালাচ্ছে