মায়ানমারের অবশিষ্ট হাতিদের রক্ষার উপায় অনুসন্ধানে “ভয়েস ফর মোমোস” আন্দোলন

কাঠ বহন করা হাতি। মায়ানমার। ছবি জেমস এন্ডারসনের। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিউট। সুত্রঃ ফ্লিকার (সিসি বাই এনসি-এসএ ২.০)

বার্মিজ ভাষায় মোমোস মানে হাতি, এক সময় বার্মার জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়ানো এই প্রজাতি এখন সেখানে ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে, আর তাই বার্মার অবশিষ্ট হাতিদের রক্ষায় বেশ কয়েকজন বন্য প্রাণী সংরক্ষণবাদ এবং পরিবেশপ্রেমী একজোট হয়ে এক আন্দোলন শুরু করেছে।

“ভয়েস ফর মোমোস” নামের এই আন্দোলন সাধারণ নাগরিকদের হাতি এবং অন্যান্য জন্তুর শরীরের বিভিন্ন অংশের অবৈধ ভাবে বিক্রির যে ব্যবসা তা প্রত্যাখ্যানের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সাথে তারা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে, যেন অবৈধ হাতি শিকার বন্ধের উদ্দেশ্যে আরো অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করে।

এক হিসেব অনুসারে মায়ানমারের বুনো হাতির সংখ্যা ১,৪০০ থেকে ২,০০০ হতে পারে। সংবাদে অনুসারে দেশটিতে প্রতি সপ্তাহে একটি হাতি মারা হচ্ছে এবং কেউ কেউ সতর্ক করে দিয়েছে যে এই হত্যাকাণ্ড যদি থামানো না যায়, তাহলে আগামী দুই দশকের মধ্যে মায়ানমার হাতি শূন্য হয়ে পড়বে।

সম্প্রতি এক সংবাদে সতর্ক করা হয়েছে যে মায়ানমারের গোপনে হাতি শিকারের পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে কারণ প্রতিবেশী চীনে বন্য প্রাণীর শরীরের অবৈধ বিক্রির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের আদেশ প্রদান করেছে। যারা হাতির শরীরের বিভিন্ন অংশ এবং অন্যান্য বিপন্নপ্রায় প্রাণীর শরীরের অংশ বিক্রি করে তারা মায়ানমারের এই সব আকর্ষণীয় পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে দিতে পারে।

একই সাথে সংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে ইয়াঙ্গুন প্যাগোডা এবং এই বৌদ্ধ মন্দিরের আশেপাশে হাতির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে যেখানে স্থানীয় ও বিদেশী নাগরিকদের প্রিয় গন্তব্যস্থল। ইয়াঙ্গুন হচ্ছে মায়ানমারের প্রধান শহর।

“ভয়েস ফর মোমোস” আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে হাতি রক্ষার বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করা। এর মধ্যে একদল একটিভিস্ট গণ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রঙ্গীন শক্ত কাগজের তৈরি হাতির মূর্তির প্রদর্শনী, যেগুলো ইয়াঙ্গুন শহর জুড়ে স্থাপন করে হয়েছে। স্থানীয় শিল্পীদের মতে কাগজের তৈরি এসব হাতি রিসাইকেল করা সংবাদপত্রের কাগজ দিয়ে বানানো বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতির মূর্তি।

ভয়েসফরমোমোস? বিস্মিত! দেখ এখানে কে…ঠিক তাই। আমাদের বিশাল বিশাল হাতিরা সব ফিরে এসেছে! আমাদের অংশীদার শোয়ে থান গ্রুপকে ধন্যবাদ যারা আমাদের প্রিয় হাতিদের জন্য তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছে। জাংশন স্কয়ারের এসে আমাদের হাতিদের দেখে যাও এবং তাদের সাথে খেলা কর। তাদের সাথে সেলফি তুলো আর ট্যাগ করতে ভুলো না।

এই সকল প্রদর্শনী শিশুদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে:

বৃটেনবাসীদের মত ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ার দিনে বৃটেনের রাষ্ট্রদুতের বাসায় ভয়েস ফর মোমোসে আন্দোলনে যোগ দিন।। আজকের এই দিনটায় সকলকে স্বাগতম। খাবারের দোকান, খেলা, হাতির মুখ রাঙ্গিয়ে তোলা এবং এরকম আরো অনেক কিছু আছে এখানে।

সরকার যাতে চোরা শিকার বন্ধের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে, আর জনগণ যেন অবৈধ ভাবে বিক্রি হওয়া বন্য প্রাণীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ না কেনে তার জন্য এক এই প্রচারণার অংশ হিসেবে এক দরখাস্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই প্রবন্ধ যখন লেখা হচ্ছিল তখন পর্যন্ত এতে প্রায় ২,০০০ ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছিল।

এই প্রচারণার এক ভিডিও যেখানে স্থানীয় শিল্পীদের তুলে ধরা হয়েছে যারা মায়ানমারের হাতিদের রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছে।

এই প্রচারণা এই সাথে ১৪ ফেব্রুয়ারির ভালবাসা দিবসে হাতিদের জন্য ভালবাসাকে যুক্ত করেছে:

আমাদের যারা অনুসরণ করছেন তাদের সকলকে ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা, হাতিদের প্রতি ভালবাসা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পুনরায় টুইট করুন।

মোবাইল ব্যবহারকারীরা তাদের ভাইবার স্টিকারের মাধ্যমে ভয়েস ফর মোমোস আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন প্রদান করতে পারবে

আমাদের অংশীদার ডাব্লিউডাব্লিউএফ মায়ানমার এখন ভাইবারে এবং মায়ানমারের সবচেয়ে সুন্দর হাতি (ওরফে মোমোস) স্টিকার তৈরি করা হয়েছে? মো্মোস বা হাতিদের জন তোলা আওয়াজ যে সমস্ত স্টিকার তুলে ধরছে সেগুলোর অনুসন্ধান করুন যাতে সেগুলো ডাউনলোড করা যায় এবং হাতিদের প্রতি ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

হাতি বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এই প্রচারণার কেবল প্রাথমিক এক উদ্যোগ, এই আন্দোলনের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে হাতি শিকার বন্ধে স্থানীয় সরকার এবং শিকারদের এই প্রচারনায় যুক্ত করা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .