পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো জাপানেও রয়েছে ঋতুবৈচিত্র্যের বিপুল সমাহার। সারাবছর ধরেই ঋতুবৈচিত্র্যের এই রূপ চোখে পড়ে।
জাপানে গ্রীষ্মকালে ব্যাপক গরম পড়ে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে শীতকালেও খুব ঠান্ডা পড়ে। এর বাইরে বছরের বাকি সময় বসন্ত এবং শরতে এখনকার অধিবাসীরা আবহাওয়ার চরমাবস্থা থেকে মুক্ত থাকেন।
অক্টোবর এবং নভেম্বর এই দু’মাস জাপানের শরৎকাল। এ সময়ে গাছের পাতা সবুজ রং হারিয়ে বর্ণিল হয়ে উঠে। গাছের পাতার এই বর্ণিল রংয়ের ছবি তুলে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেছেন।
জাপানের সবচে’ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নিক্কো। এর অবস্থান টোকিও’র উত্তরপূর্বের পার্বত্য অঞ্চলে। শরতের রং-বৈচিত্র্য, বিশেষ করে জাপানিজ ম্যাপলের কারণেও এর সুনাম রয়েছে। নিক্কো’র চমৎকার কিছু ছবি রইলো এখানে।
লাল রংয়ের অসাধারণ ম্যাপল!
নিক্কোর প্রধান আকর্ষণ হলো চমৎকার সাজে সজ্জিত নির্জন মঠ ও মন্দির কমপ্লেক্স। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে তোকুগাওয়া শোগানদের (একটি সম্প্রদায়) সমাধি হিসেবে মন্দিরগুলো নির্মিত হয়েছে।
তোকুগাওয়া সম্প্রদায়ের বিশেষ খ্যাতি ছিল সামরিক নৈপূণ্যতার জন্য। তবে নান্দনিক উৎকর্ষের দিক দিয়ে তারা অতটা উন্নত ছিল না। যারা নিক্কো বেড়াতে আসেন, তারা স্বর্ণ আর সিঁদুর রংয়ের মন্দির দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যান।
শরতের পর্ণমোচি বৃক্ষের সৌন্দর্য। নিক্কো ন্যাশনাল পার্ক।
শরৎকালে যদিও আশেপাশের পাহাড়-পর্বতের রং তোকুগাওয়া মন্দিরের রংয়ের সাথে মিলে যায়।
নিক্কো মন্দিরের শহর থেকেও আরো বেশি কিছু। এটি ঘোরাঘুরির জনপ্রিয় গন্তব্য। শরৎকালে হালকা তাপমাত্রা থাকার কারণেও নিক্কো একটি জনপ্রিয় অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
আবহাওয়া যথেষ্ট ঠান্ডা। কনকনে হাওয়া বইছে। তাই মাফলার পরা বাধ্যতামূলক।
টোকিও থেকে নিক্কো যাওয়ার পথটাও অসম্ভব সুন্দর। রাস্তার দু’পাশে ক্রিপ্টোমেরিয়া গাছ ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে থাকে পুরোটা সময় ধরে।
নিক্কো হাইওয়ে ধরে চলছে গাড়ি।
আমরা যাচ্ছিলাম তোচিগির দিকে। শরতের আবহাওয়া চমৎকার লাগছিল। আমরা অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। এখন সকালের নাস্তা করছি। তোচিগির সোবা নুডলস খেতে খুব সুস্বাদু।
নিক্কো, তোসোগু। শরতের ঘোরাঘুরি।
ঋতুভিত্তিক খাবারদাবার জাপানি রান্নায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। নিক্কোতে আমরা একটি দোকান দেখেছিলাম, যেখানে শরতের প্রিয় দু’টি স্ন্যাক রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর একটি হলো গ্রিলড ড্যানগো রাইস ডাম্পলিং। অন্যটি চারকোল-গ্রিলড আইউ রিভার ট্রাউট।
ড্যানগো এবং ফিশ স্কিউয়ার।
জাপানে বছরের যেকোনো সময়ে হট স্প্রিং উদযাপন করতে পারবেন। সতেজ, ঠান্ডা বাতাসে বাইরের এই গোসলখানায় জলকেলি আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে।
হট স্প্রিং, নিক্কো কোজেন হোটেল। সত্যি অসাধারণ এটা।
জাপানে বসন্তের মতো শরৎকালও খুব দ্রুত চলে যায়। অক্টোবর আর নভেম্বরের শুরুর দিকের উজ্জ্বল সুন্দর দিনের জায়গায় স্থান করে নেয় শীতের বৃষ্টি-বাদলা। যা শরতের রঙের বৈচিত্র্যকে ধুয়ে নিয়ে যায়।
এই পোস্ট লিখতে লোকেশনভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া সার্চ এবং মনিটরিং টুল ইকোসেক-এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।