
সাংবাদিক, সক্রিয় কর্মী এবং উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে বাকস্বাধীনতার সুরক্ষার স্বার্থে চালানো প্রচারাভিযানের সাথে একাত্মতা প্রকাশে একত্রিত হয়েছেন। ‘দ্যা এজ পত্রিকার সাথে মালয়েশীয়দের একাত্মতা প্রকাশ’ শিরোনামের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।
সরকার দু’টি সংবাদপত্রের প্রকাশনা স্থগিত এবং একটি খবরের ওয়েবসাইট বন্ধ করার আদেশ দেয়ার পর মালয়েশিয়ান বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম গ্রুপ এবং সক্রিয় কর্মীরা আগামী ৮ আগস্ট তারিখে একটি বড় র্যালি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক জড়িত একটি দুর্নীতির কলঙ্ক সম্পর্কে রিপোর্ট করার দায়ে দু’টি সংবাদপত্র এবং খবরের ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পাঁচটি প্রচার মাধ্যম নিয়ে গঠিত একটি দল সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য জোট করার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে প্রচার মাধ্যমের সেন্সরশীপ বেড়ে যাওয়া বিষয়টিকে তুলে করতে #এ্যাটদ্যাএজ হ্যাশট্যাগের অধীনে গ্রুপটি তাঁদের প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।
এই গ্রুপ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য গেরাকান মিডিয়া মারাহ (গেরাম), সাংবাদিক ইনস্টিটিউট, সীমান্তহীন রিপোর্টার্স, মালয়েশিয়ার বিদেশী সংবাদ প্রতিনিধি ক্লাব, এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা সেন্টার ইত্যাদি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।
সারাওয়াক রিপোর্ট নামক খবর প্রচারকারী ওয়েবসাইটটি গত ১৯ জুলাই তারিখে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং গত ২৭ জুলাই তারিখে দ্যা এজ মিডিয়া গ্রুপটিকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এই মিডিয়া কোম্পানিগুলো মালয়েশিয়া উন্নয়ন তথ্য (১এমডিবি) এর ব্যতিক্রমী লেনদেনগুলো ফাঁস করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, এটি একটি রাষ্ট্র-পরিচালিত বিনিয়োগ কোম্পানি। রিপোর্টে বলা হয়েছে শত শত কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে দোষী সাব্যস্ত করে বলা হয়েছে যে তিনি ১এমডিবি এর মাধ্যমে তাঁর ব্যাংক একাউন্টে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানান্তর করেছেন।
#এ্যাটদ্যাএজ প্রচারাভিযানের সব দাবি সরকারের প্রতি নির্দেশ করা হয়ঃ
১। সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্যা এজ ফিনান্সিয়াল এবং দৈনিক পত্রিকা দ্যা এজ ফিনান্সিয়াল ডেইলী এর উপর থেকে অবিলম্বে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
২। তথ্য ফাঁসকারী ওয়েবসাইট সারাওয়াক এর প্রতিবেদনটিতে প্রবেশাধিকার দিতে হবে।
৩। ১এমডিবি সম্পর্কে মালয়েশীয়দের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে সম্মান দেখাতে হবে।
দ্যা এজ পত্রিকার কার্যালয়ের সামনে গত ৩১ জুলাই তারিখে ৭০ জনেরও বেশি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী অবরুদ্ধ প্রকাশনার সাথে একাত্মতা দেখানোর জন্য জড়ো হয়েছেনঃ
Stand in solidarity with The Edge at The Edge's office, 31 July, 3pm. Jom! #AtTheEdgepic.twitter.com/IZvbu1JHKK
— AtTheEdgeMalaysia (@AtTheEdgeMsia) July 30, 2015
দ্যা এজ পত্রিকার কার্যালয়ের সামনে গত ৩১ জুলাই তারিখে বিকেল ৩টায় সবাই একাত্মতা প্রকাশের জন্য দাঁড়িয়েছি।
Solidariti media bersama @theedgemarkets 8 Ogos http://t.co/8EPGoNMSbG@AtTheEdgeMsia#FreeMediapic.twitter.com/I9EqERL4kw
— Malaysiakini (BM) (@mkini_bm) July 31, 2015

দ্যা এজ পত্রিকার কার্যালয়ের সামনে একাত্মতা প্রদর্শন কর্মসূচী। পিপিপিএ’তে বোঝায় প্রিন্টিং প্রেসেস এ্যান্ড পাবলিকেশন্স এ্যাক্ট। দ্যা এজ পত্রিকাটি সাময়িকভাবে বন্ধ করার সময় কর্তৃপক্ষ এই আইনটি প্রয়োগ করেছে। ‘দ্যা এজ পত্রিকার সাথে মালয়েশীয়দের একাত্মতা প্রকাশ’ শিরোনামের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।
৮০৮ খেতাব দেওয়া র্যালীটি গত ৮ আগস্ট তারিখে কুয়ালালামপুরে সংশ্লিষ্ট মালয়েশীয়দের একাত্ম করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
অনেক সেক্টর থেকেই প্রচারণাটি খুব দ্রুত সমর্থন পাচ্ছে। ‘দ্যা এজ পত্রিকার সাথে মালয়েশীয়দের একাত্মতা প্রকাশ’ শিরোনামের ফেইসবুক পেইজটি ইতোমধ্যে ৯ হাজারেরও বেশি লাইক পেয়েছে। এদিকে, #এ্যাটদ্যাএজ প্রচারাভিযানের সমর্থনে একটি অনলাইন আবেদনে ৩০ হাজারেরও বেশি লোক স্বাক্ষর করেছেন। পিটিশনটিতে সংবাদপত্রটি সাময়িকভাবে (তিন মাসের জন্যে) বন্ধ রাখার আদেশের সমালোচনা করা হয়েছে এবং একে সরকার কর্তৃক সত্য আড়াল করার একটি প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করা হয়েছে:
একই সময়ে যখন বৃহদাকারের এই আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন বেশী উঠেছে, তখন মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকাণ্ড জিজ্ঞাসু মালয়েশীয়দের মুখ বন্ধ করার একটি নিপীড়নমূলক প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মালয়েশিয়া অফিস দ্যা এজ পত্রিকাটির বিরুদ্ধে সাময়িক স্হগিতাদেশকে একটি অসফল ও অযৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেঃ
১এমডিবি কলঙ্ক নিয়ে যে পত্রিকাটি রিপোর্ট করেছে সেটিকে সাময়িকভাবে স্থগিত করে সরকার কোন ভাবেই উপকৃত হবে না। আসলে এটা আমাদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আন্তর্জাতিক উপলব্ধি সহ তাঁর আন্তর্জাতিক স্থায়ী পদ, সার্বভৌম রেটিং এবং অন্যান্য রেটিং এ মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তির উপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আমাদের সরকার সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অজুহাতে বাক স্বাধীনতা দমনে ‘অতিদমন’ নীতি গ্রহণ করা উচিত নয়। আসুন আমরা আরও অযৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই আমাদের সঠিক তথ্য নিশ্চিত করি।
এডভোকেসি গ্রুপ আলিরানের সভাপতি ফ্রান্সিস লোহ সমাজে একটি মুক্ত প্রেসের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেনঃ
… একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্পন্দনশীল গণমাধ্যম এবং স্বাধীন প্রেস থাকতে হবে, যা দ্যা এজ এবং সারাওয়াকের মতো রিপোর্ট প্রকাশের মতো অনুসন্ধানীমূলক সাংবাদিকতা চর্চা করার সাহস রাখে। তাঁদের রাকিয়াত [জনগণ] এর কাছে অবাধে তথ্য প্রদান করতে হবে, বিশেষ করে কর্তৃপক্ষ যখন রাকিয়াতকে অপেক্ষার পর অপেক্ষা করতে বলে।