“তাদেরও নাম আছে” – এই ধারাবাহিকতায় এটি আমাদের তৃতীয় পোস্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে – বর্তমানে কারাগারে আছেন এমন ব্লগারদের আলাদাভাবে তুলে ধরতে এই ধারাবাহিকটি কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, এই বিষয়টি আরও একটু মানবিক হয়ে উঠবে। তাদের সুনির্দিস্ট এবং বিচিত্র গল্পগুলো আমরা বলতে পারব। এটি এন্দালক ছালার একটি গল্প। তিনি জোন নাইন যৌথ ব্লগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, তিনি সেখানে তিনি তাঁর পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করছিলেন।
আমি ২০১২ সালে জেলালেম কিবেরেতের সাথে পরিচিত হই। আমি তাকে তাঁর ব্লগের মাধ্যমে চিনেছি, যেখানে তিনি অনুসন্ধিৎসু এবং উদ্দীপক সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন লেখা, শিল্প, রাজনীতি, ইতিহাস এবং দর্শন সম্পর্কে লিখতেন।
আমি দর্শন বিষয়ক তাঁর পোস্টগুলো পড়েছি এবং মাঝে মাঝে ফেইসবুকে তাঁর সাথে কথা বলেছি, কখনই তাঁর সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে একবার দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সে সময় আমি আমার সকল অনলাইন বন্ধুদের সাথে সবসময় দেখা করতে চাইতাম। অবশেষে এমন করেই আমরা জোন নাইন নামক যৌথ ব্লগটি গঠন করে ফেললাম। সে সময় বাফেকাদু ছিলেন এই যৌথ ব্লগের মূল চালিকা শক্তি। তিনি আমাদের সব সভার আয়োজন করতেন। আদ্দিস আবাবার একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত পিৎজা নামের একটি ক্যাফেতে আমাদের দেখা হয়েছিল।
বেফেকাদু এবং আমি সবার আগে এলাম এবং তারপর জেলালেম আমাদের সাথে যোগ দিলেন। তিনি আমাদের উষ্ণ সম্ভাষণ জানালেন। আমরা দরজার কাছে রাখা টেবিলে বসেছিলাম। তিনি এক কাপ ম্যাকিয়াতো অর্ডার করলেন এবং এরপর আমাদের বেশ তুমুল আড্ডা চলল।
আদ্দিস আবাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে জেলালেম স্নাতক পর্যায়ে পড়াশুনা করছিলেন এবং একই সাথে তিনি আম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াতেন। জেলালেমের সাথে কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে বেশ ভাগ্যবান বলে মনে করি। তাঁর মানসিক ক্ষিপ্রতা, হাস্যরসাত্মক লেখা এবং ধর্ম বিষয়ে তাঁর আপোসহীন খোঁচা দেয়া কথার কারণে তাকে আমার বেশ ভালো লাগে। জেলালেমের বন্ধু তাঁর নামটি আসন্ন ফ্রেঞ্চ লেখক জোলার নামের সাথে মিলিয়ে কিছুটা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। কেননা জেলালেম অত্যন্ত উৎসাহের সাথে তাঁর লেখাগুলো পড়ে থাকেন। দর্শণ এবং শিল্পের প্রতি আমাদের এই জোলার ভালোবাসা এতটাই দৃশ্যমান যে জ্যাক–লুইস ডেভিডের বিখ্যাত চিত্রকর্ম “দ্যা ডেথ অব সক্রেটিস” এর নামানুসারে তিনি তাঁর ব্লগের শিরোনাম দিয়েছেন।

জ্যাক-লুইস ডেভিডের আঁকা ছবি দ্যা ডেথ অব সক্রেটিস। সর্বজনীন ডোমেইনে প্রকাশিত হয়েছে। উইকিমিডিয়ার দেয়া ছবি।
জোলার হিট টুইটগুলো তাঁর সমকক্ষ লোকেদের মাঝে এতোটাই কীর্তিমান যে আমি অনুমান করি তিনি যখন গ্রেপ্তার হন, তখন তাঁর টুইটগুলো ইথিওপিয়াতে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক লোক পড়ত। তাঁর হাস্যরসাত্মক এবং বুদ্ধিদীপ্ত টুইটগুলো তাকে দেখার মতো একজন উদয়মান সাহিত্য প্রতিভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জোলা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ মর্মস্পর্শী লেখাও লিখতে পারেন। তাঁর একটি ব্লগ পোস্টে তিনি একটি বিষয় নিয়ে পরিহাস করেছেন, যে বিষয় নিয়ে ইথিওপিয়ার মূলধারার সংবাদপত্রগুলোও সত্যতা মেনে নেয় না। “একজন ইথিওপিয়ান গাইড – কি করে আপনার নিজের ধর্ম তৈরি করবেন?” শিরোনামে লেখা তাঁর ব্লগ পোস্টে তিনি একটি দীর্ঘ ব্যাঙ্গরচনা লিখেছেন। সাবেক মরহুম প্রেসিডেন্ট মেলেস জেনাভিকে কিভাবে একজন ধর্মীয় প্রার্থনার ব্যক্তিত্বে পরিণত করার প্রচেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালিত প্রচার মাধ্যমগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে, তা তিনি এই লেখাটিতে তুলে ধরেছেন। এ ধরণের লেখার কারণেই জোলা ইথিওপিয়ান সরকারের তোপের মুখে পড়েন। একজন সত্যিকারের মনীষী ব্যক্তি হওয়ার কারণে এবং সমালোচকদের সাথে যোগাযোগ করতে যিনি হাস্যরসকে ব্যবহার করেন, এমন একজন ব্যক্তি হওয়ার কারণে এক বছর ধরে কারাবাসের পর আজ তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের বানোয়াট অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তাঁর ব্লগের শিরোনামে জোলা লিখেছেন, ‘স্বাধীনতাকে ধ্বনিত হতে দাও”। যতক্ষণ তিনি কারাগারে বন্দী আছেন, ততক্ষণ এই আকাঙ্ক্ষাকে তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কার্যকর করতে হবে।