একজন থাই কর্মী ফেইসবুকে সাম্প্রদায়িক এবং ফিলিপিনো বিরোধী বক্তব্য পোস্ট করার পর ফিলিপাইন থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছে। অনেকে তাকে বিতাড়নের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানালেও কেউ কেউ বিষয়টিকে বাকস্বাধীনতার উপর একটি চরম আক্রমণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোকো নারাক নামে পরিচিত প্রাসারতস্রি কোসিন ফিলিপাইনের অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে রাগিয়ে তুলেছেন। কারন তিনি ফিলিপিনোদের “পিগনয়”, “জড়বুদ্ধি সম্পন্ন সৃষ্টি”, “নিম্ন-শ্রেণীর বস্তিবাসী দাস” এবং “এই বিশ্বের সবচেয়ে অপদার্থ জাতি” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর এই অবমাননাকর মন্তব্যগুলো গত সপ্তাহে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে কোকো নারাককে অবশেষে তাঁর চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। উল্লেখ্য, তিনি ফিলিপাইনের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত তাগুইগ শহরে চাকুরি করতেন।
ফেইসবুকে তাঁর আক্রমণাত্মক পোস্টের জন্য এই থাই নাগরিককে “অবাঞ্ছিত” উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি হতে বরখাস্ত পত্র ইস্যু করার মাধ্যমে ফিলিপাইনের অভিবাসন ব্যুরো ত্বরিত গতিতে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কোকো নারাক আত্মসমর্পণ করেছেন এবং স্বেচ্ছায় নির্বাসনের পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি অভিবাসন ব্যুরোর কাল তালিকাভুক্ত এবং তাঁর উপর দেশে পুনঃপ্রবেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
অভিবাসন ব্যুরোর দপ্তরে হাতকড়া পড়া অবস্থায় কোকো নারাকঃ
Thai national Prasertsri Kosin, who called Filipinos “pignoys,” in handcuffs, facing deportation. pic.twitter.com/LsU2fuZ7uT
— Jun Veneracion (@jun_veneracion) May 6, 2015
থাই নাগরিক প্রাসারতস্রি কোসিন ফিলিপিনোদের “পিগনয়” বলে আখ্যায়িত করায় হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
সংস্থাটির একজন কমিশনার তাকে বিতাড়নের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেনঃ
ফিলিপিনোরা বাকস্বাধীনতাকে সম্মান জানায়, তথাপি এই ব্যুরোতে আমরা কোন আক্রমণাত্মক এবং নোংরা ভাষা সহ্য করতে বা মেনে নিতে পারি না। বিশেষকরে, কোন বিদেশী যদি আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে এমন ভাষা ব্যবহার করেন তবে তা আমরা বরদাস্ত করব না।
ফিলিপাইন থেকে বিতাড়নের আগে কোকো নারাক ফিলিপিনোদের উদ্দেশ্যে ক্ষমা চেয়ে লিখেছেনঃ
আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে আপনাদের জানাচ্ছি যে আমি যা করেছি বা আসিয়ান [এ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন] পেইজ অথবা আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক পেইজে যে সকল সাম্প্রদায়িক মন্তব্য পোস্ট করেছি, তাঁর জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত।
ফিলিপিনো, আপনাদের কোন প্রকার দুঃখ দিতে আমি এমন কাজ করিনি। অবাক করার বিষয়, আমার অপরিণত আচরণের কারণে আমার পেইজের বেশীরভাগ বিতর্ক আপনাদের আঘাত দিয়েছে।
সকল ফিলিপিনোর কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী।
অভিবাসন দপ্তরে আটক অবস্থায় ক্ষমা চেয়ে তিনি আরেকটি চিঠি লিখেছেনঃ
Koko Narak, gumawa ng handwritten apology sa mga Pilipino (Photo c/o BI) @DZMMTeleRadyopic.twitter.com/TMNJn2cz7z
— Zhander Cayabyab (@zhandercayabyab) May 6, 2015
অভিবাসন দপ্তরে আটক অবস্থায় ক্ষমা চেয়ে তিনি আরেকটি চিঠি লিখেছেনঃ
ক্ষমা চাওয়া সত্ত্বেও কোকো নারাককে বিতাড়িত করা হয়েছে।
সাপ্রদায়িক বক্তব্য প্রদানের জন্য একজন মানুষকে বিতাড়িত করার এই সিদ্ধান্তে কেউ কেউ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষাবিদ এন্টোনিও পি. কনত্রেরাস ফেইসবুকে লিখেছেনঃ
আপনি যদি ক) একসময় #জেসুইসচার্লি হ্যাশট্যাগটি প্রচার করেন এবং খ) এখন একজন থাই নাগরিককে হাতকড়া পরানো এবং দেশ থেকে বিতাড়ন সমর্থন করেন, তবে…
আপনি অত্যন্ত বিভ্রান্ত একজন ব্যক্তি
অতঃপর, থাইল্যান্ডে কর্মরত ৫১ জন ফিলিপিনো কর্মী “নিরপরাধ কাজের জন্য একজন বিদেশীকে শাস্তি প্রদানের আগে সর্বোচ্চ পরিমাণ সহনশীলতা দেখাতে” ফিলিপিনো সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। বিবৃতিটিতে বিতাড়নের শাস্তি প্রদান বাকস্বাধীনতা রক্ষার করতে দেশের দেয়া প্রতিশ্রুতিকে বরং খর্ব করেছে বলে জোর দিয়ে বলা হয়েছেঃ
তারা আক্রমনাত্মক, ঘৃণাপ্রবণ এবং সহজ-সরল বেপরোয়া হতে পারেন, কিন্তু তারা অপরাধী নন। যদি কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করেন যে তাঁর বক্তব্য অপরাধমূলক হিসেবে স্বীকারযোগ্য, তবে তারা তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে এবং জনাব কোসিনকে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে এবং আইনী প্রক্রিয়ায় যথাযথ বিচার পাওয়ার তাঁর অধিকারকে সম্মান জানিয়ে তাকে শাস্তি দেয়া উচিৎ। তাঁর ক্ষেত্রে এমনটি করা হয়নি।
অভিবাসন ব্যুরোর প্রতিক্রিয়ায় বাকস্বাধীনতা অধিকার নিজেই বিপদগ্রস্ত হয়েছে। জনাব কোসিন ইতোমধ্যে জনগণের উদ্দেশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। চলুন আমরা তাঁর ক্ষমা গ্রহণ করি এবং এই ঘটনাটি থেকে বেড়িয়ে আসি।