
শনিবার এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে পুনরায় ভূমিকম্প হওয়ার ভয়ে এখনও হাজার হাজার লোক খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিচ্ছেন। অজয়া মননধরের ছবি। কপিরাইট ডেমোটিক্স (২৭/৪/২০১৫)
গত কয়েক দিন ধরে ভেঙ্গে যাওয়া ঘরবাড়ি, ধসে পড়া মন্দির এবং ছড়িয়ে থাকা ইট পাথরে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। গত ২৫ এপ্রিল রোজ শনিবারে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পরিণাম সারা বিশ্ব স্বচক্ষে দেখেছে। এতে হাজার হাজার লোক মারা গেছেন, এখনও বহু লোক মারা যাচ্ছেন। সারা দেশ জুড়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে ত্রাণ খুব বেশি মাত্রায় প্রয়োজন, সেখানে তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টিকে “সাহায্যের ঢল” হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
The full scale of the #NepalEarthquake became apparent Sunday when helicopters found villages completely flattened http://t.co/ZlU1LCF0G0
— Nepali Times (@nepalitimes) April 27, 2015
রবিবারে হেলিকপ্টারে প্রদক্ষিণের সময় যখন গ্রামগুলোকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গেল, তখন #নেপালভূমিকম্প এর প্রকৃত চিত্র দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
This will be a lot worse if we don't focus on this NOW. Already late. https://t.co/BPxxf0HgLN
— Prashant Jha (@prashantktm) April 27, 2015
আমরা যদি এখনই এদিকে দৃষ্টি না দেই তবে আরও বেশি ক্ষতি বয়ে আনবে। ইতোমধ্যেই আমরা দেরি করে ফেলেছি।
Tragedy of rural Nepal in time of crisis – lack of able-bodied youth to be part of rescue, aways on job migration to India, Gulf, Malaysia.
— Kanak Mani Dixit (@KanakManiDixit) April 28, 2015
এই সংকটময় সময়ে গ্রামীণ নেপালের করুণ দশা – উদ্ধার কাজে অংশ নেয়ার মতো তরুণদের অভাব, যাদের বেশিরভাগই ভারত, উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়াতে কাজের খোঁজে পাড়ি জমিয়েছেন।
লোকজন ধীরে ধীরে ভূমিকম্পের আরেকটি হৃদয়বিদারক ফলাফল উপলব্ধি করতে পারছেঃ নেপালি সরকার পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকেরা হতাশা ব্যক্ত করেছেনঃ
Where are the local authorities? Where is the government? Everyone's asking the same question. #Nepalearthquake@AJENews@AJEnglish
— Subina Shrestha (@ShresthaSubina) April 28, 2015
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোথায় আছে? সরকার কোথায় আছে? প্রত্যেকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে।
The Indian helicopters are a resource, but they are not being used. Where is the bottleneck, Ministers of Govt of Nepal get into the act!
— Kanak Mani Dixit (@KanakManiDixit) April 28, 2015
ভারতীয় হেলিকপ্টারগুলো কাজের, তবে সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কোথায় আটকে আছে এগুলো? নেপাল সরকারের মন্ত্রীরা কাজে লেগে পরুন!
নরওয়েজিয়ান শরনার্থী কাউন্সিলের (এনআরসি) মহাসচিব জ্যান এগল্যান্ড। উল্লেখ্য, এটি একটি স্বাধীন, সদাশয়, অলাভজনক, বেসরকারি একটি সংস্থা। সংস্থাটি সঙ্কটের সময়ে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সহায়তা এবং সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। হাইতিতে ২০১০ সালে, পাশাপাশি ফিলিপাইনে হাইয়ান টাইফুন আঘাত হানার পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজে এনআরসি অংশ নিয়েছিল। বর্তমানে দলটির ভূমিকম্প বিষয়ক দুইজন বিশেষজ্ঞ নেপালের পথে রওনা দিয়েছেন।
ত্রাণ কাজে নেপালি সরকারি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি উল্লেখ করে এগল্যান্ড সকল বেসরকারি সংস্থার কাজের প্রশংসা করেছেনঃ
Nepalese civil society is by far the biggest responder in #NepalEarthquake, but once again largely ignored by international media.
— Jan Egeland (@NRC_Egeland) April 27, 2015
নেপালি সুশীল সমাজ এ পর্যন্ত #নেপালভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন, তবে আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম আরও একবার তাদের এই অবদানকে মূলত অবজ্ঞা করেছে।
বিপর্যস্ত এলাকা থেকে অনেক দূরে থাকা অনেকেই অবিরাম মোবাইল অথবা কম্পিউটারে চোখ রেখে বসে আছেন, প্রার্থনা করছেন এবং তাদের প্রিয়জনেরা নিরাপদে আছেন এমন খবরের আশায় অপেক্ষা করছেন। তাদের উদ্বেগ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠছে। সরকারের আপাত অযোগ্যতা বিভিন্ন দল এবং ব্যক্তিদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে।
বিদেশে লোকজন তাদের জন্য প্রার্থনা করতে এবং সমর্থন দেখাতে একসাথে জড়ো হয়েছেন।
ভারতে নেপালি শিক্ষার্থীরা #নেপালেরজন্যপ্রার্থনাকরুন ব্যানারের অধীনে আলোক-প্রজ্বালন কর্মসূচীর আয়োজন করছেনঃ
Nepalese students in India hold #PrayforNepal vigil: “We all are in sorrow” http://t.co/aheeJYTQVlpic.twitter.com/0nA3qlne4j
— CNN iReport (@cnnireport) April 27, 2015
ভারতে নেপালি শিক্ষার্থীদের #নেপালেরজন্যপ্রার্থনাকরুন ব্যানারের অধীনে একটি আলোক-প্রজ্বালন কর্মসূচীঃ “আমরা সবাই দুঃখে আছি”
নিউইয়র্ক শহরে প্রবাল গুরুং অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। তিনি প্রকৃত পক্ষে নেপাল থেকে এসেছেন। তিনি একটি তহবিল গঠন কর্মসূচীর আয়োজন করেছেন, যেখান থেকে তিনি ১ লক্ষ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের তহবিল গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন।
যখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো অন্যান্য প্রকল্পের জন্য কাজ করছে, তখন ফ্রান্সে নেপালি দূতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায়, গত ২ মে তারিখ শনিবার প্যারিসে আইফেল টাওয়ার দেখতে আসা অনেকে বিখ্যাত টকেডারিও প্লাজায় তহবিল গঠন করতে জড়ো হয়েছিলেন। তহবিলটি অবিলম্বে নেপালের ত্রাণ প্রচেষ্টায় অথবা দেশটির ভবিষ্যত চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহৃত হবে। (আরও তথ্যের জন্য, #নেপালেরজন্যসংহতি দেখুন।)
যেখানে নেপাল এখনও ভূমিকম্পের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে, সেখানে মাটিতে অবস্থান নেয়া সাধারণ মানুষগুলোও এখন “স্বাভাবিক হয়ে উঠতে” নতুন স্বপ্ন দেখছেন। প্রচার মাধ্যমের দৃষ্টি ক্ষয়ক্ষতির গল্পগুলো ছাড়িয়ে যাতে আরও প্রসারিত হয়, তাঁরা সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন।
As dust clears, thru binocs from hilltop south of Valley I estimate 80 percent of buildings intact.
— Kunda Dixit (@kundadixit) April 25, 2015
যেহেতু ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করা হয়েছে, তাই উপত্যকার দক্ষিণের পাহাড় চূড়া থেকে বাইনোকুলারের সাহায্যে আমি হিসাব করে দেখেছি যে শতকরা ৮০ শতাংশ ভবন অক্ষত রয়েছে।
Everyone can do with Kindness at trying times. A young girl feeds her #dog food to street dogs around Boudha. pic.twitter.com/rJfs39Essx
— Kashish Das Shrestha (@kashishds) April 27, 2015
এই বিপদের সময়ে সবাই উদারতা সহকারে কাজ করতে পারেন। একটি ছোট মেয়ে তাঁর কুকুরের খাবারগুলো বোউধা এলাকায় রাস্তার কুকুরগুলোকে খাওয়াচ্ছে।
Ratnakar Mahabir. In Patan seems newar comm doing what they do best communally for gens. Little state relief presence pic.twitter.com/SjGHIfWGuS
— Kashish Das Shrestha (@kashishds) April 27, 2015
রত্নাকর মহাবির। দেখে অপেক্ষাকৃত নতুন মনে হওয়া একটি সম্প্রদায় পাতান অঞ্চলে দলগতভাবে তাদের সাধ্যমত সহায়তা করছেন। দলগতভাবে তাঁরা কয়েক প্রজন্ম ধরে ত্রাণ কাজ সফলতার সাথে করে আসছেন। এখানে সরকারি ত্রাণ একেবারে নেই বললেই চলে।
Yoshadhara Mahabir, Patan – ppl drying traditional sukul after last nite's rain.Again- old houses down, new still up. pic.twitter.com/bJaFbT40Rz
— Kashish Das Shrestha (@kashishds) April 27, 2015
যশধরা মহাবির পাতান থেকে জানিয়েছেন – গত রাতে বৃষ্টি হওয়ার পর লোকজন চিরাচরিত সুকুল শুকাচ্ছেন। আবারও – পুরাতন বাড়িগুলো ভেঙ্গে পড়েছে, নতুনগুলো এখনও টিকে আছে।
ফটো ডট সার্কেল ওয়েবসাইটের একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য আলোকচিত্রী ভূষণ শিল্পকর স্বাধীনভাবে বিভিন্ন উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া লোকজনের ভিন্নধর্মী গল্পগুলো বলতে শুরু করেছেন। উল্লেখ্য ফটো ডট সার্কেল ফটোগ্রাফির জন্য একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্ম, এটিও নেপালে সামাজিক পরিবর্তন আনতে কাজ করছে।
https://instagram.com/p/1-jPcwr605/
https://instagram.com/p/1-dLU0r63H/
https://instagram.com/p/1-ud2qL65q/
ছবিটিতে একজন মন্তব্য করেছেনঃ
আমার মনে হয় ছবিটি পুরনো। কারন আমি এখানে মন্দিরগুলো দেখতে পাচ্ছি।
ভূষণ শিল্পকর উত্তরে লিখেছেনঃ
ছবিটি এক ঘণ্টা আগে তোলা হয়েছে, চত্বরের সবগুলো মন্দির ভেঙ্গে পড়েনি, কিছু মন্দির এখনও অক্ষত আছে।
দেশের বাইরে থেকে যারা ছবিটি দেখছেন, এখানে আসা যাদের সাধ্যের বাইরে, তাদের জন্য এটি একটি অনুস্মারক যা কখনও ভুলে যাওয়ার নয়। আর তা হচ্ছে এই প্রচণ্ড সংকটময় সময়েও কিন্তু সবগুলো মন্দির ভেঙ্গে পড়েনি। ঠিক এই মন্দিরগুলোর মতোই এই মানসিক এবং শারীরিক ঝড়ের মাঝে আমাদের সাধারন মানবিক আত্মাগুলো অবিচল এবং সক্ষম থাকতে হবে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছাতে আপনি যদি আপনার সাধ্যের শতকরা ১০০ ভাগ দিতে চান, তবে অনুগ্রহ করে নেপাল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ওয়েবসাইটটিতে সাহায্য দিন। এখানে ফটো ডট সার্কেল অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ একদল স্বাধীন স্বেচ্ছাসেবককে কাঠমান্ডুতে মৌলিক অপরিহার্য ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের জন্য নিযুক্ত করেছে। তালিকার উপর প্লাস্টিকের আচ্ছাদন দেয়া থাকবে – উপত্যকা পরিধির বিভিন্ন অবস্থানে এগুলো বণ্টন করা হবে। সকল ধরণের প্রশাসনিক ব্যয় সংকুলান হয়েছে, আপনার পাঠানো তহবিল কোন কোন খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে তা আপনি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ছবির মাধ্যমে আপনি দেখতে পাবেন আপনি কি কি ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য অবদান রেখে চলেছেন।