কোম্পানির চুনাপাথর আহরণে নেপালের আদিবাসী চেপাং সম্প্রদায়ের বিপদ

Limestone extraction site at Ginggung, Makawanpur District. Image by Gobindaram Chepang. Used with permission.

মাকাওয়ানপুর জেলার গিংগাঙে চুনাপাথর উত্তোলনের স্থান। ছবি গোবিন্দরাম চেপাং। অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত।

বিশ্ব কার্বন ব্যবহার কমাতে চাওয়ায় শক্তি স্থানান্তর খনিজগুলির চাহিদা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নেপালও সেই প্রবণতা প্রত্যক্ষ করছে।

নেপালের তামাং, চেপাং এবং অন্যান্য মিশ্র জাতিগত গোষ্ঠীসহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাসের চিতওয়ান, ধাদিং ও মাকাওয়ানপুর জেলার মতো এলাকায় চুনাপাথর ও বালির মতো খনিজগুলি পাওয়া যায়। পাথর ভাঙ্গা ও খনি শিল্পের চলমান নিষ্কাশন কার্যক্রম নেপালের ধাদিং, মাকাওয়ানপুর ও চিতওয়ান জেলায় আদিবাসী চেপাং বসতিতে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা তৈরি করেছে।

চেপাং সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব

এসব সম্প্দের জন্যে ক্রমবর্ধমান খনন আদিবাসী অধিকার ও অঞ্চলগুলির জন্যে সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ক্রমবর্ধমান খনিজ নিষ্কাশন চেপাং জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিণতি ও ফলাফল দুর্বল চেপাং সম্প্রদায়কে আরো প্রান্তের দিকে ঠেলে দিতে পারে। খনন কার্যক্রম অনিবার্যভাবে মাটি ও জমির খনন, অবক্ষয়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ও পানি দূষণসহ পরিবেশ ধ্বংসের কারণ হয়েছে।

Gobindaram Chepang, the Chairperson of Nepal Chepang Association.

নেপাল চেপাং সমিতির সভাপতি গোবিন্দরাম চেপাং। গোবিন্দরাম চেপাংয়ের মাধ্যমে পাওয়া ছবি।

গ্লোবাল ভয়েসেস সম্প্রতি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চুনাপাথর উত্তোলনের ফলে আদিবাসী চেপাং জনগণের জন্যে প্রভাব সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ করতে নেপাল চেপাং সমিতির সভাপতি গোবিন্দরাম চেপাংয়ের একটি সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। গোবিন্দরাম চেপাংয়ের মতে, চুনাপাথর উত্তোলনের সরাসরি তিনটি ঘটনা চেপাং সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে। প্রথমত, চিতওয়ানের কোলার, সুপার, সিদ্ধির ভিউরাং, কালিকা পৌরসভার ১৭টি পরিবার খনি কোম্পানিগুলির লোহা ও তামা উত্তোলনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে৷

দ্বিতীয়ত, তিনি বলেছেন ঋদ্ধিসিদ্ধি সিমেন্ট শিল্পের চুনাপাথর উত্তোলনের ফলে রাক্সিরাং গ্রামীণ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গিংগাঙে বসবাসকারী আদিবাসী চেপাং ও তামাং সম্প্রদায়ের ৪০ টি পরিবার তাদের এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তিনি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন যারা বলেছে গ্রামে চুনাপাথর উত্তোলনের ফলে মাটির ক্ষয়, ভূমিধস, কৃষি জমির অবক্ষয় ও জল দূষণ হয়েছে। সভাপতির মতে সম্প্রদায়ের দুর্দশা হল যে ঋদ্ধি সিদ্ধি সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি যুক্তিসঙ্গতভাবে কাঠা (৩৮৩.৬৩ বর্গমিটার) প্রতি ১.৫ লক্ষ নেপালি রুপি (প্রায় ১.২৫ লক্ষ টাকা) ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করলেও মধ্যস্থতাকারী ঠিকাদাররা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে প্রতি কাঠা মাত্র ২০ হাজার রুপিতে (প্রায় ১৬.৫৫ হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে।

গিংগাং, মাকাওয়ানপুর জেলার চুনাপাথর আহরণ, গোবিন্দরাম চেপাং থেকে পাওয়া ছবি। অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত।

সভাপতির মতে, তৃতীয় ঘটনাটি ধাদিং বেনিঘাট রোরাংয়ের তালতি ২ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রিশক্তি খনিজ জল প্রাইভেট লিমিটেডের খনিজ উত্তোলনের কারণে ৬০টি পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ লিমিটেড. সভাপতি জানিয়েছেন:

জমির মালিকানা সনদধারী পরিবারের মাত্র অর্ধেক ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। বাকি অর্ধেক অনিবন্ধিত জমিতে ঐতিহ্যবাহী ‘খোরিয়া’ পদ্ধতিতে চাষের চর্চা করা চেপাংরা কিছুই পায়নি। ধাদিংয়ের বিভাগীয় বন অফিস চেপাংদের ব্যবহৃত খাড়া জমিতে এই ধরনের চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ জমির সনদধারীদের জন্যে যুক্তিসঙ্গত হলেও জমির মালিকানা সনদবিহীনদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

Limestone extraction site at Ginggung, Makawanpur District. Image by Gobindaram Chepang. Used with permission.

চুনাপাথর আহরণের স্থান, গিংগাং, মাকাওয়ানপুর জেলা। ছবি: গোবিন্দরাম চেপাং। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

অশ্রুত কণ্ঠস্বর

চুনাপাথর উত্তোলনের কারণে চেপাংদের মুখোমুখি হওয়া সমস্যা নিয়ে অনলাইন ও ইউটিউবে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন রয়েছে। নেপালি অনলাইন প্রতিবেদনে প্রকাশিত সাম্প্রতিক খবরে ধাদিং জেলায় চুনাপাথর উত্তোলনের অনুমতি পেতে চেপাং পরিবারের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করা একটি কোম্পানিকে তুলে ধরা হয়েছে। যার মানে হলো চেপাংদের কথা শোনা হয় না।

কণ্ঠহীনদের নিপীড়নের একটি বড় কারণ রাজনীতিবিদদের অনেকেই খনিজ আহরণের সাথে জড়িত। নেপালের ২০২০ সালের পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচিত ২০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধির খনি ও ক্রাশার নির্ভরশীল “স্থানীয় ব্যবসায়, বিশেষ করে নির্মাণ-সম্পর্কিত চুক্তির ব্যবসাগুলিতে একটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশীদারিত্ব ছিল।” দ্বিতীয়ত, এই সমস্যাগুলি প্রায়শই আইন ও নীতিমালা পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে প্রান্তিক করে তোলা ফেডারেলিজমের পরে বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নেপালের স্থানীয় সরকার কর্মকাণ্ড আইন ২০১৭ পৌরসভাগুলিকে নদীর সামগ্রী নিষ্কাশন ও সংগ্রহের জন্যে চুক্তি জারি করার ক্ষমতা দিয়েছে। বালি, নুড়ি, স্লেট উত্তোলন ও সংরক্ষণের ক্ষমতা ২০১৫ সালের আগে কেবল কেন্দ্রীয় সরকার স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো।

আরো সুরক্ষার আহ্বান

নেপাল চেপাং সমিতি আয়োজিত ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪-এ সপ্তম কেন্দ্রীয় জাতীয় সমাবেশ চেপাংয়ের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কর্মরত বিভিন্ন সম্প্রদায়-ভিত্তিক সংস্থা (সিবিও), বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাকে (আইএনজিও) কার্যকর ও ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছে। এই খাতে কর্মরত সকল গ্রুপকে নেপাল চেপাং সমিতির অনুমোদন নিতে হবে। এই এক-দরজা নীতির লক্ষ্য ভবিষ্যৎ প্রকল্প কার্যক্রমে অর্থপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত এবং চেপাং বসতিতে কর্মরত যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে যাচাই করা।

সপ্তম কেন্দ্রীয় জাতীয় সমাবেশ বাগমতি প্রাদেশিক সরকারের চিতওয়ান, মাকাওয়ানপুর এবং ধাদিংয়ে চেপাং সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা বাস্তবায়নের বিষয়েও আলোচনা করেছে

সরকার এই ক্ষতিকর আহরণগুলি নিয়ন্ত্রণ বা নিরীক্ষণ না করলে এটি আশেপাশে বসবাসকারী মানুষের জন্যে হুমকি হয়ে থাকবে। বড় আকারের খনির ফলে স্থানীয় পরিবেশ ও কৃষির অপূরণীয় ক্ষতি হবে, হুমকির মুখে পড়বে জমি, জলের উৎস, জীবন ও জীবিকা, যা শেষ পর্যন্ত চেপাং সম্প্রদায়কে তাদের পূর্বপুরুষের জমি থেকে বাস্তুচ্যুত করবে। এই সমস্যাগুলির প্রতি বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া জমির অবক্ষয় ঘটাবে। চুনাপাথরের এলোমেলো খনন প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি করবে।

খনিজ আহরণের বাস্তব প্রভাব আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং বায়ু দূষণ ও জলের উৎস সংকোচন ছাড়াও চেপাংদের আদিবাসীতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জমির সাথে তাদের সংযুক্তির সাথে সম্পর্কিত। পৈতৃক জমি ও বনাঞ্চলের সাথে তাদের সংযুক্তিই কেবল তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত জীবিকা রক্ষা করতে পারবে। তাদের জমি ও সম্পদ, খাদ্য ব্যবস্থা ও জীবিকা নির্বাহ বনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বলে বাস্তুচ্যুতি তাদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে মুছে ফেলবে

আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত জীবিকা এবং ঐতিহ্যগত জ্ঞান, দক্ষতা এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বজায় রেখে প্রাকৃতিক সম্পদ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের টেকসই ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখে বলে তাদের আদিবাসী জ্ঞান ও চর্চাগুলির স্বীকৃতি ও সুরক্ষা প্রয়োজ। নেপাল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১৬৯ এবং জাতিসংঘের আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র (ইউএনডিআরআইপি) গ্রহণ করলেও তাদের বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে আদিবাসীদের অধিকার ও তাদের জীবিকাকে উপেক্ষা করে চলছে।

জাতিসংঘের নির্দেশক নীতিমালা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের প্রতিকূল প্রভাবগুলি চিহ্নিত, প্রশমিত এবং প্রতিকার করতে কোম্পানিগুলিকে যথাযথ নিষ্ঠার সাথে মানবাধিকার অনুসরণের আহ্বান জানায়।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .