দ্যা ওয়ার্ল্ডের জন্য তৈরি করা শিরিন জাফারির এটি একটি রেডিও প্রতিবেদন। কলামটি মূলত পিআরআই ডট ওআরজি তে গত ২ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত হয়। প্রচার সূচী শেয়ার করা চুক্তির একটি অংশ হিসেবে প্রতিবেদনটি পুনরায় প্রকাশ করা হল।
প্রায় এক মাস আগেও সিয়ান স্ক্যান্টলবিউরি কখনও স্কাইপ ব্যবহার করেননি।
তিনি যে কোম্পানিতে কাজ করেন তার ব্যবস্থাপক জোনাথন হল্যান্ডার যখন তাকে একটি নতুন কাজের নির্দেশ দেন, তখন তিনি প্রথম স্কাইপ ব্যবহার করতে শুরু করেন। তাঁর এই নতুন কাজটির শিরোনাম ছিল “ইরাকি শিক্ষার্থীকে শেখানো”। উল্লেখ্য, জনাব জোনাথন হল্যান্ডার একই সাথে নিউইয়র্ক ভিত্তিক ব্যাটারি ডান্স কোম্পানিরও শিল্প পরিচালক।
তখন থেকেই স্ক্যান্টলবিউরি এবং বাগদাদে বসবাসকারী আদেলকিয়েস নৃত্য বিষয়ক শিক্ষার জন্য নিয়মিতভাবে একে অন্যের সাথে স্কাইপের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন। স্ক্যান্টলবিউরি বলেন, “একই কক্ষে অবস্থান করতে পারছেন না এমন কাউকে নাচ শেখানো বেশ কঠিন”। তিনি আরও বলেন, “আপনি চেষ্টা করছেন এবং বলছেন আপনার পায়ের পাতা এখানে দিকনির্দেশ করা প্রয়োজন এবং আপনি চেষ্টা করছেন এবং তাকে স্পর্শ করলেন, তবুও আপনি পারছেন না। কারন আপনার নৃত্য শিক্ষক সাইবারস্পেসে রয়েছেন”।
এবং এভাবে চেষ্টা করে যাওয়া তখনই সম্ভব, যখন আপনার স্কাইপ কানেকশনটি কাজ করছে; বাগদাদে আপনার স্কাইপ কানেকশনটি নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি।
কিয়েস একজন আইনজীবী হতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তবে নাচ বিষয়ে তাঁর প্রবল অনুরাগ রয়েছে। বাগদাদে কোন পেশাদার নাচ শিক্ষাকেন্দ্রে তাঁর প্রবেশাধিকার নেই। তাই তিনি বাড়িতে তাঁর বসবার ঘরে নৃত্য চর্চা করেন। স্ক্যান্টলবিউরি অনাস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, “তিনি ছোট গালিচার উপর নাচের চর্চা করেন। এমনকি এটি কোন ভাঁড় মেঝে নয়, এটি একটি ছোট গালিচা!”
সারা বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের জন্য ব্যাটারি ডান্স কোম্পানিটি বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করে আসছে। তারা ২০১২ সালে “নাচের মাধ্যমে সংযোগ” নামে একটি অনুষ্ঠান তৈরি করেছে। এটি ইরাকে আয়োজিত নৃত্য বিষয়ক বেশ কয়েকটি কর্মশালার সমন্বয়ে একটি ধারাবাহিক আয়োজন।
গত বছরের গ্রীষ্মে আইএস যখন ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিচ্ছিল তখন বেশ কয়েকজন ইরাকি তরুণের কাছ থেকে হল্যান্ডার বেশ কিছু ইমেইল এবং ফেসবুক বার্তা পেয়েছেন। হল্যান্ডার একটি ইমেইলে লিখেছেন, “কেউ কেউ গায়ক, একজন অভিনেতা এবং আদেল সহ আরও কয়েকজন নৃত্যশিল্পী আছেন, যারা কুর্দিশ হওয়া সত্ত্বেও বাগদাদে বসবাস করছেন”।
তিনি আরও লিখেছেন, “তাদের সবারই মন খারাপ, তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন এবং মনে হচ্ছে তারা বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন। কিয়েসের লেখা বার্তাটিতে “আমি জাহান্নামে বসবাস করছি” এমন ধরনের বাক্যও রয়েছে”।
এরপর হল্যান্ডার কিয়েসকে তাঁর নৃত্য চর্চার একটি ভিডিও পাঠাতে এবং হল্যান্ডারের “শহুরে নৃত্য বিশেষজ্ঞ” স্ক্যান্টলবিউরির সাথে জুটি বাঁধতে বলেছেন। স্ক্যান্টলবিউরি কিয়েসের নাচ দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছেন এবং তাঁর জন্য স্কাইপের মাধ্যমে পাঠদানের আয়োজন করতে দ্বিধা বোধ করেননি।
ত্রুটি পূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই জুটি প্রতি সপ্তাহে একটি অথবা দুইটি বৈঠকের আয়োজন করে থাকেন। তবে স্ক্যান্টলবিউরি বলেছেন, শুধুমাত্র সম্পদের অভাবই কিয়েসের একমাত্র সমস্যা নয়। নাচের প্রতি তাঁর যে প্রবল অনুরাগ রয়েছে তাঁর প্রতি তাঁর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবও যথেষ্ট সহায়ক নন।
স্কযান্টলবিউরি এই অনুভূতি বেশ ভালোই বোঝেন; তাঁর বয়স যখন চার বছর তখন তাঁর পরিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। তিনি বলেছেন, “নাচের প্রতি তাঁর এই ঝোঁককে তাঁর পরিবার পছন্দ করেনি, কেননা আমাকে একটি উন্নত জীবন দেয়ার জন্যই তারা এতোটা পথ পাড়ি দিয়েছেন”। তারা মনে করতেন নাচ তাকে জীবনে খুব বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারবে না।
১৯৮০ সালের সময়ে ব্রুকলিনে জীবন ধারণ করা ততোটা সহজ ছিল না। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, “আমি প্রতিদিন মার খেয়েছি এবং আমাকে অনেক গালমন্দ করা হয়েছে”। তবে তিনি কখনও নাচ ছেড়ে দেননি এবং তিনি এইটুকু নিশ্চিত করতে চান কিয়েসও যেন নাচ ছেড়ে না দেন।