
নেপালের বীরগঞ্জের এবং ভারতের দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য চলতে থাকা আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রদর্শনে বীরগঞ্জে অবস্থিত ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে এক র্যালিতে অংশগ্রহণ নেয়। ছবি মানিশ পাদুয়ালের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (২৪/১২/২০১২)
নেপালে গণধর্ষণের শিকার একটি মেয়ের লেখা সাম্প্রতিক এক সম্পাদকীয়, হিমালয় দুহিতা নেপালে আলোড়ণ সৃষ্টি করে। নেপালে ব্যাপক পরিমাণ ধর্ষণসহ নারীর বিরুদ্ধে নানান ধরনের নির্যাতন সংঘঠিত হয়ে থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে অপরাধী কোন ধরনের শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যায়।
পূজা বোহোরা তার স্কুলের শেষ বর্ষের ছাত্রী, সে যখন মার্চ ২০১২–এ কিছু কাগজ কিনতে এক বইয়ের দোকান যায়, তখন উক্ত বইয়ের দোকানের মালিক সাগর ভট্ট এবং ফটোগ্রাফার অমর আবস্তি তাকে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে দুজনে তাকে ধর্ষণ করে। বৈতাদি জেলা অপরাধ আদালত অভিযুক্তদের ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং উভয়কে আলাদা ভাবে ৫০.০০০ রুপি জরিমানা করে। কিন্তু পরের বছর ২৮ এপ্রিল, ২০১৪-এ মহেন্দ্রনগর আপীল আদালত এই রায় খারিজ করে দেয় এবং অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস প্রদান করে।
২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে, নেপালি ভাষার দৈনিক কান্তিপুর ডেইলিতে পূজা নেপালের আইনমন্ত্রী নরহরি আচারিয়ার কাছে লেখা এক হৃদয়গ্রাহী খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়, যেটিতে পূজা তাকে যারা ধর্ষণ করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত::
अन्त्यमा माननीय मन्त्रीज्यू, मेरो किटानी जाहेरीले पक्राउ परी दोषी सावित भई १३ वर्षका लागि जेल चलान भएका ती बलात्कारीहरू छुट्नु भनेको के उनीहरू निर्दोष अनि मचाहिँ दोषी हुँ त ? यदि म दोषी हुँ भने मलाई तुरुन्तै कारबाही गरियोस्, हैन भने ती बलात्कारीहरूलाई पुनः पक्राउ गरी सजाय सुनाइयोस् ।
पूजा बोहरा
এই চিঠি শেষ করার আগে, আমি আইনমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করতে চাই অভিযুক্ত ওই দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে যাদের প্রথমে শাস্তি হিসেবে ১৩ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হল শাস্তি প্রদান করা হল, আবার পরে আবার সমাজে মুক্ত করে দেওয়া হল। তারা কি নির্দোষ, যারা আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে? এই অপরাধের বিষয়ে সমাজে এক নৈতিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, এবং সমাজ এখন নিশ্চিত নয়, কে আসলে নির্দোষ আর কে দোষী। যদি আপনি নিশ্চিত হয়ে থাকেন এবং যথেষ্ট প্রমাণ থাকে, তাহলে আপনি আইনের অধীনে আমাকে গ্রেফতার করতে পারেন। আর যদি তা না হয়, তাহলে এই দুই ধর্ষককে আইনের ঘটনার প্রেক্ষাপটের মুখোমুখি হতে হবে এবং তাদের আবার গ্রেফতার করতে হবে-আমাকে ন্যায় বিচার প্রদান করুন।
নিবেদক
পূজা বোহোরা
১৭ বছরের বোহরার বাস বৈতাদি জেলায়, যা নেপালের একেবারে পশ্চিমে, ভারতের ঝুলাঘাট সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তার পিতা এক কৃষক। তার নিজের যথেষ্ট কৃষি জমি নেই। তাই পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য তাকে ধনী কৃষকের জমিতে কাজ করতে হয়। স্কুলের পড়ার জন্য পূজাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়, ক্লাস করার জন্য দেড় ঘণ্টার পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে তাকে স্কুলে যেতে হয়। সে ক্লাসের অন্যতম এক মেধাবী ছাত্রী, যে প্রতিবছর ক্লাস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে।
পূজার এই খোলা চিঠি নেপালে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয় বিশেষ করে যখন নাগরিকরা আপীল আদালতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন এবং তার সমর্থনে আওয়াজ তোলে।
এই মাসের শুরুতে নেপালী ভাষায় প্রচারিত হিমালয় টিভিকে প্রদান করা এক সাক্ষাৎকারে পূজা বলে “ যারা আমাকে ধর্ষণ করেছে, আদালতের এই রায়ের পর তারা কি নির্দোষ বলে বিবেচিত হবে?
একই সাথে পূজা আইনমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন ধর্ষণকারীর জন্য মৃত্যুদণ্ড সহ কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়। নেপালের বর্তমান আইনে, মৃত্যুদণ্ডের কোন বিধান নেই।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে, আইনমন্ত্রী নরহরি আচারিয়া এই বিষয়ে মন্তব্য করেন, তিনি পূজাকে নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে তার প্রতি ন্যায়বিচার করা হবে। প্রখ্যাত রাজনীতিবীদ এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ বাবুরাম ভট্টরাই মন্তব্য করেছে, “পূজার চিঠি আমার চোখে পানি এনে দিয়েছে”।
“রকসানেপাল” নামের যে এনজিও পূজার জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিল তার সভানেত্রী মেনুকা থাপাও পূজার প্রতি ন্যায়বিচারের দাবীতে আওয়াজ তুলেছে।
পূজার সমর্থনে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার জন্য নাগরিকরা টুইটারেরও ব্যবহার করছে:
Pooja Bohara's powerful letter reveals about our justice system, social security and governance. Let's raise voice! http://t.co/m9Qohp2lU9
— Guna Raj Luitel (@gunaraj) December 17, 2014
পূজা বোহোরার এই শক্তিশালী চিঠি আমাদের বিচার ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা, এবং সুশাসন সম্বন্ধে উন্মোচন করেছে। আসুন আমরা এই সকল বিষয়ে সোচ্চার হই।
A touchy letter indeed: http://t.co/diJuhjhegl. #Rape sud have no place in 21st century. But sadly it continues in #Nepal. @ekantipur_com
— Ganga Thapa (@GulmiGanga) December 16, 2014
বাস্তবিক এক হৃদয়গ্রাহী চিঠি, ২১ শতকে এই ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়, কিন্তু বেদনাদায়ক ভাবে নেপালে তা ঘটে চলেছে।
किन मौन छौँ सरकार ? छिटो न्याय चाहियो #JusticeForPuja pic.twitter.com/MPFIRM1I5M
— डेरावाल उपभोक्तामञ्च (@rnet_room) December 16, 2014
এই বিষয়ে সরকার নিরব কেন? দ্রুত ন্যায়বিচার সাধন করা দরকার।
@tfscn Justice Campaign for Puja Bohara in IAAS, Paklihawa campus pic.twitter.com/bhLJ2J370k
— Hardik IAAS (@iaasagri42) December 18, 2014
আইএএএস-এর পাকলিহাওয়া ক্যাম্পাসে পূজা বোহোরার জন্য ন্যায়বিচার দাবীতে এক প্রচারণা
I don't have sisters yet I believe that it would pain me a lot as if as ur brothers now puja. #justimagine #justiceforpuja
— CCर 1Mb!!! (@beingccr) December 16, 2014
আমার কোন বোন নেই, তবে আমি বিশ্বাস করি, পূজা তোমার ভাই থাকলে সে যে রকম বেদনা অনুভব করত, আমারও সে রকম বেদনা অনুভব হত।
#JusticeForPuja #CandleLightMarch #Chipledhunga #Pokhara Unity for Female Rights !!! #StopFemaleViolence pic.twitter.com/jxEsPEkD1z
— Cafe Coronary™ (@being_raam) December 17, 2014
নারী অধিকার আদায়ে একজোট!!!
এই খোলা চিঠি প্রকাশিত হওয়ার পর, সুশীল সমাজ, অধিকার সংগঠন এবং প্রচার মাধ্যম এই ঘটনায় কাজ শুরু করার জন্য সরকারকে চাপ প্রদান করা শুরু করে। আইনমন্ত্রী পূজাকে আশ্বস্ত করেছে যে সে ন্যায়বিচার পাবে। এখন পূজার কাছে আশা রয়েছে, অন্তত বর্তমান এই সময়ের জন্য।