
মারাকিবোর এক বিক্ষোভের উপর এক পুলিশ কর্মকর্তা নজর রাখছে। ছবি মারিয়া আলেহান্দ্রা মোরার-এর, উইকিমিডিয়ার মাধ্যমে পাওয়া (সিসি বাই এসএ-৩.০)
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার সাম্যবাদী দল দেশটির আইন এবং সংগঠিত অপরাধ আইনের ক্ষেত্রে সংশোধন আনার এক প্রস্তাব প্রদান করে যা “সাইবার সন্ত্রাসবাদকে” এক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করবে। ডেপুটি এডুয়ার্ডো গোমেজ সাইগালা, যিনি আইনের বিরোধীতা করছেন, তিনি বলেন যে এই আইন “ নাগরিকদের ভয় দেখানো এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কে নিজেদের প্রকাশ করা থেকে বিরত” রাখার উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হতে পারে।
১৯ নভেম্বর তারিখে খসড়া লেখাটি বিতরণ করা হয় কিন্তু এই সংশোধনী নিয়ে আলোচনা তখন থেকে স্থগিত হয়ে রয়েছে।
গোমেজ সিগালা সংবাদপত্রকে জানিয়েছে যে নতুন এই নীতিতে সাংবিধানিক আদেশের বিরুদ্ধে কোন প্রচারণা অথবা হামলা চালানো” অথবা “জনগণের শান্তি ভঙ্গের জন্য” জন্য যারা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট অথবা অন্য ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করবে তারা এক থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের মত শাস্তির মুখোমুখি হতে পারে।
যে বিক্ষোভ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে এখন তা সারা দেশ জুড়ে চলছে, যা মুদ্রাস্ফীতি, ভয়াবহ অপরাধ এবং দূর্নীতির যে ধারা শুরু হয়েছে তার কারণে এই বিক্ষোভের শুরু। এই আইন এমন এক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এলো যখন বিক্ষোভের আয়োজন এবং সরকারী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার কারণে অজস্র নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
৭২ নং অনুচ্ছেদে যা লেখা আছে:
যদি কেউ গণ মাধ্যম, ইলেকট্রনিক মাধ্যম, টেলিফোন, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বিজ্ঞাপন [অথবা] অডিও ভিজুয়াল উপাদান তৈরী, বিতরণ, প্রচার করে অথবা কোন ব্যক্তির আচরণ কিংবা সুসংবদ্ধ কোন দলের কর্মকাণ্ডকে মহিমান্বিত করে যারা সাংবিধানিক আদেশকে হীন করার উপায় অনুসন্ধান করছে কিংবা গুরুত্বের সাথে জনগণের শান্তি ভঙ্গ করছে অথবা জাতির নিরাপত্তা কিংবা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি করছে, অথবা [এক বা একের অধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে [কিংবা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করছে], শাস্তি হিসেবে তাদের এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে।
এর পরের দিন ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা #সাইবারটেরোরিজমো (সাইবার সন্ত্রাসবাদ) নামের এক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করে এবং এই সংস্কার বিষয়ে তাদের মত প্রকাশ করে। এক শিক্ষাবিদ এবং কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার ডি মার্কো টুইট করেছেন:
Derechos, fue bueno tenerlos. Todos somos enemigos del Estado hasta probar lo contrario. #Ciberterrorismo pic.twitter.com/TI1zPa5Dx6
— Christopher Di Marco (@ChristophDM) noviembre 20, 2014
ঠিক, আপনাদেরকে জানা দারুণ এক ব্যাপার ছিল। প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা সকলে রাষ্ট্রের শত্রু।
এই ছবি, যাতে খসড়া আইনের এক প্রবন্ধ থেকে ডি মার্কোর করা উদ্ধৃতি রয়েছে, সেটি “রক্ষাকল্পে আটকানো” বিষয়টি উল্লেখ করছে। তাতে লেখা আছে:
সরকারি কর্মকর্তারা, অপরাধ তদন্ত বিভাগের মাধ্যমে নথি, সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কিংবা সশস্ত্র দল, সন্ত্রাসী সংগঠন, সংঘবদ্ধ দল কিংবা সংগঠন-এর তার কিংবা তারবিহীন মাধ্যমে আদান প্রদান করা চিঠিপত্র হস্তগত করতে পারবে, এবং আদালতের আদেশ ছাড়াই তা করতে পারবে, আর সর্বোচ্চ সাতদিন পর্যন্ত তা নিজেদের কাছে রাখতে পারবে, যে সবের বিষয়বস্তু অনুবাদ করা হবে এবং তদন্তে যুক্ত করা হবে, তারা রেকর্ড করা মূল উপাদান নিজেদের কাছে রাখবে, এর বিকল্প যাতে না তৈরী হয় এবং পরবর্তীতে যেন এটিকে চিহ্নিত করা যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এছাড়াও এই আইনের মাধ্যমে সরকারে ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার তথ্য হস্তগত করা যাবে।
ব্যবহারকারীরা একই সাথে প্রস্তাবনার অর্থহীন ভাষা নিয়ে প্রতিবাদ করছে, এখানে “জনগণের শান্তির” মত শব্দ রয়েছে, যার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ অনেক বিস্তৃত পরিসরে নিজের কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারবে। সাংবাদিক এবং সাইবার একটিভিস্ট লুইস কার্লোস দিয়াজ লিখেছে:
La propuesta no sólo inventa el delito de #ciberterrorismo desde redes sociales. Además inventó la “paz pública”. ¿?
— Luis Carlos Díaz (@LuisCarlos) noviembre 20, 2014
এই প্রস্তাবনা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে সাইবার সন্ত্রাসবাদ উদ্ভাবন-এর সাথে সাথে “জনগণের শান্তিও” আবিষ্কার করবে।
এই খসড়া আইন “রক্ষাকল্পে আটকানোর” বিধান ছাড়াও “ রক্ষাকল্পে গৃহ তল্লাশী” “ রক্ষাকল্পে আটক” এবং “রক্ষাকল্পে অনুসরণ” এর মত ধারণা হাজির করেছে, যা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আদালতের নির্দেশ ছাড়াই ওই সমস্ত কাজের আদেশ প্রদান করতে পারবে।
জাতীয় পরিষদে এই খসড়া আইন নিয়ে কখন আলোচনা হবে সে সম্বন্ধে খুব সামান্য জানা গেছে। কিন্তু সাম্যবাদী দল, সংসদে ১৫১টি আসনের মধ্যে যাদের দখলে ৯৯টি আসন, তাদের সমর্থনে এই আইনের অনুমোদন একেবারে সুনিশ্চিত।