ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে “এ দশকের জঘন্যতম সহিংসতা” দেখল কাশ্মীর

Indian villagers carry the dead bodies of Akram Hussain who was killed in alleged Pakistan mortar firing at Jeora village of R.S Pura border sector about 32 km from Jammu, India. Image by Amarjeet Singh. Copyright Demotix (23/8/2014)

ভারতীয় গ্রামবাসী আকরাম হোসেইনের মরদেহ বহন করছেন, যিনি আর এস পুরা সীমান্ত সেকশনের জেওরা গ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের মর্টার আক্রমণে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এলাকাটি ভারতের জুম্মু থেকে ৩২ কিমি দূরে। ছবিঃ অমরজিত সিং। কপিরাইট ডেমেটিক্স (২৩/০৪/২০১৪)

কাশ্মীরে উত্তেজনা আবারও বেড়েছে। “এলওসি” অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের লাইন অব কন্ট্রোল জুড়ে এখন প্রচন্ড উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই দুইটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র গত কয়েক দিন ধরে সীমান্তে পরস্পরের মাঝে গুলি বিনিময় করেছে। এ গোলাগুলিতে ১৭ জন নিহত হয়েছে এবং আরও হাজার হাজার লোক নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনারা একে অপরের দিকে গুলি চালানোর কারণে সীমান্তের আশেপাশে থাকা নয় জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ায় প্রায় দুই সপ্তাহ আগে গত ৭ অক্টোবর থেকে নতুন করে শত্রুতা শুরু হয়েছে। মুখোমুখি অবস্থান নেয়ার পর এই সহিংসতাকে উস্কে দেয়ার জন্য উভয় পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করেছে। যেহেতু ভারত এবং পাকিস্তান মর্টার গোলা এবং মেশিন-গান বুলেট দিয়ে যুদ্ধ করছে, সেহেতু গত কয়েক দিন ধরে এ এলাকার শান্তি হারিয়ে গেছে। এ যুদ্ধে আরও ছয়জন স্থানীয় লোক নিহত হয়েছেন। এদের মাঝে তিন জন শিশু।

উত্তেজনা লাঘব করার প্রচেষ্টায় ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশের সেনাবাহিনী কমান্ডারেরা উভয় জাতির সশস্ত্র বাহিনীর মাঝে নিয়মিত সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি টেলিফোন হটলাইন চালু করেছেন। এ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও টেলিফোন লাইন স্থাপনের কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়নি।

১৯৭২ সালে কাশ্মীর জুড়ে সহিংস যুদ্ধের পর ভারত এবং পাকিস্তান লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) প্রতিষ্ঠা করে। ভৌগোলিক এই উদ্ভাবন এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এই দুই দেশ তাদের সীমান্ত এলাকা জুড়ে ১৪ বছর ধরে চলতে থাকা বন্দুক যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ২০০৩ সালে একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করে। 

এলওসি’তে চলতে থাকা সাম্প্রতিক এই অস্থিরতাকে এ অঞ্চলে “এ দশকের জঘন্যতম” সহিংসতা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এ ঘটনার ফলে ২০০৩ সালে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি একেবারে ভেস্তে যাবে। বন্ধন দৃঢ় করার এই প্রচেষ্টা তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে আলোচনায় বসতে পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে ভারত অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ বছরের শুরুতে আগস্ট মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে অশুভ সংকেত হচ্ছে, তিনি তাঁর পরিকল্পনা বাতিল করেছেন

পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মতে, ভারতীয় আক্রমণ উস্কে দেয়ার মতো কোন কাজ ইসলামাবাদ করেনি। একজন পাকিস্তানি মেজর জেনারেল গত ৮ অক্টোবর সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, “ভারতীয়রা কেন পাকিস্তানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না”।

পাকিস্তানি মেজর জেনারেলের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনা বাহিনীও একই ধরনের বক্তব্য প্রদান করেছে।

সেনাবাহিনীর মাঝে বিচ্ছিন্ন যুদ্ধ সম্পর্কে গণমাধ্যমগুলো যেসব খবরাখবর সংগ্রহ করছে সেগুলো মূলত পক্ষপাতিত্বমূলক। উদাহরণ স্বরূপ, টাইমস অব ইন্ডিয়ার কথা বলা যায়। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান দীপাবলি উৎসব চলা পর্যন্ত তাদের সীমান্তে গুলি চালিয়ে যাবে”। ভারতে সংবাদপত্রগুলো “আরও একবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের দায়” ইসলামাবাদের উপর চাপিয়েছে। অপরদিকে ইসলামাবাদের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পাকিস্তান সমর্থক বক্তব্য প্রদান করেছে। তারা “উত্তেজনা বৃদ্ধিঃ ভারত পুনরায় বোমা হামলা শুরু করেছে, পাকিস্তানের পাল্টা হামলা চালানোর সতর্কতা” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, ভারত সাম্প্রতিক এই সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। যথেষ্ট স্বাধীনচেতা সংবাদপত্র করাচি পোস্টও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রথমে গোলাগুলি শুরু করার জন্য দোষারোপ করেছে।

পরষ্পর বিরোধী এই সংবাদ প্রচার নিয়ে টুইটারে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ওমর ওয়ারেস তাৎক্ষনিকভাবে এলওসি সীমান্ত সংকট নিয়ে লিখেছেনঃ  

লাইন অব কোন্ট্রল বিরোধঃ পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমঃ ৫ জন পাকিস্তানি নিহত। http://t.co/c2kCEZZu95  ভারতীয় সংবাদমাধ্যমঃ ছয় জন ভারতীয় নিহত http://t.co/kBb323Qw2a। 

প্রচার মাধ্যমগুলোর অসঙ্গত সংবাদ পরিবেশনায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও বেশ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। সালমান আকরাম রাজা জোর দিয়ে বলেছেন, সংবাদ মাধ্যমগুলোর এই তথ্য যুদ্ধই রাজপথের যুদ্ধকে আরও বেশি উত্তেজিত করে তুলেছে।  

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের মিডিয়া রাগ এবং যন্ত্রণার সমান্তরাল পরিবেশ তৈরি করেছে। চ্যানেলের সংখ্যা কয়েক ডজন কিন্তু একে অপরের মতামতের ব্যাপারে কোন বোঝাপড়া নেই। 

অক্টোবর মাসের শুরু থেকে এলওসি সীমান্তে ১১ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে। তবে এই যুদ্ধ শুরু করার দায়দায়িত্ব পাকিস্তান কিংবা ভারত কেউই এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয়নি। যতদূর বোঝা যাচ্ছে, এ অঞ্চলের মানুষের চুপ করে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তারা শুধুমাত্র বসে বসে আশা করতে পারেন পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন এই দুই পরাশক্তিধর শত্রুর মাঝে দ্বন্দ্ব যেন আরও বেড়ে না যায়।

1 টি মন্তব্য

  • আমরা সবাই বাংলাদেশি, স্বাধীন বালার জনগন আমরা, ১৯৭১ সালের যুত্ধের সময় ভারত আমাদের কে সহযোগিতা করেছিলো, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্র তুলে ছিলো ভারত, তবে এখন কেন বাংলাদেশের ৮০% মুসলিম জনগন কেন সেই পাকিস্তানের সাথে একমত পোষন করে এই মন্তব্য করছে যে, ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ নাকি একদম ঠিক করেছে, । কেন?….. ভারত কি তাহলে ৭১ এ সময় বাংলাদেশের হয়ে যুদ্ধ করা অন্যায় ছিলো? আমাদের বাংলাদেশের মুসলিমদের কি এই প্রতিদান! আমরা যারা সংখালঘু আছি তাদের এই মন্তব্য যে, এই মুহুর্তে ভারতের বিপক্ষে কথা বলা তো দুরে থাক, ভারতকে সহযোগিতা না করতে পারলে ও অন্ততো ভারতের পক্ষপাতি হয়ে কথা বলা উচিৎ, আমাদের সংখালঘুদের এই মতামত!!!!””””

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .